- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

কিউবা: গ্রেফতার পর্যবেক্ষণ

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, কিউবা, ইতিহাস, দেশান্তর ও অভিবাসন, নতুন চিন্তা, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, রাজনীতি

২০১০ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে অরলান্ডো জাপাতো তামায়োর মৃত্যু ঘটে [1]। তিনি বিগত ৪০ বছরের মধ্যে অনশনরত অবস্থায় মারা যাওয়া প্রথম কিউবান [1]। এরপর এই দ্বীপরাষ্ট্রটির পরিস্থিতি দৃশ্যত আরো উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়ায়। তামায়োর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শোভাযাত্রায় প্রায় ৩০ জনের মত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ব্লগার ইওয়ানি সানচেজ [2] ও স্বাধীনভাবে কাজ করা (ফ্রিল্যান্স) সাংবাদিক রামান ভেলাজকুয়েজ টারানজো [3], কালিক্সোটো রামন মার্টিনেজ এরিয়াস [3] এবং ইয়াসভানি আনজারদো হার্নানদেজ [4] উল্লেখযোগ্য।
ব্লগার ইওয়ানি সানচেজ এই ঘটনায়, ৬০ দিন পর্যন্ত সরকারি প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় থাকার পর, সম্প্রতি এক পুলিশ কর্মকর্তার মুখোমুখি হবার ঘটনা সম্বন্ধে ব্লগ করেছেন [5]

Hace más de 60 días envié a varias instituciones cubanas una denuncia por detención ilegal, violencia policial y encarcelación arbitraria. A partir de la muerte de Orlando Zapata Tamayo sucesivos arrestos ilegales impidieron a más de un centenar de personas participar en las actividades relacionadas con su funeral. Estuve entre los muchos que terminaron en un calabozo el 24 de febrero cuando nos dirigíamos a firmar el libro de condolencias abierto en su nombre. El grado de violencia empleado contra mí y la contravención de los procedimientos para recluir a un individuo en una Estación de Policía, me hicieron interponer una demanda con pocas esperanzas de que fuera ventilada en un tribunal. Durante todo este tiempo he esperado la respuesta tanto de la Fiscalía Militar como de la Fiscalía General, haciendo un esfuerzo por no sacar a la luz este testimonio revelador, evidencia dolorosa de cuán vulnerados son nuestros derechos.

৬০ দিন আগে আমি কিউবার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এই অবৈধ আটকাদেশ, পুলিশী আক্রমণ এবং অন্যায়ভাবে জেলে প্রেরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র পাঠিয়েছিলাম। অরলান্ডো জাপাতা তামায়োর মৃত্যুর পর অবৈধভাবে এই গ্রেফতারের সফলতা, একশরও বেশি লোককে তার মৃত্যুকে ঘিরে যে কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হয়েছিল, তাতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে। ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে যাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয় তাদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম, যখন তার নামে খোলা শোক বইতে আমরা স্বাক্ষর করতে যাই তখনই গ্রেফতার করা হয়। আমার বিরুদ্ধে যে মাত্রার অভিযোগ আনা হযেছে এবং থানায় একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য থানা যে ভাবে নিয়ম ভঙ্গ করেছে, তা আমি খুব সামান্য আশা নিয়ে এই অভিযোগ থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য দরখাস্ত করেছি এই কারণে যে, আদালতে তা শোনা হবে। আমি এই সকল সময় সামরিক আইনজীবী (মিলিটারি প্রসিকিউটর) ও সরকারি আইনজীবী (এটর্নি জেনারেল) উভয়ের জবাবের আশায় ছিলাম, এই সত্য উন্মোচনের ঘটনাকে চাপা দেওয়া, কি ভাবে আমাদের অধিকারকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে তার বেদনাদায়ক এক প্রমাণ।

সে তার মোবাইল ফোনে তার এই গ্রেপ্তারের বিষয়টি ধারণ করতে সক্ষম এবং কথোপকথন সহ এটি তার ব্লগে পোস্ট করে। এখান থেকে এটিকে নামাতে পারবেন এবং তার প্রতিলিপি (ট্রান্সক্রিপ্ট) অংশটি পাবেন এখানে [6][পিডিএফ আকারে], এতে আপনি অগ্নিপরীক্ষার এই পুরো ঘটনাটি শুনতে পাবেন, সেই মুহূর্ত থেকে, যখন পুলিশ সানচেজ এবং তার বোনকে রাস্তায় গ্রেফতার করতে উদ্যত হয় এবং এবং তাদের একটি ধান বহন করা গাড়ি বা ওয়াগনকে জোর করে উঠাতে চায়, বন্দিশালার রক্ষীদের মাঝে তাদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। নিচে এর সারাংশ রয়েছে।

YS: Esto es un delito ইএস (ইওয়ানি সানচেজ) : (এটা একটা অপরাধ.)

[Los golpes arreciaban] (প্রহার বাড়তে থাকে)

POLICE: Sí, sí, sí [dijo uno con ironía] পুলিশ:(হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ ([তীব্র ব্যঙ্গাত্মকভাবে একজন বলে ওঠে])

YS: ¡Qué cobardes son ustedes! (What cowards you are!) ইএস:(আপনারা এক কাপুরুষের দল!)

YS: ¿Este es el único método? (Is this the only method?) ইএস: (এটাই কি একমাত্র পদ্ধতি)

YS: ¡Suéltame! (Let go of me!) ইএস:(আমাকে যেতে দিন!)

YS: Están incurriendo en un delito de secuestro, coacción y violencia. No tienen ningún derecho. ইএস:(আপনারা অপহরণ করেছেন, জোর খাটাচ্ছেন এবং আক্রমণের মত অপরাধ করছেন। এসব করার কোন অধিকার আপনাদের নেই)

POLICE: ¡Pum, pum! ¡Cállate la boca, mi´ja! পুলিশ: (প্রিয়তমা! তোমার মুখ বন্ধ রাখ)

YS: “Pobrecitos. Ellos no saben que la palabra les esta taldrando el piso donde estan parados. Ellos no saben que van a tener que rendir cuentas enel futuro por todo esto”
ইএস: (অসহায় বেচারারা। কোন শব্দ ব্যবহার করতে হবে তারা তা জানে না, যে মাটির উপর তারা দাঁড়িয়ে আছে, নিজেরাই পায়ের নীচ থেকে সেই মাটি সরিয়ে ফেলছে। তারা জানে না এই সমস্ত কাজের জন্য ভবিষ্যৎ-এ তাদের জবাবদিহি করতে হবে)

এর কয়েক সপ্তাহ পরে অন্য আরেকজন ব্লগার ডানিয়া ভার্জেন গার্সিয়াকে [7] গ্রেফতার করা হয়। তাকে মান্টো নেগ্রো বা কালো ঘোমটা নামে পরিচিত মহিলাদের জন্য তৈরি কারাগারে পাঠানো হয়। ১৫ দিন পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই বিষয় সম্বন্ধে সে ব্লগ করে [8]:

Llegué a Manto Negro, una prisión de mujeres de mayor rigor, a las 6 y 30 de la tarde del viernes 23 de abril. Mi primera semana en la cárcel fue muy tensa…Muchas están a la espera de juicio o de que baje la petición fiscal. La espera puede demorar de siete meses a un año y más…
Había casos absurdos e injustos. Una joven que se resistió al acoso sexual de un Jefe de Sector de la Policía. Una cubana-americana acusada de contrabando de oro por viajar a Cuba con sus joyas. Una mujer, acusada de asesinato, que intentó defenderse de unos ladrones que penetraron en su casa y mataron al jardinero. Por algo las presas bromean que la Prisión de Mujeres de Occidente debía llamarse Prisión de Mujeres Inocentes….La tarde que llegué a la prisión, una presa se cortó las venas en la celda. Estaba sentenciada a 10 meses por vender jabitas de nylon. Hacía dos meses que estaba en la cárcel y tenía problemas mentales. Al lunes siguiente se suicidó…Desde que llegué a la prisión, fui tratada como si fuera una espía del gobierno norteamericano. Las guardias me hostigaban y me miraban con odio. Según decían, los yanquis me habían enviado para que averiguara y sacara a la luz todo lo que ocurría en la prisión…Las guardias le decían a las presas que yo era una disidente y periodista independiente, una peligrosa mercenaria, para intentar virarlas en contra mía…

আমাকে ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে মান্টো নেগ্রো (কালো ঘোমটা) নামের প্রচণ্ড সুরক্ষিত মহিলা কারগারে পাঠানো হয়। কারাগারের প্রথম সপ্তাহটা আমার খুব দুঃশ্চিন্তায় কেটেছে। অনেকে বিচার ও শাস্তির মেয়াদ কমানোর জন্য আদালতে যাবার অপেক্ষায় রয়েছে। কখনো কখনো এই অপেক্ষার পালা সাত মাস বা এক বছর বা তার চেয়ে বেশি হতে পারে।

এমন অনেক মামলা রযেছে যা অবিশ্বাস্য এবং অনৈতিক। পুলিশের এক বড় কর্তার যৌন নির্যাতনের চেষ্টা প্রতিহত করার কারণে এক তরুণী কারগারে। এক কিউবান আমেরিকান ভদ্রমহিলাকে তার গহনার কারণে অভিযোগ করা হয়েছে যে তিনি কিউবাতে ভ্রমণ করার সময় সোনা পাচারের চেষ্টা করছেন। একজন মহিলার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি চোরদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন, যে চোরেরা তার বাগানের মালিকে খুন করেছিল। বেশ কিছু বন্দি রসিকতা করে বলতো, ওয়েস্টার্ণ ওমেন প্রিজনকে (পশ্চিম এলাকার রমণীদের বন্দিশালা) অবশ্যই ইনোসেন্ট ওমেন প্রিজন (নিষ্পাপ নারীদের জন্য তৈরি করা কারাগার).. যেদিন সন্ধ্যায় আমি কারাগারে এসে পৌঁছাই, সেদিন এক বন্দি তার শিরা কেটে ফেলিছিল। নাইলনের তৈরি বাজারের ব্যাগ বিক্রির জন্য তাকে দশ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। দুই মাস ধরে সে কারাগারে বন্দি এবং তার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। পরের সোমবারে সে আত্মহত্যা করে…যখন আমি কারাগারে এসে হাজির হই তখন থেকে আমার সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারে এক গুপ্তচরের মত আচরণ করা শুরু হয়। কারারক্ষীরা আমাকে হযরানী করা শুরু করে এবং তারা ঘৃণার চোখে আমাদের দিকে তাকতে শুরু করে। তাদের মতে, এই কারাগারে যা কিছু ঘটে তা গোচরে আনার জন্য ইয়াঙ্কিরা আমাকে (যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যাঙ্গাত্মক নাম) এখানে পাঠিয়েছে। গার্ডরা অন্য বন্দিদের বলত যে আমি একজন ভিন্নমতাবলম্বী এবং স্বাধীনভাবে কাজ করা সাংবাদিক, এক বিপজ্জনক ভাড়াটে যোদ্ধা। তাদের, আমার বিরুদ্ধে খেপিয়ে দেবার জন্য তারা এই কাজ করত।

ইওয়ানি সানচেজ, গার্সিয়ার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে [9] এবং এই ভিডিওটি ইউটিউবে পো্স্ট করেছে; এটা প্রায় ১০,০০০-এর সামান্য বেশি ব্যক্তির দেখেছে।

প্রবাসী ব্লগ আন কমনসেন্স [10] লিখেছে:

প্রতিদিন, কিউবার গুপ্ত পুলিশ দ্বীপের কোন এক অংশের কোন এক বাসার দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে এবং একনায়ক ক্যাস্ট্রো বিরোধী একজনকে ধরে জেলে পুরে দেয়। অনেক সময় তাদের কয়েক ঘন্টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়, অনেক সময় আর এ ধরনের ঘটনা ঘটে না।

সম্প্রতি যাদের জেল বন্দি করা হয়েছে তাদের মধ্যে কালিক্সোটো রামন মার্টিনেজ এরিয়াস [11] একজন। তিনি হাবলেমস প্রেসের হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা এক সাংবাদিক। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তার বাসগৃহের দরজা ভেঙ্গে বাসায় প্রবেশ করে ২৩ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করে [12]। সেখানে সে ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তামায়োর কবর প্রদানের ঘটনার সংবাদ তৈরি করছিল। এরিয়াসকে এখনো ছেড়ে দেওয়া হয়নি। ইয়াসভানি আনজারদো হার্নানদেজ [11], বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি স্বাধীন অনলাইন পত্রিকার প্রক্তাণ প্রধান। ২৪ এপ্রিল তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ছয় ঘন্ট ধরে তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। সরকার বিরোধী এক গ্রাফিতির জন্য তাকে আটকানো হয়েছিল। এক্টিভিস্ট দল ডামাস ডে ব্লাঙ্কোর সাপ্তাহিক পদযাত্রার সংবাদ প্রকাশের কারণে কার্লোস সেরপা মাসেইরাকে হয়রানী করা হয়-ইতোমধ্যে ডামাস নিজেরাই নিজেদের [13] ভয়াবহ হয়রানীর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি।

যেমনটা হাভানা ভিত্তিক আইনজীবি ও স্বাধীন ব্লগার লারিৎজা ডাইভারসেন্ট [14] লিখেছে:

কিউবাতে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ধরণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভূত উপায়টি হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা করা। এই কাজের জন্য আপনাকে বেশ কয়েকটি ধারা অনুসরণ করতে হবে। প্রথমত আপনি যে স্থানে রয়েছেন তার চারপাশে একবার তাকাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আসলে আপনি কার সাথে কথোপকথন চলানোর চেষ্টা করতে চাইছেন তা বের করতে হবে। এবং তৃতীয়ত, আপনাকে নিরবে আলাপ চালাতে হবে, প্রতীক এবং সঙ্কেত ব্যবহার-এর মাধ্যমে.. বর্তমান অপরাধ নির্ধারণ ব্যবস্থা রাষ্ট্রের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মত প্রকাশ ও মন্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদান করে। অন্য কথায় কিউবাতে সমালোচনা করা সম্ভবত একটা অপরাধ।

এমন একজন যার আচরণ এবং শব্দ পুরোপুরি সঙ্কেতিক, যদিও তার গ্রেফতারের হুমকির ঝুঁকি থেকে যায়- কিউবাতে “বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করা” এক ধরনের অপরাধ- এ ক্ষেত্রে অনুমান করা কঠিন যে, সম্প্রতি ঘটা এই আটকাদেশের কাহিনী কি আর্ন্তজাতিক মনোযোগ থেকে দ্রুত হারিয়ে যাবে এ কারণে যে, দ্বীপরাষ্ট্রটিতে কেবল অনশন ধর্মঘটকারীর মৃত্যুর অনুশীলন করা হচ্ছে।