- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আফ্রিকা: স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও উপনিবেশবাদ টিকে আছে এবং ভালোভাবে টিকে রয়েছে

বিষয়বস্তু: পশ্চিম ইউরোপ, সাব সাহারান আফ্রিকা, কঙ্গো ডে. রিপাবলিক, ক্যামেরুন, চাদ, ফ্রান্স, সেনেগাল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, জাতি-বর্ণ, দেশান্তর ও অভিবাসন, রাজনীতি, সরকার

২০১০ সাল, বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের কবল থেকে আফ্রিকার ফরাসীভাষী দেশগুলোর স্বাধীনতা লাভের পঞ্চাশতম বার্ষিকী। যখন সরকারিভাবে তা এই বছর উদযাপন করার প্রস্তুতি চলছে, তখন উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ব্লগে এই নিয়ে এক উত্তপ্ত বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

মরোক্কোর ব্লগ, প্লানেটে নন ভায়োলেন্স, উপনিবেশের অতীতকে রাষ্ট্রের বর্তমান কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করেছেন [1] [ফরাসী ভাষায়]:

Le constat de ces 50 ans est accablant. D’abord, pour les anciennes puissances coloniales, elles n’ont fait que reculer pour mieux perpétuer leur domination. Comme l’avait exprimé, autrefois, Ahmed Ben Bella : « le colonialisme est sorti par la porte, pour revenir par la fenêtre ». Pour continuer à garantir des bénéfices juteux à leurs entreprises, les anciennes puissances coloniales nous maintiennent sous tutelle, et soutiennent des régimes anti-démocratiques, pourvu qu’ils soient serviles. Passé sous silence les centaines de milliers de morts et de familles détruites, le pillage en règle des ressources, le renforcement du pouvoir arbitraire de la féodalité au détriment des pouvoirs de la jama’a (communauté) ; oubliée la longue nuit coloniale, dont nous continuons, à ce jour, à en subir les affres.

স্বাধীনতা লাভের এই পঞ্চাশ বছরকে এক কৌতূহলজনক সময় হিসেবে দেখা যায়। প্রথমত, প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি কেবল তাদের শাসন পোক্ত করার জন্য কিছু সময়ের জন্য নিজেদের উপনিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। যেমনটা আহমেদ বেন বেল্লা [2]একদা বলেছিলেন, “ ঔপনিবেশিক শক্তি দরজা দিয়ে চলে গিয়েছে, কেবল জানলা দিয়ে ফিরে আসার জন্য”। কোম্পানীগুলো প্রচণ্ড মুনাফা লাভের বিষয়টিকে নিশ্চিত করার জন্য, প্রাক্তন উপনিবেশের স্বৈরশাসকদের ক্ষমতা বজায় রাখতে এবং তাদের শাসনকে সমর্থন করতে, ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রগুলো বিবেকবর্জিত আচরণ করে। তারা তখন হাজার হাজার মৃত্যু এবং পরিবারের ধ্বংসকে উপেক্ষা করে, পদ্ধতিগতভাবে সম্পদের লুণ্ঠন, জামার (সম্প্রদায়ের) বিনিময়ে তারা সামন্ততান্ত্রিক ক্ষমতাকে একচ্ছত্রভাবে শক্তিশালী করে: লম্বা সময় ধরে চলা ঔপনিবেশিক রাত্রির কথা ভুলে গিয়ে, আমরা আবার একই ভাবে সেই পুরোনো যন্ত্রণায় ভুগতে থাকি।

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো থেকে ফ্রেডি মুলনঙ্গো ‘উপনিবেশবাদ বিরোধীতার ৫০তম বার্ষিকী: বেলজিয়াম কঙ্গো [3]’, শিরোনামের এক পোস্টে তার স্বদেশে বেলজিয়াম ঔপনিবেশিক শাসন ইতিহাসের এক পর্যালোচনা করেছেন।

L’Europe est dévastée […], c’est donc les États-unis qui dirigent. Opposés au colonialisme les américains auraient pu donner l’indépendance aux populations congolaises, néanmoins Washington est farouchement opposé à tout régime communiste et sait que la propriété privée n’existe pas dans la culture africaine. Ainsi Washington préfère garder un pouvoir colonial belge, le temps qu’un mouvement africain libéral apparaisse …Suivront l’abolition du fouet, pour le clergé, les gradés de la force publique et les auxiliaires de l’administration…Face à ces mouvements nationalistes l’administration belge commence à comprendre qu’elle va perdre leur colonie.
La Belgique avait ratifié l’article 73 de la Charte des Nations unies, qui prônait l’autodétermination des peuples.

কঙ্গোর [4] কাছ থেকে বেলজিয়াম সবচেয়ে সস্তা মূল্যে প্রাকৃতিক সম্পদ কিনে নিচ্ছে।
ইউরোপ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে[…], যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ইউরোপ এবং তার উপনিবেশকে পরিচালিত করছে। উপনিবেশবাদ বিরোধী আমেরিকানরা, কঙ্গোবাসীদের স্বাধীনতা প্রদান করতে পারত, কিন্তু ওয়াশিংটন তীব্র কমিউনিস্ট শাসন বিরোধী ছিল। তারা জানত, ঐতিহ্যগভাবে আফ্রিকায় ব্যাক্তিগত সম্পত্তির কোন স্থান নেই। এভাবে ওয়াশিংটন বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক শাসনকে আবার বেছে নিয়েছিল। দেশটিকে স্বাধীনতা প্রদানের জন্য তারা তুলনামূলক উদারনৈতিক আফ্রিকান আন্দোলনে জন্য অপেক্ষা করছিল…এরপর এলো যাজক, পুলিশ কর্মকর্তা এবং প্রশাসকদের চাবুক বিলুপ্তকরণের বিষয়, এবার তারা হয়ে উঠলো সাহায্যকারী কর্মকর্তা……
জাতীয়তাবাদী এইসব আন্দোলনের মুখে বেলজিয়ামের সরকার উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে, সে তার এই উপনিবেশকে হারাতে যাচ্ছে।
বেলজিয়াম জাতি সংঘ সনদের ৭৩ নং অনুচ্ছেদের অনুমোদন প্রদান করে, এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একটি জাতি নিজের ভাগ্য নিজে নির্ধারণ করবে…..

আদতে বেলজিয়ামের পরিকল্পনা ছিল আগামী ৩০ বছরের জন্য কঙ্গোকে উপনিবেশের শাসন থেকে মুক্ত রাখা:

… Le professeur belge Antoine Van Bilsen publia, en 1955, un document intitulé Plan de trente ans pour l’émancipation politique pour l’Afrique belge.

L’indépendance du Congo n’est pas un cadeau des Belges !

Les souverainistes congolais sont clairs, pour le cinquantenaire de l’indépendance du Congo au 30 juin 2010: le discours de Patrice Emery Lumumba ou rien !

….১৯৫৫ সালে বেলজিয়ামের এক অধ্যাপক এন্টোনিও ভ্যান বিলসেন একটি তথ্য প্রকাশ করেছিল, যার শিরোনাম ছিল, “বেলজিয়াম আফ্রিকার রাজনৈতিক দাসত্বমুক্তির ৩০ বছরের পরিকল্পনা”।
কঙ্গোর স্বাধীনতা লাভ, বেলজিয়ামের প্রদান করা কোন উপহার ছিল না! কঙ্গোবাসীদের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন করার উদ্দেশ্য পরিষ্কার, কঙ্গোর স্বাধীনতার পঞ্চশতম বার্ষিকী যে দিন উদযাপিত হবে সেই ৩০ জুন,২০১০-এ আমরা প্যাট্রিস এমরি লুমুম্বার ভাষণ [5] ছাড়া আর কিছুই চাই না!

ফ্রান্স এবং কঙ্গো উভয় দেশের নাগরিক পুরস্কার বিজয়ী লেখক এলাইন মাবানকোউ [6] এর চেয়ে একধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি ফরাসী উপনিবেশের অতীতের [7] সাথে বর্তমানের এক সম্পর্ক যুক্ত করেছেন এবং ফরাসী দেশের “জাতীয় পরিচয়” নিয়ে এক উত্তপ্ত বিতর্ক তৈরি করেছেন:

De toute évidence le débat, sans le nommer, ne cesse de tourner aussi … autour du thème de l’immigration (en particulier postcoloniale) et de ses conséquences sur l’« identité nationale »

…..পরিষ্কারভাবে এই বিতর্ক, নাম ছাড়াই বলা যায়, তার চরিত্র উন্মোচন করে…এটি অভিবাসন (বিশেষ করে উপনিবেশ পরবর্তী সময়কার অভিবাসন) নিয়ে এবং এটির প্রভাব [ফরাসী দেশে] “জাতীয় পরিচয়ের” উপর গিয়ে পড়েছে…

ক্যামেরুনের লেখক লিওপোল্ড চেন্ডাজোউ জনসম্মুখে প্রকাশিত ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নিকোলাস সারকোজিকে লেখা তার এক চিঠিতে (ধারাবাহিক ভাবে লেখা) পেরেক ঠুকে দিয়েছেন, এর শিরোনাম: স্বাধীনতার ৫০ বছর পর, নিকোলাস সারকোজির উদ্দেশ্যে লেখা এক ক্যামেরুনবাসীর চিঠি [8][ফরাসী ভাষায়]:

… Le racisme au cœur de la République …Tout comme vous, Monsieur le Président, les Noirs de nationalité française sont issus de l’immigration.

…..প্রজাতন্ত্রের হৃদয়ে বর্ণবাদ গ্রোথিত… ঠিক আপনার মত, জনাব রাষ্ট্রপতি, কালোরা ফরাসী নাগরিক, যারা অভিবাসী হবার জন্য জন্মগ্রহণ করেছে।

চাদ থেকে জুলিয়েত্তে [9] আহ্বান জানিয়েছেন, ফ্রান্সের সকল উপনিবেশ যেন ফরাসী এক প্রকল্প বয়কট করে [10]। এই প্রকল্পের আওতায় ১৪ জুলাই,২০১০-এ বাস্তিল পতন দিবসে ফ্রান্স তার রাজধানী প্যারিসের শ্যম্প ইলিসেসে তার প্রাক্তন সকল উপনিবেশকে সাথে নিয়ে এক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে [ফরাসী ভাষায়]:

Boycottons le projet francafricain du cinquantenaire des indépendances !…Nous avons donc besoin d'un groupe de personnes opposantes (ou d'organisations), originaires des pays souffrant des méfaits de la Françafrique…

চলুন আমরা ফ্রাঙ্কআফ্রিকান (ফরাসীভাষী আফ্রিকা, আফ্রিকার যে সমস্ত দেশ ফ্রান্সের এক সময় উপনিবেশ ছিল তাদের পরিচয়) নিয়ে ফ্রান্সের যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেটিকে বয়কট করি। তারা আফ্রিকার দেশসমূহের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে!…আমরা সে সমস্ত দেশসমূহের ভেতর থেকে এর বিরোধীতাকারীদের (অথবা কোন সংগঠন) খোঁজ করছি যে সব দেশ শয়তান ফ্রাঙ্কআফ্রিক [11] শাসনের দ্বারা যন্ত্রণা লাভ করেছে …

আফ্রিকার জনতা এই বিষযে তাদের বিরোধীতা প্রদর্শন করছে। শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে, সেনেগালের রাষ্ট্রপতি ওয়াদে প্রায় খালি এক স্টেডিয়ামে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অনুষ্ঠানের উদ্ভোধন করেন, যার সমাপ্তি হবে ৪ এপ্রিল (স্বাধীনতা দিবসে):

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, রাষ্ট্রপতি ওয়াদে প্রায় খালি এক স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্ভোধন করেন/ছবি টুইটারের @রিগনেসের (এইচটিটিপি://টুইটপিক.কম/১২জেডএক্সবি)

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, রাষ্ট্রপতি ওয়াদে প্রায় খালি এক স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্ভোধন করেন/ছবি টুইটারের @রিগনেসের (এইচটিটিপি://টুইটপিক.কম/১২জেডএক্সবি)