নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপাল গতকাল (৩০ জুন) টেলিভিশনে প্রদান করা এক সরাসরি ভাষণে তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন।
মাধব কুমার নেপাল ২০০৯ সালের সে সময় নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন, যখন তার পূর্বসূরি প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড (পুষ্প কমল দাহাল) সামরিক বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে এক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে পদত্যাগ করেন। প্রচন্ড ছিলেন সিপিএন (কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল বা নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি-মাওবাদী)-এর নেতা। প্রচন্ড প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নেপালের সামরিক বাহিনীর প্রধান প্রাক্তন মাওবাদী বিদ্রোহীদের দেশটির সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।
নিউ বিগিনিং ব্লগের অনিশা ভট্টরাই জানাচ্ছেন:
গতকাল প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপাল পদত্যাগ করেছেন। শুরু থেকেই তিনি এবং তার সরকার বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সংসদ নির্বাচনে দুটি এলাকা থেকে প্রার্থী হয়েও নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন তারপরেও তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।[…]
প্রধানমন্ত্রী হবার থেকে মাওবাদীরা তার পদত্যাগ দাবি করে আসছিল।
মাধব কুমার নেপালের পদত্যাগ এক রাজনৈতিক বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটাল, যা জোরাল হয়ে উঠে যখন জোট সরকার ২৮ মে, ২০১০-এর মধ্যে নতুন সংবিধানকে তুলে ধরতে এবং এক বছরের মধ্যে শাসনতান্ত্রিক সভার মেয়াদ বাড়াতে ব্যর্থ হয়।
রয়টার্স ব্লগের গোপাল শর্মা এই সমস্যার পেছনের কিছু ঘটনা তুলে ধরছে:
বর্তমানে নেপালে কোন সংসদ নেই এবং ২০০৮ সালে বিশেষ সংসদ নির্বাচিত করা হয়, যাতে এক নতুন সংবিধানের খসড়া নির্মাণ করা সম্ভব হয়। এই সংসদের একই সাথে জাতীয় আইন প্রণয়ন সংস্থার কাজ করার কথা।
সংসদে মাওবাদীর দলে ভারি হলেও সেখানে কোন রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি। দুই বছর আগে, ২৩৯ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র অবলুপ্ত হবার পর সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর প্রেক্ষাপটে যে কোন সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল সংসদের জন্য নতুন এক খসড়া সংবিধান তৈরি করা।
মাওবাদী বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের কেউ সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি, যা দিয়ে তারা একে অন্যের সাহায্য ব্যতিরেকে সংবিধান পাশ করাতে পারত। এ কারণে সকলেই জাতীয় ঐক্যের সরকারের কথা বলছে- যা দেশটির প্রায় ২৫ টি রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতে এবং অংশগ্রহণে সৃষ্টি হওয়ার কথা, যাদের মধ্যে মাওবাদীরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এবং এই নির্বাচিত সরকারকে আগামী বছরের মে মাসের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান তৈরি করার কাজ শেষ করতে হবে।
নেপালীএ্যাব্রোড.কম এই পদত্যাগে ক্ষিপ্ত:
মাওবাদীরা প্রাসাদ এবং প্রধানমন্ত্রী পদ দখল করতে চায়, যেখান থেকে কয়েক মাস আগে তাদের চলে যেতে হয়েছে। এটা মাওবাদী ও তাদের নেতারা একেবারে শিশু সুলভ আচরণ। সকল রাজনীতিবীদ আবেগী, তারা কোন ধরনের অঙ্গীকার প্রদান ছাড়াই কথা বলছে এবং কাজ করে চলছে। যতদিন না মাওবাদীরা তাদের শিবির বন্ধ করে দেয় এবং রাজনৈতিক সেনাদের প্রত্যাহার করে না নেয় ততদিন তাদের সরকারে নেওয়া উচিত নয়। […]
নেপালের প্রতিটি রাজনৈতিক দল, একক বা যৌথভাবে, সরকারে বা বিরোধী দলে যেখানেই থাকুক না কেন, যতদিন না তারা নিজেদের ব্যাক্তিগত অথবা দলীয় অর্জনের চেয়ে নেপালের অর্জনকে সামনে না রাখবে, ততদিন নেপালে কোন স্থায়ী সরকার আসবে না অথবা দেশটির কোন উন্নয়ন হবে না।
পুরুষোত্তম সাহা (ডিজিটালসাবওয়ে) টুইট করেছে:
প্রধান রাজনৈতিক দল, বিশেষত; ইউসিপিএন ( দি ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল-মাওবাদী দল), নেপালী কংগ্রেস ও সিপিএন (ইউএমএল)-এর সংবাদ সূত্রানুসারে , তারা নতুন সরকার গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করে দিয়েছে।