মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর পানি চুক্তির পর্যালোচনা করা হচ্ছে

আকার ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সিঙ্গাপুর তার ব্যবহৃত পানির অর্ধেক সংগ্রহ করে প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় থেকে। এটি সে করে, দু'টি প্রধান চুক্তির মাধ্যমে।

১৯৬১ সালের চুক্তির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর প্রতিদিন মালয়েশিয়া থেকে ৩৫০ মিলিয়ন গ্যালন সাধারণ পানি সংগ্রহ করে। মালয়েশিয়া তার প্রতিবেশী দেশে প্রতি হাজার গ্যালন পানি ৩ মালয়েশিয়ান সেন্টে বিক্রি করে। এছাড়াও সিঙ্গাপুর চুক্তি মোতাবেক জোহর প্রদেশে (সিঙাপুরের পার্শ্বে অবস্থিত মালয়েশিয়ার এক প্রদেশ) প্রতিদিন সুপেয় পানি সরবরাহ করবে। জোহরে সে প্রতি ১,০০০ গ্যালন পানি ৫০ সেন্টে বিক্রি করে। ২০১১ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে

১৯৬২ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার জোহর নদী থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারবে। তার বদলে তাকে পরিশোধীত পানি মালয়েশিয়ার জোহর রাজ্য সরবরাহ করতে হবে। এই চুক্তির মেয়াদকাল ৯৯ বছর।

যেহেতু ২০১১ সালের মধ্যে প্রথম চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, সেহেতু মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড: মাহাথির মোহাম্মদ তার জনপ্রিয় ব্লগের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, সরকার কি আরো ভালো কোন প্রস্তাবের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের সাথে নতুন করে চুক্তি করার কথা ভাবছে:

২০১১ সাল খুব বেশি দুরে নয়। আমরা কি বর্তমান চু্ক্তিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করব, নাকি চুক্তির মেয়াদ আর বাড়ানোর কথা চিন্তা করব না, অথবা প্রতিবেশী দেশটির সাথে নতুন কোন পানি সরবরাহ চুক্তি করব? আমরা কি আগের মত দাতা হব এবং আমাদের ধনী প্রতিবেশী দেশকে প্রতি হাজার গ্যালন পানি ৩ সেন্ট বিক্রি করব?

দাতা হওয়া এবং জটিল কোন বিষয় উত্থাপন না করা, বন্ধু হবার জন্য ভালো, কিন্তু মালয়েশিয়ার নাগরিকদের তাতে লাভ কি।

ব্লগার কেন্ট মো জানাচ্ছে যে প্রাক্তন নেতা মাহাথির “ সিঙাপুরে পানি বিক্রির মত একটা তিক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন এবং তার উত্তরসূরী আবদুল্লাহ আহমেদ বাদাউ এই পানিতেই (পানি চুক্তির কারণে) ডুবে গেছেন, মানে এই বিষয়গুলো তাকে নির্বাচনে পরাজিত করেছে।

মাহাথিরের ব্লগে অনেক মন্তব্য এসেছে: এবং ডিন নতুন করে পানি নিয়ে চুক্তি করার বিষয়টি সমর্থন করেছেন:

সিঙ্গাপুরে অপরিশোধিত পানি সরবরাহ করার কোন মানে নেই, যখন তার বিনিময়ে যে লাভ হয় তা কোন মতে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা যখন ব্যবসা করছি, তখন তা ব্যবসার মতই করা উচিত। অবশ্যই আমরা সিঙ্গাপুরের সাথে বন্ধুত্বের বিষয়টি বিবেচনা করব, কিন্তু এ রকম বিচিত্র কোন চুক্তির বিনিময়ে নয়।

আমি আশা করি, মালয়েশিয়ার সরকার এই সমস্যাকে গুরুত্বের সাথে দেখবে, নতুন চুক্তি মালয়েশিয়ার জনগণের কাছে কোন খারাপ ধারণা বয়ে আনবে না। মালয়েশিয়ার সকল নাগরিক এই অপরিশোধিত পানির অধিকারি। কাজেই নিশ্চিত করতে হবে যে সিদ্ধান্তটি সঠিক এবং যুক্তিপূর্ণ।

ইফএনঅনলাইন মনে করে যে, পানির মূল্য নিয়ে আলোচনা করার সময় বর্তমান বাজার দর অনুসরণ করা উচিত ।

এটা খুব সাধারণ একটি চিন্তার বিষয়, যে কোন সহজ বুদ্ধির মানুষ বুঝতে পারবে যে, সিঙ্গাপুরের সাথে পানি বিক্রি নিয়ে কোন নতুন চুক্তি করতে হলে, তা বর্তমান বাজার দর অনুসারে করা উচিত। মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর পানি চুক্তি নিয়ে কূটনৈতিক ভাবে আলোচনা করতে পারে, যাতে তারা নতুন এক দরে পানি বিক্রি করতে পারে। এটা আসলেই খুব সহজ কাজ। যদি সিঙ্গাপুর এই দরে পানি কিনতে রাজি না হয়, তা হলে মালয়েশিয়ার ভালোমানুষ সেজে থাকার কোন মানে হয় না এবং এ রকম ভয়াবহ বিচিত্র দামে পানির বিক্রি করার কোন মানে নেই।

ওয়েসজি বিশ্বাস করেন যদি প্রথম স্বাক্ষরিত পানি সরবরাহ চুক্তি নতুন করে বাস্তবায়ন না করা হয়, তা হলে তা মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর উভয়ের জন্য জয়ী হওয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে এবং এর মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুর আরো বেশি আত্ম-নির্ভর হতে শিখবে।

আমি জানতে চাই কেন এখন এসব উত্থাপন করা হচ্ছে। সিঙাপুর বলছে, ২০১১ সালে তারা প্রথম পানি চুক্তিটি তামাদি করে ফেলতে চায়। যেহেতু মালয়েশিয়া মনে করে যে পানির দাম ন্যায্য নয়, তাই সিঙ্গাপুর এই চুক্তি বাতিল হয়ে গেলে খুশি হবে, এতে উভয়ের জয় হচ্ছে, নয় কি? যদি ২০১১ সালের পর সিঙ্গাপুরে সরবরাহ করার মত এনইওয়াটার বা নিজস্ব পানি সরবরাহের ব্যবস্থা যথেষ্ট না থাকে, তা হলে সেটা সিঙ্গাপুরের নিজস্ব বিষয়, তাই না? মনে হচ্ছে কেউ একজন মৃত ঘোড়াকে চালাতে চায়, আরো একবার।

আমি আনন্দিত যে মালয়েশিয়া ২০১১ সালের এই চুক্তি আর বাড়াতে রাজী নয়। বিষয়টি উভয় দেশের জন্য ভালো। এর মাধ্যমে সিঙ্গাপুর আত্ম-নির্ভর হতে শিখবে।
“একটি চুক্তি হচ্ছে বাস্তবিক পক্ষে একটি চুক্তি” জনগণকে এটি স্মরণ করিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চুক্তিটিকে সকলের গ্রহণ করতে শেখা উচিত। বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজেদের নেতাকে বেছে নেওয়া উচিত।

২০০৩ সালে এই চুক্তি নিয়ে মালয়েশিয়া যে গুঞ্জন উঠে তার কারণে সিঙাপুরের তথ্য, বাণিজ্য এবং শিল্পমন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা বিভাগ, সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া পানি চুক্তি নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। এই পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার সাথে পানি চুক্তি নিয়ে একটি বিবেচনা পূর্ণ নতুন চুক্তি করতে উৎসাহী।

পানি সমস্যার ত্রুটি পূর্ণ দিক কেবল টাকা নিয়ে নয়, বিষয়টি স্বাধীন জাতি হিসেবে সিঙ্গাপুরের টিকে থাকার বিষয়ের সাথে জড়িত। পানি চুক্তিটি ছিল, আসলে সিঙাপুরের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার চুক্তি যা স্বাধীন জাতি হিসেবে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। যদি পানি চুক্তির শর্তাবলী মালয়েশিয়ার ইচ্ছায় পরিবর্তন হয়, তা হলে সিঙ্গাপুরের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে যেতে পারে।

আমরা কত টাকা প্রদান করছি বিষয়টি তা নয়, পানির দাম কত টাকা নির্ধারণ করা হবে বিষয়টি তার উপর নির্ভর করছে। পানি চুক্তিতে বিশেষ শর্ত রয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যখন দাম পুন:বিবেচনা করা হবে, তখন চুক্তি এবং কি ভাবে দাম নির্ধারণ করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। দাম পুন:নির্ধারণ কোন পাগলামোর মধ্য দিয়ে হবে না এবং তা বিশেষ বিক্রেতার ইচ্ছায় নির্ধারণ করা যেতে পারে না। যদি মালয়েশিয়া এই চুক্তির শর্ত পাল্টে ফেলে তা হলে চুক্তির গ্রহণযোগ্যতা কোথায়? সেক্ষেত্রে ভবিষ্যৎে মালয়েশিয়ার সাথে কোন চুক্তি করার বিশেষ কোন মূল্য থাকবে না।

সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মধ্যে চুক্তি করার বিষয়টি ঝুলে যাবার জন্য রাজন রিশায়াকারন মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরকে অভিযুক্ত করেছেন

কেন সিঙ্গাপুর পানির জন্য বেশি টাকা দেবে, যখন এর বিনিময়ে তারা কোন কিছুই পাবে না।

এমনকি মাহাথির নির্ধারিত অপরিশোধিত পানির মূল্য নিজস্ব পদ্ধতিতে পাওয়া সাধারণ অপরিশোধিত পানির চেয়ে কম মুল্যের হবে: কিন্তু মাহাথিরের দাবি অনুসারে কাজ করলে তা সিঙাপুরের জন্য এক নেতিবাচক উদাহরণ হয়ে যাবে। কারণ এর ফলে মাহাথির কারো সাথে আপস করার মানসিকতা রাখবে না, এবং সেটি সিঙ্গাপুরের প্রতি অযৌক্তিক এবং ধৈর্যহীন ব্যবহার হবে, এবং এতে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া উভয়ে পরাজয়মূলক এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।

আমদানি করা পানির উপর সিঙ্গাপুর নির্ভর করার কারণে দেশটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার চিন্তা করতে শুরু করেছে, যাতে নিজেরাই নিজেদের এলাকা থেকে পাওয়া পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারে। তারা এনইওয়াটার নামে এক পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করছে, যা তাদের নিজস্ব দাবীকৃত এলাকার পানি। সম্প্রতি তারা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্লান্ট বা পানি শোধনাগার তৈরি করতে যাচ্ছে, যার মধ্যে দিয়ে সমুদ্রের পানিকে পরিশোধন করে ব্যবহার উপযোগী করা যায়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .