পাকিস্তান: শিশু নির্যাতন বাড়ছে

পাকিস্তানে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ইউনিসেফের স্থানীয় অফিসার শামশাদ কোরেশির বক্তব্য অনুসারে এর কারণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, বাবা মার অযত্ন এবং শিশু আর সমাজের মধ্যে সচেতনতার অভাব। তিনি আরো বলেছেন যে পাকিস্তানে শিশু নির্যাতনের মূল কারণ হচ্ছে বাবা মার অবহেলার কারণে বাচ্চাদের কাছে অন্য লোকের সহজে আসতে পারা।

বাংলাদেশ ফরেন পলিসি ব্লগে ফাহিম হায়দার পাকিস্তান আর বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন আর শিশু শ্রমের ব্যাপারটা আলোচনা করেছেন। তিনি রাখ-ঢাক করেননি যখন তিনি শিশু নির্যাতনের আর একটা খুব সাধারণ দিক তুলে ধরেছেন:

“বাড়তে থাকা পরিবারকে খাবার দিতে না পেরে মরিয়া পিতা মাতাদের সন্তানদের সচ্ছল পরিবারে পাঠায় চাকর, বা দাই হতে (আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে বাচ্চাদের রাখার দায়িত্ব পালনের জন্য এইসব বাচ্চাদের নিয়োগ দেয়া হয়)। এই বাচ্চারা তখন কার্যকরভাবে তাদের নিয়োগকর্তার দায়িত্বে পরিণত হয় আর প্রায় ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করা হয় তাদের সাথে। জন্মদাতারা দৃষ্টির বাইরে থাকেন, হয়ত শত মাইল দূরে, এটা হয়ত না জেনে যে তাদের বাচ্চারা তাদের বদরাগী আর নিষ্ঠুর মালিকদের কাছে হাড় আর মাংসের একটা বোঝার চেয়ে বেশী কিছু না।

এইসব বাচ্চাদের জন্য ন্যায় বিচার অনুপস্থিত আছে। তারা দারিদ্রের ভাসমান উদাহরণ আর দোদুল্যমান পরিস্থিতির মধ্যে দুষ্টদের জন্যে প্যাকেটে মোড়া পুরষ্কার। সুযোগ তাদের আসে না; পরিণতি অনির্দিষ্ট থাকে আর তারা কোন লক্ষ্যের দিকে কাজ করছে তা তাদের জানা থাকে না। বিচার এই বাচ্চাদের জন্য অমনোযোগী শিক্ষকের মতো।“

ফাতিমা ভুট্টো কেবলমাত্র প্রভাবশালী রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী না বরং একজন মানবাধিকার কর্মী। দ্যা ডেইলি বিস্টে একটা ব্লগ পোস্টে তিনি বেশী কিছু বলার বাকি রাখেন না শিশু নির্যাতনের একটা নির্মম চিত্র দিয়ে:

“সারা দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে ১২ বছরের কাজের মেয়ের নৃশংস হত্যার সাম্প্রতিক ঘটনা – যা বিশ্বাস করা হচ্ছে তার ক্ষমতাবান মালিক করেছে। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার বা ধনী নারীর জন্যে সম্মান হত্যা (হনর কিলিং), দেশের ধনীরা সব থেকে বেঁচে যায়।

শাজিয়া মাসিহ মাত্র ১২ বছরের ছিল যাকে তার বয়সের থেকে ছোট লাগতো। গত সপ্তাহে তাকে খ্রীষ্টানদের দাফন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লাহোর ক্যাথিড্রাল চার্চে দাফন করা হয়। সে লাহোর বার এসোসিয়েশনের ধনী আর ক্ষমতাধর ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্টের বাড়িতে কাজ করতো, আর মাসে ৮ মার্কিন ডলার এর বদলে সে মালিকের টয়লেট পরিষ্কার করতো, তাদের শহরের গ্যারেজে রাখা গাড়ি আর তাদের বাড়ির মাটিতে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতো।

এই ইউটিউব ভিডিও দেখাচ্ছে যে একজন সরকারী স্কুলের শিক্ষক ছাত্রকে নির্যাতন করেছে শাস্তি দেয়ার নামে কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কিছু করেনি।

‘শিশু নির্যাতন’ এই কথা দ্বারা শিশুদের প্রতি করা অনেক ধরনের নির্যাতন বোঝায়। এটা দ্বারা শারিরীক আর মানসিক কষ্ট বোঝায়। যখন বড় কেউ কোন শিশুকে যৌন খেলনা হিসাবে ব্যবহার করে সেটা শিশু নির্যাতন। যখন বড় কেউ তার শ্রমের চাহিদা স্বল্প মূল্যে আদায় করতে চায় তখন তা শিশু নির্যাতন। যখন কোন শিশুর সুযোগ গ্রহন করে তাকে বিক্রি করা হয় অর্থ বা অর্থ ছাড়া অন্য কোন জিনিষের জন্য সেটাও শিশু নির্যাতন। যখন বড় কেউ কোন শিশুকে তার সামর্থ্যের বাইরে জোর দেয় কোন কিছু করতে স্বাস্থ্যের চিন্তা না করে তখন তা শিশু নির্যাতন।

পাকিস্তান একটা দেশ যা তার শিশুদের রক্ষায় উল্লেখযোগ্য কিছু করে না। ফলে শিশু নির্যাতনের বিভিন্ন ধরনের বিভীষিকার সম্মুখীন তাদের প্রায় হতে হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .