- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারত, পাকিস্তান: দুই তারকার এক বিয়ে দুটি দেশের সম্পর্কের পরীক্ষা নিচ্ছে

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, পাকিস্তান, ভারত, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, খেলাধুলা, তাজা খবর, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, রাজনীতি

সম্পর্কের মধ্যে বৈরিতা এবং যখন তখন পরস্পরকে সন্দেহ করা ভারত ও পাকিস্তানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং এ কারণে নিত্য নতুন গল্পের কথা আপনি শুনতে পাবেন, যা তাদের সম্পর্কের পরীক্ষা নিয়ে থাকে।

সানিয়া মির্জা [1] (২৪) এক বিখ্যাত ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড়, যার বাড়ি ভারতের হায়দ্রাবাদে এবং শোয়েব মালিক [2] (২৮) এক পাকিস্তানী ক্রিকেট খেলোয়াড়, যিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক।

শোয়েব মালিক ও সানিয়া মির্জা, ছবি ডেডপ্যান থটস এর সৌজন্যে।

শোয়েব মালিক ও সানিয়া মির্জা, ছবি ডেডপ্যান থটস এর সৌজন্যে।

কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাবার ঘোষণা (১৫ এপ্রিল, ২০১০), ভারত ও পাকিস্তানের প্রচার মাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য এক উত্তেজনাকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ব্লগাররাও এই বিষয়ে নিয়ে মুখরিত।

ভারতীয় ব্লগাররা এই বিষয়ে হতাশ এবং এই জুটির প্রতি তারা বলতে গেলে সমালোচনামুখর। র‍্যানডম থটস অফ এ ডিমেনটেড মাইন্ড-এর গ্রেটবং তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত রসিকতা দিয়ে এই সংবাদটি প্রকাশ করেছে [3]:

এই সুখী জুটি আজ ক্যামেরার সামনে হাজির হয়ে বিশ্ববাসীকে জানায় যে বিয়ের পর দুজনে একসাথে দুবাইয়ে বসত গড়বে, এটি এমন এক জায়গা যা ভারত-পাকিস্তানের সৌহার্দ্যের জন্য বিশেষ দূতদের উপহার দিয়েছে যেমন বিগ ডি। যখন শোয়েব মালিকের সমর্থকরা উল্লসিত (তাদের তিনজনই) এবং সোনিয়ার ভক্তরা তার “এই কাজের জন্য” ক্রমাগত ভাবে তাকে নিজেদের মস্তিষ্ক থেকে (হেড ড্রাইভ) মুছে ফেলছে। যারা বৈবাহিক জীবন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, তারা সোনিয়াকে তার কাজ এবং পদক্ষেপের ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছে, কারণ এখন যদি সানিয়া তৃতীয় ভুলটি করে তা হলে তাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে।

বলা যায় প্রায় সকল তারকাদের (সেলিব্রেটি) ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিতর্কের বাইরে নয় এবং প্রচার মাধ্যম আবিষ্কার করেছে যে শোয়েব ২০০২ সালে এক ভারতীয় মেয়েকে বিয়ে করেছিল, যাকে পরে সে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেয়। শোয়েবের আত্মীয়দের মোতাবেক এই পাকিস্তানী খেলোয়াড় ভারতের হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা আয়েশা নামের এক মেয়েকে পাগলের মত ভালোবেসেছিল। আয়েশা তার ছবি শোয়েবকে পাঠায়, কিন্তু পরে জানা যায় ছবির মেয়েটি আয়েশা নয়। কিন্তু আয়েশার পরিবার বিয়ের এক প্রমাণ নিয়ে হাজির হয় [4] এবং অভিযোগ করে, শোয়েব ফোনের মাধ্যমে আয়েশাকে বিয়ে করেছে। পরে শোয়েব তা অস্বীকার করে, কারণ আয়েশা ছবির চেয়ে মোটা ছিল [5]। টুইটারে পাঠানো এক বার্তার মাধ্যমে সানিয়া এই অভিযোগ খারিজ করে দেয় [6]। সানিয়া জানায়, আসল সত্যিটা কি এ সমন্ধে সে এবং তার পরিবার অবগত আছে।

ইন্ডিয়ান আনকাট-এর অমিত ভার্মা শোয়েবের কাজে খুশি নয় [7]:

দেখুন তো। এই অভদ্র লোকটি দাবি করছে, সে একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছিল এবং তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল এবং এটা সে করেছিল একটি ছবির ভিত্তিতে। এরপর ছবির মেয়েটি বাস্তবে পাল্টে অন্য এক মেয়েতে রূপান্তরিত হল। বিষয়টি হচ্ছে, যদি কেউ ভূয়া ছবির প্রেমে পড়ে তা হলে বাস্তবের মেয়েটি অবশ্যই অন্য কেউ হবে।

তবে সানিয়া মির্জারও সমর্থক রয়েছে ভারতে। রাজ আশা করেন [8] এই দুই ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের ভালোবাসার কাছ থেকে ভারত ও পাকিস্তান শিক্ষা নিতে পারে। এই ব্লগার বলছেন:

এই দুটি জাতির উভয়ের মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারে সাধারণ জনতাই।

তবে এই বিবাহ ভারতীয় রাজনীতিতেও এক তরঙ্গের সৃষ্টি করেছে। শিব সেনা [9] নামক দলের প্রধান ৮৪ বছর বয়স্ক বাল থ্যাকারে দলের মুখপত্র সামনা নামক পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লিখেছেন [10]: “এরপর (বিয়ের পর) সানিয়া আর ভারতীয় বলে গণ্য হবেন না। তার হৃদয় যখন ভারতীয়, তখন তা কোন পাকিস্তানীর জন্য কেঁপে উঠতে পারে না। যদি সে ভারতের হয়ে খেলতে চায়, তা হলে তাকে একজন ভারতীয় জীবনসঙ্গী বেছে নিতে হবে”।

স্মোক সিগনাল- ব্লগের প্রেম প্যানিকার দুই রকম কথা বলার জন্য শিব সেনাকে আক্রমণ করেছেন [11]:

“টুইটারে, অনেকে দলটিকে দুই রকম কথা বলার জন্য উপহাস করেছে, তারা যুক্তি তুলে ধরে, শিবসেনা ক্রমাগত এই ধরনের দাবি করে যে, একজন ভারতীয়কে বিয়ে ও ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা সত্বেও, সোনিয়া গান্ধি একজন ইতালীয়। অন্যদিকে তারা দাবি করছে যে সানিয়া ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার হারাবে, যদি সে একজন পাকিস্তানিকে বিয়ে করে”।

প্রতিবাদের মুখে শিব সেনা শনিবার এই বিষয়ে তাদের বিবৃতি পাল্টে ফেলে [12], এখন তারা বিষয়টিকে সানিয়ার “ব্যক্তিগত ব্যাপার” বলেছে।

বিখ্যাত সাংবাদিক ও ব্লগার এম. জে আকবর তার ব্লগে লিখেছেন [13]:

সানিয়া এখনো বিশ্বাস করে যে সে ভারতীয় নাগরিকত্ব বজায় রাখবে। কাগজে কলমে বিষয়টি ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে তা পালন করা ভিন্ন বিষয়। ভারত এবং পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান করে না। পাকিস্তানের আইনে যদি কোন নাগরিকের স্ত্রী (অথবা স্বামী) সে দেশে বাস করতে চায়, তা হলে তাকে অবশ্যই পাকিস্তানের নাগরিক হতে হবে।

কৃষ্ণ চৈতন্য জানাচ্ছে যে:

পাকিস্তানের টেনিস এসোসিয়েশন সানিয়াকে চায় এবং ভারতীয় টেনিস এসোসিয়েশন তার এই রত্নকে হারাতে রাজি নয় [14]

এদিকে পাকিস্তানী নেটিজেনরাও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।

পাকিস্তানের দুলহা ভাদেরা থেকে সিকান্দার ফাইয়াজ খান বলছেন [15]:

এই সংবাদ পাকিস্তানীদের জন্য যেন অনেক দিন পরে দুটি ঈদের মিলিত এক খুশির মত, তবে ভারতীয়দের জন্য যে তা হতাশার সেটি অন্তত বলা যায়। [..] ফেসবুক, অর্কুট, টুইটার এবং সকল সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটে পাকিস্তানীদের একে অন্যকে অভিনন্দন জানানোর বার্তায় ভরে যায়। ভারতীয় সানিয়া হঠাৎ করেই পাকিস্তানীদের ভাবীতে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে সেখানে বিষয়টি উদযাপন করার জন্য লোকজন শোয়েব মালিকের বাসভবনের সামনে গিয়ে হাজির হয়। কেবল তাই নয়, পাকিস্তানের কয়েকটি শহরে লোকজন রাস্তায় ঢোলের বাড়ির শব্দে নেচে উঠে। অন্যদিকে এই নিয়ে ভারতে, এক বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়। সেখানে বিয়ের এই ঘোষণা বেশিরভাগ লোকের ভালো লাগেনি।

রাইজিং ব্লগ-এর ওয়াকারাআবোরা মন্তব্য করেছেন [16] যে শোয়েবকে অবশ্যই তার প্রাক্তন স্ত্রী আয়েশার সাথে যথাযথভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো উচিত, তিনি জানাচ্ছেন:

অনেক বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় এ ধরনের বাজে কাজ করেছে এবং অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।

চৌরঙ্গি ব্লগের হিনা সফদর এই দম্পত্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন [17] এবং মন্তব্য করেছেন:

এই বিষয়টির উপর বাড়াবাড়ি রকমের ও অতিরিক্ত উন্মাদনা পূর্ণ সংবাদ প্রদানের জন্য প্রচার মাধ্যমকে ধন্যবাদ, তাদের একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয় এখন সীমানার দুই পারের দেশেই সরাসরি প্রদর্শিত এক অনুষ্ঠানের (রিয়েলটি শো) বিষয়ে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শোয়েব এবং সানিয়ার বিয়ে কি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ও সমঝোতাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে? প্রতিক্রিয়া যাই হোক ভালোবাসার জয় হবে এবং এটি নির্দেশ করছে যে ভারতীয় ও পাকিস্তানীরা যতই চেষ্টা করুক না কেন, তারা নিজেদের পরস্পরের থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারে না।