- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

রাশিয়া: ব্লগাররা নির্বাচনে জালিয়াতি ধরিয়ে দিয়েছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ, রাশিয়া, নির্বাচন, রাজনীতি, সরকার, রুনেট ইকো

রাশিয়ার ৭৬টি অঞ্চলের মানুষ গত ১৪ই মার্চ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিল স্থানীয় মেয়র আর আইন প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য। শাসক দল ‘ইউনাইটেড রাশিয়া’ প্রার্থীরা এই নির্বাচনের বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জিতেছিল। তবে, ক্ষমতাসীন দলের বিজয় পূর্নাঙ্গ ছিলনা: ইরকুটস্ক এ মানুষ বিরোধী প্রার্থী ভিক্টর কোন্ড্রাশভকে বেশী পছন্দ করেছিল কিন্তু এটাই একমাত্র ক্ষেত্র ছিল। বাড়তে থাকা বিরোধিতা সত্ত্বেও (যেমন ইরকুটস্ক [1], কালিনিনগ্রাদ [2], মস্কো আর অন্যান্য জায়গায়), ‘ইউনাইটেড রাশিয়া’ তার প্রভাব বজায় রাখতে পেরেছিল রাশিয়ার সকল আঞ্চলিক আইন পরিষদ আর নগর প্রশাসন অফিসে।

এই ধরনের ‘রাজনৈতিক স্থিরতার’ একটা রহস্য (রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যম ছাড়া) হচ্ছে তথাকথিত বহুল ব্যবহৃত জালিয়াতির প্রক্রিয়া যা নির্বাচনের সময়ে দলের সদস্য আর সরকারী কর্মকর্তা সবাই ব্যবহার করে। এটি প্রথম নির্বাচন ছিল যেখানে ওয়েব ২.০ প্রযুক্তি এই বিষয়টি তুলে ধরতে সাহায্য করে। ব্লগাররা তাদের মোবাইল ফোন ক্যামেরা দ্বারা জালিয়াতির ছবি তুলে তা অনলাইনে প্রকাশ করে দিয়েছে।

বিশেষ করে নির্বাচন পর্যবেক্ষন এসোসিয়েশন ‘গোলোস’ (একটি কণ্ঠ) [3] এর সদস্যরা বেশ কার্যকর ছিল নির্বাচনের স্বচ্ছতা আর জালিয়াতি তুলে ধরতে। এই এসোসিয়েশন একটি জালিয়াতি হটলাইন ওয়েবসাইট “88003333350.ru [4]” স্থাপন করেছে যেখানে যে কেউ জালিয়াতির রিপোর্ট দিতে পারবে। এই পর্যন্ত, ৫৬১টি জালিয়াতির কেস দাখিল করা হয়েছে।

জালিয়াতি হটলাইন [4]

জালিয়াতি হটলাইন www.88003333350.ru

টেলিফোনে ভোট: ইয়েকাতেরিনবুর্গ, সভের্দলোভস্ক এলাকা

ব্লগার লিওনউলফ [5] স্থানীয় টিভি প্রোগ্রাম ধারন করেছেন যেখানে স্থানীয় নির্বাচন কমিটির প্রধান মানুষকে আহ্বান করছিলেন একটা ফোন লাইনের মাধ্যমে ভোট দেয়ার জন্য কোন কাগজে সই না করে (যেটা বেআইনি)। “আপনারা শুধু ফোন করতে পারেন, পাসপোর্টের বিবরণ দিতে পারেন আর এটা যদি ডাটাবেসের সাথে মেলে আপনার ভোট গণনা করা হবে,” টিভিতে নির্বাচন কমিটির প্রধান বলেছেন।

প্রটোকল পুনর্লিখন: স্টানিটসা দিন্সকায়া, ক্রাস্নোদার এলাকা

রাশিয়ার বিরোধী সংবাদপত্র নোভায়া গ্যাজেট একটি ভিডিও পোস্ট করেছে [6] যেখানে স্থানীয় নির্বাচন কমিটির একজন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে সে আবার লিখছিল নির্বাচনের প্রোটোকলটিকে (একটা নথি যেখানে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল দেয়া থাকে)।

আত্মীয়ের জন্য ভোট: ইয়েকাতেরিনবুর্গ

নীচের ভিডিওতে দুইজন মহিলা স্বীকার করছেন তাদেরকে নির্বাচন কেন্দ্রে আনা হয়েছিল তাদের বাবা মার ভোট দেয়ার জন্য (যারা সম্ভবত নির্বাচন কেন্দ্রে নিজে আসতে পারছেন না)। এমন প্রক্রিয়া ঠিক আছে যদি ব্যক্তির কাছে অনুপস্থিত ভোটারের ব্যালট থাকে। কিন্তু এই দুই মহিলা, আর তার সাথে পুরো বাসে (যা পিছনে দেখা যাচ্ছে) তাদের ‘সহকর্মীদের‘ কাছে তা নেই। আর তার পরেও তাদেরকে ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে। বলা বাহুল্য যে তাদের যাতাযাতের খরচ স্থানীয় সরকার দিয়েছে, আর নির্বাচনের পরে চারপাশে ঘুরে বেড়ানোর অর্থও।

গণ প্রাথমিক ভোট: ইভানোভা

সব থেকে জনপ্রিয় জালিয়াতি হচ্ছে প্রাথমিক ভোট। এটা সেনা সদস্য, পুলিশ আর মাঝেমাঝে ছাত্রদের মধ্যে চর্চিত হয়ে থাকে। অন্য কথায়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে যতো জন সম্ভব মানুষকে একত্র করার, বিশেষ করে তাদের উপরে জোর দেয়ার রাস্তা যদি থাকে। ছাত্রদের জন্য জোর দেয়ার রাস্তা অনেক যেমন নম্বর, স্কলারশিপ, কোন পরীক্ষা পাশের ক্ষমতা ইত্যাদি।

ব্লগার ভাইটালিটি-আভেরিন এমন ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য এই ভিডিও পোস্ট করেছেন [7]:

এই ভিডিওতে [8] দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা ছাত্রদের অনুপস্থিতি দেখছেন, যেখানে ছবিতে দেখা যাচ্ছে [9] কলেজের হলে অনেক লোক।

ব্যালট ঢোকানো: আস্ত্রাখান

এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দুইজন ব্যালট বাক্সে অনেক ব্যালট পুরছে।

এই সমস্ত ঘটনা রাশিয়ার বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়ার অবস্থা দেখাচ্ছে। শাসক দলের প্রভাব অনেক বেআইনি কাজের উপরে ভিত্তি করে যার ফলে ‘আশানুযায়ী’ নির্বাচনের ফল হচ্ছে। একই সময়ে, এটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে যেটা তার রাজনৈতিক পথ পরিচালনায় ব্যর্থ এই ধরনের অগনতান্ত্রিক আর বেআইনি পন্থা ছাড়া। কিন্তু ব্লগাররা যত শক্তিশালী হচ্ছে আর জালিয়াতির প্রমান যতো কার্যকরভাবে রাশিয়ার নেটিজেনদের মধ্যে বিতরন করা হচ্ছে, একটা মুক্ত আর ন্যায় নির্বাচন দেয়ার সরকারের ব্যর্থতা কেবল কল্পনা নয়, সত্যিকারের সমস্যা।