গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, বিস্তৃত আরব ব্লগ জগতের বহুল আলোচিত বিষয় হল একটি ঘটনা যা একটি ব্লগ প্রথমে জানিয়েছে। গত ২৫শে জানুয়ারী ইলেকট্রনিক ইন্তিফাদা জানিয়েছে যে নিউ ইয়র্ক টাইমসের জেরুজালেম শাখা প্রধান ইথান ব্রোন্নারের ছেলে সম্প্রতি ইজরায়েলি সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংগঠনিক নীতির উদ্ধৃতি দিয়ে, ইলেকট্রনিক ইন্তিফাদা বলেছেন যে সংবাদপত্রের পাঠকদের কাছে নিরপেক্ষ তথ্য পৌঁছানোর একটি দায়িত্ব আছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের বৈদেশিক সম্পাদক সুসান চিরা ইমেইলে সাড়া দিয়েছেন এই বলে (আর কার্যকরভাবে খোলাসা করে):
ইথান ব্রোন্নার আপনার প্রশ্নটি বৈদেশিক সম্পাদককে অর্থাৎ আমার কাছে পাঠিয়েছেন। এখানে আমার মন্তব্য: জনাব ব্রোন্নারের তরুণ ছেলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক যে নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্য। দ্যা টাইমসে জনাব ব্রোন্নারের কাজ আমরা যথেষ্ট ভালো মনে করেছি আর আমরা নিশ্চিত যে ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
প্রায় দুই সপ্তাহ পরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের গণসংযোগ সম্পাদক ক্লার্ক হয়েট তার কলামে জানিয়েছেন যে তারও মনে হয় যে ব্রোন্নারকে সরিয়ে ফেলা উচিত। নির্বাহী সম্পাদক বিল কেলার অবশ্য এর সাথে একমত নন।
দ্যা অ্যাংরি আরব, যার আগের মন্তব্যগুলো এখানে, এখানে আর এখানে পাওয়া যাবে, কেলারের ব্যাখ্যাতে খুশি নন:
যদি নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে একজন রিপোর্টার পরীক্ষা করে দেখার জন্য ঘোষণা দেন যে তার কোন ছেলে/মেয়ে আছে যে হামাস বা হিজবুল্লাহ বাহিনীতে যোগদান করেছেন, আমরা তাহলে দেখতে চাইবো যে বিল কেল্লার ইথেন ব্রোন্নারের ছেলের ব্যাপারে যে যুক্তি দেখিয়েছেন তাই দেখাবেন কিনা। আমি বলতে চাচ্ছি জনাব কেলার, কাকে বোকা বানাচ্ছেন?
আরব – আমেরিকান ব্লগার সুলেখা জাওয়াদ এই ঘটনাকে ব্রোন্নারের ব্যাপার হিসাবে দেখেন না, বরং আরো বড় কোন বিষয়ের অংশ হিসাবে দেখেন:
অত্র অঞ্চলের সংঘাত নিয়ে টাইমসের চিন্তা উদ্রেককারী পক্ষপাতিত্বমূলক রিপোর্টিং আমেরিকার মিডিয়াতে জিওনিজম নিয়ে গুরুতর কিছু নৈতিক প্রশ্ন তুলেছে। সাংবাদিক ফিলিপ ওয়াইস, তার ব্লগ মোন্ডোওয়াইসে, কয়েকটি প্রশ্নের তালিকা দিয়েছেন: কতো গভীরে এটা যায়, আর কেউ কি কখনো এটা লক্ষ্য করবে? আর মিডিয়ার সাংবাদিক যারা ইজরায়েল/ ফিলিস্তিনি ইহুদিদের কথা রিপোর্ট করছেন তাদের অনেকেরই কেন ইজরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে? কখন [আরব –আমেরিকান সাংবাদিকদের] এই গল্প বলতে দেয়া হবে?
ফিলিস্তিনি লেখক আলি আবুনিমাহ, যিনি ইলেক্ট্রনিক ইন্তিফাদার সহ-প্রতিষ্ঠাতা, এই ব্যাপারে টুইটারে কার্যকর একটা প্রশ্ন তুলেছেন:
আবুনিমাহ মোন্ডোওয়াইসের প্রশ্নগুলো নিয়ে বিস্তৃত বলেছেন, তার পরে আর একটু এগিয়েছেন। জাওদের মতো, এই সমস্যা ইথেন ব্রোন্নারের থেকে আরো বেশী বলে তিনি মনে করেন – এটি নিরপেক্ষতার প্রশ্ন। তিনি অবশ্য তার এই বিশ্বাসের কথা বলেছেন যে ইহুদি হওয়া ইজরায়েলের ব্যাপারে রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে না (“তাই কেউ যদি বলে যে ইহুদিরা অবশ্যম্ভাবীভাবে ইজরায়েলপন্থী হবে তা ভুল’)। একই সাথে তিনি ফিলিস্তিনি টাইমসের সাংবাদিক তাঘ্রিদ এল-খোদারির উদাহরণ এনে বলেছেন:
হ্যাঁ, সম্প্রতি গাজাতে তাগ্রিদ এল খোদারি এসেছিল। কিন্তু এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে: এল খোদারির অনুমতি আছে কেবলমাত্র ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে জানানোর। তিনি অথবা অন্য কোন আরব সাংবাদিককে ইজরায়েলি ইহুদিদের ব্যাপারে রিপোর্ট করতে দেয়া হয়না।
যখন আমেরিকান ইহুদীরা প্যালেস্টাইনিদের উপর রিপোর্ট করে, তাদের ক্ষেত্রে এমন বাধা থাকে না। কেন এটি হবে? এটা হতে পারে – আমার মতে – যে এরকম একটি ধারণা আছে যে প্যালেস্টাইনি আরবরা অবধারিতভাবে ইহুদী বা ইজরায়েলীদের বিপক্ষে অবস্থান নেবে – ফলে নিরপেক্ষতা হারাবে। অন্যদিকে আমাদের এটা মেনে নিতে হচ্ছে যে একজন ইহুদী রিপোর্টার যার সন্তান একটি দখলদারী সেনাদলে যোগদান করেছে সে সপ্তাহে বহুবার প্যালেস্টাইনি শরণার্থী শিবিরে ঘুরে বেড়িয়ে নিরপেক্ষ রিপোর্ট করবে? বিশ্বাস করতে বলেন?
এই দ্বৈতনীতিকে আমরা কি বলতে পারি? বলতে বাধ্য হচ্ছি এটি বর্ণবাদ।