- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

নাইজেরিয়া: জোসে আবার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, আইন, আদিবাসী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, সরকার

নাইজেরিয়ার জোসে [1] সংঘর্ষ মনে হচ্ছে চক্রাকারে ফিরে আসছে: ভয়ঙ্কর রায়ট শহরটাকে নাড়া দিয়েছে ১৯৯৪ [2], ২০০১ [3]২০০৮ [4] সালে, আর দুই মাসের কম সময়ে – ২০১০ সালের জানুয়ারিতে [5]। বর্তমানের সংঘর্ষ জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে বাচ্চা আর বৃদ্ধদের বিশেষভাবে আক্রমণ করছে বন্দুক আর ছোরা হাতে দল।

আগের রায়টের মতো, বর্তমানের জোসের সংঘর্ষ জাতিগতভাবে ঘটেছে- জোস শহর অবস্থান করছে নাইজেরিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর আর ক্রিশ্চান অধ্যুষিত দক্ষিণের সীমান্তে। এখানে ভূমি আর সম্পদে অধিকার প্রায় নির্ধারিত হয় কেউ স্থানীয় বা ‘আদিবাসী [6]’ কিনা তার উপরে, ঐতিহাসিক ক্রিশ্চান শহরের না কি অন্য কোন শহর থেকে আবাস গড়েছে (আবাসকারীরা সাধারনত উত্তরের মুসলিম হয়ে থাকে; এই বিষয়ে আরো জানতে এখানে হিউমান রাইটস ওয়াচের একটি রিপোর্ট দেখুন [7])।

অনেক সূত্র মৃতের সংখ্যা শত শত বলে জানাচ্ছে: আল জাজিরা [8] আর বিবিসি [9] দুই মাধ্যমই ৫০০ জন নিহত বলে জানিয়েছে, কিন্তু সরকারী একটা সূত্র মৃতের সংখ্যা ৫৫ বলে জানিয়েছে। দ্রুত সমাধি দেয়ার কারনে আসল সংখ্যা হিসাব করা কঠিন হচ্ছে, আর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা সংখ্যার ক্ষেত্রে অসুবিধা ঘটাচ্ছে। রয়টারের সুয়াবু মোহাম্মাদ একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন [10]:

মধ্য নাইজেরিয়ার এর আগে সংঘাতের পরে মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিপুল রাজনীতি করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দলকে দোষ দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক কারনে সংখ্যা বাড়িয়ে বলার বা কমিয়ে বলা এর ফল যাতে দাবিয়ে রাখা যায় সেই কারনে।

ব্লগ জগতে ভীতি, লজ্জা আর মনস্তত্ত্ব মূল ভাব হিসাবে ছিল। লিন্ডা ইকেজি তার ব্লগে একটি ছবি পোস্ট করেছেন [11] যা ধ্বংসযজ্ঞকে ফ্রেমে তুলে ধরেছে। তিনি লিখেছেন:

না, আমি ছবিটা সরাবো না। এটা দেশ হিসাবে আমাদের লজ্জা আর ব্যর্থতা। আসুন সবাই এর দিকে তাকিয়ে থাকি!

তার সাইটে একজন মন্তব্যকারী তার সিদ্ধান্তের সাথে একমত [11]:

ধন্যবাদ ওটা রাখার জন্য কারণ সব কিছু ঠিক আছে এমন অভিনয় করা আমাদের বন্ধ করতে হবে… সময় হয়েছে এইসব জিনিষ বন্ধ হওয়ার…

বেশ কয়েকজন ব্লগার হাইতির ভূমিকম্প আর জোসের সংঘর্ষের মধ্যে মিল খোঁজার চেষ্টা করেছেন। লিন্ডা ইকেজির পোস্টে তাইও নামে আর একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন [11]:

ঈশ্বর নাইজেরিয়াকে কতো ভাবে আশীর্বাদ করেছেন। আমি বলতে চাচ্ছি যে আমাদের খুব কম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো জিনিষ হয়। আমাদের কেবলমাত্র হৃদয়হীন মানুষ দ্বারা সৃষ্ট মৃত্যু আছে। সত্যি কথা হচ্ছে আমরা সামনে যাচ্ছি না।

বাবাজিদেশালু একই ধারণা পোষণ করছেন [12]:

বিশ্ব যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে, নাইজেরিয়া নিজের করা ধ্বংসযজ্ঞ দেখছে। জোসের সর্বশেষ হত্যাযজ্ঞ এটারই প্রমান।

২০১০ সালের জানুয়ারির রায়টের পরে একজন ব্লগার আমরা জোস [13] নামে একটা সাইট শুরু করেন রায়টের ভুক্তভোগীদের সাহায্যের জন্য। তার এই কাজের পিছনের কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেছেন [14]:

এটি পপ তারকা ওয়াইক্লিফ জিনের প্রচেষ্টা যার ফলে অন্যান্য তারকারা একত্র হয়েছিলেন হাইতির জন্য। আমি লক্ষ্য করেছি কিছু নায়জা ব্লগার হাইতির জন্য দান করেছেন আর একই সময়ে জোসে যা ঘটেছে তার তিরস্কার করেছেন, মৌখিকভাবে আর একই সাথে বলছেন যে ঈশ্বরের উচিত নাইজেরিয়াকে সাহায্য করা।

আমি প্রায় ভেবেছি আমরা নাইজেরিয়াবাসী কেন প্রায় অভিযোগ করি আর কোন ব্যাখ্যা বা সমাধান চাইনা সমস্যার যা আমাদের দিকে ধাবিত হয়। যত ক্ষুদ্র ভাবেই হোক আমি সমস্যা সমাধান করি বা চেষ্টা অন্তত করি।

লিন্ডা ইকেজির পোস্টের আর একজন মন্তব্যকারী এফ, এই সমস্যাকে ধর্মের থেকে বেশী হিসেবে দেখেছেন [15] আর পুরো দেশের জন্য মহামারি হিসাবে দেখেছেন:

জোসের বোকামি থেমে যাবে যখন আবুজার অর্থহীন কাজকারবার বন্ধ হবে। এই সকল ধূম্রজালের রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত যাতে মানুষ সাধারণ বিষয়ের নাগাল পায়। বলা হয় ক্ষুধার্থ মানুষ ক্ষুব্ধ মানুষ। নাইজার ডেল্টার একি অবস্থা। যদি সবাই পর্যাপ্ত খাদ্য পেত, মানসম্মত শিক্ষা, বিদ্যুত, পরিষ্কার পানি আর জীবিকার মানসম্পন্ন অধিকার পেত, কে চিন্তা করতো আর একটা ধর্মীয়/গোত্রীয় দলকে সম্পূর্ণভাবে মেরে ফেলে ‘বাসস্থানের জন্য প্রতিযোগিতা’ করার?

আমরা এই সব হত্যাকান্ডে রাগ/ বিতৃষ্ণা প্রকাশ করতেই থাকবো – কিন্তু এর ফলে ওটা থামবে না। মূল কারণের প্রতিকার করেই এই চলতে থাকা ট্রাজেডি থামান সম্ভব।

এডুয়েলা এডুরুয়ান্মু একই ধরনের মত প্রকাশ করেছেন [16], দোষ নাইজেরিয়ার নেতাদেরকে দিয়ে:

জোসের ঘটনাটি স্থানীয় ব্যাপার না। এটা ব্যবস্থার ব্যর্থতা আর গণতন্ত্রের অভাবের প্রতিফলন। আমাদের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই আর দেশ খুব অকাজের মানুষের উপরে নির্ভর করে আছে শক্ত প্রতিষ্ঠান আর সু শাসনের নীতির পরিবর্তে।

কিন্তু একজন মন্তব্যকারী তার পোস্টে একমত হননি [16]:

আপনারা সব সময়ে ধনীদের সাধারণ মানুষ থেকে পৃথক করছেন। কোন এক সময়ে ধনীরা তো সাধারণের ভিতর দিয়ে বেরিয়েছিল। তাই এদেরকে আসলে পৃথক করা যায়না। (সাধারণের অনেকে ধনীদের সাথে মিশতে চেষ্টা করছেন)।

নাইজেরিয়া আর নাইজেরিয়াবাসীর মানুষ হিসাবে সম্মিলিত ব্যর্থতা সবাইকে ভাগ করে নিতে হবে।

নাইজেরিয়াবাসীদের নিজেদেরকে একটা সমাজ হিসাবে দেখতে হবে আর প্রশ্ন করতে হবে যে তারা বিগত ৫০ বছর ধরে অজ্ঞাত আর আশাহীনতার ভিতরে ধ্বসে যাওয়া রুখতে কেন কিছু করেনি? কেন যে যখনি তারা ক্ষমতার একটু গন্ধ পায়, তারা সব ভুল কাজ করে? বাস্তবতা হচ্ছে, সমাজের বেশীরভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত, আর এই ধরনের দুর্নীতির ব্যবহার অনেক জায়গায় ধরে রেখে, প্রশংসিত হয়…

রবিবারের সংঘর্ষের পর থেকে, সেনা আর পুলিশ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, ১০০রও বেশী গ্রেপ্তার করে। সলেমন সিডেল [17] এই সম্ভাবনার উপরে জানিয়েছেন যে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল আদালত আসতে পারে পরিস্থিতিতে আইনী সমাধান আনতে আর ভবিষ্যৎের ঝামেলা এড়ানোর ব্যবস্থা করতে।

জানুয়ারী ২০১০ এর রায়ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে পড়ুন [18]