মেক্সিকো: সীমান্তে দশ দিনে দুটি মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষীদের সাথে সংঘর্ষের দুটি ভিন্ন ঘটনায় মেক্সিকোর দুজন নাগরিকের অনভিপ্রেত মৃত্যুতে মেক্সিকোর নাগরিকরা এক ধাক্কা খেয়েছে। এই দুটি ঘটনা এমন সময়ের মধ্যে ঘটল, যখন এর ঠিক এক মাস আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় বাস করা মেক্সিকোর এক কর্মী এনাসতাসিও হার্নানদেজের উপর নির্মম ভাবে হামলা চালানো হয় (স্প্যানিশ ভাষায়)। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে আসছিলেন। সান ইসিড্রো-টিজুয়ানার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকা দিয়ে স্বদেশে আসার সময় তাকে প্রহার করা হয় এবং ১৫ বছর বয়স্ক সের্জিও আদ্রিয়ান হার্নানদেজকে এল পাসো-কিউদাদ জুয়ারেজ সীমান্তে গুলি করা হয় [স্প্যানিশ ভাষায়]। একই ভাবে দুজনকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনার পর মেক্সিকোর নাগরিক প্রচার মাধ্যম নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মেক্সিকো সরকারের অভিবাসন ও পরারাষ্ট্রনীতির মুল্যায়ন করতে শুরু করেছে।

সংবাদ লা জর্নাডা সংবাদ প্রকাশ করেছে [স্প্যানিশ ভাষায়] যে ইসিডো টিজুয়ানা নামক আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকা পার হওয়ার সময় সীমান্ত রক্ষীরা এনাসতাসিও হার্নানদেজকে আটক এবং প্রহার করে, কারণ তার কাছে অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র ছিল না। সে মেক্সিকোর এক কর্মী যে ২০ বছর ধরে ক্যালিফোর্নিয়ায় বাস করছে। সেখানেই সে তার সন্তানদের লালন পালন করছে। এছাড়াও লা জর্ডানা বলছে [স্প্যানিশ ভাষায়] যে সীমান্ত রক্ষী ২০ জন কর্মকর্তা তার মারধোর করে এবং তার উপর তারা টাসের (বৈদ্যুতিক শক দেবার যন্ত্র) ব্যবহার করে। ফলে তার মস্তিষ্কে আঘাতের সৃষ্টি হয়; একদিন পরে এনাসতাসিও মারা যায়।

এনাসতাসিওর উপর চালানো এই নির্মম নির্যাতন, ক্যালিফোর্নিয়ার এক ছাত্র মোবাইলের ভিডিওর মাধ্যমে ধারণ করতে সক্ষম হয়। এই ছাত্রটি সে সময় সেখানে অবস্থান করছিল। আপনি ইউটিউবে এই ভিডিওটিতে দেখতে পাবেন। সিএনএন মেক্সিকোর সূত্রানাসারে এই ছাত্রকে এনাসতাসিওর মৃত্যুর ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সে সংবাদপত্রকে জানিয়েছে যে, পুরোটা সময় এনাসতাসিওর হাতে হাতকড়া লাগানো ছিল এবং সে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাজে বাঁধা দেবার কোন চেষ্টা করেনি।

Border US-Mexico. Photo by PhillipC. Used following a Creative commons license. Taken from http://www.flickr.com/photos/flissphil/5883071/

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত, ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ফিলিপসির, ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে তা ব্যবহার করা হয়েছে।

এনাসাতাসিওর পরিস্থিতির সাথে আড্রিয়ান হার্নানদেজের ঘটনার অনেক দিক দিয়ে মিল রয়েছে। এর ব্যতিক্রম দিক হচ্ছে যখন তাকে হত্যা করা হয়, তখন সে মেক্সিকোর ভেতরই ছিল। সিএনএন মেক্সিকো সংবাদ প্রকাশ করছে যে ৭ জুন সের্জিও ও অন্য তিনজন ব্যক্তি চুপি চুপি সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। ধরা পড়ার পর তারা সীমান্ত রক্ষীদের দিকে পাথর ছুড়ে মারে। এই অবস্থায় পুলিশ তার মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে, যাকে তারা বলছে “আত্মরক্ষার খাতিরে” গুলি চালানো।

একটি সংবাদের এক ছোট্ট অংশে সেই ভিডিওটি প্রদর্শন করা হয়েছে, যেখানে সের্জিও ও অন্যরা সীমান্ত পাড়ি দেবার চেষ্টা করছে এবং সীমান্ত প্রহরীরা কি ভাবে তাদের এই কাজের জবাব দিচ্ছে।

উভয় মৃত্যু মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার এক প্রতিচ্ছবি, যা বিতর্কিত অভিবাসন আইন এস.বি ১০৭০ এর পরে তৈরি হয়েছে। এই আইন এপ্রিলের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যে অনুমোদন করে। এই আইন বর্ণনা করছে যে এক যৌক্তিক সন্দেহের অধীনে যে ব্যক্তিটি বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে, “ তার ক্ষেত্রে এক যৌক্তিক প্রচেষ্টা” হিসেবে দেশটির আইন রক্ষাকারী বাহিনী উক্ত ব্যক্তির অভিবাসন মর্যাদা নির্ধারণের অধিকার রাখবে। এই আইনকে ঘিরে বেশ কিছু সমালোচনা তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে এই আইন বর্ণবাদী, এরপর এর কয়েকটি শব্দে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতি, বর্ণ অথবা ব্যক্তির আদি বাসকে বিবেচনায় না রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষীদের সাথে মেক্সিকোর নাগরিকদের এই দুটি সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিফলন হিসেবে এল আরকানজেলিনোর ব্লগার ফ্রাঞ্জ বিবেচনা করছে, এ দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেক নাজুক:

El hecho de que los americanos estén respondiendo de esta manera nos habla de que se está radicalizando la protección fronteriza de los vecinos hasta las consecuencias más severas.

বাস্তবতা হচ্ছে আমেরিকা এই ভাবে আমাদের জবাব প্রদান করে, যা আমাদের এই প্রতিবেশীর সীমান্তকে মৌলিকভাবে নিরাপদ রাখার জন্য করা কাজ, যে সব কাজ, আমাদের জন্য ভয়াবহ সব পরিণতি তৈরি করে।

যে সব ঘটনা এনাসতাসিও ও সের্জিওর মৃত্যুর কারণ ঘটিয়েছে মেক্সিকো সরকার তার নিন্দা জানিয়েছে এবং এই সব ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানিয়েছে [স্প্যানিশ ভাষায়]। নাগরিকরা চিহ্নিত করেছে যে, অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে মেক্সিকো সরকারের প্রতিক্রিয়া এখনো সৌজন্যমূলক এবং দুর্বল। যেমনটা ব্লগার টিআরসি তার ব্লগে এর সমালোচনা করেছেন [স্প্যানিশ ভাষায়]:

A la luz de estos indignantes acontecimientos no nos queda más que preguntarnos ¿hasta cuándo mantendrá la SRE [Secretaría de Relaciones Exteriores] una política exterior condescendiente (por no decir agachona)? ¿Cuándo se tomará una represalia pacífica pero contundente contra los EUA por los actos de racismo y discriminación que viven día a día los mexicanos de los más bajos estratos sociales que radican en la frontera norte? ¿Cuándo entenderá Patricia Espinosa [Secretaria de Relaciones Exteriores] que un “tibio” comunicado no es una reacción suficiente ante la sistemática y reiterada violación de derechos fundamentales contra mexicanos por parte del país vecino?

এই নিন্দাজনক ঘটনার আলোকে নিজেদের প্রশ্ন করা ছাড়া আর কোন কিছু বাকি নেই, যতক্ষণ না এসআরই-এর (মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি) এক সৌজন্যমূলক পররাষ্ট্র নীতি বজায় রাখবে (বলছি না যে এই নীতি পুরো অনুগত)? কখন এ দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের দেশের উত্তর সীমান্তে বাস করা মেক্সিকোর ক্ষুদ্র সামাজের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক আচরণের এক শান্তিপূর্ণ কিন্তু উপযুক্ত সমুচিত জবাব দেবে? কখন প্যাট্রিসিয়া এসপিনোসা [মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী] অনুভব করবে একটি প্রতিবেশি দেশের পদ্ধতিগত ও বার বার ঘটানো সহিংস ঘটনার মাধ্যমে মেক্সিকোবাসীর অধিকার হরণের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে কেবল উষ্ণ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি যথেষ্ট নয়?

অন্যদিকে ব্লগার ড্যানিয়েল মুনোজ বিশ্বাস করেন যে মেক্সিকোর অভ্যন্তরে সের্জিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মেক্সিকো সরকারে যে পররাষ্ট্র নীতি তার প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি নতুন এক ঘটনাধারা তৈরি করে [স্প্যানিশ ভাষায়]:

Creo que el gobierno mexicano debe hacer a niveles internacionales, lo que comúnmente conocemos como un “señor pancho”, si la violación a nuestra frontera y peor aún, el asesinato de un civil en suelo mexicano, no es motivo para levantar la voz, entonces resignémonos a ser el eterno patio trasero norteamericano, aquel concepto que Aguilar Zinser inventó acertadamente siendo embajador de la ONU.

আমি মনে করি মেক্সিকো সরকারের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই “বিতর্ক থেকে বের হবার” জন্য তার কারণের [কজেজ অফ রাকাস] প্রয়োজন, যদি আমাদের সীমান্তে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি তারচেয়ে খারাপ কিছু ঘটে, মেক্সিকোর এলাকার ভেতরে মেক্সিকোর এক নাগরিককে হত্যা করা হয়, তাহলে এটা কেবল কথা বলার জন্য কোন এক কারণ নয়, চলুন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাৎ থেকে আমরা সকলে একযোগে পদত্যাগ করি। এই ধারণাটি যথাযথভাবে তৈরি করেছিল এগুয়েলার জিনসের, যখন তিনি জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

লা বোরাল ডেল হোমব্লিগোর ব্লগার রবার্তো মেক্সিকোর সকল তরুণকে সের্জিওর মৃত্যুকে একটি বাস্তবতা হিসেবে স্মরণ করিয়ে দেন [স্প্যানিশ ভাষায়], যে সমস্ত তরুণেরা নিজ দেশে মাদক পাচারকারী এবং প্রতিবেশি দেশের সীমান্ত রক্ষীরা বুলেটের সামনে একেবারে নাজুক অবস্থায় থাকে:

No, Sergio no murió cruzando la frontera, Sergio murió en su país y ahora su país tendrá que ver por él.

না সের্জিও সীমান্ত পাড়ি দেবার সময় মারা যায়নি। সের্জিও তার নিজের দেশে মারা গেছে এবং এখন তার দেশের এই মৃত্যুর ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত।

সবশেষে, নীচে রসিকতা করা মেক্সিকোবাসীর লেখা রয়েছে, যারা সব কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যঙ্গ ও রসিকতা করে, তাদের মধ্যে এক টুইটার ব্যবহারকারী মিগুয়েল বুর্জোস (@বুর্ডল্যাব) হ্যাশট্যাগ #মার্ডারপেট্রোলের অধীনে এক প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে, সের্জিওর মৃত্যুকে উল্লেখ করে বাইবেলের এক প্রবাদের মাধ্যমে সে ব্যঙ্গ করেছে [স্প্যানিশ ভাষায়]:

El que esté libre de #murderpatrol que arroje la primera piedra

যে #মার্ডারপেট্রোল (খুনী অনুসন্ধানী দলের) সাথে নেই, সে প্রথম পাথর ছুড়বে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .