ক্যাম্বোডিয়ায় গত ২৮শে মার্চ প্রায় ১০০ জন শিক্ষক আর ছাত্র একটা র্যালি করেছেন ছাত্রীদের ছোট স্কার্ট পরা বন্ধের জন্য। প্রচারণায় আরো লোক হবে আশা করা হয়েছিল যদি নম পেনের রাস্তা দিয়ে মিছিল করার এদের মূল পরিকল্পনা সিটি হল মন্জুর করত। তারপরেও প্রচারণার আয়োজক খেমার শিক্ষক এসোসিয়েশনের পরিচালক সিয়াং বুনহিয়াং উপস্থিত সবাইকে বাহবা জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, ছাত্রী আর তাদের বাবা মার কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে সাহায্য করতে যে ছাত্রীদের যেন তারা থামায় ছোট স্কার্ট পরা থেকে। তার মতে খেমার সংস্কৃতি রক্ষায় আর ছাত্রীদের জোরালোভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতি গ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে এই অনুরোধ অবদান রাখবে।
“এই প্রচারণা করার ধারনা আমার মধ্যে আসে কারন আমি খেমার সংস্কৃতির উন্নতি চাই [আর এই সংস্কৃতি ধরে রাখতে চাই] যা অনেক বছর আগে আমাদের ছিল। কিছু খেমার নারী কিছু জিনিষ অনুকরণ করেন যেমন ছোট স্কার্ট পরা বা স্কুল বা জনগনের স্থানে যৌন আবেদনময়ী কাপড় পরা – এটা আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করতে পারে,” বলেছেন সিয়াং বুনহিয়াং যেমন উদ্ধৃতি করা হয়েছে নম পেন পোস্টে।
এই পদক্ষেপ নারীদের উপরে অকারণে চাপ প্রয়োগ করতে পারে এটা স্বীকার করলেও আয়োজকরা লাগাতার দাবি করেছেন যে এটা খেমার সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য দরকার।
আমি নারীদের [জোর] করছি না ছোট স্কার্ট পরা থেকে, কিন্তু আমি খেমার সংস্কৃতি দেখাশুনা আর উন্নতি করতে চাই, “আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে অন্য দেশ আমাদেরকে নীচু দেখাতে না পারে।“
একই ভাবে, এই প্রচারণা অনেক মন্ত্রণালয়, ক্যাম্বোডিয়ার স্বাধীন শিক্ষক এসোসিয়েশন, আর কিছু ছাত্র কর্তৃক স্বাগত জানান হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইনফর্মাল শিক্ষা সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট এর ডেপুটি পরিচালক পোভ স্যাম আনের কাছ থেকে সমর্থন আছে, যিনি শোনা যাচ্ছে একমত যে ছাত্রীদের ছোট স্কার্ট পরা উচিত না। তিনি এখনের নিয়মের কথাও বলেছেন যেখানে ছাত্রীদের কেবল লম্বা স্কার্ট পরার কথা বলা হয়েছে।
“সকল নারী ছাত্রীকে হাঁটুর নীচে স্কুলে স্কার্ট পরতে হবে, আর এটা ভালো যে খামার শিক্ষক এসোসিয়েশনের প্রচারণা মানুষকে এটা মনে করিয়ে দেবে। আমি এটা সহ্য করতে পারিনা যে কিছু প্রাইভেট বা সরকারী স্কুলে মেয়েরা এতো ছোট স্কার্ট পরে,” বলেছেন পোভ স্যাম আন।
এমনকি মহিলা বিষক মন্ত্রণালয়ের সচিব সান আরুন এই র্যালিকে স্বাগত জানিয়েছেন এই বলে যে খেমার সংস্কৃতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আছে। কথিত আছে যে তিনি দাবি করেছেন “ছোট স্কার্টের দিকে ঝোঁক একটা কুটিল প্রচেষ্টা অন্য সংস্কৃতি নকল করার- এটা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ যদি না নেয়া হয় তাহলে খেমার সংস্কৃতি ধ্বংস হতে পারে।“ মজার ব্যাপার হল তিনি ছোট স্কার্টকে পুরুষদের ধর্ষণ করার উৎসাহিত করার কারণ হিসাবে বলেছেন:
“ছোট স্কার্ট আর উস্কানিমূলক কাপড় পরা ধর্ষণ ঘটার কারন, কারণ পুরুষরা যখন সাদা চামড়া দেখে তাদের যৌন সংসর্গে যেতে ইচ্ছা করে তাদের সাথে।“
এই উস্কানিমূলক মন্তব্য বিশিষ্ট ব্লগার কৌনিলা কেও এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তিনি এটা তার ফেসবুক পাতায় পোস্ট করেছেন – যার থেকে পরে বেশ কিছু মন্তব্য এসেছে। এখানে একজন মন্তব্যকারীর মজার একটা মন্তব্য:
“এটা মনে হয় যেন মধ্য প্রাচ্যের সেইসব নারীদের কথা বলা যারা তাদের জন্য অনুমোদিত জায়গা থেকে বাইরে বের হওয়া মানে, ধর্ষণের আহ্বান জানাচ্ছে তারা। আমি মনে করি সচিব যৌনতার মধ্যে ভুল একটা সাংস্কৃতিক ধারনা রোপণ করছেন। আমি দু:খিত কিন্তু নারী আর ছোট স্কার্ট সমস্যা না… আমি মনে করি ক্যাম্বোডিয়ার নেতারা সমস্যার অংশ। তারা যদি মানুষের মনোভাব আসলেই পাল্টাতে চান, তাদের উচিত একটা জায়গা দেয়া যেখানে যৌনতার এই বিষয়গুলো আলোচনা করা যাবে- তাদেরকে তিরস্কার না করে যারা তাদের শরীরের আসল মালিক।“
একই ধারণা পোষণ করেন সিম সোচেতা যিনি নম পেন পোস্টের সম্পাদকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, ”নারীদের দোষ দেবেন না পুরুষদের সংযমের অভাবের জন্য”:
“আমরা দেখছি যে মেয়ে আর নারীদের দোষ দেয়া হচ্ছে ধর্ষণ আর যৌন নির্যাতনের জন্য তারা কি ধরণের স্থানে যায় সেই সিদ্ধান্তের জন্য, কি ধরনের পোশাক তারা পরার সিদ্ধান্ত নেয় সেই জন্য আর সেই সব পোশাকের দৈর্ঘের জন্য। নারীদের ছোট স্কার্ট না পরার আহ্বান জানানোর পরিবর্তে খেমার শিক্ষক এসোসিয়েশন যেসব পুরুষ নারীদের ধর্ষণ করে, পারিবারিক নির্যাতন চালায়, পুরুষ শিক্ষক যারা ছাত্রীদের বিরক্ত করেন তাদের বিরুদ্ধ মিছিল করতে পারতেন।“
যদিও কৌনিলার ফেসবুকে বেশীরভাগ লোক মন্তব্য করেছেন যে তারা বিশ্বাস করেন যে ছোট স্কার্ট পরা কোন সমস্যা না চানরুয়েন পা এই বিতর্কে যোগদান করে লিখেছেন সাংস্কৃতিক একাত্মতা আর নারীদের নিরাপত্তার মধ্যকার সূত্রের ব্যাপারে:
আমি মহিলা বিষক মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে পুরোপুরি একমত না, আর স্কুলের মেয়েদের ছোট স্কার্ট পরাকেও আমি সমর্থন করি না। এটা স্পষ্ট যে ছোট স্কার্ট পরা পশ্চিমা স্টাইল। আসলে সাধারণভাবে স্কুলের মেয়েদের ছোট স্কার্ট পরার মধ্যে দোষের কিছু নেই। আসলে এটা মেয়েদের কাপড় পরার একটা শিল্প বা সৌন্দর্য। কিন্তু ছোট স্কার্ট পরা যেটা ভুল জায়গায় বেঠিক ভাবে ছোট সেটা ওই ব্যক্তির জন্য বিপদজনক হতে পারে। আর এর ফলে ক্যাম্বোডিয়ার আর পশ্চিমের সংস্কৃতির ভিতরকার পার্থক্যকে হিসাবে নেয়া প্রযোজন। আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে মিশ্রণের ফলে নতুন যে সংস্কৃতি তৈরি হয় তা মাঝেমাঝে বেশি হয়ে থাকে। আর মাটি মাঝে মাঝে বীজ বাড়ার উপযুক্ত হয়ে থাকে। আমাদের ক্যাম্বোডিয়ার সমাজের যৌন নিষেধাজ্ঞা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতরতা কে অবজ্ঞা করা উচিত না। সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে একটা কথা আছে, ”আপনি নিজের মাথা ঠিক করতে পারেন টুপি পরার জন্য, বা টুপিকে ঠিক করতে পারেন আপনার মাথার জন্য।“
এর মধ্যে ছোট স্কার্ট বিরোধী প্রচারণার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া আর একজন ব্লগার মিন লাক্স এই সাবধানতা জানিয়েছেন:
ছোট স্কার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের তালিকায় এর পরে থাকতে পারে ফেসবুকের নিষিদ্ধ ঘোষণা তাদের দৃষ্টিতে খেমার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য।
যেমন আশা করা হয়েছিল, এই প্রচারণা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিতর্ক চলছে আর একজন সামাজিক কর্মী ও ওপেন ইন্সটিটিউটের লেখক চায় সোফাল দ্বারা, যিনি লিখেছেন “স্বল্প বসন সম্পর্কে মতামত”। তিনি রাজধানী আর দুটি জেলাতে তরুণীদের নির্বিচারে সাক্ষাৎকার করেছেন প্রচারনার ব্যাপারে তাদের মতামত জানার জন্য। যদিও অনেকে মনে করেন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছোট স্কার্ট পড়া ঠিক না, তারা মনে করেন এটা অন্যান্য স্থানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। অবাক ব্যাপার হল, ছোট স্কার্ট ধর্ষণের ঘটনাকে উদ্বুদ্ধ করে এই ধারণা তাদেরকে অবাক করেছে:
“កាលពីមិនទាន់មានការស្លៀកពាក់ខ្លីបែបនេះកាលពីបណ្ដាឆ្នាំមុនៗ និងជំនាន់មុនៗ តើមិនមានករណីការចាប់រំលោភសេពសន្ថវៈមែនទេឬអី ហើយតើបុរសៗពិតជាមិនមានអារម្មណ៍ចង់រួមភេទមែនដែរឬអត់ បើពួកគេមិនបានឃើញសាច់សខ្ចីរបស់នារីៗនោះ? នារីវ័យក្មេងៗទាំងនោះបានសំណូមពរថា មនុស្សជំនាន់មុនមិនត្រូវបន្ទោសមនុស្សជំនាន់ក្រោយឡើយ ព្រោះសម័យកាល និងការវិវត្តវាពិតជាខុសគ្នាពីជំនាន់មួយទៅជំនាន់មួយ។”
সোফাল তুলে ধরেছেন যে ব্যক্তির সাধারণ অধিকার আর স্বাধীনতা নিয়েও তারা কথা বলেছেন যা সংবিধান আর আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা স্বীকৃত। এর সাথে তারা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে শুধু ছোট স্কার্টের উপরে গুরুত্ব না দিয়ে আইন আরো উন্নত করে সামাজিক নিরাপত্তা আরো কঠোর করা:
សេចក្ដីថ្លៃថ្នូររបស់ជាតិមួយគឺត្រូវតែទប់ស្កាត់ការជួញដូរមនុស្ស និងការជួញដូរគ្រឿងញៀន ការលុបបំបាត់ទេសចរណ៍ផ្លូវភេទ ការលុបបំបាត់ការកេងប្រវ័ញ្ចលើស្ត្រី និងត្រូវតែគោរពសិទ្ធិស្ត្រី ហើយផ្ដល់តួនាទីស្ត្រីនៅក្នុងសង្គមប្រកបដោយសមភាពយេនឌ័រ ការផ្ដល់សេវាសាធារណៈ និងហេដ្ឋារចនាសម្ព័ន្ធសង្គមឲ្យបានគ្រប់គ្រាន់ដល់ពលរដ្ឋ ការបង្កើនការងារឲ្យមនុស្សធ្វើ ត្រូវមានការអភិវឌ្ឍទាំងនៅទីក្រុងនិងនៅជនបទ មិនមានអំពើពុករលួយជាប្រព័ន្ធ ត្រូវមានតម្លាភាព និងមានយុត្តិធម៌សង្គមជាដើម។
এই প্রচারণার ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত থাকা সত্ত্বেও, এর ধারা মূল ভঙ্গকারীদের বদলে মেয়েদের লক্ষ্য করে হবে বলে মনে হয়। আগেও সরকার চেষ্টা করেছিল মেয়েদের উপরে কার্ফিউ দেয়ার- যেটার পক্ষে বলা হয়েছিল যে নাইট ক্লাবে বা অন্যান্য বিনোদন এলাকায় মেয়েদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে। অনেকে মনে করেন যে এর বদলে নাইটক্লাবে আইনের শাসন আর নিয়ন্ত্রণ নীতি কঠোর করা ভালো হবে।