ইরান: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর কি ব্লগিং-এর জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে?

রাজনৈতিক অঙ্গনের ভিন্ন ভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্বকারী এগারো জন ইরানী ব্লগার ও পেশাদার প্রচার মাধ্যম কর্মী নির্বাচন পরবর্তী ইরানের নাগরিক প্রচার মাধ্যমের গতিশীলতার পরিবর্তন বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেছেন।

জুন ২০০৯, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পূর্বে ইরানে নাগরিক প্রচার মাধ্যমের সবচেয়ে গতিশীল স্তম্ভ ছিল ইউটিউব ও ব্লগ। নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী জটিলতা অনলাইনে মত প্রকাশের জন্য ফেসবুক এবং টুইটারকে প্রাথমিক দুটি মাধ্যম হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়। নির্বাচন চলাকালে ইরান সরকার স্বল্প সময়ের জন্য ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ও অন্য বেশ কিছু ওয়েব সাইট বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেকে, যেমন অন্যতম এক ইসলামপন্থী ব্লগার[ফার্সী ভাষায়] একে বলছেন ভুল কৌশল, যা ইরানের শাসক বিরোধীদের নেটের জগৎে প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করেছে। শাসকদের সমাজিক প্রচার মাধ্যমের ওয়েব সাইটগুলোকে বাধা দেয়া সত্ত্বেও, এগুলো গ্রীন মুভমেন্ট (ইরানের শাসক বিরোধী আন্দোলন সবুজ আন্দোলন বা গ্রীন মুভমেন্ট নামে পরিচিত) এর জন্যে এক শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যমে পরিণত হয়।

কাজেই ইরানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কি নাগরিক প্রচার মাধ্যম উপাদান (টুলস) ও মাধ্যমের গতিশীলতাকে পরিবর্তিত করেছে? ফেসবুক ও টুইটার কি এখানে সবচেয়ে কর্তৃত্ব শালী? চিন্তাভাবনা ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে ব্লগ কি দ্বিতীয় সারির একটি মাধ্যমে পরিণত হতে যাচ্ছে? রাজনৈতিক কর্মীরা কোন ধরনের মাধ্যম সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করে?

আমি এক অন্যতম ইসলামি ব্লগার; তিনজন গ্রীন ব্লগার; অন্যতম এক পরিবেশবাদী ব্লগার; প্রচার মাধ্যমের পাঁচজন ব্লগার; এবং সক্রিয় এক ব্লগারকে একটা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর জরিপে অংশ নেবার আহ্বান জানাই। ১১ জন নেটবাসী পুরো ইরানী ব্লগ জগৎের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না, তবে তা এই বিষয়ের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য ছোট্ট এক শুরু হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

১- রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর প্রায়শই আপনি কোন সাইটটিতে প্রবেশ করেছেন?

ছয় নম্বর অর্জনের মধ্যে দিয়ে ফেসবুক সবচেয়ে প্রিয় সাইট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, ১ নম্বর পেয়ে টুইটার তালিকার সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে। ব্লগ এখানে দুই নম্বর অর্জন করেছ এবং ফ্রেন্ডফিড ও ইউটিউব প্রত্যেকে তিন পয়েন্ট করে পেয়েছে।

survey15

২- আপনার মতে কোন সাইটটি রাজনৈতিক এবং নাগরিক সমাজের কর্মীরা (অ্যাক্টিভিস্টরা) ব্যবহার করে?

ছয় নম্বর পেয়ে এখনো ব্লগ এখানে শীর্ষে, এই বিষয়ে ফেসবুক তিন নম্বর পেয়েছে, ইউটিউব পেয়েছে দুই নম্বর এবং ফ্রেন্ডফিড এখানে এক নম্বর পেয়ছে, টুইটার এখানে শূণ্য পেয়েছে এবং অন্যরা কেউ এখানে এক পয়েন্টও পায়নি।

survey2

ছয়জন নেট নাগরিক বিশ্বাস করে যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরেও ব্লগের গুরুত্ব শেষ হয়ে যায়নি। দুইজন বিশ্বাস করে যে, এরপর ব্লগ আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং তিনজন বিশ্বাস করে যে এরপর ব্লগের গুরুত্ব শেষ হয়ে গেছে।

উপরে জরিপে সবশেষের দলের মধ্যে দুইজন বিশ্বাস করে যে ব্লগের গুরুত্ব কমে যাবার অন্যতম কারণ হচ্ছে ফেসবুক ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে, এবং একজন মনে করে, এর কারণ, ব্লগাররা ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে।

৩-আপনার প্রিয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য কোন সাইট বা কোন ধরনের সাইট আপনি পছন্দ করেন।

এখানে ব্লগের নাম এসেছে ৪ বার, ফেসবুকের নাম এসেছে ৬ বার, ফ্রেন্ডফিডের নাম এসেছে ৩ বার এবং টুইটারের নাম এসেছে একবার।

সংক্ষেপে বলা যায়, এই জরিপের ফলাফল প্রদর্শন করছে যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর ইরানের নেটবাসীরা আরো বেশি ভিজুয়াল বা দৃশ্যমান সাইটে প্রবেশ করছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুকে প্রবেশ করছে, যাদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতারাও রয়েছেন। এই জরিপ প্রদর্শন করছে তথাকথিত “টুইটার বিপ্লব” (অন্তত এই ১১ জন অংশগ্রহণকারীর মতে) ইরানের ভার্চুয়াল জগৎ-এ তার যতখানি প্রভাব তৈরি করেছিল, পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমে অন্তত তার চেয়ে জোরালো ধারণা তৈরি করেছিল। ব্লগ এখনো ইন্টারনেটে এক মূল্যবান অবস্থান ধরে রেখেছে, কিন্তু নতুন মাধ্যমের আগমনে ক্রমেই সে তার অবস্থান হারিয়ে ফেলছে। সম্ভবত এখানে একটি নিশ্চয়তা রয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর ইরানী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে কোন কিছু আর আগের মত নেই, ভার্চুয়াল বা নেট এবং বাস্তব জগৎ, উভয় ক্ষেত্রে এই একই ঘটনা ঘটেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .