- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সংস্কৃতি ও আন্তর্বর্ণের বিবাহ সম্বন্ধে ব্লগিং করা

বিষয়বস্তু: ওশেনিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, পাকিস্তান, ভারত, দেশান্তর ও অভিবাসন, শিল্প ও সংস্কৃতি

আধুনিক প্রযুক্তির কল্যানে মানুষ যত কাছে আসছে, ততই পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধা, সংস্কৃতি এবং বর্ণগত প্রতিবন্ধকতাকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছে; একই সাথে আন্তর্বর্ণ বিবাহ অনেকটাই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বেশ কিছু পরিবার যারা মিশ্র বর্ণ ও ধর্মে আবদ্ধ হচ্ছে বা ভিন্ন ধর্ম ও বর্ণে বিবাহ করেছে, তারা ব্লগ জগৎে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন। তারা এমন এক সংস্কৃতি ও দেশের প্রতি তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে, যেখানে তারা বহিরাগত এবং তারা সেখানকার সবকিছু শেখার মত এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ইন্টাররেসিয়ালম্যারিজ [1] নামক ব্লগের লেখক একজন অস্ট্রেলিয় পুরুষ জানাচ্ছে যে সে এক চীনা মহিলাকে বিয়ে করেছে। এই মহিলা প্রকৃতপক্ষে একজন নিরীশ্বরবাদী বা নাস্তিক। তিনি তার পুত্রকে নিয়ে যে ভাবে পরিবারে বড়দিনের উৎসব উদযাপন করেছেন সে সম্বন্ধে লিখেছেন। তিনি তার স্ত্রীর নিরীশ্বরবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী প্রথার প্রতি বিশ্বাসের ধরণ বোঝার চেষ্টা করেছেন।

“মিসেস বি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, কারণ তার মতে এই ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণের অভাব রয়েছে। কিন্তু তিনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন, বা ফেং সুই (প্রাচীন চীনা বিশ্বাস যাতে স্বর্গ এবং পৃথিবীর আইনের দ্বারা জীবনকে ইতিবাচক করা যায়) অথবা সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাস করেন, কিংবা যে কোন সংখ্যা যার মধ্যে ধর্মীয় বিষয় জড়িয়ে আছে, তাতে তিনি বিশ্বাস করেন। এই বিশ্বাস গুলো সারা বিশ্বের চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে।

মাঝে মাঝে আমি খেয়াল করেছি মিসেস বি ঘরে অদ্ভুত সব ধর্মীয় আচার পালন করে। তিনি মন্দ ভাগ্যকে দূর করার জন্য এই সমস্ত কাজ করেন। এমনকি তিনি সামনের দরজা এবং পেছনের দরজাকে নতুন জায়গায় বসানোর জন্য প্রচুর টাকা খরচ করিয়েছেন। এটি তিনি করেছেন ভালো ফেং সুই-এর মাধ্যমে ঘরে যাতে সৌভাগ্য বয়ে আসে সেই জন্য।

এখন আমিও দেখতে পাচ্ছি, এই সমস্ত বিশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই। কিন্তু মিসেস বির জন্য আমি এই সব আচার মেনে নেই। আমি ধারণা করি তিনি আমার ধর্মের ক্ষেত্রে একই অনুভূতি বজায় রাখেন। তিনি আমার খাতিরে আমার সকল ধর্মীয় কর্মকাণ্ড মেনে নেন”।

যখন একটি বিদেশী সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করার বিষয় সামনে এসে দাঁড়ায় তখন সেটি মোটেও সহজ কাজ নয়। এমনটা মনে হয়; এমনকি যখন আপনি সেই সংস্কৃতির কাউকে বিয়ে করেন তখনও ব্যাপারটি সহজ নয়। কিন্তু আপনি কি করেন, যখন আপনি অন্যের সাংস্কৃতিক শিষ্টাচার পালন করতে গিয়ে নিজের অবস্থান নিয়ে সহকর্মীদের মাঝে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান?

গোরিগার্ল [2]-এ ব্লগার, একজন ভারতীয় বাঙ্গালীকে বিয়ে করেছেন। শ্বেতাঙ্গিনী হিসেবে তিনি তার সিঁদুর পরার অভিজ্ঞতা আমাদের জানাচ্ছেন। হিন্দু বিবাহিত মহিলারা সিঁথিতে বা কপালে সিঁদুর পরে (সিন্দুঁর-এর শক্তি) এবং এই আচার ভারত এবং নেপালের অনেক এলাকায় দেখা যায়। কিন্তু কেউ যদি ওয়াশিংটন ডিসি নামক শহরে সিঁদুর পরে, তা হলে কি ঘটতে পারে?

“না, সিঁদুর পরার কারণে বেশীরভাগ দিনই আমার সমস্যা হত। আমি সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে কাজে যাই। যেখানে আমি কাজ করি সেখানে বেশ কয়েকজন ভারতীয় কাজ করে। তবে তাদের কেউ ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক পরে না। কিন্তু মাঝে মাঝে তারা ছোট পাঞ্জাবী পরে। সেখানকার কোন বিবাহিত মহিলা সিঁথিতে সিঁদুর পরে না! এমনকি আমি সিঁদুর পরার ফলে একজন বয়স্ক বাঙ্গালী সহকর্মী মহিলা বিস্ময় প্রকাশ করে, কারণ আমি লোহা পরার মত পুরোনো প্রথা পালন করি। লোহা হচ্ছে সোনা দিয়ে মোড়ানো লোহার বালা, যা বাঙ্গালী মহিলারা বিবাহিত হবার চিহ্ন হিসেবে ধারণ করে। আমি আমার বাম হাতে প্রতিদিন লোহা পরি।

…………….অন্য দিকে তৃতীয় পক্ষ (হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি জানি) তারাও এতে বিস্মিত হয়, শেষবার যখন আমি সিঁদুর পরে অফিসে যাই, আমার বস বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানতে চান, আমার মাথা ফেটে যে রক্ত পড়ছে, তার জন্য কোন পট্টি লাগবে কিনা। হ্যাঁ, ঠিক, আমি জানি। আমার সিঁদুর পরা নিয়ে আর কারো কোন সমস্যা রয়েছে কি”?

কোন কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার মত বিষয় দিগোরিওয়াইফলাইফ [3] ব্লগারের মাথায় রয়েছে। তিনি একজন আমেরিকান মহিলা যিনি এক পাকিস্তানী পুরুষকে বিয়ে করেছেন। তিনি লিখেছেন, যখন তিনি পাকিস্তান ভ্রমণ করেন, তখন তিনি কি কি পোশাক পরিধান করেছিলেন।

“এইবার আমি সাথে নিয়েছিল দুই জোড়া জীন্সের প্যান্ট এবং কিছু জামা, কারণ আমি ভেবেছিলাম অন্তত ঘরের ভেতরে আমি আরামদায়ক পোশাক পরে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকব, যেহেতু ঘরের ভেতরে এটাই আমার প্রতিদিনের পোশাক। তবে যে কোন কারণেই হোক আমি জিন্সের দু'টি প্যান্ট, পাকিস্তানী জামা পরা, বাদ দিয়েছিলাম এবং যতবার আমি বাইরে যেতাম ততবার আমি সালোয়ার কামিজ ও দোপাট্টা বা ওড়না পরে বাইরে যেতাম। বেশ কয়েকবার আমরা আশেপাশের এলাকায় হাঁটতে বেড়িয়ে ছিলাম এবং এই সব পোশাকে সবকিছু স্বাভাবিক এবং সহজ ছিল।

তবে যে কোন কারণেই হোক এবারের পরিস্থিতি খানিকটা কঠিন ছিল”।

ভিন্ন সংস্কৃতি এবং তাকে বোঝা কঠিন এক ব্যাপার। এরপর তাকে মেনে নেওয়ার মত সমস্যা নিয়ে আন্তর্বর্ণে বিবাহিত দম্পতিদের নিয়মিত ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় তাদের সম্পর্কের ভিত্তি নিয়ে তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় এবং যখন বিবাহ এবং অভিবাসন নামক মর্যাদা লাভের বিষয় হিসেবে সামনে চলে আসে, তখন এই বিষয়টি মোটেও প্রীতিকর থাকে না।

ইনডিয়াটাইস [4]-এর ব্লগার হিদার লারদেকি একজন আমেরিকান। তিনি একজন ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করেছেন। যারা আন্তর্বর্ণ বিবাহকে মর্যাদাপূর্ণ ও উন্নত বিশ্বে বাস করার ক্ষেত্রে সুবিধা লাভের প্রতীক হিসেবে দেখেন তাদের দিকে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন।

“আমার স্বামীর ক্ষেত্রে, আমাকে বিবাহ করাকে (একজন শ্বেতাঙ্গ নারীকে বিবাহ করা) তেমন একটা মর্যাদার প্রতীক বলা যাবে না। তিনি বিশেষ করে একজন আমেরিকান নারী অথবা শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে বিয়ে করার জন্য ব্যগ্র ছিলেন না। জীবনে কোথাও কিছু পাবার জন্য “আমাকে” তার প্রয়োজন ছিল না। এটা, সঠিক স্থানে, সঠিক সময়ে ঘটা, এমন এক ঘটনা, যা তার ক্ষেত্রে ঘটে গেছে।

তবে আমার স্বামীর অনেক ভারতীয় বন্ধু তার জন্য এক শ্বেতাঙ্গ রমণী খুঁজে দেবার তাগিদ অনুভব করেছিল। তার এক বন্ধু (যে সম্প্রতি ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে) আমার স্বামীকে বলেছে, ওয়াও, অবশেষে তুমি এই কাজটি করতে সমর্থ হলে, তোমার মত আমাকেও একটা শ্বেতাঙ্গ রমণী খুঁজে পেতে হবে… এবং সত্যি বিষয়টিকে সে গুরুত্বের সাথে দেখে”!

আন্তর্বর্ণের দম্পতিদের অনুসরণীয় পথ এবং তাদের সমস্যা, এক আয়নাকে আমাদের সামনে তুলে ধরে। এই আয়না আমাদের দেখায় যে আমাদের সভ্যতা কতদূর পর্যন্ত ভিন্নতাকে গ্রহণ করতে ও তাকে শ্রদ্ধা করতে সক্ষম।