মিশর: রিমা ফাকিহ-এর সাথে ধর্মের কি সম্পর্ক?

রিমা ফাকিহ এক আরব অভিবাসী, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিস ইউএসএ নামক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এমন অনেকে রয়েছে, যারা তার বিজয়কে আরবের বিজয় হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে অনেকে তাকে মুসলমানদের জন্য লজ্জা হিসেবে বিবেচনা করছে এবং অন্যরা তার অতীত ইতিহাস খুঁড়ে বের করছে।

হাসান এল হেলালি তার নামের বিশ্লেষণ করে (আরবি ভাষায় ফাকিহ মানে ধর্মীয় বিচারক) তাকে অভিহিত করেছেন:

أجمل فقيه في الكون
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ফাকিহ হিসেবে

তার মন্তব্যে, তিনি বলছেন:

كده أنا ممكن أغير رأيي في الفقهاء
دانا يمكن كمان أوافق على موضوع ولاية الفقيه
بس يكون ريما، مش حد من الدجالين إياهم
এই বিষয়ে, আমি ধর্মীয় বিচারকদের ক্ষেত্রে আমার মন্তব্য পাল্টে ফেলব; আমি তাদের স্বাধীনতা দেবার পক্ষপাতি হব-কেবল রিমা যদি অনুষ্ঠানিকভাবে ফাকিহ হিসেবে গণ্য হয়, ওই সমস্ত প্রতারকেরা নয়, যারা এখানে রয়েছে।

জেইনোবিয়া ফাকিহ-এর বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট লিখেছেন, তিনি বলছেন:

আমি জানি না এটি কি ওবামার প্রভাব নাকি অ্যারিজোনা আইনের প্রভাব, কিন্তু ২০০২ সালে সংঘটিত ৯/১১ (টুইন টাওয়ার ধ্বংসের দিন) ঘটনার প্রভাবের পর আমরা বিশ্ব সুন্দরী (মিস ওয়ার্ল্ড) হিসেবে আজরা একিনকে পেয়েছি এবং ৭/৭ (লন্ডনের পাতাল রেলে বোমা হামলা) এর ঘটনার পর ইংল্যান্ডের সুন্দরী হিসেবে (মিস ইংল্যান্ড) হাম্মাসা কোহিস্তানিকে পেয়েছি। এছাড়াও গত বছর প্রাক্তন মিস ক্যালিফোর্নিয়া (ক্যালিফোর্নিয়ার সেরা সুন্দরী) ও মিস ইউএসএ (যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সুন্দরী) ক্যারিয়ার প্রেজিনস-কে নিয়ে বিতর্কের স্মরণ করতে পারি। আমি এই বিষয়ে প্রচুর বিতর্ক আশা করছি এবং প্রচার মাধ্যম ফাকিহকে অনুসরণ করছে এবং ইতোমধ্যে টিএমজেড (তারকাদের গুজব নিয়ে প্রকাশিত হওয়া ওয়েব পত্রিকা এবং টিভি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই মেয়েটিকে তাদের রাজকীয় সম্মানের খানিকটা প্রদর্শন করবে এবং তার আদিবাস এবং ধর্ম নিয়ে সংবাদ ও ব্লগে নেতিবাচক বর্ণবাদী মন্তব্যে ভরে গেছে। “ফক্স চ্যানেল এবং তার বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া কি দেখার জন্য আমার আর তর সইছে না!!”

আরব কোন মেয়ে, এমনকি কোন মুসলমান মেয়ে, একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে এটা আমাকে বিস্মিত করেনি, যে কোন সম্প্রদায় বা সমাজে আমরা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ দেখতে পাই এবং বিশ্বের যে কোন সমাজের মধ্যে আমরা ভিন্ন চেহারার ব্যক্তিকে আবিষ্কার করি। অবশ্যই আমি ওই মেয়েটির উপর ততটা আশা রাখি না, যার সৌন্দর্য এবং কমনীয় শরীর আরব এবং মুসলমান সম্প্রদায় সম্বন্ধে যে বাজে গতানুগতিক ধারনা তা পাল্টে দেবে, যদিও এটা প্রয়োজনীয় নয় যে, রিমা ফাকিহ নামক দুর্বল চিত্তের মেয়েটি, যার তার নিজস্ব সমাজের ব্যাপারে ভাসা ভাসা জ্ঞান রয়েছে, সে একটি দণ্ড বা পোলের উপর নাচে (পোল ড্যান্স-মূলত স্বল্প পোশাকে একটি লোহার দণ্ডের উপর নাচ), সে বিশ্ব শান্তির জন্য প্রার্থনা করুক বা না করুন, এই তরুণীটি আরেকজন আরব-আমেরিকান-এর প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

এটলাস শ্রাগস এর পামেলা জেলার রিমার পোশাক উন্মোচন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার ছবি আমাদের প্রদর্শন করছেন এবং মন্তব্য করেছেন।

এখানে মুসলমান বিশ্বের এগিয়ে যাওয়া আধুনিকতার সে এক প্রতীক। সে সব কাজ করে, যা শরিয়া এবং ইসলামিক বিশ্ব নিন্দা জানায়- সে এক মুক্ত নারী। ওই সমস্ত বোরখাকে জ্বালিয়ে দাও মেয়ে এবং এগিয়ে আসো। এখনকার পানি একেবারে সুন্দর।

এই পোস্টে যে সমস্ত মন্তব্য করা হয়েছে এবং যে ই-মেইল আমি পেয়েছি, তাতে মনে হচ্ছে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন যে আমি মনে করি না মিস ইউএসএ নামক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, আমেরিকান নারী বা সংস্কৃতির জন্য আদর্শ। রিমা ফাকিহ-এর ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক বিষয়টি আমি পেয়েছি, তা হল, মুসলমানরা নারী যা হয়ে উঠবে বলে আশা করা হয়, সে ঠিক তার বিপরীত দিকে গেছে- এবং যে সমস্ত উপায়ে ইসলাম নারীদের দমন করে ঠিক তার বিপরীতে, স্বাধীন ইচ্ছা, স্বাধীন নারী এবং স্বাধীন জনতা। এতে খারাপের কি আছে?

মুসলিমাহ মিডয়া ওয়াচ-এর ইয়ুসরা লিখেছে: ঘৃণাকারীরা ঘৃণাই করবে: মিস ইউএসিএ এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া

সে চারজন সোনালী কেশীকে (ব্লন্ড) পরাজিত করে, ঘটনাটি প্রচার মাধ্যমের সংবাদে তোলপাড় সৃষ্টি করে, তার পোশাক উন্মোচন করা কাজের (স্ট্রিপার-এর) অতীতশিয়া ধর্মাবলম্বী পরিবেশ থেকে উঠে আসার বিষয়টি নিয়ে।

এর ইতিবাচক দিক, একজন আদর্শবাদী মন্তব্যকারী তাকে বারাক ওবামার সাথে তুলনা করেছে। অন্য আরেকজন আরো অনেক দুর এগিয়ে গিয়ে বলেছে যে, তার জয় প্রদর্শন করছে যে “সত্যিকারের আরব আমেরিকান-এর চেহারা, গতানুগতিক যে সমস্ত ঘটনা আপনারা শোনেন, তা নয়” হ্যাঁ, বোরখা নয়,-বিকিনি! একটি গতানুগতিক ধারার বিপরীতে আরেকটি গতানুগতিক ধারা সৃষ্টি করা আধুনিক মানসিকতা নয়, তবে তা যাই হোক, এটাই বিষয়।

আরব-আমেরিকান সম্প্রদায় এবং একই সাথে অনেক আমেরিকান মুসলিমদের অনেকে ফাকিহ-এর এই বিজয়কে সমর্থন করেছে। অন্যদিকে অনেক মুসলিম কণ্ঠস্বর যে বার্তা পাঠিয়েছে, তাতে তাদের চিন্তার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। পরিহাস মূলক ব্যাপার হচ্ছে, এই ঘটনায় আমেরিকান খ্রিস্টান রাইটস (ডানপন্থী খ্রিস্টান সংগঠন) সবচেয়ে বেশি রাগান্বিত।

রক্ষণশীল ব্লগার ডেবিস স্কুলেসেল, রিমা ফাকিহকে মিস হেজবুল্লাহ বলে অভিহিত করেছে এবং তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদীরা তার জয়ের জন্য অর্থ প্রদান করেছে। তিনি এই অবিশ্বাস্য গল্পটিকে বয়ন করেন, সে সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি “ধিম্মি” (ধিম্মি-মূলত মুসলমান রাষ্ট্রে বাস করা অমুসলমান নাগরিক) বলে উল্লেখ করেন, এর সাথে তিনি অনুযোগ করেন যে মিস ওকলাহোমার অনৈতিকভাবে উদারপন্থীরা বিজয়ী করেছে, যারা জানে না আমেরিকার জন্য কোনটি সঠিক।

সম্পর্ক-সমিতির নির্বাহী প্রধান আহমেদ রেহাব একটি ভালো প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন: কেন একজন মুসলমানের বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, যখন সে ব্যক্তিটি কল্পনার বাইরে যে কোনভাবে মূলধারাকে ভেঙ্গে ফেলে, তা প্রাসঙ্গিক বা প্রেক্ষাপটের সাথে সম্পৃক্ত হোক বা না হোক? কৌতুক অভিনেতা ডিয়েন ওবেইদাল্লাহ হাফিংটন পোস্টে একটি বিনয়ী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন: এই দেশের অনেক ডানপন্থী আমাদের ঘৃণা করতে ভালোবাসে, দেশটির আদর্শ অবস্থানকে ভালোবাসার চেয়েও

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .