- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

থাই-বার্মা সীমান্তে “ভয়ের এক পরিবেশ” বিরাজ করছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মায়ানমার (বার্মা), ইতিহাস, দুর্যোগ, লিঙ্গ ও নারী, শরণার্থী, স্বাস্থ্য, কনভার্সেশন্স ফর এ বেটার ওয়ার্ল্ড (আরও ভালো এক পৃথিবীর জন্যে কথোপকথন)

যে কোন ভাবেই দেখা হউক না কেন বার্মা একটি সুন্দর দেশ। দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এদেশে বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন বৈচিত্রময় ইতিহাস রয়েছে। একই সাথে দেশটি বিশ্বের অন্যতম তীব্র নিপীড়ন মূলক একদল শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত। রাষ্ট্রীয় শান্তি ও উন্নয়ন পরিষদ [1] (স্টেট পিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল) নামের ১১ সদস্যের একদল সামরিক শাসক দেশটি পরিচালনা করছে। এই সামরিক শাসকগোষ্ঠী ১৯৮৮ সাল থেকে বিভিন্ন নামে ক্ষমতায় রয়েছে। দেশটির অজস্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সাথে তাদের উদ্ধৃত [2] করা হয়। এসপিডিসি (সাধারণত তাদের এই নামে ডাকা হয়) দুর্নীতিগ্রস্ত ও তারা দেশটির অর্থনীতিকে অকার্যকর করে রেখেছে। যদিও দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর তারপরেও দেশটির আর্থ-সামাজিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। একই সাথে বার্মার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।

এর চূড়ান্ত ফলাফল হচ্ছে বার্মার বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ লোক বিচ্ছিন্নভাবে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে [3]। প্রায় ৩০০,০০০ লক্ষ লোক থাই সীমান্তে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য তৈরি নয়টি শিবিরে বাস করছে। এদের মধ্যে কারেন, কারেনিই এবং মন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোক রয়েছে- এছাড়াও শত শত হাজার হাজার শান আদিবাসী জনগোষ্ঠী থাইল্যান্ডে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই অবৈধ অভিবাসী, কারণ থাই সরকার তাদের উদ্বাস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেনি।

এক ক্ষীণ জীবন

বার্মার শরণার্থীরা থাইল্যান্ডে ক্ষীণ সুতোয় ঝুলতে থাকা জীবনের মত জীবন যাপন করে। তাদের অধিকার এবং নিরাপত্তার অস্তিত্ব প্রায় নেই [4]বললেই চলে, এর মূল কারণ হচ্ছে থাইল্যান্ড ১৯৫১ সালে তৈরি হওয়া জাতি সংঘ শরণার্থী বিষয়ক সনদে স্বাক্ষর করেনি। এর মানে হল কেবল সংঘাতময় এলাকা থেকে আসা বার্মার শরণার্থীরাই শুধুমাত্র মানবিক ত্রাণ পাবার যোগ্য। থাই সরকার অবশ্যই জানে যে বার্মা থেকে অজস্র অন্য আদিবাসী শরণার্থীরাও সে দেশে প্রবেশ করেছে, কিন্তু তাদের চলাফেরার উপর থাই সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সুজান্নে বেলটন এবং সিনথিয়া মায়ুং শরণার্থী ও অভিবাসীদের চলাফেরার স্বাধীনতার উপর এক বিশদ [5]চিত্র তুলে ধরেছেন: “যদি বার্মিজ কোন অভিবাসীর কাজের অনুমতি থাকে, তা হলে সে হয়তো সব জায়গায় যাতায়াত করতে এবং [থাইল্যান্ডের] ইউনিভার্সাল হেল্থ ইন্সুরেন্স বা সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা নিতে পারে। কিন্তু ভয়ের এক পরিবেশ এবং অনিশ্চয়তা, শরণার্থীদের অন্য কোথাও যাওয়া থেকে বিরত রাখে। সাধারণ যাত্রী পরিবহন করা যানকে রাস্তায় অনেক এলাকায় থামানো হয় এবং সেগুলোকে যাচাই করা হয় যে বাসের যাত্রীর কাগজপত্র ঠিকমতো রয়েছে কিনা। যদি ঠিকমতো কাগজ না থাকে তা হলে তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

শান এবং অন্য সব অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে, শরণার্থী শিবিরের চেয়েও বাইরে জীবন অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। অভিবাসীদের অনেক সময় জীবনের মৌলিক চাহিদার মেটাবার উপাদানের উপর অধিকার থাকে না [6]। তাদের জন্য পরিষ্কার পানি, পয়:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের আশ্রয় মেলে না। একই সাথে তাদের জন্য কোন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেই। নারী শিশু এবং তরুণীদের ক্ষেত্রে নারী পাচার আরেক সমস্যার নাম। বিশেষ করে মায়ে সোটে ১৬ টি পতিতালয় রয়েছে যেগুলো এই ব্যবসা করে। মায়ে সোট থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় সীমান্ত শহর। এক সংবাদে [7] জানা যায় যে সমস্ত তরুণীদের পাচার করে আনা হয়, তারা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে রয়েছে যৌন ও অন্য ধরনের শারীরিক নির্যাতন, ঋণের জালে আবদ্ধ রাখা, এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া, বেতন না দিয়ে জোর করে কাজ করানো এবং অবৈধ ভাবে আটকে রাখা”।

পুনরুৎপাদন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা

যখন বেশীরভাগ লোক দারিদ্র এবং মানসিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী, তার মানে হচ্ছে পুনরুৎপাদন স্বাস্থ্য বা সন্তান জন্ম সংক্রান্ত বিষয়ে নারীর স্বাস্থ্য অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকা বিষয়। তবে বার্মায় জন্ম নেওয়া বেশীরভাগ ব্যক্তির যৌন বা প্রজনন বা পুনরুৎপাদন স্বাস্থ্য বিষয়ে খুব সামান্য শিক্ষা রয়েছে। ২০০৭ সালে থাইল্যান্ডে বাস করা ৪০০ জন বার্মিজ কিশোর কিশোরীর উপর পরিচালিত এক গবেষণায় জানা গেছে, যৌন বিষয়ে তাদের জ্ঞান খুব সামান্য। স্থানীয় এক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এই গবেষণা পরিচালনা করে, যার নাম মায়ে সোট-এ কিশোরবেলার পুনরুৎপাদন স্বাস্থ্য বিষয়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা (এডলোসেন্স রিপ্রডাকটিভ হেল্থ নেটওয়ার্ক বা এআরএইচএন), তারা আবিষ্কার করেছে [8]:

-যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে সেই কিশোরীদের দুই তৃতীয়াংশ যৌন মিলন বা যৌন বিষয়ে কখনই কিছু শোনেনি।
-জরিপে অংশ নেওয়া কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ যৌনকর্মে সক্রিয়, বিশেষ করে যাদের বয়স প্রায় ১৮-এর কাছাকাছি, তারা। তবে এআরএইচএন-এর হয়ে যারা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে তারা বিশ্বাস করে যে অনেক মেয়ে হয়তো তাদের যৌন কর্মের ব্যাপারে সঠিক তথ্য প্রদান করেনি:
-জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেক কিশোরী জানায় তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ব্যবস্থাদি গ্রহণ করে থাকে- যেমন কনডম, খাবার বড়ি এবং ইঞ্জেকশন (সূচ), ইত্যাদি- তবে তারা বিশেষ জরুরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্বন্ধে সচেতন নয়; এবং
-এবং যারা যৌন মিলনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তাদের ২৩ শতাংশ পুরুষদের কনডম ব্যবহার করছে এবং ৯ শতাংশ নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে।

এই সংবাদে জানা গেছে যখন জন্মনিয়ন্ত্রের বিষয় সামনে চলে আসে তখন লিঙ্গীয় ভিন্নতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যখন তা জন্মনিয়ন্ত্রণের মত মৌলিক সিদ্ধান্তের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী উত্তর দিয়েছে যে, স্বামীর মতামত ছাড়াই তারা মনে করে তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রয়েছে। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়া অর্ধেক পুরুষ নারীদের এই মতামতের সাথে একমত পোষণ করেছেন। সম্ভবত বিষয়টি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে, কারণ ৫৫ শতাংশ পুরুষ মনে করে যে তার নারী সঙ্গিনীটি পেটানোর যোগ্য। ৩৬ শতাংশের বেশি নারী এই ভাবনার সাথে একমত।

সমবয়সীদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান

এআরএইচএনের পাওয়া তথ্যে, ন্যন্সি গোল্ডস্টাইন নির্দেশ করেন [9]সমগোত্রীয়দের মাধ্যমে যৌন শিক্ষা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথা। এটি করা হয়েছে থাই-বার্মা সীমান্তে আর এইচ রিয়ালিটি চেকের মাধ্যমে।

এআরএইচএন বার্মিজ অভিবাসীদের সাথে যোগাযোগের জন্য তরুণ অনুবাদকদের ঋণ স্বীকার করে নিয়েছে। তারা ভীষণভাবে তরুণ সমগোত্রীয়দের ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রদানের কাজে নিয়োজিত। বার্মার অভ্যন্তরে কোন ধরনের মানবিক কর্ম যা কিনা জনগণের স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজের অন্তর্গত, যদি তা সামরিক বাহিনীর বাইরে কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয় তা হলে সেটি রাজনৈতিক কাজ বলে বিবেচনা করা হয়। এই কাজের ফলে কর্মীদের গ্রেফতার, মারধর এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হতে পারে। বার্মার সংস্কৃতিও বেশ রক্ষণশীল। যৌন ও যৌনকর্ম বিষয়টি এখানে অনেক ব্যক্তিগত এক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। উদ্বাস্তু শিবিরের খুব কম বাবা-মাই চিন্তা করতে পারে যে তার ছেলে বা মেয়েটি তাদেরই সমবয়সী কোন সঙ্গীকে যৌন শিক্ষা প্রদান করছে। এবং এই সমবয়সী শিক্ষকটিকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে সে কি শেখাচ্ছে এবং কোথায় শেখাচ্ছে। যখনই এআরএইচএন এর একজন সমবয়স্ক ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ে যৌন নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে কোন কর্মশালা পরিচালনা করতে যায়, বা জন্মনিরোধ উপাদান বিতরণ করে, অথবা জরিপের তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করে, তখন সে প্রতিবারই সে নিজেকে গ্রেফতার, পিটুনি, বিতাড়িত অথবা পরিবারের সবার নিন্দার মুখে পড়ার হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। এই তথ্যটি জানান তারজিনা হাই। তিনি বর্তমান এআরএইচএন-এর কৌশলগত উপদেষ্টা।

একজন সমগোত্রীয় শিক্ষক আমার কাছে ব্যাখ্যা করেছে, তুলনামূলক ভাবে সহজ, বাঁধা নেই এমন প্রশিক্ষণ গ্রাম প্রধান ও ধর্মীয় নেতা বা যাজকদের আশীর্বাদ লাভ করে এবং চার্চের মধ্যে তা করা সম্ভব। এটি অনেক ব্যয়বহুল এক যাত্রার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে, তবে সেক্ষেত্রে সীমান্ত পার হয়ে একটি বা দু'টি গ্রামে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে হয় এবং সেই সাথে সরকারি কিছু লোককে ঘুষ দিতে হয়। যদি আপনি সৌভাগ্যবান হন, যদি শিক্ষক সীমান্তে থামার পর তার চারপাশে অনেক লোক জড়ো হয়, যদি ঘুষ দিতে না হয়, তার মানে এটি অর্ধেক কাজ এবং এই যাত্রায় পুরো টাকা পাওয়ার ব্যাপারটার সেখানেই ইতি ঘটে।

তারপরেও কাজটি চালিয়ে যেতে হবে। যেমনটা লেইলা দারাবি জানাচ্ছেন, থাইল্যান্ডের শক্তিশালী পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির কিছুই এইসব তরুণ বার্মিজ অভিবাসীদের কাছে পৌঁছায় ন। তারা অপরিকল্পিত গর্ভধারণ, যৌন আক্রমণ এবং যৌন পরিবাহী রোগের ঝূঁকির মধ্যে থেকে যায়। এই সব তরুণদের অনেকে কারখানায় কাজ করে এবং সেখানেই বাস করে (এদের কেউ বৈধ এবং কেউ অবৈধ)। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পাওয়ার উপর তাদের সরাসরি কোন অধিকার নেই। এবং তারা প্রান্তিক এবং জোরপূর্বক যৌন মিলনের শিকার হয়ে থাকে। বেশীরভাগ শরণার্থীর যে কোন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার খুব সামান্য অধিকার রয়েছে, তার সাথে যৌন স্বাস্থ্য সেবা এবং পুনরুৎপাদন স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার কোন অধিকার নেই। শিক্ষার মধ্যে দিয়ে এই বিষয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টা বাতুলতা মাত্র, কারণ তাদের মধ্যে শিক্ষার হার খুবই কম। তাদের টেলিভিশন দেখার তেমন একটা সুযোগ ঘটে না। ইন্টারনেটের প্রবেশ করার কোন ধরনের সুযোগ তো তাদের নেই বললেই চলে।

