রাশিয়ার ফোটো সাংবাদিক ওলেগ ক্লিমোভ সম্প্রতি রাশিয়ার সামারা অঞ্চলের একটা শহর সিজ্রান এর ট্রেন স্টেশনে দুই ঘণ্টা ধরে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি কয়েকজন স্থানীয় লোকের সাথে কথা বলেছেন আর তার পরে তার ব্লগে তাদের চূড়ান্ত দারিদ্রের কথা লিখেছেন:
গল্প#১:
মা, তার মেয়ে আর নাতি, ৫ বছরের মতো বয়স। ট্রেন স্টেশনে দুদিন ধরে অবস্থান করছে। [পেঞ্জা থেকে] খুব বেশী দূরে না তাদের গ্রাম। সেখানে যাওয়ার জন্য তাদের কাছে [টিকিট কেনার জন্য] ৪০০ রুবেল (প্রায় ১৩ ডলারের মত) কম আছে। তারা একটা জানাজা থেকে ফিরছিল। অপেক্ষায় আছে একজন আত্মীয়া আসবেন ৪০০ রুবেল নিয়ে। আত্মীয়া আসছেন না- সম্ভবত তার কাছেও অর্থ নেই বলে। তারা [আমাকে] অনুরোধ করে একটা টেক্সট বার্তা পাঠানোর জন্য [আমার সেল ফোন থেকে]। সাধারণ গ্রামের মানুষ। হয়তো তারা খুব চালাক বা খুব শিক্ষিত না, কিন্তু তারা মুক্ত মনের আর অকৃত্রিম। এই গুণগুলো আজকের দিনে কম মূল্যের নয়। মার মাসিক পেনশন ৪৫০০ রুবেল [প্রায় ১৪৮ ডলার]। মেয়েটি মাঝে মাঝে পেঞ্জাতে কাজ করে, আর মাঝে মাঝে কাজ পায় না। ছেলেটি কোন কিন্ডারগের্টেনে যায় না। [কারণ] কোন কিন্ডারগার্টেন নেই। একজন আত্মীয়া মারা যাওয়ায় তারা তাদের সব অর্থ একত্র করে তাকে কবর দিতে এসেছিল। “না হলে কেমন করে? মানুষকে ভালো একটা বিদায় তো জানাতে হবে”।
গল্প#২:
চারজন গ্রামীণ তাতার নারী প্রতি সপ্তাহে তাদের গ্রাম থেকে সিজ্রানে আসেন কাজ করার জন্য। চার জনের মিলে তারা সর্বোচ্চ হয়ত ১০০০ রুবেল [প্রায় ৩৩ ডলার] আয় করেন, ঘর বা যে কোন উন্মুক্ত স্থান পরিষ্কারের কাজ করে। গ্রামে কোন ধরনের কাজ নেই। “কাজ আছে কিন্তু তা থেকে কোন অর্থ আসে না”। মাঝে মাঝে রুটি কেনার মতো অর্থ তাদের কাছে থাকে না। তাই আটা কিনে তারা নিজেদের রুটি নিজেরা বানান। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য। তাদের নিজেদের আলু আছে। আর শসা আর কপি। কিন্তু তাদের অর্থ নেই। ”বাঁচা সম্ভব, কিন্তু খুব কঠিন। মরা এর থেকে সোজা”
গল্প#৩:
৫৫ বছর বা আর একটু বয়স্ক একজন পুরুষ। তার সন্তানরা থাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ওই ভাবেই: “এখান থেকে বেরিয়ে যাও… মাঝে মাঝে আমি আমার পরিচিত লোকের বাড়িতে থাকি, আর মাঝেমাঝে ট্রেন স্টেশনে। মাজে মাঝে এখানে সেখানে কাজ করি…”। নিজেকে ভবখুরে ভাবেন না কারণ “ছোট শহরে ভবখুরে নেই। মানুষ সাহায্য করে।” প্লাস্টিকের বোতলে তার কাছে ঠাণ্ডা চা আছে। রুটি আর দুর্গন্ধযুক্ত কাটলেট এক টুকরো কাপড়ে বাঁধা। একটা কাটলেট রুটি দিয়ে সে খেলো। চা খেয়ে তার পরেই স্টেশনের বেঞ্চে ঘুমিয়ে পড়ল। বুকে মাথা নামিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
ক্লিমোভ তার পোস্ট আবেগপূর্ণ ভাবে শেষ করেছেন এই বলে যে ‘এগুলো দেখা ভয়ঙ্কর’ আর এমন গল্পের কোন কমতি নেই ‘বাহ্যিক দৃষ্টিতে চকচকে পুতিনের রাশিয়ায়':
আর কয়েক ঘন্টা ওখানে কাটিয়ে আর একটা লেখা যায়। কোন মন্তব্য ছাড়া। কেবলমাত্র মানুষ একে অপরকে কি বলে তা শুনে আর লিখে। এটা এতটাই সোজা। যে কোন সাংবাদিক এটা করতে পারেন। আর কোন বুদ্ধিজীবীমূলক ব্যাখ্যারও দরকার নেই।