আজারবাইযান ও জর্জিয়ার মধ্যে চলতে থাকা তিনটি দ্বন্দ্বের এখনো কোন সমাধান হয় নি, এবং এ কারণে স্থানীয় প্রচার মাধ্যমগুলো প্রায়শ: নিজেদের উপর স্বয়ংক্রিয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এমতাবস্থায় ব্লগাররা আলোচনা করছেন এক অনলাইন পরিকল্পনার কথা যার মাধ্যমে আশা করা যায় যে একঘেয়ে ধরনের সংবাদ থেকে বের হয়ে এসে আদিবাসী গোত্রের বিভিন্ন যে গল্প রয়েছে সেগুলোকে তুলে ধরা সম্ভব। অন্যথায় দক্ষিণ ককেশাসের এই সব দ্বন্দ্বের ভিড়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন এর ককেশাস অঞ্চলের সম্পাদক এই প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার সাথে রয়েছে আজারবাইযান ও জর্জিয়ার ব্লগার ও সাংবাদিকরা।
এরপর থেকে ট্রানজিশন অনলাইন'স স্টেডি স্টেটস ব্লগে বেশ কিছু ধারাবাহিক লেখা পোস্ট করা হয়েছে, একং বেশ কিছু ব্লগার এই উদ্যোগ সম্বন্ধে মন্তব্য করেছে। আর্মেনিয়া ভিত্তিক এক অনলাইন পত্রিকা ইনইয়ানের এক বিস্তারিত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এই প্রকল্পের ফলাফল নিয়ে আশা করা যায়। এই আশার সৃষ্টি হয় এমন এক এলাকায়, যে অঞ্চল গোত্রগত বিভাজন এবং ঐতিহাসিক ভিন্নতায় খণ্ডবিখণ্ড হয়ে রয়েছে।
টসপি জর্জিয়ার এক গ্রাম, যার কাছেই আর্মেনিয়ার সীমান্ত। সেখানকার প্রায় ভেঙ্গে পড়া এক বিদ্যালয়ে ৮০ জন ছাত্রছাত্রী এক সাথে পড়াশুনা করে। এই স্কুলে নেই বিদ্যুৎ বা পানির ব্যবস্থা, যদিও এ ধরনের দৃশ্য সারা বিশ্বে বিরল নয়। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্য রয়েছে আজারী এবং আর্মেনিয় জাতির ছেলেমেয়েরা। তারা আপনাকে বিস্মিত করবে। এখানকার আর্মেনিয়রা আজেরী ভাষা জানে এবং আজেরীরা জানে আর্মেনিয় ভাষা। অনেক বছর ধরে চলে আসা যুদ্ধ এবং শত্রুতার কারণে দু'টি জাতির মধ্যে সহাবস্থান যেন এক কল্পনা মাত্র।
[…]
বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীতে এমন এক স্থান রয়েছে, যেখানে এই দুই আদিবাসী নানা শত্রুতাপূর্ণ ইতিহাস সত্ত্বেও পরস্পরের সাথে মিশতে পারে এবং এক সাথে বাস করতে পারে। তাদের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান শান্তির জন্য জায়গা তৈরি করতে পারে, এমন সব জাতি, যারা অনলাইনে প্রান্তিক অবস্থানে থেকেও পোস্টের মন্তব্য বিভাগে প্রমাণ তৈরি করে।
এই প্রকল্পের পেছনে মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন আঞ্চলিক বিশ্লেষক এবং ব্লগার আরজু গেবুলায়েভা। তিনি এর সাম্প্রতিক পর্যায়ের উপর মন্তব্য করেছেন:
দু'টি দেশের মধ্যে আলাপ শুরু করার জন্য এটা এক সত্যিকারে চাপ প্রদান এবং তাদের জনগণের ক্ষেত্রে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই যে, দেশ দু'টির মধ্যে এক শক্তিশালী বন্ধন সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সম্পর্ক নির্মাণের এই যাত্রা প্রদর্শন করে, এ রকম বন্ধন এবং সহাবস্থান সম্ভব। এখন হয়ত নার্গনো কারাবাখের মত সংঘর্ষের বিষয় নিয়ে কথা বলা বন্ধ করার সময়, এটি দর কষাকষির বিষয় এবং এর কারণে দু’টি জাতির মধ্যে শত্রুতা বাড়তে থাকে। এই রকম দ্বন্দ্বের বদলে দু'টি জাতির সম্পর্ক আবার ঠিকঠাক করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
নতুন প্রচার মাধ্যম বিষয়ক প্রশিক্ষক, প্রথিতযশা সাংবাদিক, প্রাক্তন অনলাইন সম্পাদক এবং বিবিসি, সিএনএন এবং আল জাজিরার উপদেষ্টা ডেভিড ব্রিউয়ার বলেন, এই প্রকল্প অনলাইনে বিকল্প এক স্বরের উদাহরণ, যা এই অঞ্চলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
একটি অনলাইন প্রকল্প উভয়কে এক করছে। এক নতুন এবং সামাজিক প্রচার মাধ্যম। এর উদ্দেশ্য দক্ষিণ ককেশাসে বাস করা আদিবাসীদের মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা।
[…]
এ রকম উদ্যোগ যে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার চেষ্টা করছে, মূলধারার প্রচার মাধ্যম তাকে স্বাগত জানিয়েছে। বিবিসি গ্লোবাল নিউজের পরিচালক রিচার্ড সামব্রুক বলেছেন, ব্লগাররা এ ক্ষেত্রে এক মূল্যবান ভূমিকা পালন করছে।
[…]
“সামাজিক প্রচার মাধ্যম সমাজ বা রাজনীতির ক্ষেত্রে ক্রমাগত ভাবে বাড়তে থাকা এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করছে। নাগরিকরা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারে, কি ভাবে তারা তাদের জীবনকে দেখবে এবং তাদের চরিত্র চিত্রণ করা হবে- যে কোন রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক লক্ষ্যে স্বাধীন ভাবে তা দেখা হবে”।
আগামী দিনগুলোতে নতুন প্রচার মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ বা গল্প, ছবি এবং ভিডিও এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাদ্যমগুলো ব্যবহার আরও এইরকম উদাহরণ সৃষ্টি করবে। গত সেপ্টেম্বরে নেওয়া উদ্যোগ, সীমানা ভেঙ্গে ফেলার ক্ষেত্রে এক অনুশীলন হিসেবে ক্রমাগত ব্যবহার হবে। টুইটারের @ককেশাসপ্রজেক্ট -এ এই বিষয়ে বিস্তারিত জানুন।