যুক্তরাষ্ট্র: হেম্প ইতিহাস সপ্তাহ, উদ্ভিদ এবং পৃথিবীকে রক্ষা করা

Cannabis plant differences

গাঁজা তৈরির জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন গাছ এখানে দৃশ্যমান। এর মধ্যে কেবল সি.সাতিভা (বামে) নামক উদ্ভিদটি বাণিজ্যিক ভাবে হেম্প চাষের উপযোগী, কিন্তু এই গাছটিও নানা ধরনের ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে।

কঠিন এক অর্থনৈতিক সময়ে, কেন অনেকে প্রচণ্ড লাভজনক এবং উপকারী একটি গাছের বাণিজ্যিক চাষ বন্ধ করে রাখে? যখন এই উদ্ভিদ চাষের ক্ষেত্রে প্রায় কোন কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না এবং এই গাছ থেকে পোশাক, খাবার এবং একে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এই উদ্ভিদ পেট্রোলিয়াম জাতীয় জ্বালানী, সূতা এবং কাঠের মণ্ডের বিকল্প বস্তু সরবরাহ করে।

এই গাছটির নাম হেম্প। এটি শণ জাতীয় উদ্ভিদ ({ক্যানিবিস জেনাস-যে সমস্ত উদ্ভিদ থেকে গাঁজা জন্মায় সেই প্রজাতির গাছ}, যার ফুল, বীজ এবং আঠা থেকে মাদক দ্রব্য তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রে যে কারণে এই উদ্ভিদের চাষ নিষিদ্ধ তা আর কিছুই নয় রাজনীতি। এই গাছের কিছু বস্তু বা উপাদান মারিজুয়ানা নামক মাদক তৈরিতে ব্যবহার হয়, যা এক হালকা কিন্তু অবৈধ মাদক, যা বেশিরভাগ রাজনীতিবীদ এর থেকে দুরে রাখতে চায়।

১৭-২৩ মে, ২০১০-এ, হেম্প উদ্ভিদ ইতিহাস সপ্তাহ পালন করা হয়। হেম্প ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশন এবং ভোট হেম্প এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। হেম্প চাষ অনেক দেশে এখন বৈধ এবং এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে এই উদ্ভিদের চাষ বৈধ ছিল।

পুরো উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে অনলাইন-এর সব উপাদান ও সামাজিক প্রচার মাধ্যমের সামগ্রিক সুবিধা নেওয়া, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিক ভাবে হেম্প চাষের উপর যে প্রতিবন্ধকতা, তা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এটি করা হচ্ছে শিক্ষা, আইনী প্রক্রিয়া এবং তার সপক্ষে ওকালতি করার মাধ্যমে। যতদুর জানা যায় কেবলমাত্র ১৬ টি অঙ্গরাজ্য আইনগতভাবে বাণিজ্যিক পর্যায়ে হেম্প চাষ চালু করেছে। হেম্প ইতিহাস সপ্তাহ আহ্বান জানিয়েছে এক পোস্ট কার্ডে স্বাক্ষর করা ও সেটিকে রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ও এটর্নি জেনারেল হোল্ডারকে পাঠানোর জন্য, যাতে এ ব্যাপারে কেন্দ্রের নীতি পরিবর্তিত হয়। এর সমর্থকরা সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে ২০০টির মত অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছে

ইউটিউব চ্যানেলের এই ভিডিওতে বিখ্যাত কিছু ব্যক্তির সাক্ষাৎকার রয়েছে (যেমন ড: এন্ড্রু ওয়েইল) যারা হেম্প এর বাজার বৃদ্ধির কারণে, বাণিজ্যিক ভাবে তা উৎপাদনের কথা বলছে:

“ইউ+ হিস্টোরিকাল সাইট” পুরস্কার-এর জন্য জমা দেওয়া সমস্ত ছবির মধ্যে থেকে একটি মাত্র ছবি দেখানো হল:

