ইরান: দুই দিক দিয়ে যন্ত্রণা প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার লক্ষ্য অর্জন করছে

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মিডিয়া এন্ড পাবলিক এফেয়ার্স বিভাগ (প্রচার মাধ্যম ও জন সংযোগ বিভাগ) ও তাদের সাথে ব্রডকাস্টিং বোর্ড অফ গভর্নেস নামক প্রতিষ্ঠানের অনুদানে সোমবার (১২ এপ্রিল) ওয়াশিংটন ডিসিতে আধাবেলা এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল “ইরান, নাগরিক অংশগ্রহনের সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা” (“ইরান, অপারচুনিটিজি এন্ড চ্যালেঞ্জ ফর সিটিজেন এনগেজমেন্ট): গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন-এর নির্বাহী পরিচালক ইভান সিগাল এই অনুষ্ঠানে একজন সঞ্চালক হিসেবে অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানে যে সমস্ত বিষয় আলোচনা হয় তার জন্য বেশ কিছু বর্ণনা/পোস্ট নিয়ে কথা বলার জন্য আমাকে আহ্বান জানান হয়েছিল।

আমার পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমি বলতে পারি, বিগত কয়েক বছরে ইরানের নাগরিকদের চিন্তাভাবনার প্রকাশ, ভিন্ন বিষয়ে সত্যিকারের ঘটনা জানা, ইরানের ভেতরে একে অন্যের সাথে ও বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করা এবং এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য নাগরিক প্রচার মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো হচ্ছে সম্ভবত একমাত্র কার্যকর উপায়।

এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে গতবছর জুনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নাগরিকরা এর ফলাফল নিয়ে যে প্রতিবাদ করেছিল তাকে কার্যকর করেছিল টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব এবং ব্লগ, যা তাদের এই আন্দোলনকে অমর করে তোলে এবং নিরাপত্তা বাহিনী জনতার বিরুদ্ধে যে নিপীড়ন চালিয়েছে তার প্রমাণ প্রচার করছে। তবে এই আন্দালনের কেন্দ্রে ছিল প্রযুক্তি নয়, জনতা।

এমনটা বলা হয়, এর সাথে আমি যোগ করবো ইরানের নেটবাসীরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকে এবং তারা ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের যন্ত্রণার শিকার; এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পশ্চিমের প্রচার মাধ্যমে তাদের ব্যাপকভাবে ভুল বোঝে

নিরাপত্তার বিষয়: ভার্চুয়াল (মূলত ইন্টারনেটে তৈরি করা কাল্পনিক সমাজ) লেখক, সত্যিকারের শিকার

বছরের পর বছর ধরে ইরানের নাগরিকরা নেট ফিল্টারিং বা নেট থেকে তাদের বাছাই করা, হ্যাকিং বা সাইট ছিনতাই এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নির্যাতন এক নতুন মাত্রায় পৌঁছায়, একই সাথে এ সব ঘটনার প্রভাব:

বন্দি: ইরানে বন্দি কয়েক শত সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের মধ্যে ডজনখানেক ব্লগার রয়েছেন, যারা ১২ জুনের নির্বাচনের পর গ্রেফতার হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া পেয়েছেন, যেমন মোহাম্মেদ আলি এবতাহি। তিনি প্রাক্তন সংস্কারপন্থী উপরাষ্ট্রপতি এবং একজন সক্রিয় ব্লগার, যিনি আর ইরান সরকারের সমালোচনা করার সাহস করেন না। মাসের পর মাস নির্যাতন ভোগের পর কার এত সাহস হবে? অবশ্যই খুব বেশি লোকের সে সাহস হবে না।

সাইবার আক্রমণ: ইরান রাষ্ট্র এবং তার সমর্থকরা ভার্চুয়াল জগৎ শাসন করার জন্য তাদের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, তবে তারা তা বাক্য দিয়ে নয়, জোর খাটিয়ে করছে।

ইরানিয়ান সাইবার আর্মি (ইরান সরকারের সাইবার সেনা) বেশ কিছু জঙ্গি ইসলামিক উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম, যারা জুন ২০০৯ এর নির্বাচনের পর ক্রমশ আরো অসহনীয় হয়ে উঠছে। এই হ্যাকারের দল (হ্যাকার: নেটে যারা দুর্বৃত্তপনা করে) সম্ভবত শক্তিশালী ইরানী অথবা ইরান সম্পর্কিত কেউ কেউ, যারা জঙ্গি ইসলামিক পরিকল্পনার সাথে যুক্ত। টু্ইটার, রেডিও জামানেহ, গ্রীন মুভমেন্ট-এর সাইট যেমন জারাসকালামেহ এই সাইবার সেনার হ্যাকিং-এর শিকার। এটি ঘোষণা প্রদান করেছে যে এটি হ্যাক করবে এবং তথ্য উন্মোচন করবে যা কিনা এই সমস্ত সাইটের কর্মকাণ্ডকে জটিলতায় ফেলে দেবে।

এই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আইআরজিসি একটি ওয়বে সাইট চালু করেছে, যার নাম জারডাব (যার মানে ঘূর্ণি)। এখানে গ্রেফতার হওয়া লোকদের ছবি ও সংবাদ প্রকাশ হয়ে থাকে। ২০০৯ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জারডাব প্রতিবাদকারীদের ছবি প্রকাশ করে এবং ইরানী জনগণকে তাদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করার জন্য আহ্বান জানায়। এই সাইটও এখন ব্লগার শিকারের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এখানে ভয়ের এক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছেখাইয়াবুন, এক গোপন আস্তানা থেকে প্রকাশিত ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদপত্র। এর কোন সাইট বা ব্লগ নেই। নিরাপত্তার কারণে এমনটি করা হয়েছে। কেবল মাত্র ইমেইলের মাধ্যম এই সংবাদপত্র পাঠকদের কাছে পৌঁছানো হয়।

অন্যকথায় বলা যায়, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র তার অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা অনেক ব্লগারকে চুপ করিয়ে দিয়েছে, তাদের জোর করে নির্বাসনে পাঠানো বা একসাথে সবাইকে নিশ্চুপ করে দেওয়া হয়েছে।

উৎসাহকে নিয়ন্ত্রণে আনা

ইরানীরা বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফেসবুক, ব্লগস্ফিয়ার, টুইটারইউটিউব ব্যবহার করে, যা ইরানী জনতার চরিত্র প্রতিফলিত করে এবং তাদের অন্যতম নেতাদের বাণী হাজার হাজার জনতার কাছে পৌঁছে দেয়। এই সমস্ত ভার্চুয়াল জগৎ শক্তিশালী শ্লোগান, ছবি ও প্রতিবাদ প্রদর্শনের তারিখ সবাইকে জানানোর এক মাধ্যম।

ইরানের নাগরিক প্রচার মাধ্যম বাস্তব জনতার কর্মকাণ্ডের এক বাড়তি অংশ। সাম্প্রতিক মাস ও ১১ ফেব্রুয়ারি যা ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, তারপরে যখন ইরান নামক রাষ্ট্রটি ইরান সরকারের বিরোধীদের প্রদর্শনী থেকে চুরি করে, তখন নাগরিক প্রচার মাধ্যমের উৎসাহ যা বাস্তব জগৎ-এর প্রতিবাদকারীদের মত শক্তিশালী, তা কমে আসতে থাকে।

তেহরান ও অন্যান্য শহর যারা লড়াই করছে, সেখানে পরিকল্পনার অভাবের কারণে হয়ত নেটবাসীরা ভার্চুয়াল জগৎ থেকে সরে যাচ্ছে-অন্তত নতুন করে প্রতিবাদের ঢেউ না তৈরি হওয়া পর্যন্ত।

গত বছরের জুন থেকে এ বছরের ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা দেখেছি ইরানের অনলাইন এক্টিভিস্টদের সৃষ্টিশীলতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, এটি ছিল এমন এক সময়, যখন জনতা ছিল উৎসাহী এবং নিকট ভবিষ্যৎ-এ সম্ভাব্য বিজয়ের ব্যাপারে তারা বিশ্বাস করেছিল।

এ সব সত্ত্বেও, আমি যোগ করতে চাই যে, আমি বিশ্বাস করি ইরানের তরুণরা এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সৃষ্টিশীল ছিল ও থাকবে, কিন্তু তারা কোন অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে না, কে পারে?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .