কয়েক মাস ধরে উচ্চাভিলাষী নতুন জাতীয় অর্থনৈতিক মডেল (নেম) সম্পর্কে আশা তৈরি করে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব অবশেষ পরিকল্পনার প্রথম ভাগ উন্মোচন করেছেন যা দেশটির ভবিষ্যৎের অর্থনীতির দিক নির্দেশ করে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নাজিবের আনা বেশ কিছু বাছাই করা সংস্কার পদক্ষেপের পরে এটি বিশাল একটি অগ্রযাত্রা। দেশটিতে ক্রমাগত অর্থনৈতিক সংস্কার আনার প্রয়াসে মনে হয়েছে যে তিনি শক্তিশালী একটা বার্তা পৌঁছাচ্ছেন। তার লক্ষ্য হচ্ছে জাতিগত মালয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করা যাতে দেশ আরও বেশী প্রতিযোগিতামুখী হয়।
এই প্রচেষ্টা অনেক প্রশংসিত হয়েছে বিশেষ করে নীতি নির্ধারকদের ভাষায় মূলধারার মিডিয়াতে, কিন্তু নাগরিক মিডিয়া সমালোচনায় মুখর। ইতোমধ্যে নাজিব স্বীকার করেছেন যে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আর সময় নিয়ে স্বচ্ছতার প্রযোজনীয়তা আছে যা এই বছরে পরে ঘোষণা করা হবে। তাহলে প্রশ্ন থাকছে দুটো মূল বিষয়ে কেন্দ্র করে: সরকার কি শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট রাজনৈতিক ইচ্ছা একাট্টা করতে পেরেছেন পরিবর্তনের জন্য? যথেষ্ট পরিবর্তনের উপকরণ কি আছে প্রধানমন্ত্রীর উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য?
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি সব সময়ে বৃহৎ রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়। নাজিব সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছেন ব্যক্তি সেক্টর চালিত অর্থনীতির ডাক দিয়ে আর রাজনৈতিক আশীর্বাদ কমিয়ে দিয়ে। কতজন এই ধারণাকে আলিঙ্গন করবেন? দিন মেরিকান জানিয়েছে যে মালয়েশিয়ার উদ্যোক্তাদের আর এসএমইর অংশগ্রহণ দরকার এই জাতিকে উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য।
এইসব মানুষকে অংশগ্রহণ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে কারণ তাদের কেবল প্রযুক্তিগত কৌশল আছে কিন্তু পিছনে দাঁড়াবার কেউ নেই আর ক্ষমতাশালী সিদ্ধান্তগ্রহণ কারীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই।
বিতর্কিত লেখক, রাজা পেত্রা কামারুদিন শেক্সপিয়ারের রুপক ব্যবহার করে রঙ্গীন সমালোচনা দিয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে নীতির পরিবর্তন সাথে সাথে মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারীদের হ্রদয়ের পরিবর্তন হবে কি না:
নতুন অর্থনীতি নীতি (নেপ) জাতীয় অর্থনৈতিক নীতিতে পরিণত হয়েছিল আর এখন তা দাঁড়িয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক মডেলে। এটা অবশ্যই পোশাকী পরিবর্তন। কিন্তু পোশাক পরিধান কারীরাও কি একই রয়েছে? যদি তাহলে হয় তাহলে পুরানো খোলসে নতুন জিনিষ হবে।
ভালো সাড়া হলো, নেপ সব সময়ে বির্তকের কেন্দ্রে ছিল। নাজিব কথা দিয়েছেন এটাকে জাতি ভিত্তিক হিসেবে না বরং প্রয়োজন ভিত্তিক হিসাবে তুলে ধরার ব্যাপারে। কিন্তু এখনো কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করছেন। যেমন হাফিজ নুর শামস বলেছেন:
ভাষণের কোথাও, বাজার-উপযোগী সঠিক কাজের কথা এসেছে। আমি এটা ঠিক বিশ্বাস করছি না। আমি বরং শুনতে পাচ্ছি সঠিক কাজের শেষ হওয়ার ব্যাপারে কিন্তু আমি শুনতে রাজি আছি যে জাতি ভিত্তিক সঠিক কাজের থেকে প্রয়োজন ভিত্তিক অনেক বেশী ভালো।
অর্থনৈতিক নীতি বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকারের কিছু সংগ্রহে, স্টিফেনি স্টা মারিয়া নেমের উপরে কিছু এক পেশে মতামত তুলে ধরেছেন । নীতি উদ্যোগ সেন্টার থেকে প্রফেসর লিম টেক ঘি এই কাঠামোকে শুধুই অলঙ্করণ বলেছেন।
নেমের দীর্ঘমেয়াদি সময় সীমা একটা অজুহাত কাজ না করা বা দেরি করার। নেমের স্বল্প মেয়াদী কোন লক্ষ্য নেই আর আমার মনে হয় ভবিষ্যতে এটা পূর্বের উচ্চাভিলাষী নীতির মতো পরিণত হবে।
মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এডমুন্ড টেরেন্স গোমেজ একটি পরিষ্কার সমালোচনা দিয়েছিলেন যে নেম পুরানো ধারণার উপরে নতুন প্রলেপ।
নাজিব বলেছেন যে সঠিক কাজের নীতি এখন জাতি ভিত্তিক না হয়ে প্রয়োজন ভিত্তিক হবে। কিন্তু এর স্বচ্ছতা আর বাজার-উপযোগিতা পরিষ্কারভাবে ভূমিপুত্রদের (জাতিগত মালয়) লক্ষ্য করে করা। আর এটা নেপ থেকে কোন অংশে আলাদা নয়।
কোন রেকর্ড ছাড়া কঠোর রাজনৈতিক বাছাই আর পরিবর্তন কাজে পরিণত করা সম্ভব নয় – তাই নেম সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ আছে এবং তা বিস্ময়কর নয়। যদিও সংস্কারের ইচ্ছা পরিষ্কার কিন্তু শেষ ফলাফল পরিষ্কার না, জোট সরকারের কাজ কেবলমাত্র শুরু হয়েছে। বালাজো২৮ জানিয়েছেন:
বাস্তবতা হল নেম এখনো শিশু অবস্থায়- নেমের আওতায় ভালো জিনিষ আছে কিন্তু এটা আবার একপক্ষীয় নীতিতে পরিণত হয় কিনা অন্য নামে নাকি এটা কার্যকরভাবে কাজে পরিণত করা যাবে, এখনো দেখার বাকি।