গর্ভপাত পরবর্তী জটিলতা

যৌন কর্মে সক্রিয় নারী যাদের যথাযথ পুনরুৎপাদন বা প্রজনন বিষয়ক কোন ধরনের শিক্ষা নেই তাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ইউনএফপিএ হিসেবে করে দেখেছে বার্মার প্রায় এক তৃতীয়াংশ গর্ভধারণের ঘটনা শেষে গর্ভপাতে পরিণত হয়। তবে আইনের কারণে কেবল তখনই গর্ভপাত ঘটানো হয়, যখন মায়ের জীবন সংশয়াপন্ন হয়ে পড়ে। থাইল্যান্ডে গর্ভপাত ঘটানোর ক্ষেত্রে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। এর ফলে অজাচার ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, উদ্বাস্তু শিবিরে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে থাকে। থাই মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে যে বার্মিজ অভিবাসীদের মধ্যে গর্ভপাতের ঘটনা স্থানীয় থাই জনগোষ্ঠীর চেয়ে আড়াই গুণ বেশি । বেলটন এবং মায়ুং ২০০২ সালে পুনরুৎপাদন (যৌন ও প্রজনন) স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের নিয়ে গবেষণা করে বের করেছেন [5]:

- ২৫ শতাংশ নারী গর্ভপাত পরবর্তী জটিলতায় ভোগে নিজস্ব উপায়ে গর্ভপাত ঘটার কারণে। যে সব সাধারণ উপায়ে বার্মায় গর্ভপাত ঘটানো হয়, যেমন আদা ও হুইস্কি জাতীয় মদ পান করা, জোরে জোরে উদরের কাছে আঘাত করা, য়ৌন অঙ্গে কোন ধারালো বস্তু প্রবেশ করানো, এসবের ফল জটিলতা তৈরি হয়:
-যে সমস্ত নারী গর্ভপাত বিষয়ক জটিলতায় পড়ে তাদের বেশিরভাগই বিবাহিত এবং এদের দুই-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে একটি সন্তান প্রসব করেছে;
– এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ নারী ইতোমধ্যে পাঁচবার গর্ভধারণ করেছে। এখানে কারি সিয়েস্ত্রা একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে, থাই/বার্মা সীমান্তে কিশোরী অবস্থায় পুনরুৎপাদন স্বাস্থ্য জটিলতা গর্ভপাতের সাথে মিশে যাচ্ছে। কারি সিয়েস্ত্রা, এএইচআরএন-এর তথ্য সম্পাদনা করার কাজে সাহায্য করেছে।

মায়ে টাও ক্লিনিক বা সেবা কেন্দ্র:

বার্মিজ উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে মায়ে টাও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্বাস্থ্য সেবায় যে বিশাল ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করছে। এই সেবা কেন্দ্রটি চালু করেন সিনথিয়া মায়ুং। ১৯৮৮ সালে তিনি ১০,০০০ হাজার কর্মী ছাত্রছাত্রীকে [10] নিয়ে বার্মা ছেড়ে থাই সীমান্তে পাড়ি জমান। ১৯৮৮ সালে বার্মার সামরিক জান্তা গণতন্ত্রপন্থীদের উপর ভয়াবহ এক আক্রমণ চালায়। ডা সিনথিয়া, যিনি নিজেকে এ নামেই পরিচয় দেন, তিনি মনে করেছিল হয়তো সপ্তাহখানেক পরেই তিনি রেঙ্গুনে তার ছোট্ট সেবা কেন্দ্রে অন্যদের চিকিৎসা সেবা দেবার জন্য ফিরে যেতে পারবেন। তার বদলে তিনি অস্থায়ীভাবে তৈরি করা উদ্বাস্তু শিবিরের ভয়াবহ স্বাস্থ্যসেবার অবস্থার কারণে উদ্বাস্তুদের যত্ন নিতে শুরু করেন। এই সব শিবিরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা শরণার্থীদের মানসিক বিকার দেখা দেয়, তারা সীমান্ত রক্ষীদের গুলি এবং ভূমি মাইনের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়। তারা সেখানে আসার পর ম্যালেরিয়া আর উদরাময় রোগে আক্রান্ত হয়। ভদ্রমহিলা হুয়াএই কালাকে শিবিরে তার ডাক্তারি বইপত্র এবং চাল রান্নার পাত্র দিয়ে (রাইস কুকার) এক স্বাস্থসেবা কেন্দ্র খুলে বসেন। চাল রান্নার পাত্র দিয়ে তিনি তার চিকিৎসা করার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতেন।

আজ, মায়ে টাও স্বাস্থ সেবা কেন্দ্রে পাঁচজন ডাক্তার, ৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ৪০ জন প্রশিক্ষক এবং ৪০ জন সাহায্যকর্মী রয়েছে। এই সমস্ত কর্মীরা বছরে প্রায় ১০০,০০০ বেশি রোগীর চিকিৎসা করে থাকে। ওয়েস্টমিনিস্টার কলেজের দুজন ছাত্র যারা এই এখানকার এক শিক্ষা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে, তারা এই সেবা কেন্দ্রের সুন্দর এক বর্ণনা দিয়েছেন [11]

এর মেঝে অসমতলভাবে সিমেন্টের তৈরি, যা কাদা দিয়ে ঢেকে রয়েছে। এর সবচেয়ে ভালো বর্ণনা দেওয়া সেবা কেন্দ্রের বহির্বিভাগে ঘুরে বেড়ালে; এখানকার প্রত্যেকটি বিভাগের নিজস্ব কক্ষ রয়েছে। এখানকার অপেক্ষাগার বা ওয়েটিংরুম উদ্বাস্তু হয়ে আসা বার্মিজ রোগীদের ভিড়ে ভর্তি হয়ে থাকে। যখন আমরা এখানকার শিশু যত্ন বিভাগে প্রবেশ করলাম। সেখানে আমরা দেখলাম অনেক শিশু অপুষ্টির শিকার। তারা চলাফেরা করতে পারে না, তারা তাদের পিতামাতার আশ্রয়ে ছিল।

এই ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। এখানে শিশুদের টিকা দেওয়া থেকে শুরু করে ভূমি মাইনের আঘাতে জখম হওয়া ব্যক্তিদের অস্ত্রোপচারও করা হয়। ২০০৬ সালে হাসপাতালের ডাক্তারদের মাধ্যমে এখানে ১৬০০ শিশু জন্ম নেয় [12]। মাতৃত্বকালীন সময়ে কি ভাবে মায়ের যত্ন নিতে হবে সে ব্যাপারেও এই প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ক্যাথি, মায়ে সোট স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কাজ করে। তিনি পুনরুৎপাদন স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণকে ঘিরে যে সমস্ত বিষয় তৈরি হয়, তার ব্যাখ্যা [13] প্রদান করেছেন।

এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সক্রিয়ভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে, কিন্তু সকলের এই বিষয়ে শিক্ষা নেই। অভিবাসী নারীর (থাইল্যান্ডে কম টাকা দেয় এমন সব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতে বাধ্য হয়, যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সোয়েটশপ বলে অভিহিত করা হয়, তারা তাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য কম বেতনে কাজ করে থাকে) জীবন সহজ নয়। সব মেয়েদের কোন না কোনভাবে একজন নিরাপত্তার প্রদানকারীর প্রয়োজন। এখানে বাচ্চা সহ কাজ করা এক কথা অসম্ভব। ডা: সিনথিয়া এবং কারেন মহিলা সংস্থা (কারেন ওমেন অর্গানাইজেশন) বেশ কেয়কটি এতিমখানা পরিচালনা করে। কারেনদের একে অন্যের জন্য প্রচণ্ড সহানুভূতি রয়েছে। আমি এর আগে এ রকম যত্নশীল কোন মানুষের দেখা পাইনি। সাধারণত স্বামীরা তাদের স্ত্রীর সাথে থাকে ও তাদের সাথে সন্তানেরা থাকে। সন্তানের পৃথিবীতে আগমন তাদের জন্য অনেক আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু ভবনের বিপরীত দিকও রয়েছে, অনেক নারী রয়েছে যারা খুবই অসুস্থ, কারণ রাস্তার হাতুড়েদের দ্বারা তারা তাদের গর্ভপাত করেছিল।