পাকিস্তান: লাহোরে রক্তপাত এবং এক অস্বীকারনামা

দাতা দরবার-লাহোরে অবস্থিত এক সুফি সাধকের মাজার. ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ইখাননিনক-এর সিসি বাই-এনসি-এসএ এর অধীনে ব্যবহার করা হয়েছে।

আরো একবার পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হল যখন লাহোরে অবস্থিত দাতা দরবার নামে পরিচিত মাজার বোমা হামলা চালানো হয়। প্রচার মাধ্যমের সংবাদ অনুসারে মাজারে দুইজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বোমা বিস্ফোরন ঘটায়, যারা মাজারে নিরাপত্তা বন্দোবস্ত থাকা সত্ত্বে এর প্রহরীদের ফাঁকি দিয়ে এখানে প্রবেশ করতে এবং নিজেদের উড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। এই ঘটনায় বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কেবল মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এই হামলায় ১৫০ জন ব্যক্তি আহত হয়েছে।

এই ঘটনার পরপরই পাকিস্তানী ব্লগস্ফেয়ার আতঙ্ক ও ক্ষোভে ফেটে পড়া পোস্টে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এদের বেশিরভাগই যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তার অভাবের জন্য সরাসরি প্রাদেশিক সরকারকে অভিযুক্ত করে, যারা সরকারিভাবে স্বীকার করে না যে, তালেবানরাই প্রকৃত শত্রু। আমার নিজস্ব ব্লগে আমি লিখেছি:

এই পুরো ঘটনার সবচেয়ে খারাপ দিকটি হচ্ছে, পাঞ্জাব সরকারের প্রতারণাপূর্ণ অস্বীকার, যারা এখনো এক বিভ্রান্তিতে বাস করছে। পিএমএল এন (পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নাওয়াজ শরীফ)-এর মুখপাত্র সিদিক-আল-ফারুক সামা টিভির এক আলোচনা সভায় (টক শোতে) খোলাখুলিভাবে প্রাদেশিক সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তাদের মতে তালেবানরা একদল ভালো মানুষ, যারা আফঘানিস্তানে এক গৌরবজনক শাসনের প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি অবশ্য এর চেয়ে বেশি দুর যাননি। এই অনুষ্ঠানে এমন কিছু বলা হয়নি যাতে, তিনি স্বীকার করেন যে তালেবানরা এখন একদল সন্ত্রাসী, যারা নিষ্পাপ লোকদের হত্যা করছে এবং তারা এখন পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক হুমকি স্বরূপ।

আহসান তার ব্লগ ফাইভ রুপিতে লিখছে:

““যে ভাবেই হোক এই বিষয়টি আমার সবচেয়ে উৎকণ্ঠা এবং রাগের কারণ, যে লাহোরের রাস্তার যে কোন ব্যক্তি, এমনকি যদি পাকিস্তানের যে কোন নাগরিককে বেছে নেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেন, লাহোরের কোন পাঁচটি সম্ভাব্য স্থানে সন্ত্রাসবাদীরা বোমা হামলা চালাতে পারে; সেক্ষেত্রে সবার মুখে সবার আগে আসবে দাতা দরবারের নাম। এছাড়াও সম্প্রতি লাহোরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব দেখা দেয়- অনেকগুলো হামলার মাঝে গত মাসে আহমাদি মসজিদ ও মুন মার্কেটে হামলা অন্যতম। আপনি হয়ত মনে করতে পারেন যে মাজারটিকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, বিশেষ করে যখন এই তথ্য প্রদান করা হয় যে, দুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাঞ্জাব সরকারকে এক সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছিল। কিন্তু আপনার ধারণা ভুল।

এই আক্রমণ তাদের মোহমুক্তি ঘটায়, যারা বিশ্বাস করত যে তালেবানরা মাজার এবং অন্য পবিত্র ধর্মীয় স্থান থেকে দুরে থাকবে। পরিষ্কারভাবে জঙ্গিদের জন্য ইসলাম সম্বন্ধে তাদের নিজস্ব ধারণার বাইরের সবকিছুই সম্ভাব্য আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। এখানে এই বিষয়টি জানানো জরুরি যে তালেবানরা ইসলামের গোড়ামীপূর্ণ ভাবধারায় অবস্থান করে। দেওবন্দী অনুসারী যারা মনে করে, মাজার যাওয়া মানে শিরক (সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো উপাসনা করা)-এর কাজ করা। এর বিপরীতে বেরেলভী নামের অনুসারীরা মাজারে যাওয়া এবং অন্য অনেক অপ্রচলিত কাজে বিশ্বাস করে। এই দলের লম্বা সময় ধরে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের এক ইতিহাস রয়েছে। যারা সকল অবস্থায় অস্ত্রের সংঘাতে বিশ্বাস করে না।

ড: মুবারক আলি পাকিস্তানের বিখ্যাত এক ইতিহাসবিদ। তিনি বিবিসির এক উর্দু প্রবন্ধে উদ্ধৃত করেছেন যে তালেবানরা যে তরিকার অনুসারী সেই দেওবন্দীদের সৌদি আরব সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে: এর অনুবাদ পাঠ করুন:

““বেরেলভীরা বাইরে থেকে কোন সাহায্য পায় না। অন্যদিকে দেওবন্দী এবং যারা আহলে হাদিসের অনুসারী, সৌদি আরব তাদের সাহায্য করে।তাদের মাদ্রাসাগুলো ভালো অর্থ সাহায্য পায় এবং আহলে হাদিসের বিদ্বানরা তাদের পৃষ্টপোষকতা করে। এসব কারণে দেওবন্দীরা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী”। “

অনেক পাকিস্তানী বেহিসেবি দানের জন্য তেল সমৃদ্ধ সৌদি পেট্রো ডলারের দিকে আঙুল ইশারা করছে, যা কিনা তালেবানদের পকেট ঢালা হয়েছে। আলে নাতিকের ফেসবুকের স্ট্যাটাস বা নিজের মন্তব্য লেখার ঘরে এক ক্ষুব্ধ মন্তব্য রয়েছে সেটি পড়ুন, “এখন সময় এসেছে বিশ্বের সকল মুসলিম এবং পাকিস্তানীদের বিশেষ করে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করার, যা কিনা সৌদি আরব রপ্তানী করছে। বেরেলভী, আহমাদিয়া, শিয়া, সুফি, খ্রিষ্টান-সবাই সন্ত্রাসবাদের শিকার, এরপর কার পালা?”

এ ছাড়াও তিনি বেশ কিছু গবেষণামূলক প্রবন্ধের উল্লেখ করেছেন, যেগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য দিয়ে উপসংহার টানা হয়েছে যে সৌদি অর্থ পাকিস্তানের দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলোতে যাচ্ছে, যা ইসলামের অনেক গোঁড়ামি, সহিংস দর্শন তৈরিতে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছে।

যখন বেশিরভাগ ব্লগ এই হামলায় তাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে, সেখানে অনেকে পাঞ্জাব সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে যাতে তারা দ্রুত তাদের এই ‘প্রতারণাপূর্ণ অস্বীকার’ করার অবস্থান থেকে সরে আসে এবং এটা স্বীকার করে নেয় যে তালেবানরা এক বাস্তবতা, এবং ওই সব ব্যাপারে এক তিক্ত বাস্তবতা। তবে যতদুর দেখা যাচ্ছে, প্রাদেশিক সরকার এখনো সিদ্ধান্তহীনতা ভুগছে যে তারা সন্ত্রাসবাদের কারণকে নির্মূল করবে কি করবে না, কারণ ঘটনাক্রমে এতে জনগোষ্ঠীগত ভোট (ভোট ব্যাঙ্ক) হারানোর ভয় রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .