- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

অস্ট্রেলিয়া: ভারতীয়ের হত্যাকান্ড বর্ণবাদ সমস্যা পুনরায় আলোচনায় এনেছে

বিষয়বস্তু: ওশেনিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জাতি-বর্ণ

মেলবোর্নে একজন ভারতীয় নাগরিকের হত্যাকাণ্ড অস্ট্রেলিয়াতে বর্ণবাদের উপর বিতর্কে নতুন করে ইন্ধন যুগিয়েছে আর বিদেশী ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেছে। এটা ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সম্পর্কেও জটিলতা সৃষ্টি করেছে:

মেলবোর্নে একজন ভারতীয় অভিবাসীর হত্যার পরে আজকে ক্যানবেরাতে ভারতীয় কূটনীতিকদের অস্ট্রেলিয় পক্ষের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনায় বসার কথা।

গত শনিবার (২রা জানুয়ারী) রাত্রে ইয়ারাভিল্লা পার্কে হিসাবরক্ষণে স্নাতক ২১ বছরের নিতিন গার্গের হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিবিদরা এর নিন্দা জানিয়েছেন।

ভারতীয় ছাত্রের হত্যার পরে কূটনৈতিক সমস্যা জেগে উঠেছে [1]

এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান ব্লগারদের বিভিন্ন ধরনের মতামত দেখা যাচ্ছে।

দ্যা সিডনি ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক গেরাল্ড হেন্ডারসান সিডনি মর্নিং হেরাল্ড [2] পত্রিকায় তার মতামতে ভূরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছেন:

বিগত কয়েক বছর ধরে এই দুই দেশের মধ্যকার শীতল সম্পর্ক বজায় আছে এবং এই দুর্ঘটনা তাকে উস্কে দিল। ২০০৮ সালে ভারতে সফরের সময়ে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কেভিন রুড সম্পর্কে নতুন দিল্লীর প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জোরালো সমালোচনা শুনে। ভারতের প্রধান বিষয় ছিল রুড সরকারের ভারতের কাছে ইউরেনিয়াম বিক্রির প্রস্তাবকে নাকচ করে দেয়া, যা জন হাওয়ার্ড আর প্রবীণ মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দেয়।

ছাত্রদের উপর আক্রমণ বর্ণবাদ সম্পর্কে কঠিন কিছু শিক্ষা দিয়েছে। [3]

লুন পন্ড ওরফে ডরোথি পার্কার, হেন্ডারসনকে আক্রমণ করেছেন:

এটা কি কেবল আমি, নাকি এটা মাটি খুঁড়ে তোলা গোপন কোন সূত্র যে অস্ট্রেলিয়াতে ভারতীয়দের হত্যার সাথে ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়ার ইউরেনিয়াম বিক্রি সংক্রান্ত নীতির সম্পর্ককে তুলে ধরা হচ্ছে?

জেরাল্ড হেন্ডারসনের এই জটিল খেমটা নাচ ছাত্রদের উপরে বর্ণবাদী হামলার ব্যাপারে কিছু কঠোর শিক্ষা দেয়।

জেরাল্ড হেন্ডারসন, ভারত, ইউরেনিয়াম, রাস্তার অপরাধ আর একটা খোঁড়া কলাম [4]

পিটার মাহের মেলবোর্নের রেডিও স্টেশন ৩এডাব্লিউ [5] এর জন্য ব্লগ করেন। তিনি চিন্তিত যে অস্বীকার করার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, হত্যাটি জাতিগত কারনে হয়ে থাকুক বা না:

কি করে কেউ বলতে পারেন যে এটা জাতিগত না যখন আমি আগেও বলেছি হত্যাকান্ডের আসল কারন আর কি পরিস্থিতিতে হয়েছে তা বোঝা কঠিন।

আমি যা জানি তা হল ভারতীয়দের প্রতি এই দেশের দুর্ব্যবহার, মারদাঙ্গা প্রদর্শন, হত্যা করতে চাওয়ার হুমকি খুব বেশী প্রকট যার ফলে আমরা বলতে পারি না যে এই দেশে বর্ণবাদ নেই।

… আমরা এইসব জাতিগত দিককে দ্রুত ধামাচাপা দিয়ে আর বিশ্বকে এই ধারণা দেই যে আমরা ভেদাভেদ করি না আর সবাইকে আমন্ত্রণ করি।

আমার মনে হয় সময় হয়েছে নিজেদের দিকে ভাল করে তাকানোর আর এই দেশে বর্ণবাদের যে দিকটি আছে সেই ব্যাপারে কিছু করা।

জেগে ওঠ অস্ট্রেলিয়া! আমরা বর্ণবাদী! [6]

ডেভ যিনি ট্রু ব্লু অসি হিসেবে ব্লগ করছেন, বর্ণবাদী ধারণা সম্পর্কে খুব কম সন্দেহ পোষণ করেন:

অবশ্য মেলবোর্নের সবাই জানেন, যে ফুটস্ক্যারি, যা অস্ট্রেলিয়ার একটা শহরতলী ছিল, এখন মুসলমান সুদানীজ, মধ্যপ্রাচ্যের আরব আর সোমালিয়ান দ্বারা ভরা। ফুটস্ক্যারিতে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান প্রায় দেখা যায় না। তাই বহুসাংস্কৃতিকভাবে বিভক্ত, জাতিগতভাবে বিচিত্র, অভিবাসনের জাহান্নামকে স্বাগতম যেখানে অভিবাসীরা (এই ক্ষেত্রে মুসলমান হওয়ার সম্ভাবনা আছে) অন্য অভিবাসীদের আক্রমণ করে আর অস্ট্রেলিয়ানদের দোষ দেয়া হয়। ডেভ।

বর্ণবাদী অভিবাসীদের দোষারোপ করা হবে একজন ভারতীয়কে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার জন্য। [7]

ফেসবুকের একটা দল তৈরি করা হয়েছে যার শিরোনাম ‘১০০০০০০ আসল অস্ট্রেলিয়ান বর্ণবাদের বিরুদ্ধে’ [8]। ‘অস্ট্রেলিয়ান’ বলতে আসলে কি বোঝায় সে সম্পর্কে একেবারে আলাদা ধারণা পোষণ করেন তারা। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে:

উচ্চ স্বরের সেই সংখ্যলঘুদের থামিয়ে দেয়া যারা ফেসবুকে আর রেডিওতে এই কথা ছড়াচ্ছে যে এই সুন্দর দেশটি বর্ণবাদের আখড়া।

ভূতপূর্ব ডেমক্র্যাট সিনেটর আর পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচনে গ্রীন দলের প্রার্থী এন্ড্রু বার্টলেট রাষ্ট্র ও ফেডারেল নেতাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আরো নিশ্চয়তা চান। এশিয়ান করেস্পন্ডেন্টের জন্য লিখতে গিয়ে তিনি তর্ক করেছেন:

প্রত্যেকটি অপরাধকে তার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে, আর আমাদের অবশ্যম্ভাবীভাবে এটা ধরে নেয়া ঠিক না যে এই এখনকার অপরাধ বর্ণবাদের কারণে হচ্ছে। আগের আক্রমণের ইতিহাস, আর মতান্তরে অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষের এর ব্যাপারটাকে গুরুত্ব সহকারে নেয়ার ব্যাপারে ধীর গতি [9] বিবেচনায় রাখতে হবে। যার ফলশ্রতিতে এই একটি অপরাধ সম্পর্কে হিন্দুস্থান টাইমস [10] গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট করছে যে ,”ভারতীয় সরকারী কর্মকর্তারা ‘বাধ্য হবেন’ যারা কাজ আর পড়াশোনা করতে চান অষ্ট্রেলিয়াতে তাদের জন্যে একটি (ভ্রমণ) পরামর্শক সতর্ক বাণী জারি করতে, বিশেষ করে যদি সেখানকার (অস্ট্রেলিয়ান) কর্তৃপক্ষ এবারে কঠোর পদক্ষেপ না নেন।“

এটা সরকার আর সমাজের নেতাদের দায়িত্ব কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যাতে মানুষকে আশ্বস্ত করা যায় (ক) এই ব্যাপারটা গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে আর (খ) মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হচ্ছে। যখন যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে যে মানুষকে তাদের বর্ণের কারনে আক্রমণের সম্মুখীন হতে পারে, এটা জরুরী যে তাদের জন্য বিপদ কমিয়ে আনার জন্যে সম্ভাব্য সব কিছু করা।

অস্ট্রেলিয়াতে ভারতীয়দের উপরে লক্ষ্য করে হত্যাকান্ড তাদের নিরাপত্তার উপরে আবার আলোক ফেলেছে [11]

অন্যদিকে আগামী অক্টোবরে দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমসে খেলাতে আসা ক্রীড়াবিদ আর অতিথিদের নিরাপত্তা একটি বিতর্কাধীন ব্যাপার হয়ে আছে যেটা যে কোন সময় ফেটে পড়তে পারে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক ডিপার্টমেন্ট ভারতে ভ্রমণের ব্যাপারে উচ্চ স্তরের সতর্ক বাণী জারি করেছেন পূর্বেই। এটা কি বদলা নেয়া হল?

৬ জানুয়ারী ২০১০ এর সর্বশেষ:

দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে পরামর্শক সর্তক বাণী ইতিমধ্যে জারি হয়েছে এবং কারণ দেখানো হয়েছে:

অস্ট্রেলিয়াতে ভারতীয় ছাত্রদের উপরে লাগাতার হামলার ফলে যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে সরকার মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়াতে পড়ার উদ্দেশ্য যেতে চাওয়া আর ওখানে থাকা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে সাবধান বাণী জারি করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাত্রদের সাবধান করে দিয়েছে যে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তর ভারতীয় সমাজে সংঘর্ষের ঘটনা প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এই পরামর্শ হিসাবরক্ষণ এর ছাত্র নিতিন গার্গের ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর পরে দেয়া হয়েছে, এটাই ছিল আক্রমণের ফলে প্রথম মৃত্যু। এই বাণী এসেছে যে দিন ভারতীয় আর অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ মিলিত হয়েছেন ক্যানবেরাতে বাড়তে থাকা এই সংঘর্ষ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা আলোচনা করতে। ও দিকে আংশিক পুড়ে যাওয়া আর এক ভারতীয়ের লাশ পাওয়া গেছে।

পরামর্শ দেয়া হয়েছে ভারতীয় ছাত্রদের অস্ট্রেলিয়াতে সাবধানে থাকার জন্য। [12]