২০১০ বিশ্বকাপের উন্মাদনা মায়ানমারেও অনুভূত হচ্ছে। ফুটবল ভক্তরা তাদের প্রিয় দলের জন্য উল্লাসধ্বনি দিচ্ছে এবং অনেকে খেলা দেখার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত জাগছে। দর্শক টানার জন্য শুঁড়িখানা, রেস্তরাঁ এবং চায়ের দোকানগুলো বিশ্বকাপের খেলা দেখাচ্ছে।
যে সমস্ত ফুটবল ভক্ত ইয়াঙ্গুনে বাস করে তারা এখন খুশি, কারণ বিশ্বকাপের সময় নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকছে। যার ফলে তারা বিশ্বকাপের খেলাগুলো দেখতে পাচ্ছে। তবে অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। মাউঙ্গ, যিনি সম্প্রতি বিদেশ থেকে মায়ানমারের ফিরে এসেছেন, তিনি লিখছেন:
যখন আমি জাপানে ছিলাম, তখন আমি সেখানে প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে গ্রুপ পর্বের প্রতিটি খেলা দেখতে সক্ষম হয়েছি। তবে, যখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলাগুলো শুরু হল, সে সময় আমি মায়ানমারে ফিরে আসি। এখানে আসার পর আমি সেই প্রতিবেশীর দরজায় টোকা দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলাম, যে জেনারেটরের সাহায্যে টিভি চালাচ্ছে এবং তাকে অনুরোধ করলাম যেন তিনি আমাকে সেখানে বসে খেলা দেখার অনুমতি প্রদান করে।
….
আমি বসলাম..আমি উঠে দাঁড়ালাম.. আমি নিজেকে অভিশাপ দিলাম। যদি আমি দু-এক দিনের জন্য এখানে ফিরে আসতাম, মায়ানমারের বাস করার অভিজ্ঞতা কেমন এখন আমি তা অনুভব করছি। পরে আমার মাথায় একটা চিন্তা আসল, চিন্তাটা হচ্ছে উপশহর এলাকায় চলে যাওয়া এবং বিয়ার বিক্রি করে এমন এক শুঁড়িখানায় গিয়ে খেলা দেখা, যারা বিশ্বকাপের খেলা দেখাচ্ছে।
বার্মার অনেক মহিলা বিশ্বকাপের প্রচণ্ড ভক্ত। তারা খেলার ফলাফল জেনে নেয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট যেমন ফেসবুকে পোস্ট করে। থেট ওয়াই এক বার্মিজ নারী, যিনি সিঙাপুরে বাস করেন। তিনি তার এক পোস্টে লিখেছেন:
এমন এক অনুষ্ঠান যার জন্য ভক্তরা সকলেই অপেক্ষা করে আছে, সেই ফুটবল বিশ্বকাপ শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। আমি ভাবছি না, আমার ফুটবল খেলা দেখার সময় আছে কি না, আমি জানি না, আমি সবগুলো ফুটবল খেলা দেখতে পারব কি না, তারপরেও আমি সিঙটেল মিও টিভি চ্যানেল-এর জন্য নিবন্ধন করলাম, যেমনটা সবাই করেছে। তাদের আর্লি বার্ড নামক বিশেষ মূল হ্রাসের কারণে দ্রুত নিবন্ধন করা। এর জন্য আমি ২৪ সিঙাপুরী ডলার ছাড় পেলাম।
সিঙটেল এ নিবন্ধন করার আগে আমার স্বামী আমাকে বলল, আমি খেলা দেখার জন্য মাঝরাত পর্যন্ত জেগে থাকতে এবং খেলা দেখতে পারব কি না। এমন একজন ব্যক্তি যে কিনা খেলাধুলার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী, আমি বেশ ঠাট্টার ছলে উত্তর করলাম, “যে সময়েই হোক না কেন, আমি সকল খেলাই দেখব, আমি কেবল স্কুলের কাজ ও খেলাধুলায় আগ্রহ রাখি”।
ঠিক সিঙাপুরের মত নয়, মায়ানামারের ফুটবল ভক্তরা এখানে বিনে পয়সায় সরাসরি প্রচারিত ফুটবল খেলা দেখতে পাচ্ছে, কারণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি চ্যানেল এমআরটিভি ও মায়াওয়াড্ডি খেলা সম্প্রচার করছে।
ইরাওয়াড্ডি প্রচার মাধ্যম জানাচ্ছে রেঙ্গুনের এক ফুটবল ভক্ত বলছে,” এটা বেশ উত্তেজনাকর বিষয় যে, এই প্রথম শুরু থেকে ফাইনাল পর্যন্ত সবকটি খেলা বাসায় বসে টিভিতে দেখতে পাবো”।
তবে মায়াওয়াড্ডি চ্যানেলটি ১৮ -২১ জুন পর্যন্ত কারিগরি ত্রুটির কারণে কয়েকটি খেলা দেখাতে পারেনি, যা অনেক ফুটবল ভক্তকে রাগান্বিত করে তোলে। যার ফলে ভক্তদের সেই সব খেলা দেখতে হয়, যা কেবল এমআরটিভিতে প্রদর্শিত হয়েছে। ২২ জুন এই সমস্যার সমাধান হয়।
বিশ্বকাপের সময় অল্প কয়েকজন ক্রীড়া সাংবাদিককে বিশ্বকাপের উপর প্রতিদিনের সংবাদ সংস্করণ প্রকাশ করার অনুমতি দেওয়া হয এবং সেগুলো ভক্তদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রিমিয়ার ইলাভেন স্পোর্টস জার্নাল তাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে জোহানেসবার্গে পাঠায়,যাতে সে সরাসরি বিশ্বকাপের সংবাদ জানাতে সক্ষম হয়। এদিকে ইলাভেন মিডিয়া বিশ্বকাপ উপলক্ষে বার্মিজ ভাষায় বিশেষ সাইট চালু করেছে।
অনেক বার্মিজ ব্লগার যেমন ১১ ড্রিমস বিশ্বকাপ সম্বন্ধীয় পোস্ট লিখেছেন। যে ১০ টি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে সেগুলোর ছবি তিনি তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন। অনেকে আনন্দে উদ্বেলিত এ কারণে যে, বিশ্বকাপ উপলক্ষে তৈরি করা শাকিরার ওয়াকা ওয়াকা গানের ভিডিওর নাচের দলে মায়ানমারের দুই তরুণী রয়েছে। হাটো টাইজার লিখেছে:
আমি শুনেছি যে এই ভিডিওতে বার্মার তরুণীরা রয়েছে। এ কারণে আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে ভিডিওটি দেখি। আমি এক সাক্ষাৎকারে পড়েছি এই ভিডিওতে বার্মার তিন বোন রয়েছে। হ্যাঁ, এটা সত্যি: আপনি পেছনের বালিকাদের দিকে তাকান, এবং ডানে নীল এবং রক্তবর্ণ পোষাক পড়া মেয়েগুলো বার্মার। তারা বার্মার ঐতিহ্যবাহী ব্লাউজ এবং লুঙ্গি পড়েছিল।
নায়া নায়া নিয়াঙ্গ বিশ্বকাপের মূল সঙ্গীতের ভিডিও গানের কথাগুলো আমাদের জানাচ্ছেন এবং লিখেছেন:
অতীতে আমি একটি বিশেষ দলের সাথে যুক্ত হতাম এবং আশা করতাম যে এই দলটি বিশ্বকাপ জিতবে। এই বার কি করা যায়? আমাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন না.. এবার আমি সেই দলটিকে সমর্থন করব যে দল বিশ্বকাপ জিতবে! :))।
তবে অনেকে সেই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে যখন বিশ্বকাপ সমাপ্ত হবে। গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় লটারী বিক্রির পরিমাণ পড়ে যায় এবং বার্মার ঐতিহ্যবাহী নৃত্যশিল্পের দল বিশ্বকাপ শেষ হবার সময় পর্যন্ত তাদের প্রদর্শনী বন্ধ রেখেছে।
যেমনটা মিজ্জিমার সম্পাদকীয়তে মায়ো থিন লিখেছে
যারা দাবি করেছিল যে তারা ২০১০ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তারা বিশ্বকাপের সময় চুপচাপ রয়েছে। বিশ্বকাপের জাবুলানি ( জুলু ভাষায় যার মানে “ফুর্তি”) বলের প্রলোভনের কারণে এই অবস্থা ঘটেছে, জুলাইয়ের ১১ তারিখ পর্যন্ত লোকজনের মন দক্ষিণ আফ্রিকায় পড়ে থাকবে।