হেম্প গাছ থেকে তৈরি হ্যান্ডব্যাগ

হেম্প গাছ থেকে তৈরি হ্যান্ডব্যাগ (হাতে বহন করা থলে): আর্থডে ২০১০-উপলক্ষ্যে বানানো, এই ছবি এখানে প্রদান করেছেন আরলিন নিলসন।

ফেসবুকে, হেম্প ইতিহাস পাতার এখন প্রায় ১,০০০ জন সমর্থক রয়েছে, এর সাথে সর্ম্পকিত ‘ভোট হেম্প’ (হেম্পকে ভোট দিন) পাতাটিকে ৬,৫০০ জন ব্যক্তি পছন্দ করেছে। এর সাথে এখানে নানা ধরনের মন্তব্য ও পরামর্শ রয়েছে। লোকজন এখানে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে, যেমন:

দুপুরের খাবার খুঁজছেন? একটু দাঁড়ান এবং প্রতিদিন সকাল ১০.০০ থেকে দুপুর ২.০০ পর্যন্ত ওরেনকো স্টেশনের কাছে নিউ সিজনস মার্কেটে হেম্প থেকে তৈরি নমুনা খাবার গ্রহণ করুন, হেম্প ইতিহাস সপ্তাহকে সম্মান জানানোর জন্য।

এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনেক নেট নাগরিকরা ব্লগ পোস্ট এবং টুইট করেছে। এছাড়া তারা হেম্প সম্বন্ধে স্থানীয় পর্যায়ে জ্ঞাত সামান্য যে ইতিহাস রয়েছে, সেগুলো সবাইকে জানাচ্ছে। ওট্টা দি ওয়ে ব্লগ বলছে:

পেনসিলভেনিয়া প্রদেশে, বিশেষত ইয়র্ক এবং ল্যাঙ্কাস্টার প্রদেশের কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য হেম্প চাষ অনেক বড় ব্যবসা ছিল। সুসকুয়েহান্না নদীর নিকটে অবস্থিত হওয়ায় এই দুই অঞ্চল পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের হেম্প চাষের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। ল্যাঙ্কাস্টারের প্রতিটি প্রশাসনিক এলাকায় (টাউনশিপে) হেম্পের চাষ হত, বিশেষ করে হেম্পফিল্ড নামক এলাকায়। ১৭২০ থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত ল্যাঙ্কাস্টার প্রদেশে ১০০ টি কারখানা ছিল যেখানে হেম্পের সূতা তৈরি হত। এই সমস্ত সুতা অনেক কনেসটোগা ওয়াগন (বড় আকারের যান, সাধারণত পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হত) ঢাকতে সাহায্য করেছিল, যে সমস্ত ওয়াগন পেনসিলভেনিয়ার, কনেসটোগা নামক ছোট্ট শহরে তৈরি হত।

যদি আপনি না জেনে থাকেন, তা হলে জানুন, হেম্প ইতিহাস সপ্তাহ অনুসারে “জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, জন এডামস, হেনরি ফোর্ড ও অন্য অনেক বিখ্যাত আমেরিকান সক্রিয়ভাবে এর সাথে যুক্ত ছিল এবং তারা প্রকাশ্যে বাণিজ্যিকভাবে হেম্প শিল্প গড়ার পক্ষে ওকালতি করেছেন”। অন্যদিকে টমাস জেফারসন তার মনটিচেল্লোর বাসভবনে হেম্পের চাষ করত। যদি এই সমস্ত গুঞ্জনও যদি হেম্প গাছের পৃথিবী-বান্ধব ব্যবহারের বিষয়টির উপর বিশ্বাস তৈরি না করে, তারপরেও সারা বিশ্বে হেম্প গাছ জন্মানোর জন্য অনলাইনে যে কর্মকাণ্ড, তাকে সমর্থন করার জন্য প্রচুর সম্পদ এবং পরামর্শ রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .