কাজাখস্তান: দেশপ্রেম এবং গণতন্ত্র

২০০৯ সালের শেষ সপ্তাহে কাজাখ ব্লগাররা দু'টি বিষযের উপর মন্তব্য প্রদান করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে – কাজাখস্তানের দেশপ্রেম এবং গণতন্ত্র।

দেশপ্রেম:

সমাজের বিভিন্ন স্তরে দেশপ্রেমের বিষয়টি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। জাতীয়তাবাদী পক্ষের লোকেরা প্রচার মাধ্যম এবং সরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রুশ ভাষার প্রাধান্যের প্রতি অভিযোগ করে। সরকারি কর্তৃপক্ষ আগ্রহের সাথে বার বার বিতর্কিত পদ্ধতি এবং মনোভাবের মাধ্যমে দেশপ্রেম তৈরি করার চেষ্টা করে। তবে, এর ফলাফল এবং অন্য উদ্যোগের পরিণাম খুব কম চোখে পড়ে।

সাংবাদিক ডজডিলভো-লেটো একিবাস্তুজ শহর থেকে লেখেন। একিবাস্তুজ কাজাখস্তানের উত্তরের এক শিল্পনগরী [রুশ ভাষায়]:

আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের স্বদেশ প্রেম অবিশ্বাস্য। আজ আমার সহকর্মীকে ভাইস মেয়র (উপ পৌরপিতা) তার অফিসে আসতে হুকুম করেন এবং তাকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করেন। এর কারণ কি? কারণ এই ভদ্রমহিলা তার বুকে হাত না রেখে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মত অপরাধ করেছে…।

গিনিয়া-পাইরেট জানাচ্ছে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের এক সামাজিক প্রকল্পের কথা, এইসব ছাত্রদের কাজাখস্তানের প্রতি তাদের ভালবাসা প্রদর্শন নিয়ে এক রচনা লিখতে বলা হয়েছিল [রুশ ভাষায়]:

শিশুদের মস্তিষ্ক বিভিন্ন প্রচারণায় ভরে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। আস্তানার [আস্তানা দেশটির রাজধানী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এন. নজারবায়েভের এক নিজস্ব প্রকল্প] পূজা সকল রচনার এক উপজীব্য বিষয়। এছাড়াও অজস্র শব্দ দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় [এই শাসকের প্রতি] “এক সুখী শৈশবের জন্য” এবং দেশের উচ্চমাত্রার উন্নয়নের প্রতি” এ সব বাক্য প্রশংসাগাঁথা হিসেবে রয়েছে। ওহ, যদি শিশুদের কোন দাগহীন মন এবং বাঁধাহীন কল্পনাশক্তি থাকত! এই ধরনের সৃষ্টিশীলতার জন্য আমরা কাকে ধন্যবাদ জানাব- শিক্ষক, পাঠ্যবই অথবা টেলিভিশন?

বলা যায় কাজাখস্তানে বাইকোনুরের বসতি। বাইকোনুর বিশ্বের সবচেয়ে বড় নভোখেয়াযান উৎক্ষেপন ও রাখার স্থান। এখান থেকে সম্প্রতি এক নভোচারীকে ২০১০ সালে মহাকাশে পাঠাতে অস্বীকার করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এই কাজটি করা হয়। এ-স্ট্রেকোজা এক গুজব সম্বন্ধে লিখেছেন, তাতে জানা যাচ্ছে যে কাজাখ এই নভোচারী মহাশুন্যে যাবেন, তবে তিনি সেখানে যাবে রুশ নাগরিক পরিচয়ে [রুশ ভাষায়]:

অভিযোগ রয়েছে তিনি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন এবং রুশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। যদি তা সত্য হয়, তা হলে বিষয়টি ২০১০ সালের প্রধান সংবাদ হয়ে। তবে কিছু সময়ের জন্য এটা একটা কানকথা মাত্র।

এটা কি এমন স্থান নয়, যেখান থেকে স্বদেশ প্রেমের শূরু হয়?

গণতন্ত্র:

এ-স্ট্রেকোজা নামের ভদ্রমহিলা এছাড়া তার পাঠকদের জানাচ্ছেন যে, গত মাসে কাজাখস্তানে গোপনীয়তা আইনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে [রুশ ভাষায়]:

এখন এখানে রাজপ্রাসাদের আকৃতিতে তৈরি করা এক বিনম্র সরকারি কর্মকর্তা বাসভবনের গল্প রয়েছে এবং তার সাথে এক যৌক্তিক প্রশ্ন রয়েছে “এই প্রাসাদ কেনার টাকা সে কোথায় থেকে পেল”? এটা তাকে সম্ভাব্য পাঁচ বছরের এক কারাগারে ঠেলে দিতে পারে। অভিনন্দন, সহকর্মীবৃন্দ।

মেগাখুইমিয়াক কাজাখস্তানের রাজনৈতিক উপলব্ধির উপর এক প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছেন [রুশ ভাষায়]:

এখনকার অন্যতম বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বামদলগুলোর নপুংসক আচরণ। বাস্তবে তাদের অবস্থান কাজাখস্তানে অসম্ভব, কারণ এদেশে সামাজিক ন্যায়বিচারের ধারণা একেবারে অনুপস্থিত। এখানকার কেউ চায় না ধনী এবং গরিবদের আয় সমান হোক। এখানে সবাই সর্বহারাদের নিপীড়ন করতে চায়।

অন্য এক পোস্টে তিনি “অনানুষ্ঠানিক আইনের” বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লিখেছেন। এই আইন বিরোধী প্রচার মাধ্যমের কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

মনে হচ্ছে এই আইন বলছে- বিরোধী প্রচার মাধ্যম অবশ্যই মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের জন্য খবর ছাপাবে না, যেমন তারা ১৬০,০০০ জনের বেশি সংখ্যক লোকের কাছে যাবে না। এর ফলে বিরোধীরা রেডিও ও টেলিভিশনে প্রবেশ করার সুযোগ পায় না। আমাদের কর্তৃপক্ষ কেবল মাত্র ১ শতাংশ প্রতিবাদকারী বিরোধীদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান এবং পাঁচ শতাংশ সমালোচকদের নিয়ে কি করা উচিত সে বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নেই।

থাউজেন্ড-পা আমাদের ইউজেন জোহভটিস এর কাহিনী স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি কাজাখস্তানের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল অধিকার আদায় কর্মী হিসেবে বিবেচিত হতেন। তার বিরুদ্ধে গাড়ির ঠিক মত চালাতে না পারা ও মানুষ চাপা দেবার অভিযোগ রয়েছে। মহাসড়কের উপর গাড়ি চালানোর সময় তিনি এক পথচারীকে চাপা দেন। তিনি ছিলেন শান্ত, তিনি নির্ধারিত গতি সীমার মধ্যে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার দেওয়া বিভিন্ন উপাদান নিহতের পরিবারকে সাহায্য করেছে। তবে তারপরেও তার ৪ বছরের জেল হয়েছে। ব্লগার একই ধরনের আরেক ঘটনার উপর মন্তব্য করেছে। এই ঘটনায় এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর পুত্র জড়িত ছিল- কিন্তু এর বেলায় ফলাফল একেবারে ভিন্ন [রুশ ভাষায়]:

এখন -ঠিক হয়েছে! কাজাখ ধরনের রহস্যময় ন্যায়বিচার সাধিত হয়েছে! আপনি মদ খেয়ে গাড়ি চালাতে পারেন, এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনজন মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারেন, ন্যায় বিচার এড়ানোর জন্য দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারেন-এবং তারপরেও নিষ্পাপ রয়ে যেতে পারেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .