ব্লগার হ্যানয় স্ক্রাচপ্যাড সম্প্রতি ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে একটা কুকুরের মাংসের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।
ভিয়েতনামে কুকুর খাওয়ার শিকড় অনেক গভীর; এটা আনুষ্ঠানিকতায় ভরা একটা অভ্যাস, আর চন্দ্র ক্যালেন্ডারের কয়েকটা তারিখের সাথে সম্পর্কিত। কুকুরের মাংস (থিথ চো) খাওয়ার আনন্দ ছাড়াও কয়েকটা কারণে খাওয়া যেতে পারে, যেমন পুরুষের পৌরুষ বৃদ্ধি বা সৌভাগ্য আনার জন্য।
এই ব্লগার জানতে পেরেছেন যে ভিয়েতনামে সাত ভাবে কুকুরের মাংস রান্না করা হয়। এই সাতটা পদ হল:
রুয়া মান: ভাপ দেয়া কুকুরের মাংস চিংড়ির পেস্ট, চালের আটা আর লেমনগ্রাস দিয়ে
গিয়েং মে মাম টম: ভাপ দেয়া কুকুরের মাংস, চিংড়ির পেষ্ট, গালাংগাল আর চালের সিরকা দিয়ে
থিট চো হাপ- ভাপ দেয়া কুকুরের মাংস
থিট চো নুওং- গ্রিল করা কুকুরের মাংস
দৈ চো- কুকুরের সসেজ
চো জাও সাওত- ভাজা কুকুরের মাংস লেমনগ্রাস আর মরিচ দিয়ে
কানহ জাও মাং চো- বাঁশ আর কুকুরের মাংসের সুপ
কুকুরের মাংস খেতে কেমন ছিল?
স্বাদপূর্ণ হলেও- কুকুরের সসেজ বাদ দিয়ে, যা আমার খুব একটা ভালো লাগেনি- খুব কম উপায় ছিল কুকুরের মাংসকে স্বাদের দিক থেকে বিশেষ কিছু একটা করার। ভেড়ার যেখানে বিশেষ একটা স্বাদ থাকে যা বেশীরভাগ পদে বোঝা যায়, কুকুরের স্বাদ তার প্রস্তুত প্রণালীতে গায়েব হয়ে যায়। শূকরের মাংসের মতো প্রস্তুত করা হলে, এটা সহজেই শুকরের মাংস হতে পারে, গরুর মাংসের মতো রান্না করলে এটা সহজে গরুর মাংস হতে পারে।
এই লেখা কিছু ক্ষুব্ধ মন্তব্য তৈরি করে। এখানে একজন অজ্ঞাত মন্তব্যকারী বলছেন:
কুকুরের মাংস খাওয়া অমানবিক আর নিষ্ঠুর। সব ভিয়েতনামিজ এটা খায়না আর আমার ধারণা কেবল উত্তরের কিছু মানুষ এটা করে যেহেতু তারা খুব দরিদ্র আর অতীতে অনাহারে মারা যেত। এই কারনে তারা নিজেদের পোষ্যদের খেত আর মনে করত বেঁচে থাকার জন্য তারা সৌভাগ্যবান।
আর একজন ক্ষুব্ধ মন্তব্যকারী বলছেন:
হায় ইশ্বর! কুকুর আমাদের বিশ্বস্ত পোষ্য। হ্যালো??? আপনারা সবাই পাগল। বাঁচার জন্য খান, খাওয়ার জন্য বাঁচা না। যদি কেউ বলে যে পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই তাহলে মানুষকেও খাওয়া যায় যেহেতু আমরাও পশু। কুকুর খাওয়া নৈতিকভাবে অন্যায়।
এই মন্তব্যকারী বলেছেন যে পূর্বে সায়গনে কুকুরের মাংস পাওয়া যেত না:
আমি সায়গনে মানুষ হয়েছি আর ১৯৮১ এ ভিয়েতনাম ছেড়েছি। ১৯৭৫ এর যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে, দক্ষিণে কুকুরের মাংস পাওয়া কঠিন ছিল। কোন ‘কুকুরের মাংসের রেস্টুরেন্ট ‘ ছিল না অন্তত সায়গনে।
যুদ্ধ শেষ হলে অনেক উত্তরের ভিয়েতনামী দক্ষিণে বসবাস শুরু করেন, আর কুকুরের মাংসের রেস্টুরেন্ট খুলতে দেখা যায়…আমি এটাকে খুব ভালো মনে করি নি।
হ্যানয় স্ক্রাচপ্যাড বিশ্বাস করেন যে কুকুরের মাংস নিষিদ্ধ করার হয়ত যুক্তিযুক্ত কারন থাকবে কিন্তু পশু প্রেমীদের দেয়া সাধারণ যুক্তিগুলোকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন:
ধরুন ভিয়েতনাম বছরে চার থেকে পাঁচ মিলিয়ন কুকুর খায়। এটা প্রায় সেই সংখ্যক বিড়াল আর কুকুরের সংখ্যা যা যুক্তরাষ্ট্রের পশু আশ্রয়কেন্দ্র বছরে মেরে ফেলে। তাহলে কোন দেশ সভ্য নীতির ধারক, যে দেশ যেসব পশু মারার পর তাদেরকে পুড়িয়ে দেয়, নাকি সেই জাতি যারা তাদেরকে খায়?
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনামের পড়শী কিছু দেশসহ বেশ কয়েকটা দেশে কুকুরের মাংস খাওয়া হয়। নম পেনে কুকুরের মাংসের দোকান দেখে ভুথা বিস্মিত হয়েছেন:
ক্যাম্বোডিয়ার খুব অল্প মানুষ এটা খায়।
আজকাল, ছোট ছোট দোকান পাওয়া যায় যারা কুকুরের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে এমন লোকদের জন্যে যারা নম পেনে এটা পছন্দ করে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কুকুর চুরি করে এইসব কুকুরের দোকানে বিক্রি করা হয়।
গ্লোরিয়া এসগুয়েরা মেলেঞ্চিও জানেন যে কুকুরের মাংস খাওয়া ফিলিপিনের কিছু আদিবাসী গোত্রের সাংস্কৃতিক আর ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে কিন্তু এই ব্যবস্থার এরই মধ্যে অপব্যবহার করা হয়েছে। লেখক বিস্তারিত জানিয়েছেন কিভাবে কিছু ফিলিপিনো পুরুষ কুকুরের মাংস প্রস্তুত করেন:
১) হঠাৎ করে কুকুরটাকে পিছন থেকে গলায় ফাঁস দিতে হবে। এটা দ্রুত করা দরকার যাতে কুকুর কামড় দিতে না পারে। মুখ বাঁধুন। কুকুরটাকে অপেক্ষমাণ জীপ, সাইকেল বা ভ্যানে তুলে ফেলুন। ধরা না পড়ার জন্যে দ্রুত গাড়ি চালান। যদি আটকানো হয়, পুলিশকে চকচকে ফিলিপিনো ৫০০ টাকার নোট দিয়ে ঘুষ দিন। যদি আশেপাশের কোন এলাকা থেকে কুকুরটা কিনে থাকেন যার মালিকের অর্থের প্রচণ্ড দরকার, কুকুরটাকে বস্তায় রাখুন। বস্তাটা পিঠে বহন করুন।
২) বস্তা থেকে কুকুরটা বের করুন। একটা খুঁটিতে কুকুরটা বাঁধেন। প্রাণের জন্য এর চিৎকার, চেঁচামেচির দিকে কান দেবেন না। দুই বাই দুই ইঞ্চি কাঠের টুকরো দিয়ে ওর মাথায় বাড়ি মারেন যার মাথায় একটা পেরেক থাকবে। বেশ কয়েকবার এটা করবেন যতক্ষণ না ও মারা যায়।
৩) প্রাণহীন কুকুরটিকে গাছের ডাল বা কোন পোস্টে উলটো করে টাঙ্গিয়ে দেন। গলা কেটে দেন। রক্ত ধরার জন্য নীচে একটা পাত্র রাখেন। রক্তের উপরে ভাত আর লবন ছিটিয়ে দেন যতক্ষণ না রক্ত জমাট বাঁধে। (নেগ্রোসের লোক কথায় বিশ্বাস করা হয় যে যক্ষা রোগের জন্য কালো কুকুরের রক্ত কার্যকর ঔষধ)।
৪) কুকুরের চামড়া আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নেন। প্রাণহীন কুকুরটাকে পোস্ট থেকে নামান। চামড়া ছাড়ান যতক্ষণ না মসৃণ সাদা চামড়া দেখা যায়।
৫) টুকরো করে ধুয়ে নিন।
৬) কুকুরের মাংস কাওয়া বা বড় কড়াইতে নিন। সেরকাতে এক ঘণ্টা ধরে সিদ্ধ করুন।
৭) একটু পানি আর লবন দিন। এখনো মেশাবেন না। কয়েক মিনিট এমন রাখুন।
৮) ঢিমে আঁচে রাঁধুন। আলু, সয়া সস আর গোল মরিচ দিন।
৯) টমেটো সস, টমেটো পেস্ট, হলুদ আর সবুজ মটর দেন আর প্রচুর পাতা দিয়ে সাজান।
১০) প্রচণ্ড হীম ঠান্ডা বিয়ার বা জিন দিয়ে পরিবেশন করুন।