- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ক্যাম্বোডিয়া: ২০১০ বিশ্বকাপের মৌসুম নিয়ে প্রতিক্রিয়া

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, ক্যাম্বোডিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, খেলাধুলা, নাগরিক মাধ্যম

ক্যাম্বোডিয়াও দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা উদযাপন করছে। ট্যাক্সি ড্রাইভার, ছাত্র, ব্যবসায়ী, নেটবাসী এবং এমনকি প্রধানমন্ত্রীও এশিয়ার সেই সমস্ত দেশগুলোর জন্য উল্লাসধ্বনি দিচ্ছে, যে সব দেশ এবার বিশ্বকাপে খেলছে।

খদ্দেরদের আরো বেশি করে আকর্ষণ করতে সব শুঁড়িখানা বিশাল পর্দার টিভি লাগিয়েছে, যাতে অতিথিরা বিশ্বকাপের খেলাগুলো সেখানে বসে উপভোগ করতে পারে। এটা অনেকটা স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজের মত, যারা ক্রীড়ামোদীদের কাছ থেকে লাভের আসায় প্রায়শই সেখানে বক্সিং খেলার আয়োজন করে থাকে।

নম পেন পোস্ট জানাচ্ছে [1] ওয়াক এবাউট শুঁড়িখানার মালিক বলেছেন “আমাদের পাঁচটি বড় পর্দার টিভি রয়েছে এবং আমরা সকল খেলা দেখানোর ইচ্ছে রাখি। যদি কেউ একটি টাইগার বিয়ার কেনে তা হলেই সেই ক্রেতাকে আমরা একটি কুপন দিই। পাঁচটি কুপন থাকলে আপনি বিশ্বকাপের একটি স্মরণীয় টি-শার্ট পাবেন”।

একই সময়ে বিশ্বকাপ, ক্যাম্বোডিয়ার ফুটবল সমর্থকদের অনলাইন প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে প্রভাবিত করেছে। সোকহম চেহহেঙ্গ [2] ২০১০ বিশ্বকাপের লোগো বা প্রতীক তার ফেসবুকের প্রোফাইলের ছবি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সেখানে সে খেলার ফলাফল পোস্ট করে যাচ্ছে এবং এশিয়ার দেশ যেমন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের জয়ে উল্লাসধ্বনি দিচ্ছে।

পিসেথ মাও [3] বিশ্বকাপের গানের [4] ভিডিওর অনুবাদ বা সাবটাইটেল তার পাঠক এবং ফুটবল ভক্তদের জন্য সরবরাহ করেছে। সেখানে সে তার নিজের ছবি উঠিয়ে দিয়েছে, এই ছবিতে সে বিশ্বকাপের বল হাতে নিয়ে রয়েছে [5]। ব্যস্ত সময় সত্ত্বে সে সকল খেলা দেখেছে এবং তার ফেসবুকের স্ট্যাটাস আপডেট বা মন্তব্য রাখার ঘরে সে লিখেছে:

“আজ রাতের দ্বিতীয় খেলা আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়ার খেলাটি শেষ হবার পর আমি পাঠ্য অনুশীলনের জন্য বাসায় দেওয়া বিশেষ কাজ বা এসাইনমেন্ট শেষ করবো, তারপর অন্য খেলাটি দেখবো। এটি যুক্তরাষ্ট্র বনাম ইংল্যান্ডের খেলা। আশা করি এর ফলে আগামী কাল শ্রেণীকক্ষে খুব বেশি ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করব না। “

ক্যাম্বোডিয়ার ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেক মেয়ে বিশ্বকাপের প্রচণ্ড ভক্ত। খেলার ফলাফল প্রদান করা ছাড়াও সোপহারি নোয় [6] বিশ্বকাপে ব্যবহৃত “ওয়েভিং ফ্লাগ” গানটি পোস্ট করেছে। সে এটি ইংরেজি এবং স্প্যানিশ উভয় ভাষার সংস্করণই পোস্ট করেছে। এছাড়াও সে একন ও কেরির গাওয়া গান “ওহ আফ্রিকা” গানটি পোস্ট করেছে। একই ভাবে আরেকজন মহিলা ফেসবুক ব্যবহারকারী রামানা সরন [7] মেক্সিকোর ফুটবল দলের ভক্ত হয়ে গেছেন।

জাপানের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি [8] বা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্বোডিয়ার ছাত্রছাত্রীরাও জাপানী ছাত্রছাত্রীদের সাথে যোগ দেয়, যারা এক সাথে জাপানের খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছিল, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা নীল জামা পরে ছিল, যে নীল জামা জাপানের জাতীয় দলের প্রতীক। সেখানে জাপান বনাম ক্যামেরুনের খেলায় সবাই একসাথে জাপানের জন্য উল্লাসধ্বনি প্রদান করে।

অতীতে এই উত্তেজনাপূর্ণ অনুষ্ঠান অনেক বাজিকরদের আকর্ষণ করেছে, এই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বিশ্বকাপের শুরুতেই লোকজনকে বিশ্বকাপের উপর বাজি রাখার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন [9] “ অন্য দেশ ফুটবল খেলে জিতবে কিন্তু ক্যাম্বোডিয়ার মানুষ টাকা হারাবে”, তিনি এমনটা আর দেখতে চান না। যারা এই নিয়ম লঙ্ঘন করবে তারা আইনগতভাবে শাস্তির মুখোমুখি হবে। বিশ্বকাপের সময় অবৈধ ভাবে জুয়া খেলার কারণে কয়েকদিন আগে নয়জন লোককে [9] গ্রেপ্তার করা হয়।

২০০৯ সালেও হুন সেন একই ধরনের আদেশ দিয়েছিল, সে সময় সকল ফুটবল বাজিকরদের উপর অভিযান চালানো হয়। বাজিকরদের এই জুয়ার কারণে, এ দেশে পরিবারের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়, ঘরে অশান্তি শুরু হয় এবং ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যায়। এই বিষয়টি সন অফ খেমার এম্পায়ার [10] পুনরায় স্মরণ করেন, যিনি লেখেন যে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের সময়ও প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে, এই নিয়ে জুয়া খেলার কারণে লোকজন তাদের সম্পত্তি হারাতে পারে, যেমন গরু, জমি, বাড়ি ইত্যাদি। সন অফ খেমার এম্পায়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এর এই আদেশে মুগ্ধ তবে তিনি পরামর্শ প্রদান করছেন যে সরকারে অবশ্যই সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা জুয়ার আড্ডাখানাগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ক্যাম্বোডিয়ার প্রতিবেশি দেশ থাইল্যান্ডেও বিশ্বকাপের উপর জুয়া ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। থাইল্যান্ডে জুয়া নিষিদ্ধ। থাই পুলিশ জুয়া বন্ধের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং তারা ২৪টি জুয়ার আড্ডাখানায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়, যেগুলো বিশ্বকাপকে সামনে রেখে জুয়ার আয়োজন করছিল। সংবাদ অনুসারে বিশ্বকাপ ফুটবলের উপর তৈরি হওয়া অবৈধ জুয়ার আড্ডাখানাগুলোতে অভিযান চালানোর সময় [11] পুলিশ সেখান থেকে ৫০০,০০০ বাথ উদ্ধার করেছে এবং ২০০ জনকে গ্রেফতার করেছে।