বর্তমান প্রচলিত অনেক ধরনের গ্রন্থাগারের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার এখন স্থায়ী এক বই পড়ার মাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা সরাসরি গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়তে পারে না, তাদের কাছে বই নিয়ে যাওয়া ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির কাজ। তবে অনেক জায়গায় রাস্তার খারাপ অবস্থা বা অথবা টাকা না থাকার ফলে, বাস বা ট্রাকের মধ্য ভরে বই নিয়ে যাবার ঐতিহ্যগত পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে ঠেলা গাড়ি, গাধার পিঠে বই বহন করা এবং মোটর সাইকেলে করে বই নিয়ে যাওয়ার মত ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগারের সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সমস্ত মাধ্যম সম্প্রদায়ের লোকেরা কাছে বই নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান এক বাস্তব সম্মত উপায় বলে বিবেচিত হচ্ছে।
বাইলিঙ্গুয়াল লাইব্রেরিয়ান ব্লগের মাধ্যমে এ সব বিকল্প ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের উপর আমরা এক নজর চোখ বুলাতে পারি। প্রথমে আমরা গাধায় টানা গ্রন্থাগার নিয়ে আলোচনা করবো। মনে হচ্ছে কলম্বিয়ার “বিবলিওব্যুরো” নামক প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ এই ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার। গাধায় টানা গ্রন্থাগারটি পরিচালনা করেন লুইস সরিয়ানো নামের এক স্কুল শিক্ষক। তিনি তার গাধার উপর বইগুলো চাপান, তার পিঠে চড়ে বসেন, সাথে বনভোজনের উপযুক্ত ভাঁজ করা একটি টেবিল নেন, যার উপর “বিবলিওব্যুরোর” প্রতীক ছাপা রয়েছে। প্রায় চার ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে তিনি সেই সমস্ত শিশুদের বই সরবরাহ করেন, যারা সহজেই পড়ার সুযোগ পায় না। তিনি তাদেরকে গল্প পড়ে শোনান। তাদের “বাড়ির কাজ” করে দেওয়ার কাজে সাহায্য করেন এবং তাদের বই পড়ার সেই বিরল আনন্দ প্রদান করার সম্ভাবনা তৈরি করেন যা তারা তাদের গৃহে নেই। যেমনটা তিনি ব্যাখ্যা করেন, বইয়ের মাধ্যমে শিশুরা অন্য এলাকা, অন্য লোকেদের দেখতে পায় এবং তারা তাদের অধিকার, কাজ, এবং সামাজের প্রতি তাদের যে দায়িত্ব রয়েছে সে সম্বন্ধে জানতে পারে। আর এই সমস্ত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে তারা সংঘর্ষ এবং যুদ্ধকে না বলতে শেখে।
এই ভিডিওটি লুইসের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব তৈরি করেছে: যখন এই ভিডিওটি জনসম্মুখে প্রচারের পর থেকে গ্রন্থাগারের জন্য দান শুরু হয়ে যায় এবং এখনো মানুষ এই গ্রন্থাগারের জন্য দান করছে, এর মধ্যে দিয়ে নির্মাণাধীন গ্রন্থাগারের কাজ সমাপ্ত হয়। সেখানে এখন কয়েকটি তাক এবং টেবিল রয়েছে। লা গ্লোরিয়ার ২৫০ জনের মত শিশু প্রতি সপ্তাহে এই গ্রন্থাগারে এস বই পড়তে পারে। তারপরেও সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে, লুইস তার গাধায় টানা গ্রন্থাগার নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। যারা আরো দুরে বাস করে, তাদের কাছে সে গ্রন্থাগার বয়ে নিয়ে যায়। নিচের ভিডিওটি ধন্যবাদ জানিয়ে তৈরি করা এক ভিডিও। গ্রন্থাগারে যারা অর্থ দান করে তার স্বপ্নকে সত্য করার কাজে তাকে সাহায্য করেছে এই ভিডিওতে মি: সরিওনো তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে:
মনে হচ্ছে গাধায় টানা গ্রন্থাগার কলম্বিয়ার অন্য এলাকার লোকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সান্তা মার্টার পাহাড়ি এলাকার আরহুয়াকো ইনডিয়ানরা এই পদ্ধতির মাধ্যমে এক বিশেষ সুবিধা লাভ করছে। বিবলিওব্যুরো ব্লগস ছবির মাধ্যমে এই গল্পটি জানাচ্ছে। ভেনিজুয়েলার কাছের এক এলাকায় তারা বই টানার জন্য গাধার বদলে খচ্চর ব্যবহার করছে। তারা সেই সাথে পরিকল্পনা করেছে বইয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে এবং তাদেরকে ইন্টারনেটের ব্যবহার শেখাবে। কেবল নিরক্ষরতা দুর করার জন্য নয়, একই সাথে তারা ডিজিটাল মাধ্যম সম্বন্ধে এই সমস্ত লোকদের যেন জ্ঞানের অভাব না থাকে, তার লক্ষ্য তারা এই পরিকল্পনা নিয়েছে। যেমনটা নিচের ভিডিওটি প্রদর্শন করছে, ইথিওপিয়া-আমেরিকার নাগরিক ইয়োহান্নে গেওব্রিরের্গিওগিস গাধায় টানা ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার পরিচালনা করার জন্য ইথিওপিয়া ফিরে আসে । তার জন্য সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ছিল ইথিওপিয়ায় সাধারণত যে সমস্ত ভাষাতে কথা বলা হয় সেই ভাষায় বই পাওয়া। তার সমাধান? তার শৈশবে পড়া একটি গল্পকে তিনি তিনটি ভাষায় লিখে ফেলেন, এখন তিনি আরো গল্পের বই ছাপানোর কাজে লেগে পড়েছেন।
গাধা এবং খচ্চরের সাথে উট শিক্ষা বিস্তারের কাজে লেগে পড়েছে। কেনিয়ায় উটের গ্রন্থাগার সে অঞ্চলের স্কুলে বাচ্চাদের জন্য বই নিয়ে যায়, যাতে তারা পড়াকে ভালোবাসতে পারে। একই সাথে উটকে সেখানকার যাযাবর জাতিদের হাতে বই তুলে দেবার কাজে ব্যবহার করা হয়। সেখানে এমন অনেক জাতি আছে যারা মৌসুম পরিবর্তনের সাথে সাথে জায়গা পরিবর্তন করে, তখন তাদের সাথে গ্রন্থাগারও নতুন জায়গায় চলে যায়। যে সমস্ত জাতি নিজেদের উন্নত করতে চাচ্ছে, সেখানে বই অনেক দামি একটা বস্তু, যা খুব কম লোকই কিনতে পারে। এই সমস্ত উটের উপর চলা গ্রন্থাগার গল্পের বই নিয়ে যায়, তার সাথে গল্পের বই নয় এমন বইও থাকে অথবা বাচ্চাদের বই এখানে রাখা হয়। এর পাঠকেরা এই বইটিকে দুই সপ্তাহের জন্য বাসায় নিয়ে যেতে পারে। এরপর যখন উট গ্রন্থাগার আবার সেই এলাকা ফিরে আসে তখন তারা পুরোনো বইটিকে নতুন করে নেবার জন্য আবেদন জানায় কিংবা পাঠ করার জন্য নতুন বই নেয়। নিচের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এলাকায় উটের গ্রন্থাগারটি এসে হাজির হয়েছে তা একটা শিশু দেখছে। সে বেশ কিছু বই নিয়ে তার বাসায় যায় এবং সেই সমস্ত বইয়ের মধ্যে থেকে একটি বইয়ের মাধ্যমে কি ভাবে গুনতে হয় তা তার বাবাকে শেখায়:
পরবর্তী ভিডিওটি একটা সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র। যা তুলেছেন রুড এলমেনড্রপ, এটি উট গ্রন্থাগারের উপর তোলা:
পেরুতে, যান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগারের বিষয়টিকে পরিমাপ করা হয়, এবং এভাবে মোটর সাইকেল গ্রন্থাগারের জন্ম হয়েছে। ফিউচুরা প্রকল্পের অংশ হিসবে ওব্রাজে কমিউনিটি লাইব্রেরি অন্য সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য বই নিয়ে আসে। সংস্কৃতি এবং সাহিত্যবিষয়ক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে তারা এই কাজটি করে, যা তারা আয়োজন করে থাকে: