একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সকল উন্নত দেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পাকিস্তানকে আরো লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। এই দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা হয় না। এ বছরের মার্চ মাসে পাকিস্তানেও “বিশ্ব নারী দিবস” উদযাপন করা হয় এই উদ্দেশ্য, যেন তা তাদের জীবনে এক পরিবর্তন আনে, যাতে তা প্রত্যেক নারীর জীবনে এক আলোর রেখা হয়ে দেখা দেয়। পারিবারিক নির্যাতন প্রত্যেক পাকিস্তানী নারীর জন্য একটা কঠোর বাস্তবতা। যে সমস্ত কর্মীরা নারীদের এই সমস্ত কারণ নিয়ে কাজ করেন, তারা বলেন, পাকিস্তানে নারীরা এক সংঘাতময় সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে থাকে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে স্বামী যা বলবে তাই তাদের পালন করতে হবে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ এখানে একটি লজ্জাজনক বিষয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হোয়াইট রিবন ক্যাম্পইন (ডাব্লিউআরসি) পাকিস্তানের এক সংবাদ সূত্রানুসারে পাকিস্তানের নারীরা ক্রমে বাড়তে থাকা অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। প্রতি বছর পাকিস্তানে নারীদের উপর অত্যাচার বাড়ার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এই সংবাদ অনুসারে: কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, শোষণ, প্রহার এবং ধর্ষণ হচ্ছে এখানকার নারীদের উপর অত্যাচারের কয়েকটি রূপ।
পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ নারী শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এবং ‘নিজেদের পছন্দ করা’ নামক বিষয়ে তাদের ধারণা খুবই সামান্য। পাকিস্তানের পুলিশ প্রায়শই: মেয়েদের অভিযোগ প্রত্যাখান করে এবং তা লিখতে অস্বীকার করে যদি না মেয়েদের দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখা দেয় এবং মাঝে মাঝে দেখা যায় এখানকার বিচারকরা স্বামীদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন জেন্ডার স্টাডিস বিভাগের অস্থায়ী পরিচালক ড: ফারজানা বারি বলেন, দিনটিকে জাতিসংঘের প্রদত্ত বিষয়বস্ত “সমান অধিকার, সমান সুযোগ সকলের উন্নতি”-র স্মরণ করা হচ্ছে, মনে হচ্ছে একটা মিথ্যা যুক্তি, যখন অধিকার এবং সুযোগ খুব সহজেই; নারী, এবং শিশু; সকলের জীবন থেকে হারিয়ে যায়।
সম্প্রতি টিভি চ্যানেলে পুলিশের নির্মমতার যে প্রদর্শন তুলে ধরা হয়েছে তার ক্ষেত্রে কি আমরা সমান অধিকারের আহ্বান জানাচ্ছি? কারখানার মালিকের যে নির্মমতা, তার ক্ষেত্রে কি সমান অধিকার দাবি করছি, গুজরানওয়ালার যে মালিক এক শ্রমিককে অপহরণ করে তাকে শিকলে বেঁধে রাখে এবং তার উপর অত্যাচার করে? শিয়ালকোটের বাস মালিকরা যে ভাবে মানুষকে অপমান করে তাদের ক্ষেত্রে কি আমরা তা সমান ভাবে ভাগ করবো? শাজিয়ার ভাগ্যে যা ঘটেছিল তার ক্ষেত্রে কি সমান অধিকার ছিল, যে তরুণী গৃহপরিচারিকাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে?
দি ডন ব্লগ এ গ্লোবাল ভয়েসেস এর লেখিকা সানা সালিম বর্ণনা করেছেন যে:
উন্নত এক সমাজ গড়তে চাইলে, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, এই নিশ্চয়তার প্রদান করার মধ্যে দিয়ে যে অধিকার কোন লিঙ্গীয় পক্ষপাতিত্ব অথবা বৈষম্যে ছাড়াই প্রদান করা হবে। লিঙ্গ ভিত্তিক অত্যাচার অন্যায় কে প্রতিফলিত ও পুনরায় সংগঠিত করে এবং এই ঘটনার শিকার ব্যক্তিটি তার স্বাস্থ্য, মর্যাদা ও স্বাধীনতার সাথে আপস করে।
পাকিস্তানের সংসদে পারিবারিক নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে আনা এক প্রস্তাবিত আইন নিয়ে বিতর্ক চলছে। নারী অধিকার কর্মী এবং কিছু ইসলামি আইনবিদেরা এর পেছনে ধাওয়া করছে। এখন দেখা যাক কে জেতে। পাকিস্তানী ব্লগার বাঘী দেশটির বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যেহেতু দেশটিতে নারীদের রক্ষার জন্য কোন শক্তিশালী আইন নেই।
দিনের শেষে, বিচারের মাধ্যমে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সূত্রপাত হয়, কাজটিকে অপরাধের মধ্যে গণ্য না করে। যদি ঘরোয়া নির্যাতনকে অপরাধযোগ্য শাস্তি হিসেবে বিবেচনা না করা হয়, তা হলে কি ভাবে কেউ আশা করতে পারে যে এই পদ্ধতিতে বিষয়টির প্রতিকার হবে? যখন এসিড নিক্ষেপ নামক বিষয়টি আইনী ধারায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় না, তখন কি ভাবে এমনকি কেউ আশা করতে পারে যে এ ধরনের ঘটনায় কাউকে শাস্তি প্রদান করা হবে? এমনকি যখন এ সমস্ত মানবতার বিরুদ্ধে ঘটানো অপরাধসমূহকে অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়, তখন আমাদের পচে যাওয়া সমাজ ব্যবস্থা স্রেফ অস্বীকার করে যে সমাজে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে।
পাকিস্তানী নারীরা নিজেদের হাতকে ঐক্যবদ্ধ করে, একে অন্যকে উৎসাহ প্রদান করার মধ্যে দিয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। নারীদের শিক্ষিত করা, যা সারা বিশ্বের নারীদের ক্ষেত্রে কি ঘটছে সে সম্বন্ধে তাদের সচেতন করবে, তা তাদের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর ক্ষেত্রে এক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এটা একটি বিস্ময়কর ঘটনা যে নারীদের তৈরি করা হয়েছে বিশেষ কিছু কাজ করার জন্য, কারণ তারা নারী। নিজেরা ব্যতিত কেউ তাদের পৃথিবী পাল্টে দিতে পারবে না, তবে অনেক লোক তাদের সামান্য কাজের মাধ্যমে সমাজে সত্যিকারের এক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। যে জাতি তাদের নারীদের উপর খারাপ আচরণ করে, তাদের অবশ্যই জানা উচিত যে তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে। সরকারের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান যা কেবল পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত, তারা কখনোই পরিবর্তন ঘটাতে ইচ্ছুক নয়, যতক্ষণ না পৃথিবী আওয়াজ তুলবে।
আমাদের বাস্তবতায় আমরা যে সমস্ত কাজ করতে পারি:
• আমরা নিজেদের শিক্ষিত করে তুলতে পারি।
• যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান নারী অধিকার বিষয়ে প্রচারণা চালায় আমরা তাদের সমর্থন করতে পারি।
• আমরা নিজেদের হাতকে একতাবদ্ধ করতে পারি এবং আমাদের সরকারকে জানাতে পারি যে, সারা বিশ্বে যা ঘটছে সে বিষয়ে আমরা সচেতন এবং আমরা তা গ্রহণ করবো না।
• আমরা বিদেশী দূতাবাসগুলোকে লিখতে পারি, যাতে তারা সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।
• আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি।
• এই বিষয়ে আমরা পড়ালেখা করতে পারি।
• এই বিষয়ে আমরা লিখতে পারি।
• এই বিষয়ে আমরা ব্লগ তৈরি করতে পারি।
• এই বিষয়ে আমরা কথা বলতে পারি।