হাইতি: সাহায্যে আসার আগেই, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশ পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারে

যখন হাইতিতে টেলিফোন সংযোগ ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার ঘটানো সম্ভব হয়, তারপর বিদেশ থেকে পরিবারগুলোর জন্য তারের মাধ্যমে (টেলিফোনের মাধ্যমে) টাকা আসতে শুরু করে। এমনকি আন্তর্জাতিক সাহায্য আসার আগেই তারা দিয়ে এই টাকা দিয়ে তারা বাড়িঘরের পুনর্নির্মাণ শুরু করে দিতে সক্ষম হয়। হাইতির মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ত্রিশ শতাংশই আসে বিদেশে বাস করা পরিবারের সদস্যদের পাঠানো টাকা থেকে। এটি ১২ জানুয়ারিতে সংঘটিত ভূমিকম্পের আগের হিসাব।

হাইতির বাইরে যে দু'টি দেশে সবচেয়ে বেশি হাইতির লোক বাস করে, সেই দেশ দু'টি হল ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্র। গড়ে প্রতিদিন ৪০০,০০০ থেকে ৬০০,০০০ জন হাইতিবাসী তাদের যে কোন এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ফোন করে থাকে। এছাড়াও ৮০,০০০-১০০,০০০ জনের মত হাইতিবাসী ক্যারিবিয় অঞ্চল এবং ফ্রান্সে বাস করে। ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এই রেখা ২০০৬ সালের এক গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে সমস্ত হাইতিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে তারা বছরে প্রায় ১.৯ বিলিয়ন ডলার স্বদেশে পাঠায়।

টেলিফোন সেবা সংস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এবং ব্যাংক ও টাকা পাঠানোর দপ্তর যে সমস্ত ভবনে অবস্থিত ছিল, তার অনেকগুলো ভেঙ্গে পড়ায় বাইরে থেকে সাময়িক ভাবে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই সপ্তাহে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর দপ্তরগুলোতে লম্বা লাইন পড়ে যায়, যেমন ক্যারেফোরের কাম (সিএএম) এর দপ্তরে লম্বা লাইন তৈরি হয়। এটি পোর্ট অ প্রিন্সের দক্ষিণপূর্ব এলাকায় অবস্থিত। এর ছবি তুলেছেন গ্লোবাল ভয়েসেসের জর্জিয়া পপলওয়েল।

Remittances return

যদিও এই ভূমিকম্পে দেশটির রাজধানীর ঘটনাবলী বেশীরভাগ প্রচার মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তবে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার বেশীরভাগই রাজধানীতে নয়, তার বাইরে পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক টাকা পাঠানো যোগাযোগ সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অফ মানি ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক) সেই সমস্ত কোম্পানীর প্রতিনিধিত্ব করে, যারা ইলেকট্রনিকভাবে বা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকে। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো টাকার বেশীরভাগই হাইতির গ্রাম এলাকায় গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকেই হাইতিতে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো হয়। এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভূমিকম্পের পরে এই সমস্ত এলাকায় লোকসংখ্যা বেড়ে গেছে। এই ভূকম্পের ফলে যখন শহর এলাকার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, তখন শহরের লোকজন মফঃস্বল ও কম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে বাস করতে শুরু করেছে

বিশ্ব ব্যাংকের একজন অর্থনীতিবীদ দিলিপ রাথা। তিনি ব্যাংকের ব্লগে যুক্তি দেন যে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ এই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বের হয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে, তার সাথে “অস্থায়ী নিরাপত্তা” সুবিধা পাওয়া অভিবাসীর মর্যাদা (টেম্পরারি প্রোটেকটেড ইমিগ্রেশন বা টিপিএস) যা এই আইনের জরুরী বর্ধিতাংশ, সেটিও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এর অধীনে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২০০,০০০ জনের মত হাইতিবাসী বাস করে।

যদি টিপিএস অর্জনের মাধ্যমে গড়ে প্রতিটি অভিবাসী শতকরা ২০ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারে, তা হলে আমরা দেখতে পাব ২০১০ সালের শেষে হাইতিতে অতিরিক্ত ৩৬০ মিলিয়ন ডলার গিয়ে পৌঁছেছে! এর চেয়ে বেশি আর কি প্রয়োজন। যদি একবার বর্তমান হিসেব অনুসারে ১৮ মাসের চেয়ে টিপিএসের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া যায়-তা হলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই “বর্ধিত মর্যাদা লাভ” কাজের হবে। এলসালভাদর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, সোমালিয়া, সুদান- এইসব রাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্ষেত্রে টিপিএস-এর মাধ্যমে অর্জিত “বর্ধিত মর্যাদা লাভের” ইতিহাস যাচাই করলে বলা যায়- এই ঘটনা হাইতির অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো অতিরিক্ত অর্থকে যুক্ত করবে, যা তিন বছরে বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে যাবে। এটি হবে বিলিয়ন ডলারের এক অর্থনৈতিক সাহায্য, যার সাথে সৎ ইচ্ছা ও উপদেশ যুক্ত থাকবে। প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট মাপে তাকে গ্রহণ করা হবে। প্রবাসীদের পাঠানো টাকা যে কোন দুর্যোগের সময় সবার আগে বাড়ির লোকদের প্রয়োজনে হাতে চলে আসে। এ বছর হাইতিতে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বেড়ে যাবে, যেমনটা তারা যে কোন সমস্যা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় করে থাকে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .