ভারত: টুইটার ব্যবহারকারী মন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে

শশী থারুর। ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স এবং মেডেফ এর সৌজন্যে

শশী থারুর। ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স এবং মেডেফ এর সৌজন্যে

ড: শশী থারুর হচ্ছেন একজন লেখক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী আর জাতিসংঘের যোগাযোগ ও গণমাধ্যম শাখায় আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে কাজ করেছেন। গত বছরের ভারতের সংসদ নির্বাচনে তিনি কেরালার থিরুভানান্থাপুরাম থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন আর পরে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার কার্য মেয়াদে তিনি মন্ত্রী হিসাবে জনপ্রিয়তা পান আর একই সাথে রাজ্য শাসনের ব্যাপারে টুইটারে (যা প্রায় ৭৩৮০০০ জন লোক অনুসরণ করে থাকেন) নিয়মিত মতামতের জন্য সমালোচিতও হয়েছেন। তার খোলামেলা টুইটারবার্তা তথাকথিত রাজনীতিবিদদের বিরক্ত করত আর ভারতীয় জনতা পার্টি্র (বিজেপি) নেতা এম. ভেঙ্কাইয়াহ নাইডু তাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন এই বলে, ”এই টুইট করা আবার কি? বেশী টুইট করলে বাদ যেতে হবে।“

তবে তার নিজের টুইটার বার্তা তার পতনের কারণ হিসেবে দাড়ায় নি, বরং আইপিএল এর কমিশনার ললিত মোদির বেশ কিছু অভিযোগ সহকারে করা বেশ কিছু টুইটার বার্তাই এর পেছনে ছিল। গত ১৮ই এপ্রিল ২০১০ তারিখে থারুরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় দুর্নীতি আর অফিসের অসৎ ব্যবহারের মাধ্যমে কোচিতে ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর এক নিলামকারী প্রতিষ্ঠানকে সহায়তার অভিযোগের জন্য।

লিনাস ফার্নান্ডেজ এই কেলেঙ্কারিকে আইপিএল এর টুইটারগেট নাম দিয়েছেন। আইপিএল এর সামনের বছরের ট্রর্নামেন্টের জন্য দুটো ফ্রাঞ্চাইজের মধ্যে একটি ছোট শহর কোচির পক্ষে জেতার জন্য ‘পরামর্শদাতা’ ছিলেন থারুর, যেটা রডেভু নামে একটা কন্সোর্টিয়াম আয়োজন করেছে। আশার বাইরে ওই কন্সোর্টিয়াম নিলামে জিতে যায় সর্বোচ্চ বিড দিয়ে (৩৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। আর তারপরেই এটা জানা যায় যে জনাব থারুরের বান্ধবী সুনন্দা পুশকর ওই কন্সোর্টিয়ামের সদস্যা আর তিনি কন্সোর্টিয়াম থেকে একটা ইকুইটি ডিল পেয়েছিলেন। তাকে অভিযুক্ত করা হয় এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে এই কথা জানাতে ব্যর্থ হবার কারনে।

অফস্টাম্পড- সেন্টার রাইট ইন্ডিয়ান পলিটিক্স ব্লগ জানিয়েছে:

প্রধানমন্ত্রী মান মোহন সিং প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করেছেন যাতে তিনি শশী থারুরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন ইউনিয়ন ক্যাবিনেট থেকে। এটা প্রথম বড় ধরনের অপবাদ যেটা মান মোহন সিং ও সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বের ইউপিএ সরকার সম্মুখীন হচ্ছে।

এটা বেশ কয়েক মাস ধরে পরিষ্কার ছিল যে দলের মধ্যে থারুরকে নিয়ে গভীর অসন্তোষ ছিল দলে আর তার চাকরি কেড়ে নেয়ার সুস্পষ্ট প্রচারণা ছিল।

প্রেম পানিকার মন্তব্য করেছেন:

দল মন্ত্রীকে বিসর্জন দিয়েছে, আর অভ্যন্তরীণ চাহিদার উপরে ভিত্তি করে নীতির খেলা দেখিয়েছে।

মাইলস টু গো ব্লগের লেখিকা জয়া ঝা জিজ্ঞাসা করেছেন, ”থারুর আসলেই কি করেছেন যে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হল?”:

ঈশ্বরের দোহাই- কেউ কি আমাকে বলবেন যে থারুর আসলে কি ভুল করেছেন? হয়ত তিনি রদেভু স্পোর্টস থেকে সুনন্দা পুশকরকে সামনে রেখে টাকা নিয়েছেন, কিন্তু এর বদলে কি করেছেন? কোথায় তিনি প্রভাব বিস্তার করেছেন? কোথায় তিনি প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন? পুরো জিনিষটি থেকে মনে হচ্ছে যুক্তি গায়েব!

দেশিক্রিটিকস ব্লগে পুর্বা লিখেছেন:

এই পরিস্থিত এমন কোন শ্রেনীকক্ষের সমান যেখানে একদল কঠোর শিক্ষক কোন ছাত্রকে শাস্তি দেন পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে অস্বস্তিকর প্রশ্ন করার সাহস দেখাবার জন্য। দূর্ভাগ্যজনক যে বিশ্বের সব থেকে বড় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলো একনায়ক দ্বারা পরিচালিত হয়।

অন্যদিকে রেট্রিবিউশন্স ব্লগ মনে করে যে শশী থারুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আইনী দিক থেকে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও তাকে যেতে হবে নীতিগত কারনে:

আইনগত ভাবে কথা বললে, শশী থারুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশ দুর্বল। যদিও তর্ক করা যায় যে তার সঙ্গী সুনন্দা পুশকর কোচি কন্সোর্টিয়ামে ভালো ডিল পেয়েছেন, এই ধরনের লেনদেন বেআইনি না। জনাব থারুরের সংশ্লিষ্টতা খুব বেশী হলে সরাসরি না – কারন, তিনি ভারতের রাজনীতিতে এখনো নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে সচেষ্ট একজন রাজনীতিবিদ, তার রাষ্ট্রের জন্য একটা আইপিএল দল খুব ছোট ব্যাপার না। আর তার পরিচিত কেউ যদি এই চুক্তি থেকে লাভ করে থাকেন- এটা সেই ধরনের ঘটনা যেখানে অস্পষ্ট সীমানায় বসে নীতি আর আইনের মধ্যে পার্থক্য খোঁজা হয়।

আগের যুগের প্রতিনিধিদের মতো নতুন যুগের রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করতে পারেন না। আর তারা যদি তা করেন তাদেরকে ফেলে দেয়া দরকার।

শশী থারুরের পদত্যাগের পরে তার পরিবার আর বন্ধুরা অনলাইন একটা প্রচারণা শুরু করেছেন সাপোর্টথারুর.অর্গ নামে আর এটা নেটিজেনদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ১৯০০০টি সমর্থনের মাধ্যমে।

শশী থারুর এই টুইটের মাধ্যমে তার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন:

শশী থারুরের টুইট বার্তা

এখানে প্রমোদলাইফ কর্তৃক ইউটিউবে তুলে দেয়া একটি ভিডিও দেয়া হল যেখানে অভিযোগ অস্বীকার করে থারুরের ভাষ্য আছে সংসদে: ”আমার আত্মা পরিষ্কার, আমি কিছু ভুল করিনি।“

অফস্ট্যাম্পড ব্যাখ্যা করেছেন কেন সাপোর্টথারুর.অর্গ এর মূল্য আছে:

শশি থারুর সংসদের তার পক্ষে যখন কথা বলার চেষ্টা করছেন, এটা দেখার মতো হবে যে সাপোর্টথারুর.অর্গ এর ডিজিটাল কাজ কিভাবে রুপ নেয়।

গোইং সোশাল নাউ ব্লগের শিভ সিং বিতর্ক করেছেন যে থারুরের পদত্যাগের কি অর্থ হতে পারে বিশ্বে টুইটার করা রাজনীতিবিদদের জন্য:

এখানে একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ যিনি নতুন মিডিয়া ব্যবহার করছিলেন সব মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য আর তাতে ভালোই সফল হচ্ছিলেন। এটা গণতন্ত্রের ভবিষ্যত মনে হচ্ছিল। কিন্তু এটা হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল।

তাহলে এসবের মানে কি? বিশ্বব্যাপী রাজনীতিবিদরা বুঝতে পেরেছেন যে টুইটার তাদের জন্য যোগাযোগের খুব শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। তারা এটাও বুঝতে পারছেন যে অন আর অফ দা রেকর্ড কথা বলার মধ্যে পার্থক্য আছে। অনেকে এটাও বুঝতে পারছেন যে সরকারের অংশ হিসাবে, তারা খুব সরু একটা পথ দিয়ে চলছেন যেখানে তারা মানুষকে তারা আসলেই যা ভাবেন তাই বলবেন (যেখানে টুইটারের অবদান আছে) নাকি যা বলা উচিত তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন। রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারছেন যে তাদের এলাকাবাসী তাদের টুইট পড়া পছন্দ করে আর তাদের স্থানভিত্তিক মতামত পাচ্ছে। এর ফলে রাজনীতি আর নীতি তৈরি অনেক বেশী ব্যক্তিগত, বাস্তব আর সবাইকে জড়িত করে হচ্ছে (হয়ত এর ফলে জনগনের অংশগ্রহন বাড়বে)। কিন্তু শশী থারুরের উদাহরণের মাধ্যমে একই রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারবেন যে টুইটারের মতো সামাজিক মিডিয়া প্লাটফর্ম খুবই বিপদজনক হতে পারে তাদের জন্য যখন এটা অপবাদ প্রকাশের জন্য বা তাদের কথা না রাখা তুলে ধরে।

2 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .