চিলি: টিভি বিজ্ঞাপনে জনপ্রিয় একটি গানকে বিতর্কিতভাবে ব্যবহার করা

চিলিতে, একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এটি আলমাসেনাস প্যারিস নামের একটি চেইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের (চেইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর-একই নাম ও মালিকানার বিভিন্ন এলাকায় এবং শহরের বড় বিপণি বিতান), যারা তাদের বিজ্ঞাপনে “টোডস জান্তোস (একসাথে সবাই)” [স্প্যানিশ ভাষায়] নামের গানটি ব্যবহার করেছে। এই গানটি জনপ্রিয় লোক সঙ্গীত ব্যান্ড দল লস জেইভাসের গাওয়া, কিন্তু তাদের অনুমতি ছাড়াই তা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়। এই বিষয়টি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট (সৃষ্টিশীল/ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির স্বত্ত্বাধিকারী) নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করছে এবং ভোক্তাবাদের সাথে কোন ধরনের সংস্কৃতিক অভিব্যক্তি প্রকাশ গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

এই বিজ্ঞাপনে (ভিডিও) বড় এক ভিড়ের দৃশ্য রয়েছে এবং তিনজন তারকা (সেলিব্রেটি) সান্তিয়াগোর “প্লাজা দে আরমাস (প্রধান এলাকায় বা স্কোয়ারে) কারাওকে-সংস্করণ বা ধরনের গান গাইছে, এবং চিলির ভোক্তাদের দেশটির অন্যতম বিপণি বিতান আলমাসেনাস প্যারিসে আসার এবং চিলির দুইশ বছর পূর্তি উদযাপন করার আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রথমত, যদি বোঝার চেষ্টা করা হয় কেন এই বিতর্ক, তাহলে এই তথ্যটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে ৪৭ বছরের সঙ্গীত জীবনে লস জেইভাস চিলির লোক সঙ্গীতের ভুবনে এক আদর্শের প্রতীক। ১৯৭০-এর দশকে তারা সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নতুন ধারা তৈরি করে। আন্দিজ এলাকার লোকজ বাদ্যযন্ত্রের (প্যানপাইপ, কিউএনা, এবং চারাঙ্গো) সাথে আধুনিক রক সঙ্গীতে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের (তাদের ক্ষেত্রে ড্রাম সেট, ইলেকট্রিক গিটার, বেস গিটার, এবং কি বোর্ড) মিশ্রণ ঘটিয়ে দলটি সঙ্গীতে নতুন এক ধারা তৈরি করে। বিজ্ঞাপনে যে গানটি ব্যবহার করা হয়েছে, সে গানটি ১৯৭২ সালে দলটিকে বিখ্যাত করে তোলে। এই গানে সকল মানুষকে এক ও সহনশীল হবার আহ্বান জানানো হয়। গানটি প্রকাশিত হবার পর, তা চিলি এবং ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশের ক্ষেত্রে শান্তি ও একতার জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত হয়।

এই গানটি নিয়ে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিতর্ক দেখা দিয়েছে:

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সঙ্গীতের বাণিজ্যিক ব্যবহার:

প্রথমবার প্রচারিত হবার পর পরই বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া টুইটারে দৃশ্যমান হয়, প্রকৃতপক্ষে বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল এই প্রশ্নটি যে, কোম্পানীকে লাভ করার জন্য এই গানটি ব্যবহার করতে দিয়ে এই ব্যান্ড কি তার নীতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছে। এ ব্যাপারে টুইটার ব্যবহারকারী সিয়েলিটোএ, (@সিয়েলিটো৮১) নামক ভদ্রমহিলা তার হতাশা ব্যক্ত করেছেন [স্প্যানিশ ভাষায়]:

Cómo es posible?! que los JAIVAS hayan vendido “todos juntos” un himno generacional a almacenes paris! q pena q tristeza! éste país tah mal.

কি ভাবে তা সম্ভব? লস জেইভাস “টোডোস জান্তোস” নামের গানটি, যা এক প্রজন্মের জাতীয় সঙ্গীত, তা আলমাসেনাস প্যারিসের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে! কি হৃদয় বিদারক, কি বেদনাদায়ক! এই দেশটির জন্য খারাপ।

ব্যবহারকারী রড্রিগো মুনেজ (@পিটারকারাকাস) একজন সঙ্গীতজ্ঞ, এ ব্যাপারে তিনি ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছেন:

Los Jaivas se vendieron al Sistema Punto. Yo haria lo mismo si mi banda lucrara lo que ellos lucran, pero NO soy consecuente a mis ppios.

লস জেইভাস নিজেদের বাস্তবতা, সময়ের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা যে ভাবে লাভ করেছে, আমার ব্যান্ড যদি সে ভাবে লাভ করত, তাহলে আমিও তাই করতাম। আমিও সবসময় আমার নীতিতে অটল থাকি না।

চিলির ব্লগ এই বিষয় নিয়ে আরো গভীরভাবে আলোচনা করেছে। “যদি আমরা কিনি, সবাই একসাথে” বড় একটা দোকানে? [স্প্যানিশ ভাষায়], এই শিরোনামে এক পোস্টে রবার্টো কারেনো লিখেছেন :

[E]sta discusión es más que por el prestigio o una guerra entre sistemas […] es la más auténtica defensa de una ciudadania que necesita creer en que no todo tiene un precio, y que también Chile posee un patrimonio que proteger.

এই বিতর্কটি সম্মানের চেয়েও বেশী কিছু বা [কারণ বশত] পদ্ধতির মধ্যে যুদ্ধ। একদল নাগরিকের কাছে এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ভাবে বিষয়টিকে রক্ষা করার উপায়, যাদের বিশ্বাস করার প্রয়োজন রয়েছে যে, সকল কিছুই টাকা দিয়ে কেনা যায় না, এবং চিলির এমন এক ঐতিহ্য [সংস্কৃতি] রয়েছে যাকে রক্ষা করতে হবে।

গনজালো টাপিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং এল কুয়িন্টো পোদের [স্প্যানিশ ভাষায় ] (পঞ্চম শক্তি) ব্লগের একজন ব্লগার। তিনি লিখেছেন:

Hace sólo unos días atrás el rector de la UDP, Carlos Peña (Universidad en la que hago clases), habló en su columna dominical de la nueva ética que se comienza instalar en la esfera pública chilena y, en particular, en la política: el estándar Piñera. Dicho estándar implica que basta con cumplir la ley, da lo mismo la ética […] No puede ser que el sólo hecho de comprar un derecho de autor sirva para hacer lo que una empresa quiera con dicho bien cultural. ¿Cómo los creativos, ejecutivos, product manager, abogados,etc, etc, etc, no se les ocurrió que sería bueno conversar con Los Jaivas y/o sus representantes antes de sacarlo al aire el spot? Lamentablemente, el nuevo estándar comienza operar en este nuevo Chile.

মাত্র কয়েকদিন আগেই ইউডিপি [ইউনিভার্সিটি অফ দি প্যাসিফিক] (যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পড়াই) এর পরিচালক কার্লোস পেনা তার রোববারের প্রবন্ধে লিখেন যে, নতুন এক নৈতিকতা যা স্বয়ং নিজেই চিলির জনতার মঞ্চে জাগ্রত হয়েছে, বিশেষত রাজনীতিতে: তার নাম পিনেরা আদর্শ। বলা হচ্ছে এই আদর্শ এমন ভাবে প্রয়োগ করা হয়, তা আইন পালন করার জন্য যথেষ্ট, এখানে নৈতিকতা কোন ব্যাপার না […]। এটা কোন কোন বাস্তবতা হতে পারে না যে, কোন কিছুর স্বত্ত্বাধিকারী কিনে নেবার মধ্যে দিয়ে কোন কোম্পানী এই সংস্কৃতিক পণ্য দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। কি ভাবে এটা সম্ভব, যে কোম্পানীর সৃষ্টিশীল [ (ক্রিয়েটিভ)-একজন], নির্বাহী (এক্সিকিউটিভ), পণ্য বিপণন ব্যবস্থাপক (প্রোডাক্ট ম্যানেজার), আইনজীবী, ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি, ব্যক্তিরা চিন্তা করেনি, বিজ্ঞাপনটি প্রচার করার আগে লস জেইভাসের এবং/অথবা তাদের প্রতিনিধির সাথে কথা বলা ভালো ? বেদনাদায়ক, নতুন এক আদর্শ, নতুন এক চিলিতে কাজ করা শুরু করেছে।

এই মন্তব্যটি দ্বান্দ্বিক এক আগ্রহের জায়গাকে উল্লেখ করেই করা হয়েছে-এর নাম হচ্ছে ‘ল্যান শেয়ার ও চিলিয়াভিশনে তার মালিকানা, (টেলিভিশন স্টেশন কোম্পানী)-যার মালিক রাষ্ট্রপতি পিনেরা। ল্যান শেয়ার সম্বন্ধে আরো তথ্য এখানে রয়েছে।

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির স্বত্ত্বাধিকারী:

জর্জ ডেলগাযো ((@ জম্বিটো) একজন সাংবাদিক এবং প্রথা-বিরোধী টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, যার অনুষ্ঠানের নাম ডিফামাডোরেস (অপবাদ প্রদানকারী)। তিনি টুইটারে একটি বিতর্ক উসকে দিয়েছেন আলমাসেনা প্যারিস এবং ওর্য়ানার/চ্যাপেল এর মধ্যে এই গানের বিক্রি নিয়ে যে চুক্তিপত্র/চালান তা প্রকাশ করে দিয়ে, যা টুইটপিকে সহজলভ্য:

La factura con la que Los Jaivas se vendieron sin su consentimiento… así es la industria musical. http://twitpic.com/1ffadu

‘বিক্রয় চুক্তিপত্র ওরফে চালান’ যার মাধ্যমে লস জেইভাস তাদের নিজেদের অনুমতি ছাড়াই নিজেদের গান বিক্রি করে দেয়…সঙ্গীত জগতটা আসলে এমনই। এইচটিটিপি://টুইটপিক.কম/১এফএফএডিইয়ু

86373714

এই সমস্যাটি জটিল আকার ধারণ করেছে. কারণ এই ব্যান্ড দল নিশ্চিত করেছে যে, তারা গানটি আলমাসেনাস প্যারিসকে [স্প্যানিশ ভাষায়] বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেনি। ঠিক এর বিপরীতে কোম্পানী বিবৃতি দিয়েছে [স্প্যানিশ ভাষায়] এই “গানের যারা বৈধ স্বত্ত্বাধিকারী” গানটি ব্যাবহারের জন্য তাদের অর্থ প্রদান করা হয়েছে, তবে একই সাথে তারা জানিয়েছে যে তাদের আইন বিভাগ ওর্য়ানার/চ্যাপেলের কাছে এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাইবে।

১৪ এপ্রিল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যান্ড দলটি বিবৃতি প্রদান করেছে [স্প্যানিশ ভাষায়] , পুনরায় বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের জন্য অন্য কাউকে এই গান বিক্রি করার অনুমতি ওর্য়ানার/চ্যাপেলক প্রদান করা হয়নি। তবে ব্যান্ড আলমাসেনাস প্যারিসকে এই গানটির অপব্যবহারের দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে, কারণ তারা বিশ্বাস করে এই গানটি “সৎ বিশ্বাস” থেকে ব্যবহার করা হয়েছে। তারপরেও তারা দ্রুত এই বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের দাবী জানিয়েছে, এবং তারা কোম্পানী এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে চরমপত্র প্রদান করেছে। চরমপত্র প্রদানের পরও এই বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে। এবং এরপর ব্যান্ড দল এবং চিলিয়ান সোসাইটি অফ অথার রাইট (চিলি লেখক অধিকার সংঘ) [স্প্যানিশ ভাষায়]-এর আইনী দলটি বলছে, তারা আলমাসেনাস প্যারিস এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডিডিবির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

একদল ক্ষুদ্র টুইটার ব্যবহারকারী ওকালতি করছে যে, স্বত্ত্বাধিকার আইনের বদলে ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স ব্যবহার করতে। এদের মধ্যে একজন ডানিলো কানালেস (@কানগ্রেজো), তিনি বলেন:

y saben qué? lo que le pasa a los jaivas es el ejemplo perfecto de lo dañino del copyright para el autor, bajo (cc) esto no hubiese pasado

এবং আপনি জানেন কি? লেখকের জন্য স্বাত্ত্বাধিকার আইন যে কতটা ক্ষতিকর লস জেইভাসের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা এর এক নিখূঁত উদাহরণ। (ক্রিয়েটিভ কমন্সের) বেলায় এমনটি হত না।

এই বিজ্ঞাপনে সৃষ্টিশীলতার অভাব রয়েছে:

ব্লগাররা এই বিজ্ঞাপনের সমালোচোনা করেছে এই কারণে যে এটিকে মৌলিক হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না, কারণ এটি টি-মোবাইলের একটি বিজ্ঞাপনের মত, যা কিনা গত বছর থেকে যুক্তরাজ্যে প্রচার হচ্ছে, যে বিজ্ঞাপনে বৃটেনবাসী হে জুড নামক গানটি গায়। বিটলসরা এই গান গেয়েছিল। ক্রিস্টিয়ান পিন্টো তার ব্লগ “ফ্লাশব্যাক পারসোনাল [স্প্যানিশ ভাষায়]লিখেছেন :

Si alguien copia una tesis, simplemente es castigado o reprobado, más aun si alguien copia una investigación, pero si alguien copia descaradamente una campaña de publicidad ¿Qué le pasa?, ¿debe devolver el dinero a la empresa que la contrato? ¿o recibe una amonestación ética de parte de sus pares publicistas del extranjero?

কেউ একজন যদি একটি তত্ত্ব (থিসিস) চুরি করে, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবে [তার] শাস্তি হয় বা তাকে নিন্দা জানানো হয়, বিশেষত কেউ যদি গবেষণা চুরি করে, কিন্তু কেউ যদি নিলজ্জভাবে একটি বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চুরি করে, তাহলে কি ঘটবে? তাকে অবশ্যই সেই কোম্পানীকে টাকা ফেরত প্রদান করতে হবে, যারা তাকে এ কাজের জন্য ভাড়া করেছিল? অথবা সে কি তার মত একই রকম বিদেশী বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নৈতিকতা ভঙ্গের জন্য সতর্কবার্তা পেয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .