থাইল্যান্ড: ঝড়ের আগমনের পূর্বেকার এক শান্ত অবস্থা?

১২ মার্চে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়, যে সমাবেশে রেড শার্টেরা ( থাইল্যান্ডের বর্তমান সরকার বিরোধীরা লাল জামা পরে বলে তাদের এ নামে বলে অভিহিত করা হয়) এই সপ্তাহ আবার রাস্তায় নেমে পড়ার শপথ নেয়, তারা সংসদের বিলুপ্তি ও নতুন নির্বাচনের জন্য ক্রমাগত চাপ প্রদান করে আসছে।

১৪ মার্চ, রোববারে রেড শার্ট ওরফে লাল জামাধারীরা লাখো মানুষের পদযাত্রার এক পরিকল্পনা করে, এর উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান সরকারকে অপসারিত করা।

রেড শার্টের অনেকে বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রার সমর্থক, কিন্তু তাদের সকলেই এই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নেতার ভক্ত নয়, যিনি সম্প্রতি আদালতে দুর্নীতির মামলা অভিযুক্ত হয়েছেন। রেড শার্টদের কাছে অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী অভিজিৎ ভেজ্জাজিভা একজন অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক শাসক।

১২ মার্চ ব্যাংককে এক শোভাযাত্রা বের হয় এবং উত্তরের গ্রামীণ এলাকায় ধারাবাহিক কিছু প্রতিবাদ শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়, যা এই সপ্তাহের ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্ধারন করা হয়েছিল। সরকারের হিসেব মতে প্রতিবাদ বিক্ষোভে ৬,৫০০ জন উপস্থিত ছিল, সমাবেশের উদ্যোক্তাদের দাবি, সেদিন রাস্তায় প্রায় ৩০,০০০-এর বেশি জনতা উপস্থিত হয়েছিল।

রেড শার্টরা প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল যে তারা বিক্ষোভ শোভাযাত্রায় কোন ধরনের সংঘর্ষে জড়াবে না, কিন্তু এই ইউটিউব ভিডিও প্রদর্শন রেড শার্ট এবং মোটরগাড়ির আরোহীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছে।

অন্য এক ভিডিও দেখাচ্ছে যে রেড শার্টের কিছু অভিযুক্ত কর্মী শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া কিছু ব্যক্তিকে টাকা দিচ্ছে

ডি-ডে (চূড়ান্ত অভিযানের শুরুর দিন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর বিরুদ্ধে মিত্রপক্ষের চূড়ান্ত অভিযানের সাংকেতিক নাম) শুরু হতে এখনো দুইদিন বাকী, কিন্তু ব্যাংককের অনেক বাসিন্দা প্রধান যে সমস্ত এলাকায় বিক্ষোভ শোভাযাত্রা বের হবে, সে সব এলাকা থেকে দুরে থাকতে শুরু করেছে। ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ডজন খানেক রাষ্ট্র এই সপ্তাহে থাইল্যান্ডে ভ্রমণ না করার জন্য তাদের পর্যটকদের উপদেশ দিয়েছে: এবং এখানকার বাসিন্দাদের লাল বা হলুদ জামা না পরার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, যা থাইল্যান্ডের “রাজনৈতিক দলের পোশাকের রঙের প্রতীকে” পরিণত হয়েছে। ইয়োলো শার্ট (হলুদ জামা) নামে পরিচিতরা থাইল্যান্ডে সরকারের সমর্থক, তারা হলুদ জামা পরে।

ক্রিস্টোফার মুর আবিষ্কার করেছেন ব্যাংককের পরিস্থিতির উপর তথ্য পাবার ক্ষেত্রে নতুন প্রচার মাধ্যম একটি বিকল্প সংবাদ উৎসে পরিণত হয়েছে।

ব্যাংককের সেরা সময়টাতেই সঠিক সংবাদ পাওয়া কঠিন, সেখানে এ রকম এক বাজে পরিস্থিতিতে ঠিকঠাক মতো সংবাদ পাওয়া অসম্ভব প্রায়। এই পদ্ধতির ভেতরে অনেক বেশি সরকারি আওয়াজ থাকে। এখনকার টেলিভিশন এবং রেডিও এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সম্প্রচার মাধ্যমের উপর সরকারের এখন আর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নেই। ইন্টারনেট, টুইটার, মোবাইল ফোন, মুঠোফোন বার্তা (টেক্সট মেসেজ), গরম গরম তথ্য, গুজব, হুমকি, সতর্কবার্তা, এবং ভয় ছড়িয়ে দিচ্ছে। বার্তা ছড়ান নিয়ে সংঘর্ষ, দেশে অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যে রাগ, ক্রোধ, ঘৃণা এবং অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। তথ্য এবং জ্ঞান এই সমস্ত আবেগের মধ্যে দিয়ে ছেঁকে ফেলা হচ্ছে।

সম্প্রতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যে ১২ মার্চে ব্যাংককে কোন অসাধারণ ঘটনা ঘটেনি।

ব্যাংককের অনেক জনতা আশা করেছিল যে, এইদিন এখানে বেশ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এদিন তাড়াতাড়ি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়, স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু যখন শহরের কিছু অংশে ছোট আকারে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়, তাতে ব্যাংককের কেন্দ্রীয় অংশকে অন্য দিনগুলোর মত দেখায়।

Red Shirts marching

রেড শার্টদের পদযাত্রা

Business and activism

ব্যবসা ও কর্মকাণ্ড

রেড শার্টদের শোভাযাত্রা সম্বন্ধে টুইটারে যে সমস্ত পোস্ট করা হয়েছে সেগুলো এইসব হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে জানতে পারবেন: এগুলো হল #রেডটুইট, #রেডনিউজ, #রেডমব, #রেডমার্চ, #রেডবাফেলো, #স্টুপিডরেড, #রেডটেইল, #রেডশার্ট, #রেডবাফ। এমনকি যে থাকসিন বিভিন্ন দেশে পালিয়ে পালিয়ে থাকছেন, তারও একটা টুইটার একাউন্ট রয়েছে।

১২ মার্চের শোভাযাত্রার উপর টুইটারে যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া এসেছে এখানে তার কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়েছে।

ওয়াইজকাওয়াই শহরের কেন্দ্রীয় এলাকা বানগানায় সেনাবাহিনী বিস্ময়ের সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছে। লাল, সাদা এবং নীল ফিতাধারীরা তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করছে। ০৬-এর মত হলুদ জামাধারীদের দেখা যাচ্ছে না।#রেডশার্ট
ব্যাঙ্ককপ্যাস্টার হয়ত আমি অনেক নৈরাশ্যবাদী। সারাদেশে প্রচারিত ভিডিওতে যেমনটা দেখা গেছে, রেড শার্টরা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের টাকা দিচ্ছে, তাতে বিস্মিত নই। হলুদরাও একই কাজ করেছিল। এইসব বিষয় নিয়ে ভাববে, কার এত মাথা ব্যথা?#রেডশার্ট
তুলসাথিট “বিক্ষোভকারীদের মিলিত হবার জন্য নির্ধারিত স্থানের প্রত্যেকটি এলাকায় তারা হাজার মানুষের উপস্থিতি আশা করেছিল, কিন্তু প্রত্যেক স্থানে নেতার কেবল কয়েকশ লোককে জড়ো করতে সমর্থ হয়” এক সংবাদ উৎস থেকে এই তথ্য জানা যায়।
রিচার্ড বরো @মাইকেল_এসপি৩৪: আজকের দিনটির কোন মুহূর্তেই আমি কোন হুমকি অনুভব করিনি। ঘটনা হচ্ছে তারা বেশ বন্ধুভাবাপন্ন ছিল এবং তারা আমাদের তাদের ছবি তুলতে দিচ্ছিল।
রিচার্ড বরো: তারা বলছে অনেক # রেডশার্টের পিকআপ এবং বাসের কথা, যেগুলোকে পুলিশ অনুসন্ধান কেন্দ্রে থামানো হয়েছিল এবং এর ভেতরে খোঁজ করা হয়েছিল, যার ফলে সবার আসতে দেরি হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .