ইথিওপিয়া: অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এক্টিভিস্টরা নতুন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করছে

যখন ২৩ মে, ২০১০-এ নির্ধারিত সংসদ নির্বাচনের জন্য ইথিওপিয়া নিজেকে প্রস্তুত করছে, সে সময় সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দু'টি সংগঠন নতুন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করা শুরু করেছে। ইথিওপিয়া কমন বর্ডার্স একটি সম্প্রদায় ভিত্তিক সংগঠন। এই কাজের জন্য তারা সমাজিক নেটওয়ার্ক সাইট ফেসবুক ব্যবহার করছে। এটি তারা করছে তাদের প্রচারণার এক অংশ হিসেবে। অন্যদিকে ইথিওপিয়া ভোট মনিটর যা ইথিওপিয়ার সুশীল সমাজের সংগঠনের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প তারা একটি ওয়েব ভিত্তিক স্থাপনা বা প্লাটফর্ম তৈরি করেছে, যাতে তারা নির্বাচনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং তা তারা একটি মানচিত্রের মধ্যে দিয়ে বিষয়টিকে দৃশ্যমান করতে পারে।

কমন বর্ডার্স-এর ফেসবুকের পাতায় “ইথিওপিয়ায় একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করার” আহ্বান জানান হয়। ইতোমধ্যে এই পাতার ২,৯০৪ জন সমর্থক তৈরি হয়েছে এবং এখানে আলোচনার জন্য ২৩টি বিষয় পোস্ট করা হয়েছে।

এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে সংগঠনটি নিজেদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এ ভাবে বর্ণনা করছে:

ইথিওপিয়ার কমন বর্ডার্স একটি সম্প্রদায়ভিত্তিক, অরাজনৈতিক, অলাভজনক সামাজিক সংগঠন, যা নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজে নিয়োজিত। ইথিওপিয়ার কমন বর্ডার্স তার সদস্যদের জন্য এক আলাদা সুযোগ প্রদান করছে। এর সদস্যরা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করার মধ্যে দিয়ে ইথিওপিয়ার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক পরিবেশের উপর অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা লাভ করতে পারবে।

বর্তমান যে রাজনৈতিক পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া, তার মধ্যে দিয়ে কি আপনি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করতে পারেন? এই দলটি তাদের ফেসবুক সদস্যদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে।

এর উত্তরে দলের সদস্যরা যা বলেছে তার কিছু নমুনা:

ব্যাপারটা সত্য, আমরা স্তালিনপন্থী এক আদিবাসী জান্তার নিয়ন্ত্রণে, যাদের জনতার দাবি ও ইচ্ছার প্রতি কোন সহনশীলতা নেই- এখানে ২০১০-এর “নির্বাচনের” উপর একটি সংযোগ বা লিঙ্ক রয়েছে।

এখানে গণতন্ত্রের এক পরিষ্কার সংজ্ঞা রয়েছে এবং এই ধারণা খুব সাধারণ! টিপিএলফ (টিগরেয়ান পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট- ইথিওপিয়ার একটি রাজনৈতিক দল) সংস্করণ যা ইথিওপিয়ায় প্রবেশ করানো হয়েছে, এক ফ্যাসিবাদ বা প্রতিক্রিয়াশীল ধারা – তা মোটেও গণতান্ত্রিক নয়।

এখানে লম্বা সময় ধরে কোন অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব না এবং এর আগে তা হয়নি। এখানে যাদুকরী এক ঘটনা রয়েছে- আমরা সকল বিরোধীদের অংশ নেবার জন্য চাপ প্রদান করছি এবং তারা আমাদের জন্য যে স্বপ্ন দেখছে তা নিজেদের দেখাচ্ছি, সকল প্রতারণাপূর্ণ ভোট হিসেব করা, তার যা পেয়েছে। এরপর আমাদের প্রশ্ন শুরু হবে-তাদের আমরা বলবো গোল্লায় যাও, কিন্তু তারপরেও এখনো আমাদের সময় হয়নি তাদের কোন একজনের পক্ষে যাবার। যেমন ওএলফ দলটি ৯৩ সালে সংসদে শতকরা ৬০ ভাগ আসন পেয়েছিল। কিন্তু যখন “এক জাতি এক সেনাবাহিনীর” এর চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়, তারা সংসদ ছেড়ে চলে যায় এবং তারপর থেকে তারা তাদের সামরিক বিভাগটিকে কার্যক্ষম দেখতে চায় এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেবল আপনাকে বলছি- গত ৪ দশকে তারা যে কল্পনা নিয়ে এসেছে, সেই চিন্তার প্রতি প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করার আগেই তাকে বিশ্লেষণ করা উচিত।

কিন্তু বিশেষ করে ইথিওপিয়ায়, বর্তমান শাসক দল ক্রমাগত যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে সমর্থন লাভ করে যাচ্ছে, এক আদর্শের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ, কাজেই দেখা যাচ্ছে যে সরকার পরিবর্তন এখন সঠিক কাজ বলে মনে হচ্ছে না। এটা জনতাকে বর্তমান এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যাবে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি ইথিওপিয়ার সরকারের দিকে বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে তাকাই তখন, যখন তারা সোমালিয়ার আইসিইউ (ইসলামিক কোর্ট কাউন্সিল, সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় তৈরি হওয়া ইসলামপন্থীদের একটি অংশ)-কে ছিন্নভিন্ন করে এবং ভয় ধরানো প্রচারণাকে যৌক্তিক করার জন্য ওগাডেন সংঘর্ষ নিয়ে এক শঙ্কা তৈরি করে। এর শেষ কথা হচ্ছে নির্বাচন অবাধ এবং নিরপেক্ষ হবার কোন সম্ভাবনা নেই, যদি এই পদ্ধতিতে তার সকল লোকদের না অর্ন্তভুক্ত করে।

ইথিওপিয়া ভোট মনিটর আরো অনেক স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্রের জন্য নাগরিক সংবাদ প্রচার (সিটিজেন রিপোর্টিং) ব্যবহার করার ইচ্ছে পোষণ করছে:

এটা আমাদের সম্পর্কে পাতা, খণ্ডাংশ পাঠ করুন:

ফ্রী এবং ওপেন সোর্স প্রযুক্তির ক্ষমতার জন্য এদেরকে ধন্যবাদ, যার মাধ্যমে আমরা এসএমএস (শর্ট মেসেজ বা সংক্ষিপ্ত বার্তা), ই-মেইল অথবা ওয়েবের মাধ্যমে বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা তথ্য সংগ্রহ করতে পারি এবং এটিকে একটি মানচিত্রে পরিবেশন ও সময়সূচী দেখতে পারি।

ইথিওপিয়ান ভোট মনিটর ইথিওপিয়ার সুশীল সামাজ সংগঠনের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প, যা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সহায়তা লাভ করছে ডিজিটাল ডেমোক্রেসির কাছ থেকে, উশাহিদি.কম পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে।

এই প্রকল্প উদ্দেশ্য মাঠ কর্মের মাধ্যমে প্রধান তথ্য ও বার্তা ধারণ করা, দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ সুবিধা তৈরি করা, তথ্য সংগ্রহ করা যেগুলো গণ সাইট (পাবলিক সাইটগুলোতে)-এ মানচিত্রের আকারে তৈরি করা যাবে, সংঘর্ষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, কারো স্বর হিসেবে কাজ করা দল (এডভোকেসি গ্রুপ) এদের উপর ক্ষমতার অপব্যবহারের খবর দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রগুলোকে নতুন প্রচার মাধ্যমের তুলে আনা ।

ইথিওপিয়া ভোট মনিটর এ কাজে উশাহিদি প্লাটফর্ম ব্যবহার করছে। উশাহিদি একটি সোয়াহিলি শব্দ। যার মানে “সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান”। এটি এমন এক ওয়েবসাইট যা ২০০৮ সালের শুরুতে কেনিয়ার নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষের সংবাদ মানচিত্র তৈরি করার জন্য প্রাথমিক ভাবে উন্নয়ন করা হয়। এই প্লাটফর্ম বা স্থাপনা যে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনে জন্য উন্মুক্ত, যে বা যারা সংবাদ সংগ্রহ করতে চায় এবং সেগুলোকে চোখের সামনে দেখতে চায় এটি তাদের জন্য উন্মুক্ত।

নাগরিকরা ইথিওপিয়া ভোট মনিটরে নির্বাচন সংক্রান্ত সংবাদ প্রদান করতে পারবে ইথিওপিয়া@ডিজিটাল-ডেমোক্রেসি.অর্গে ইমেইল পাঠিয়ে, হ্যাশটাগ/এস ইথিওপিয়া, অথবা ইথিওপিয়াভোটরিপোর্ট-এ একটি টুইট পাঠিয়ে অথবা ওয়েবসাইটে একটি ফরম বা নির্দেশে লিখিত তথ্য পূর্ণ করে।

এছাড়াও জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারেও এই প্রকল্পটির উপস্থিতি রয়েছে

২০০৫ সালে শেষবার যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার পরিসমাপ্তি হয় দাঙ্গা পুলিশ ও বিরোধী সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং অযৌক্তিক ভাবে বিরোধী রাজনীতিবিদদের গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে। শঙ্ক রয়েছে যে এ বছর পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গড়াতে পারে। এ বছরের মার্চ মাসে এক বিরোধী নেতা গেবরু আসরাটকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। বিরোধী নেতার দাবি করেছেন যে, তার এই হত্যাকাণ্ড নির্বাচনের পূর্বে ভয় প্রদর্শন এবং হয়রানি করার জন্য করা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .