- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা-শুরুর আর ১০০ দিন বাকী এবং দিন গণনা শুরু

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, খেলাধুলা

ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণ, এসে গেছে! দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে এবং আমরা অচিরেই ‘শুরুর আগের ১০০ দিন গণনার’ মাহেন্দ্রক্ষণে পৌঁছাব। বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সব চেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা, যার জন্য সবাই অপেক্ষা করে রয়েছে। এটি তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ খেলা, কেবল এই কারণে তার জন্য অপেক্ষা করে নয় বরং সবাই এর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে কারণ, এবারের বিশ্বকাপ বিশ্বের সব চেয়ে বর্ণিল মহাদেশ- আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে!

যখন পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম এখনো সন্দেহ পোষণ করছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকার এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সামর্থ্য রয়েছে কি না এবং তারা সব সময় এই মহাদেশের প্রতি বিদ্রুপ ছুঁড়ে দিচ্ছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ২রা মার্চ থেকে এক নতুন গুঞ্জন সৃষ্টির জন্য তৈরি হয়েছে। এই তারিখটি বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক ১০০ দিন আগের দিন, যে দিনে এই দিন গণনার মত বিশাল অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন হয়েছে।

বিশ্বকে দক্ষিণ আফ্রিকা কি ভাবে বিশ্বাস করাবে যে সে এই মহাযজ্ঞের জন্য তৈরি? [1]:

আমি নিজে নিজেকে প্রশ্ন করেছি, এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা আর কি করতে পারে, যাতে বিশ্ব বিশ্বাস করবে যে, সে কেবল বিশ্বকাপের জন্য তৈরি নয়, একই সাথে এর আয়োজন করতে এবং তা ভালোভাবে করতে সক্ষম, ফুটবল বিশ্বকাপ নামক অনুষ্ঠানটি?

পল বাসি বলে চলেছেন:

দিন গণনার শুরু হয়েছে, যা, দলগুলোর প্রস্তুতি নেবার সাথে কোন ভাবে সম্পৃক্ত নয়, তার বদলে এটি আমাদের উত্তেজনাপূর্ণ ভাবে জানান দেয় যে, সবচেয়ে সেরা একটি খেলা পৃথিবীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে অনুষ্ঠানটি করার কারণে, দক্ষিণ আফ্রিকা আমার ভোট নিশ্চিতভাবে পেতে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় জীবন বিশ্বকাপের সময় এতটাই উষ্ণ থাকবে, অনুষ্ঠান শেষ হবার পরে (কেবল এক মাস পর থেকেই) এর ঘটনাবলীর যে স্মৃতি তৈরি হবে, তা হবে অসাধারণ।

ব্লাব্লা ব্লগস [2] বিষয়টি একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে রেখেছে (যদিও তা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত) ‘২০১০ সালে – দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের জন্য পতাকা উত্তোলন করার উপর মনোযোগ প্রদান করে, যা হবে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উদযাপনের এক স্মারকচিহ্ন’ ।

২রা মার্চ, স্বদেশ এবং বিদেশে বাস করা দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকদের একটি বিশেষ দিন, যে দিনে তাদের আহ্বান জানান হয়, যেন তারা এই প্রতিযোগিতা ও দেশটির জন্য তাদের যে উত্তেজনা তা প্রদর্শন করে, এবং এই সুন্দর খেলাটির প্রতি তাদের যে আগ্রহ তা প্রদর্শন করে।

দক্ষিণ আফ্রিকার রোড সেফটি ব্লগের এক কৌতূহলজনক জরিপে বের হয়ে এসেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ৮৫ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করে, দেশটি বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার মত অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তৈরি:

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দেশটি যে প্রস্তুতি নিয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণ (৮৫%) দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক তাকে সমর্থন করে, যা আফ্রিকার প্রতিক্রিয়ার তরঙ্গকে প্রদর্শন করে, একেবারে ২০১০-এর ব্যারোমিটারে- যা ঠিক বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান প্রধান শহরগুলোর প্রস্তুতির মাত্রাকে পরিমাপ করছে।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার লোকেরা এই বাস্তবতাও স্বীকার করে, বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য এখনো অনেক কাজ বাকী এবং ৬১ শতাংশ নাগরিক একমত, এদেশে আসা অতিথিরা এদেশের উপকূলে বেড়াতে গিয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যেতে চাইলে পুলিশী প্রহরা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

সাউথআফ্রিকা ওয়ার্ল্ডকাপব্লগ এই বিষয়ে তার পোস্টের শিরোনামে অনেক বেশি ব্যঙ্গাত্মক করেছে -এই আসছে ফিফার মোটাসোটা সেই বিড়ালটি [3]….

আর মাত্র ১০০ দিন, এই দিন গণনার শুরু অনুষ্ঠানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ফিফার সভাপতি সেপ ব্লাটারও যোগদান করেছেন, যা ডারবানে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সংগঠক কমিটির প্রধান ড্যানি জর্ডান দেশটির উপরাষ্ট্রপতি কাগালেমা মোটলান্থার সাথে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এদের সাথে ছিল জে জে ওকাচা, রাজার মিলার, মার্ক ফিশ এবং হোসাম হাসান।

এখানে উল্লেখ করা হয়, যে বিষয়টি এখনো সংগঠকদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে রয়েছে তা হল, উপরিকাঠামো বিশেষ করে স্টেডিয়ামের কাঠামো নির্মাণ (সোয়াহিলি ভাষায়):

যে সমস্ত স্টেডিয়ামে খেলা অনুষ্ঠিত হবে ও যেখানে দলগুলো অনুশীলন করবে সে সব মাঠের গুণগত মান সম্প্রতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িযেছে”… মাঠগুলো নরম এবং ভেজা, যার ফলে ইংল্যান্ডের ফুটবল এসোসিয়েশন রিচার্ড হাইডেনের সাথে যোগাযোগ করে, যে কিনা স্পোর্টস টার্ফ রিসার্চ ইন্ষ্টিটিউটের (খেলার মাঠ গবেষণা প্রতিষ্ঠান) লোক, তিনি এই সমস্ত মাঠের উন্নয়নের জন্য কাজ করেন। তিনি এত ভালোভাবে তার কর্ম সমাধা করেছেন যে, ফিফা সমস্ত সমস্যাসংকুল অনুশীলন মাঠের উন্নয়নের দাযিত্ব তাকে দিয়ে দিয়েছে।

সকারওয়ে.কমের সূত্রানুসারে ১০০ দিন বাকী থাকা অবস্থায়ও দক্ষিণ আফ্রিকা সমর্থকদের এই বিষয়ে উত্তেজনা তৈরির জন্য [4] অনুরোধ জানাচ্ছে:

দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমা দেশবাসীর উদ্দেশ্য ভাষণ দেবার সময় দেশটির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাদের আরো বেশি করে বিশ্বকাপের টিকিট কেনা এবং খেলাটির প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নেলসন ম্যান্ডেলা তদ্বির করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এই মহান অনুষ্ঠানের আয়োজক হতে পারার পেছনে মূল সাহায্যকারী ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। কাজেই তার সম্মানে আমাদের এখানে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপকে প্রচণ্ড সফল এক বিশ্বকাপে পরিণত করা উচিত” জুমা বলেন, “উপরিকাঠামো, নিরাপত্তা এবং যাতায়াতের (লজিস্টিক) সুবিধা সমূহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে এটি একটি সফল অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।

টাইম অনলাইন ব্লগ [5] ঘোষণা দিয়েছে, “আমরা অসাধারণ এক বিশ্বকাপ উপহার দিতে যাচ্ছি”:

জাতির মধ্যে যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তা এখন স্পষ্ট এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে প্রস্তুত যে আফ্রিকা আসলে কি করতে পারে। আমরা এমন এক জাতি যা অনেক সামাজিক সমস্যাকে মোকাবেলা করছি, কিন্তু আমরা এক অসাধারণ বিশ্বকাপ উপহার দেব।

সবশেষে রয়েছে অনুষ্ঠানটিকে চিহ্নিত করার জন্য বুশরেডিও ব্লগ আয়োজিত [6] এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে এক আলোচনা সভা:

উপ রাষ্ট্রপতি ডারবান সিটি হলে জনতার উদযাপনে আয়োজিত প্রধান এক উৎসবে যোগ দিয়েছেন, যেখানে বিশেষ আনন্দ উৎসবের মধ্যে ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার জন্য রঙ ও শক্তি সরবরাহ করা হয়েছে”।

এছাড়াও,

সেই বিশেষ বুধবার দিনের সন্ধ্যায় বাফান বাফনা (দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবল দলের নাম) নিজেদের মাটিতে নামিবিয়ার মুখোমুখি হয়েছে (খেলাটি ১-১ গোলে অমীমাংসিত হয়)। যেটি স্থানীয় সময় ৮.৩০ মিনিটে শুরু হয়েছিল। স্থানীয় দলটি আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগীতায় সুইটজারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যথাক্রমে ৬-২ ও ৩-০ গোলে জিতে তাদের সুন্দর খেলার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।