কোপেনহেগেন সম্মেলন: নেপালের মন্ত্রীরা বিষয়টির মর্ম উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে

এর মধ্য কোন রহস্য নেই যে, নেপাল ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রত্যক্ষ করছে। দেশটিতে লম্বা সময় ধরে চলতে থাকা খরা দেখা দিয়েছে ও প্রায় নি:স্ব করে ফেলার মত ফসল ফলছে এবং হিমালয়ের হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। যখন বিশ্ব উষ্ণতার মত বিষয় সামনে চলে আসে তখন দেখা যাচ্ছে এ দেশটি বিস্ফোরিত হতে যাওয়া টিকটিক করা এক ঘড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে।

আন্না-ক্যাটারিনা গ্রাভগ্রার্ড পুলিৎজার সেন্টার পর ক্রাইসিস রিপোর্টিং নামক সংবাদ মাধ্যমের বৃত্তিধারী সাংবাদিক। তিনি জানাচ্ছেন, নেপালের লাংটাং অঞ্চলের পাহাড়গুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

“সেখানকার বাসিন্দারা তাদের চারপাশের সব জায়গায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখতে পাচ্ছে: জমির পরিমাণ কমে আসা, তুষারপাত কমতে থাকা, এবং সুউচ্চ পাহাড়চূড়ার উপরে অবস্থান করা বিশাল ধুসর হিমবাহ সুনির্দিষ্ট ভাবে গলে যাচ্ছে, এ সবই ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

এ বছরের জুনে, আমরা জীপে করে কাঠমান্ডু ত্যাগ করি। এরপর তিন দিন ধরে কাছে কোথাও হিমবাহ আছে কিনা তার অনুসন্ধানে রাস্তায় হাঁটতে থাকি। আমাদের পথপ্রদর্শক দামোনদন পিয়াকুরালকে আমরা ডিপি বলে ডাকি। সে আমাদের জানাল, আমাদের সামনে এক বরফের দেওয়াল রয়েছে। ১৭ বছর আগে এটিকে যেখানে সে দেখেছে, এখন এই দেওয়াল তার থেকে প্রায় ২০ মিটার দুরে সরে গেছে”।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমালয়ের উপর যে চাপ পড়ছে, সে বিষয়টি উল্লেখ করার জন্য নেপালী মন্ত্রিসভা কোপেনহেগেন সম্মেলনের পূর্বে এভারেস্টের কাছে এক ঘাঁটিতে এক বিশেষ সভার আয়োজন করেছিল। দি রেডিয়েন্ট স্টার ব্লগের লেখক উজ্জ্বল আচারিয়া এই সভার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তা হলে হিমালয়ের এই অঞ্চলে এক বিপর্যয় ধেয়ে আসছে:

প্রথমত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, হিমালয় যে গলে যাচ্ছে এ ব্যাপারে এক সচেতনতা সৃষ্টি করা। কয়েক বছর আগে চাও রোলপা হ্রদ সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতনতা বজায় ছিল (প্রচার মাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ ছাপা হয়েছিল)। এই হ্রদ প্রায় বিস্ফোরিত হতে যাচ্ছিল। যদি তা ঘটত তা হলে বিশাল এক এলাকা জুড়ে এক ভয়াবহ বিপদ নেমে আসত-তামাকশি নদীর তীরে এই বিপদ ঘটতে যাচ্ছিল। বেশ কিছু অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে এই বিপদের ঝুঁকি কমানো হয়েছে। তবে হিমালয়ের উচুঁ এলাকায় এ রকম বেশ কিছু হ্রদ রয়েছে, যেগুলোর বরফ ভেঙ্গে পড়তে পারে এবং আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

দুর্ভাগ্যবশত নেপালী মন্ত্রীসভা তাদের উক্ত সভার বার্তাটিকে জীবন্ত রাখতে পারে নি এবং তারা কোপেনহেগেন গিয়ে একই ভাবে পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারে নি।

নেপালী ভাষার ব্লগ মাইসানসার বলছে যে সম্মিলনে নেপালী প্রতিনিধি দল মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা ভরে গিয়েছিল, যাদের এই সম্মিলনে থাকার কোন প্রয়োজনীয়তা ছিল না।

“कोपनहेगनमा जलवायु परिवर्तनसम्बन्धी सम्मेलन के सुरु भएको थियो, नेपालका मन्त्रीहरुको भीड नै लागेको छ त्यहाँ। आठ आठ जना मन्त्रीहरु सहभागी भएर गतिलै सन्देश दिँदैछन् नेपाली जनतालाई- हेर जनता हो, हामी माननीय मन्त्री हौँ। हामीले जे गरे पनि हुन्छ। नत्र विभागीय मन्त्रीका रुपमा वातावरण मन्त्री र प्रधानमन्त्री मात्र सहभागी भए पुग्ने थियो यसमा। अरु मन्त्रीहरुको कामै छैन। तर प्रधानमन्त्री आफ्ना सल्लाहकारहरुसहित झण्डै तीन दर्जन सदस्यहरुका साथ कोपनहेगन पुग्दैछन्। पाँच जना मन्त्री भने त्यहाँ पुगिसके। त्यसमध्ये एक वनमन्त्री दीपक बोहोराले भने अति नै गरेछन्।
उनले आफ्नी श्रीमति, नाति, भान्जी अनि आफू नजिकका मान्छेलाई सेक्रेटरीका रुपमा ल्याएछन्। अहो, यस्तो मौका फेरि आउला, नआउला। यही बेला त हो नि मोज गर्ने- यस्तै त सोचेका होलान् नि बोहोराले। र त नौ नौ जना आफन्त लिएर पुगे त्यता।”

যখনই কোপেনহেগেন সম্মেলন শুরু হল, নেপালের মন্ত্রীরা দ্রুত ডেনমার্কের রাজধানীতে গিয়ে হাজির হলেন। সম্মিলনে আটজন মন্ত্রীর উপস্থিতির মানে যারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাদের কাছে এক শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেওয়া, দেখ আমরা মন্ত্রীরা এখানে হাজির হয়েছি। আমরা যা চাই তাই করতে পারি। বলা যেতে পারে, কেবল প্রধানমন্ত্রী ও পরিবেশমন্ত্রীর এই সম্মিলনে যাওয়া যথেষ্ট বলে বিবেচিত হত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোপেনহেগেন গেছেন প্রায় তিন ডজন অংশগ্রহণকারী সহ, এদের মধ্য কয়েকজন তার উপদেষ্টা। মন্ত্রীদের মধ্যে পাঁচজন আগেই কোপেনহেগেন-এ গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। এদের মধ্য আবার বনমন্ত্রী একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।

স্ত্রী, নাতী, ভাতিজি এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সেই মন্ত্রীর সাথে গিয়েছে, যেন তার সচিব। কেউ একজন হয়তো এভাবে যাবার সুযোগ পাবে না। বোহরা (দীপক বোহরা-নেপালের বনমন্ত্রী) হয়তো ভেবেছিল যে এটা বিশ্রাম নেবার এবং মজা করার সময়। এ কারণে সে কোপেনহেগেনে তার ঘনিষ্ঠ নয়জন আত্মীয়কে নিয়ে গিয়েছিল।

সম্মিলনে মন্ত্রীরা এই রকম উদাসীন আচরণ করছে। সে হয়তো ভেবেছিল কবে আর করদাতাদের পয়সায় এ ভাবে বিদেশ যাবার সুযোগ লাভ করা যাবে। কোন সন্দেহ নেই তার এ আচরণ বিশ্ব জলবায়ু বিতর্ক সম্মিলনে নেপালের অবস্থানকে হেয় করেছে। এ ছাড়াও এটি কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০০৯-এর কার্যকারিতাকে সন্দেহের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .