আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি বিবিসি নিউজ আর গ্লোবাল ভয়েসেস এর মধ্যকার একটি যৌথ সহযোগিতার বাস্তবায়ন যা বিবিসির সুপার পাওয়ার সিজনের অংশ হিসাবে আজ, ৮ই মার্চ শুরু হয়েছে।
গত বছর বেশ নজরকাড়া বিষয় ছিল মূল ধারার মিডিয়া আর নাগরিক সাংবাদিকতার মধ্যকার বাড়তে থাকা যোগাযোগগুলোর কার্যে পরিণত হওয়া। মুম্বাই, মলডোভা, ইরান, হাইতি আর এখন চিলিতে অনুষ্ঠান মাত্র কয়েকটা উদাহরণ যেখানে বিশ্ব আগ্রহী হয়েছে দুর্যোগ বা সমস্যা কবলিত নাগরিকদের সাথে দ্রুত আর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। এই নাগরিকদের ব্লগ, টুইটার আর মোবাইল ফোন অনেক বছর ধরে থাকতে পারে, কিন্তু মাত্র গত বছরে মূল ধারার মিডিয়া নাগরিক মিডিয়ার ভাষ্যকে সংবাদ রিপোর্টিং এর অংশ হিসাবে গ্রহন করার ঘটনা দেখা গেছে।
পাঁচ বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কম্যান সেন্টার ফর ইন্টারনেট আর সোসাইটিতে যখন গ্লোবাল ভয়েসেস জন্ম নেয়, এই কার্যক্রম উন্নয়নশীল আর ইংরেজী না বলা দেশের নাগরিকদের উপরে জোর দিয়েছিল যারা ব্লগ ব্যবহার শুরু করেছিলেন বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি আর মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধনের জন্য। চীনের অভিবাসীদের অনলাইনে লেখা পড়ে আর ভাষান্তর করে কি পাওয়া যাবে? আরব নারীদের ব্লগ পড়ে কি লাভ হবে? আর কি করে গ্লোবাল ভয়েসেস মূল ধারার মিডিয়াকে অনুপ্রাণিত করতে পারে যাতে বুদ্ধিমান আর স্থানীয়ভাবে সমাদৃত ব্লগারদের তাদের নিজেদের রিপোর্টিং এর মূল্য আর লাভ সম্পর্কে জানান যায়?
এইসব বছরব্যাপী আমরা গ্লোবাল ভয়েসেস এ রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, ইটালির লা স্ট্যাম্পা আর অন্যান্যদের সাথে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি। একই সময়ে ইন্টারনেটের সংযোগ সুবিধা এতো বেড়ে গেছে যে এটা সচেতনতা আর অংশগ্রহনের উচ্চসীমায় পৌঁছে গেছে বিশ্বের অনেক দেশে। যেসব দেশে কয়েক বছর আগে ব্লগের সংখ্যা হাতে গোনা যেত, এখন সেখানে হাজার হাজার নাগরিক টাইপ করে যাচ্ছেন, তাদের নিজেদের কথা বলছেন আর তাদের চারপাশের বিশ্বকে নথিভুক্ত করছেন। এর ফলে জীবন আর সমাজ পাল্টিয়ে গেছে। সামষ্টিকভাবে ইন্টারনেট গতানুগতিক প্রচার মাধ্যমের অনেক কাজের নীতির ধ্বস নামিয়েছে। এটি তৈরি করেছে সামাজিক আর রাজনৈতিক যোগাযোগ, অনেকগুলো বিভিন্ন মাত্রার প্লাটফর্ম তৈরি করেছে যেখানে মানুষ কথা বলতে, অংশগ্রহন করতে আর কোন লক্ষ্যে সংগঠিত হতে পারেন।
গ্লোবাল ভয়েসেসে আমরা লাগাতার চেষ্টা করেছি এইসব নতুন পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন পন্থা খুঁজে বের করতে এবং নতুন প্লাটর্ফম তৈরি করার প্রচেষ্টায় আছি আমরা যেখানে তুলে ধরা হবে যে বিশ্বের নাগরিকরা কিভাবে তাদের নিজেদের ভাষায় যোগাযোগ করছেন। আমাদের একটা ভার্চুয়াল, তৃণমূল পর্যায়ের সংবাদ কক্ষ আছে যা ২০০র বেশী গুণী মানুষ (ব্লগার) দিয়ে তৈরি যারা লিখছেন সেইসব দেশ থেকে যাদের সংবাদ খুব কম শোনা যায়।
২০০৯ সালের জুন মাসে যখন আমি প্রথম বিবিসি নিউজ ওয়েবসাইটের সম্পাদক স্টিভ হারমানের সাথে দেখা করি, আমরা আলোচনা করেছিলাম যে একসাথে আমরা বিশ্বব্যাপী নাগরিক মিডিয়ার ভূমিকা আর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করতে পারি, বিশেষ করে স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গী কিভাবে বিশ্বের সংবাদের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে এটার উপরে জোর দিয়ে।
তারপর থেকে আমরা মূলধারার মিডিয়াকে দেখেছি বড় ধরনের বিরোধ যেমন ইরানের সংঘাতগুলো নাগরিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানাতে। এই ধারণা যে নাগরিক সাংবাদিকতা মূলধারার সাংবাদিকতার সাথে বিরোধে আছে তা এখন অতীতের ব্যাপার, এটা পরিষ্কার যে দুইটাই একে অপরের সাথে প্রতীকী সম্পর্কে যুক্ত, যেখানে গল্পবলা, সংবাদ আর বিষয়ের ভাগে একসাথে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে।
দুই সপ্তাহ ধরে, আমরা সুযোগ খুঁজে দেখবো এইসব উপায়কে কাজে পরিণত করার। গ্লোবাল ভয়েসেস এর ব্যবস্থাপক সম্পাদক সোলানা লারসেন লন্ডনে বিবিসি সংবাদকক্ষ দেখতে যাচ্ছেন। আমরা নাগরিক সাংবাদিকদের লিঙ্ক বিবিসির সংবাদের সাথে যুক্ত করবো, আর একই সাথে আমাদের নিজেদের সংবাদকক্ষের গল্প বিবিসির সম্পাদক আর সাংবাদিকদের সাথে ভাগ করে নেব। প্রকাশের স্বাধীনতার চলতে থাকা সংগ্রামের ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিনের ভাষা, সংস্কৃতি আর বিদেশী ব্লগে প্রতিদিনের জীবন এই সব নিয়ে আমরা উন্মুখ হয়ে আছি আমাদের সব থেকে ভালো বিষয়গুলো আরো বেশী দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে।
আইভান সিগাল গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনের নির্বাহী পরিচালক