- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

উগান্ডা: ছাত্র দাঙ্গা, প্রজ্বলিত কাম্পালা

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, উগান্ডা, তাজা খবর, প্রতিবাদ

মঙ্গলবার উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় দু’টি বেদনাদায়ক ঘটনা আঘাত হেনেছে: দুই সহপাঠী ছাত্র গুলিতে নিহত হবার পর মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দাঙ্গা শুরু করে এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য সংরক্ষণ [1]এলাকা হিসেবে পরিচিত কাসুবি সমাধি ও কবরস্থান যা উগান্ডার সবচেয়ে বড় আদিবাসী গোত্রের রাজাদের সমাধিক্ষেত্র, সেটি জ্বলে ছাই হয়ে গেছে।

মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঙ্গা

সংবাদপত্রের সূত্রানুসারে উগান্ডার সবচেয়ে বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় মাকেরেরেতে দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একজন নিরাপত্তা রক্ষী বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা এবং একই ঘটনায় অন্য একজন গুরুতর আহত হবার পরে এই দাঙ্গা শুরু হয়। সোমবার রাতে এবারের স্টুডেন্ট গিল্ড (ছাত্র পরিষদের) নির্বাচন উপলক্ষ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হবার সময় নিরাপত্তা রক্ষী গুলি ছোড়ে। দা ডেইলি মনিটর [2] এই ঘটনার দু'টি সংস্করণের সংবাদ তুলে ধরেছে:

পুলিশ বলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের গিল্ড (ছাত্র সংসদ) নির্বাচন উপলক্ষ্যে এক প্রচারণা চালানোর উদ্দেশ্য সেদিন হোস্টেলে অনেক ছাত্র জমা হয়েছিল। সে সময় এক প্রহরীর সন্দেহ হয় যে একজন ছাত্র গাড়ি রাখার স্থানের (পার্কিং এরিয়ায়) রাখা কোন একটি গাড়ির ক্ষতি সাধন করতে যাচ্ছে, এরপর সে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে।

এর আগের এক সংবাদে জানা যায় যে গিল্ডের সভাপতি পদে নির্বাচনে দাঁড়ানো সাইমন কামাউ-এর সমর্থকরা এনআরএমএসের জন টাইলের সমর্থকদের সাথে এক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ফলে কেনিয়ার ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে।

দা নিউ ভিশন জানাচ্ছে [3] যে এক প্রার্থী ও অন্য আরেক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মতভেদের ফলে এই গুলির ঘটনা ঘটে:

যখন এই দলটি এলাকা ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সে সময় তারা নেওনগেসার মুখোমুখি হয়, ধারণা করা হচ্ছে যে সে কামাউ শিবিরের লোক, যে দুজন কেনিয়ার ছাত্র এই গিল্ডে নির্বাচন করছে তারা মধ্যে অন্যতম জন কামাউ।

যখন এই দলটি তার কথামত হোস্টেল ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে, তখন সে ক্রমাগত একটি বেঞ্চ দিয়ে [প্রার্থী জন] টেইরাকে আঘাত করার চেষ্টা করে।

এই ঘটনা যা পরবর্তীতে বিক্ষোভে পরিণত হয়, এক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে প্রহরী এই ঘটনায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়, যে গুলিবর্ষণের ঘটনায় তিনজন ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়।

মঙ্গলবার ছাত্ররা এর প্রতিবাদে মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ বের করে, তারা এই হত্যার প্রতিবাদে কিছু প্রতীক এবং কফিন বহন করে। উভয় সংবাদপত্র জানায় যে, প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয় এবং পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে।

ওলে টানগান জুনিয়র [4] একজন সাংবাদিক। তিনি কাম্পালায় বাস করেন। মাকেরেরে দাঙ্গা সম্বন্ধে যারা প্রথমে ব্লগ করেছিলেন তাদের মধ্য তিনি অন্যতম। তিনি বিস্মিত কেন আরো অনেক ছাত্র এই সংবাদটি ছড়িয়ে দেবার জন্য সামাজিক প্রচার মাধ্যম (সোশাল মিডিয়া) ব্যবহার করলো না:

গত রাতে মাকেরেরে বিশ্বিবদ্যালয়ের দু’জন ছাত্রকে এক সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী গুলি করে হত্যা করে যার ফলে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে এক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।

তবে এই ঘটনাটিকে সবখানে ছড়িয়ে দিতে কেউ টুইটার করার চিন্তা করেনি। টুইটারে #মাকেরেরে অনুসন্ধান দিয়ে সারাদিনেও কিছুই পাওয়া যায়নি, কেবল সংবাদ ছাড়া। ওই সমস্ত ছাত্ররা কেমন ধারার ছাত্র- বিশেষ করে যারা সক্রিয় রাজনীতির সাথে যুক্ত- সামাজিক প্রচার মাধ্যমের বিভিন্ন উপাদান কি তাদের জন্য সহজলভ্য নয়। টুইটার সম্বন্ধে কি কোন ধারণা নেই? ইন্টারনেটের এত উচ্চ মূল্যের কারণে কি এটা ঘটেছে? কি কারণে এমনটা ঘটেছে?

টুইটারে “মাকেরেরে [5]” অনুসন্ধান তার দাবিকে শক্তিশালী ভাবে সমর্থন করে, বেশিরভাগ টুইট ছিল সংবাদপত্রের সংবাদের সাথে যুক্ত করা। এখনো কাম্পালার কিছু টুইটার ব্যবহারকারী কিছু প্রবন্ধ যুক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে:

@অর্থারনাককাকা [6] (১৮ ঘন্টা আগে):গুলি ছোড়া হচ্ছে। নাকি এটি কাঁদানে গ্যাস?#মাকেরেরে [7]

@অর্থারনাককাকা [8] (১৮ ঘন্টা আগে): ছাত্রছাত্রীরা আর্ত চিৎকার এবং দৌড়াদৌড়ি করছে। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিক গড়াচ্ছে।#মাকেরেরে [7]

@এসপিন্ডেলার [9] (১৮ ঘন্টা আগে) উগান্ডার কাম্পালার মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন। এটি প্রদর্শিত হয় নিরাপত্তা রক্ষীর গুলিতে গতরাতে দু’জন ছাত্র মারা যাবার ঘটনায়। পুলিশ উত্তেজিত জনতার উপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

@মারিয়ামবে মারিয়া [10] (১৪ ঘন্টা আগে): মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলির ঘটনায় দু’জন নিহত হয়েছে এবং একজনের অবস্থা গুরুতর, সরকারকে এই ঘটনাটি জানানোর উপায় কি??

কাসুবি সমাধিক্ষেত্র আগুনে জ্বলে গেছে

মঙ্গলবার রাতে, দৃশ্যত সম্পর্কিত নয় এক ঘটনায় কাসুবি সমাধিক্ষেত্র আগুনে ছাই হয়ে গেছে [11]। এই সমাধিক্ষেত্রটি উগান্ডার বুগান্ডা জাতির রাজাদের সমাধিস্থল। বুগান্ডা উপজাতির বর্তমান রাজার সাথে উগান্ডার রাষ্ট্রপতি ইয়োরে মুসেভেনির দ্বন্দ্ব সম্প্রতি খবরের কাগজে উঠে আসে। ২০০৯ সালের উভয়ের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনায় কাম্পালায় এক প্রাণঘাতী দাঙ্গার সূত্রপাত হয় [12] এবং নাগরিকরা শঙ্কিত যে এই অগ্নিকাণ্ড ভবিষ্যৎ-এ এক অস্থিরতার জন্ম দেবে।

উগান্ডার ব্লগার ২৭ন্থ কমরেড [13] লিখেছে”

যখন এ রকম এক এলাকা অগ্নিকাণ্ডে জ্বলে যায় তখন সাধারণত তা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়। এই এলাকার কবর ঘাসের আচ্ছাদনে তৈরি, সমাধি গুলোও তাই, কাজেই এখানে ভয়াবহ ভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ইতোমধ্যে আমার চারপাশের কয়েকজন বদমাইশ বুদ্ধিমান বলছে, “এটা সরকারের কাজ!” তার বদলে আমি বলবো, “এটা বিরোধীদের কাজ!” কিন্তু আমি ধারণা করছি এটা এমন এক দায়িত্বহীন ব্যক্তির কাজ যে আগুন নিয়ে খেলা করেছে। প্রকৃত সংবাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ব্লগার এবং সাংবাদিক রোজাবেল [14] লিখেছে:

রাষ্ট্রপতি মুসেভেনি সরকারের সাথে বুগান্ডা রাজ্যের সম্পর্ক গোলাপ বিনিময়ের মত নয় এবং এই ঘটনা অনেকের মাথায় এক উর্বর কাহিনীর জন্ম দেবার মত এক ক্ষেত্র তৈরি করেছে যারা মনে করেন উভয়ের মধ্যে অনেক সংঘাত রয়েছে। অনেক মনে করেছিল এই ঘটনায় সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়বে। আমরা কেবল আশা করি এই আগুন লাগার ঘটনায় সঠিক তদন্ত হবে এবং এই ঘটনায় কোন লোক তার জীবন এবং সম্পদ হারাবে না। কাসুবি সমাধি একই সাথে রাষ্ট্রের এক ঐতিহ্য, কাজেই আমি আশা করবো উভয় পক্ষ সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে এই বিষয়টি সামাধান করবে।

টুইটারের উগান্ডাবাসীরা একই সমান উদ্বিগ্ন:

@ডাপফনজএমপায়ার [15] (ছয় ঘন্টা আগে): কাসুবি সমাধি আগুন জ্বলে গেছে…ওহ ঈশ্বর কোথায় আমরা মাথার রেখেছি।

@কাকাজি [16](৬ ঘন্টা আগে): কাসুবি সমাধি দুই ঘন্টা আগে জ্বলে গেছে.. আমি সৎ মনে প্রার্থনা করছি!! এটা অগ্নিসংযোগের কোন ঘটনা না হয়!! আমাদের এক মহান ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়া…:-(

@মাগুমায়া [17] (৬ ঘন্টা আগে): আমি শঙ্কিত যে কাম্পালায় কাসুবি সমাধি বিনষ্ট হবার ঘটনা নিয়ে আগামীকাল গোলোযোগ হতে পারে।

লরেন [18] একজন আমেরিকাবাসী যে এক সময় কাম্পালায় বাস করতো, তিনি তার বন্ধুদের সমাধি স্থানে ভ্রমণ করতে নিয়ে যাবার কথা স্মরণ করেছেন:

কাসুবি সমাধিক্ষেত্র আমার কাছে সংস্কৃতি ও ইতিহাসের চেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। যখন আমরা উগান্ডায় বাস করতাম, সে সময় আমাদের বাসগৃহ ছিল কাসুবি পাহাড়ের চুড়ায় এবং আমরা প্রতিদিন কাম্পালার উপশহরে যাওয়া ও আসার সময় সমাধিক্ষেত্রটি অতিক্রম করতাম। অনেক অতিথিকে আমরা সেই সমাধিস্থল দেখাতে নিয়ে যেতাম যাতে আমরা বুগান্ডা উপজাতি সম্বন্ধে আরো বেশি জানতে পারি, এটি একটি ইতিহাস এবং সংস্কৃতি কেন্দ্র । আমি সব সময় সমাধিস্থল ও তার পাহারাদারদের অতিক্রম করে যাবার সময় আনন্দ পেতাম; সেখানকার পাহারাদাররা ঐতিহ্যবাহী জাফরান (কুঙ্কুম)-রঙ্গের পোশাক পরে থাকে এবং সমাধিস্থলের বিপরীতে যে বিশাল গাছ রয়েছে তাতে হেলান দিয়ে থাকে। তারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে থাকে পরবর্তী দর্শনার্থীকে অভিবাদন জানানোর জন্য।

অক্টোবর ২০০৮-এ কাসুবি সমাধিক্ষেত্র, ছবি লরেন-এর সৌজন্যে

অক্টোবর ২০০৮-এ কাসুবি সমাধিক্ষেত্র, ছবি লরেন-এর সৌজন্যে