- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

পাকিস্তান: ব্লগাররা ধর্মীয় বিদ্বেষকে প্রত্যাখান করেছেন

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, পাকিস্তান, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, ধর্ম, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, মানবাধিকার
[1]

আহমাদিয়া মসজিদ – ছবি গুপ্পু.কম এর সৌজন্যে – ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহৃত

এ মাসের প্রথম দিকে আহমেদিয়া [2] ধর্মীয় সমাজকে লাহোরে আক্রমণ করা হলে সেখানে ৯৩ জন নিরাপরাধ লোক মারা যান। পত্র পত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়াতে এ নিয়ে কম রিপোর্ট হলেও পাকিস্তানি ব্লগ জগৎের প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ সরব। পাকিস্তানি ব্লগার, নেট নাগরিক আর কর্মীরা এই আক্রমণকে শক্ত ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সানা সেলিম, তার ব্লগ মিস্টিফাইড জাস্টিসে তার দু:খের কথা এই ভাবে জানিয়েছেন [3]:

আমার রাগ থেকেই যাচ্ছে যে আমরা বেশীরভাগ লোক মানবাধিকারের উপর আক্রমণকে পাত্তা দিতে চাইনা, আর, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, এটা সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্বের ঘটনাও। আর ‘বেশীরভাগ’ বলতে,আমি তাদের কথা বলছি যারা না রাজনীতিবিদ, পণ্ডিত, ধর্মযাজক বা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। আমি পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে আছি যার ফলে আমি জানি যে কর্তৃপক্ষ মানুষের আসল চিন্তার বিষয়ে সংবেদনশীল হন না। কিন্তু শুক্রবারের আক্রমণের যে রুপ মানুষ দেখেছে তা দীর্ঘদীন চেপে থাকা ঘৃণা, পক্ষপাত আর ধর্মীয় গোঁড়ামির ফল যা অনেক বছর ধরে আমাদের শ্বাসরুদ্ধ করে রেখেছে। এটার জন্যে দায়ী আমাদের মধ্যে তারা যারা এই সব অমানবিকতাকে যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করেন যদিও আমাদের সামনে নিরাপদ মানুষের উপরে ভয়ঙ্কর আক্রমণের চিত্র প্রমান হিসেবে বর্তমান।

সাংবাদিক ব্লগার নাভিন নাকভি তার ব্যক্তিগত ব্লগে লিখেছেন [4] যে কর্মী সমাজের প্রতিক্রিয়া আশার আলো যেখানে অনেকে আহমাদিয়া হত্যাকান্ডের ব্যাপারে কোন সমবেদনা জানায়নি। তিনি বলেছেন:

কেউ কেউ ভাবছেন যে এখনো আশা আছে। কর্মী সমাজ আছে। করাচির সুধী সমাজের কয়েকজন প্রেস ক্লাবের সামনে একত্র হয়েছিলেন আহমাদিয়াদের বিরুদ্ধে এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানাতে। তারা মাত্র আধ ঘন্টার জন্য একত্র হতে পেরেছিলেন, আর তাদের প্রতিবাদকে সংক্ষিপ্ত করতে হয়। কেন? কারন কাকতালীয় ব্যাপার ছিল যে তার পাশেই চলছিল ইজরায়েল বিরোধী এক প্রতিবাদ সভা। অবশ্যই এটা ছিল প্রেসক্লাবে লোকের ভিড়ের আসল কারণ। তারা সমর্থ হয়েছিল ঠেলে ঠুলে নিজেদের জায়গা করে নিতে। “এখন আমাদের সময়, তাই না?” তাদের চাপের মুখে মুক্তচিন্তাবিদরা, যারা ফেসবুকের ঘটনার কারনে মাত্র এক সপ্তাহ আগে একদল খুনি গুন্ডা দ্বারা আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছিলেন, মেনে নিয়ে স্থানত্যাগ করেছেন।

আদিল নাজাম আর ওয়ায়েস মুঘল পাকিস্তানিয়াত ব্লগে তাদের ক্ষোভ নীচের ভাষায় প্রকাশ করেছেন [5]:

যারা হত্যার আনন্দের জন্য হত্যা করে তাদের জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা গোলযোগ আর ভীতি ছড়াবার জন্য হত্যা করে, তারা হত্যা করে বিশ্বাসে নিজেদের ঘাটতি লুকাবার জন্য। তারা ঘৃণার আগুনে বাঁচে আর প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে হত্যা করে।

আহমাদিয়া ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বব্যাপী আর বিশেষ করে পাকিস্তানে টিকে থাকার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন যেখানে পাকিস্তানের নির্বাচিত সংসদ ১৯৭৪ সালে তাদেরকে অমুসলিম সংখ্যালঘু হিসাবে ঘোষণা করে। যদিও অনেকে মনে করেন যে রাষ্ট্রের অধিকার নেই মানুষের ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার, ধর্মীয় নেতারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন সংসদ যখন আহমাদিয়াদের অমুসলিম সংখ্যালঘু গোত্র হিসাবে ঘোষণা করে। আপনারা আহমাদিয়া সম্পর্কে পাকিস্তানী জনসাধারণের মনোভাব জানতে চাইলে আমার ব্লগ গুপ্পু.কম পড়তে পারে [6], যেখানে আমি লিখেছি:

বেশীরভাগ আপনাকে বলবে কতো ধর্ম বিরোধী এই সমাজ! তারা আপনাকে এমন কথাও বলতে পারে যা আপনি শোনেন নি। আর যখন তাদের তথ্যের সূত্র জিজ্ঞাসা করবেন, তারা আপনাকে বলবে তারা এটা তথাকথিত ‘আশিক এ রসুল’ মৌলানা সাহেবের কাছ থেকে শুনেছেন। আমি একজন ঝগড়াটে লোকের সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা বলবো যিনি চিৎকার করে বলছিলেন যে আহমাদিয়ারা হিন্দুদের থেকে খারাপ আর তাদের হত্যা করা উচিত। [..]

(তবে) আমি বিশ্বাস করি ধর্মীয় কারনে কাউকে হত্যা করার কোন যুক্তি নেই! আর আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে আপনি আসল আর সত্য মুসলিম আর আহমাদিয়ারা নন, তাহলে তাদের হত্যা না করে, আমরা কেন তাদের আমন্ত্রন জানাই না যাকে আমরা বলি সত্য ইসলাম তার প্রতি? কিসের ভয় আমাদের?