মিশর এবং আলজেরিয়া: একটি ফুটবল খেলার চেয়ে বেশি কিছু

কে বিশ্বাস করতে পারে যে একটি ফুটবল খেলা দু'টি জাতির মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে? কিন্তু এটা সত্যি। এক ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মিশর ও আলজেরিয়ার মধ্যে ধারণাতীত উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। অনেক ব্লগার মনে করেন এই খেলাটি রাস্তায় মারামারি সৃষ্টি করার উপাদান ছাড়া আর কিছুই না এবং আমিও তাই বিশ্বাস করি। অনেকে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে এ কারণে যে, বেশ কটি প্রচার মাধ্যম পুরো বিষয়টিকে ভুল বুঝেছে। তারা এখনো বিশ্বাস করে যে এই খেলার ফলাফল নিয়ে উভয় দেশের জাতীয় দল ও সমর্থক এক অন্যের প্রতি বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে এবং একে অন্যের সাথে লড়াই করছে। ব্লগারদের জগৎ এই খেলা নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা তুলে ধরছে।

মিশরে যে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়, তার পরেই আলজেরিয়ার কিছু সংবাদপত্র জানায় যে মিশরে কিছু আলজেরীয় নাগরিককে খুন করা হয়েছে (যা পরে কায়রোয় অবস্থিত আলজেরীয় দুতাবাস অস্বীকার করে)। এই সব গুজবের ফলে আলজেরিয়ায় অবস্থিত বেশ কিছু মিশরীয় প্রতিষ্ঠান আক্রমণের শিকার হয়: যেমন মিশরীয় বিমান পরিবহন সংস্থার অফিস সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবরে জানা যায় প্রায় ১৫০০ মিশরীয় কর্মীর উপর সেখানে হামলা করা হয় এবং দাঙ্গার সময় তাদের মুক্তিপণ হিসেবে আটকে রাখা হয়।
এই সব গুজব সম্বন্ধে ইহাব ওমর তার এল জার্নালজেইতে লিখেন:

ثم اتت الطامة الكبرى، حينما رأى الاعلام الجزائري ان الادعاء بوجود وفيات في المبارة سوف يدعم الموقف الجزائري بطلب اعادة المباراة، خاصة ان ملف المباراة تحت التحقيق بالفعل في الفيفا، و هكذا خرجت الصحف الجزائرية تتحدث عن نعوش جزائرية وصلت الي مطار الجزائر قادمة من مصر، جثث المشجعين الجزائريين المساكين الذين طاردهم المصريين الهمج في كل شوارع مصر
এরপর এলো সেই দুর্যোগের সময়। এটি শুরু হয় তখন, যখন আলজেরীয় প্রচার মাধ্যম দাবি করে বসে যে তাদের কয়েকজন সমর্থককে মিশরে খুন করা হয়েছে। তারা ভাবল এরকম সংবাদ ছাপালে, তারা মিশরে অনুষ্ঠিত খেলাটির ফলাফল বাতিল করতে পারবে, বিশেষ করে যে খেলাটির উপর ফিফা আগাগোড়া নজর রেখেছিল। আলজেরীয় সংবাদপত্র বলাবলি করছিল আলজেরীয় বিমান বন্দরে আসা লাশের বাক্সের কথা। তারা দাবি করছিল, এই সমস্ত লাশ সেই সব হতভাগ্য আলজেরীয়দের, যারা মিশরের রাস্তায় বর্বর মিশরীয়দের হাতে খুন হয়েছে।

পরবর্তীতে অবশ্য মিশরে অবস্থিত আলজেরীয় রাষ্ট্রদূত অস্বীকার করেন যে, মিশরে কোন আলজেরীয় নাগরিক নিহত হয় নি। কিন্তু ইনফেরাড যেমনটা তার ব্লগে লেখেন, এর পর গুজব ও সংঘর্ষের ঢেউকে থামানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

وأشار السفير حجار إلى أن ما أشاعته صحيفة “الشروق” الجزائرية يوم الأحد عن مصرع سبعة جزائريين بالقاهرة عقب المباراة عار تماما من الصحة، مؤكدا أن هذا الأمر لا يمكن أن يحدث دون علم السفارة، منوها في الوقت ذاته بوجود إصابات بين عدد من الجزائريين نتيجة للتدافع أثناء خروجهم من استاد القاهرة عقب المباراة
يأتي ذلك في الوقت الذي أكدت فيه الخارجية المصرية تعرض العاملين في عدة شركات مصرية بالجزائر لإصابات واعتداءات جماهير جزائرية تقدر بالآلاف، جراء الإشاعات التي روجت لها الصحف الجزائرية لها عقب المباراة
মিশরে আলজেরীয় রাষ্ট্রদূত জনাব হাজ্জার বলেন, “এল চোরউক” খেলার পর কায়রোতে সাতজন আলজেরীয় নিহত হবার সংবাদ দিয়েছে তা মোটেও সত্য নয়। এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই দূতাবাসে সে খবর আসত। তবে খেলা শেষে বেশ কিছু আলজেরীয় কায়রো স্টেডিয়াম থেকে দ্রুত বের হতে গিয়ে আহত হয়।

এর পরই মিশরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, আলজেরিয়ায় কাজ করা অনেক মিশরীয় নাগরিককে হাজার হাজার আলজেরীয় আক্রমণ করেছে। যে সমস্ত আলজেরীয় এই গুজবে বিশ্বাস করেছিল, তারাই এই হামলা চালায়। আলজেরীয় সংবাদপত্র গুলো এইসব গুজব ছড়ানোর কাজ করে।

খেলা চলার সময় এবং খেলা শেষে মিশরীয় ব্লগ জগৎের স্বর অনেক শান্ত ছিল। যেমন ব্লগার নাইল ওয়াইজ লিখেছেন, এটা একটা ফুটবল খেলা মাত্র এবং এ নিয়ে লোকজনের বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়:

مباراة كرة القدم بين الفريق المصرى والجزائرى تحولت وبشكل سخيف الى مايشبه اعلان الحرب بين الدولتين ,فالمباراة مهما كانت اهميتها للفريقين فانها فى النهاية مجرد مباراة نعلم جميعا أن مصر لم تتأهل لكأس العالم من 20 عام والجزائرلم تتأهل منذ 24 عام
মিশর ও আলজেরিয়ার মধ্য অনুষ্ঠিত ফুটবল খেলাটি, দু'টি দেশের মধ্যে যুদ্ধ ঘোষণায় রূপান্তরিত হয়েছে। এটা কেবল একটা ফুটবল খেলা, যদিও দু'টি দলের মধ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মিশর বিগত ২০ বছরের মধ্যে এবং আলজেরিয়া ২৪ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হতে পারে নি।

এবং ইনফেরাড এর মত ব্লগ বিশ্বাস করে যে, হানাহানির সূত্রপাতের জন্য কেবল দু'টি দেশের প্রচার মাধ্যমকে দায়ী করা উচিত। তিনি উভয় দেশের নাগরিকদের খবরের কাগজে যা ছাপা হয় এবং যে সব সংবাদ শোনা যায়, তাতে বিশ্বাস না করতে অনুরোধ করেছেন:

لا تصدق كل مايقال لك عن اعمال عنف ضد المصريين فى الجزائر ولا عن قتل الجزائريين فى شوارع القاهرة ..نعم هناك حالة احتقان يفتعلها الاعلام المتطرف بمساندة حكومات فاسدة وفاشلة هنا وهناك ..حكومات لا تعبر عن الشعوب بل استولت على السلطة بالقوة وتحاول الهاء الشعوب بمباريات الكرة والافلام العارية والصحافة الداعرة
আলজেরিয়াতে মিশরীয়দের উপর আক্রমণের সকল খবরে, অথবা মিশরে কোন আলজেরীয়র নিহত হবার খবরে বিশ্বাস করবেন না। হ্যাঁ, সংবাদ মাধ্যম যে সমস্ত খবর ছাপাচ্ছে, তাতে খারাপ অনুভূতি তৈরি হচ্ছে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার এসব খবরকে স্বাগত জানাচ্ছে। এ ধরনের সরকার জোর করে ক্ষমতায় এসেছে। এই সরকার জনগণের মনোযোগ নিয়ে যেতে চায় ফুটবল, নগ্নতা, এবং ট্যাবলয়েড পত্রিকার দিকে।

ইতোমধ্যে অন্য ব্লগাররা, যেমন আল জার্নালজেই স্বীকার করেছেন যে, উভয় দেশ তাদের প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বিরুদ্ধে হয়তো সামান্য সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল:

في مباراة الذهاب التى اقيمت بين مصر و الجزائر هنالك في التصفيات الجارية حالياً، تم قذف اتوبيس المنتخب بالحجارة في شوارع الجزائر
আলজেরীয়ায় যখন প্রথম পর্বের খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়, তখন মিশরের খেলোয়াড়দের পরিবহণকারী বাসের উপর আলজেরীয়রা পাথর ছুঁড়ে মারে।

তিনি আরো বলছেন:

سهر الجماهير محدثين أكبر قدر من الضجيج و العربدة اسفل نوافذ اللاعبيين المصريين حتى لا ينعمون بالراحة والنوم لمباراة اليوم التالى
সে সময় যেখানে মিশরীয় খেলোয়াড়রা অবস্থান করছিল, তার পাশে আলজেরীয় সমর্থকরা সারারাত ধরে চেঁচামেচি করে, যাতে মিশরীয় খেলোয়াড়রা ঘুমাতে বা বিশ্রাম নিতে না পারে।

এছাড়াও তিনি স্বীকার করেন যে, মিশরীয় সমর্থকরা আলজেরীয়দের চেয়ে কম যায় নি এবং কায়রোরতে অনুষ্ঠিত খেলার সময় তারা ঠিক একই কাজ করে।

و لنصل الي المحطة الاخيرة، الي مباراة السبت الماضى، بالطبع كان هنالك تجاوزات جرت من الطرف المصرى
এবং শনিবারের খেলার সময় নিশ্চিতভাবে বলা যায় মিশরীয় সমর্থকরা ক্ষমতার কিছু অপব্যবহার করছে।

এবং সে সময় যা ঘটানো হয় সে বিষয় সম্বন্ধে ডেইলি বারিদ নিচে লিখেছে:

هناك أمر مؤكد بشأن أعمال الشغب من الجانبين المصري و الجزائري فهم ليسوا ملائكة والكل يعلم هذا ,ولكن من يفصل في هذه الأعمال هي السلطات وليس أحد آخر و يجب أن تتحمل السلطات مسؤولياتها الكاملة إذا كان هناك وفيات كما أشيع ولا أتمنى ذلك فالوحيد المسئول عن هذا الأمر هو القضاء و التعامل يكون كالتعامل مع أي قضية إجرامية ودون التوسع إلى أمور أخرى يجب على السلطات في كلى البلدين محاسبة جميع الوسائل الإعلامية غير النزيهة و التي ساهمت بشكل فاضح و شرير في إلهاب مشاعر الحقد بين أفراد الشعبين
নিশ্চিত ভাবে বলা যায় মিশর ও আলজেরীয় সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল, তারা সন্ন্যাসী নয় এবং সবাই তা জানে। কিন্তু এই সমস্ত বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার ক্ষেত্রে সরকার ছাড়া আর কেউ দায়ী না। যদি সেখানে খুনের ঘটনা ঘটে, তা হলে আমি বলবো বিচারের মাধ্যমে তাকে মোকাবেলা করা উচিত এবং সাধারণ অপরাধের ক্ষেত্রে যে ভাবে ঘটে থাকে সেভাবেই তাকে মোকাবেলা করা উচিত। যেনতেন ভাবে এসব ঘটনাকে মোকাবেলা করা উচিত নয়। উভয় দেশের সরকারের উচিত, যে সমস্ত প্রচার মাধ্যম অনৈতিকভাবে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে, তাদের বিচার করা।

ঘটনা হচ্ছে এই সমস্ত ঘটনাকে সূচনা হিসেবে দেখা উচিত, যা গত বৃহস্পতিবার সুদানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিশর এবং আলজেরীয় ফুটবল দল সেখানে প্লে অফ ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়, যে খেলার জয় পরাজয় নির্ধারণ করে, কোন দল সামনের বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় চূড়ান্ত পর্বে খেলতে যাবে।

অনেক ব্লগার ধরে নিয়েছিল যে সুদানে মিশরীয় সমর্থকদের উপর আক্রমণ হতে পারে এবং লোকমেট ইশ সেখানকার মিশরীয় খেলোয়াড় ও সমর্থকদের নিরাপত্তা রক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগের আহ্বান জানান:

بعد أخبار صحيفة الخبر الجزائرية المفبركة والكاذبة
مطلوب حماية أمنية خاصة للفريق القومى المصرى،وللجماهير المصرية المرافقة
আলজেরীয় সংবাদপত্রে যে সমস্ত ভূয়া সংবাদ ছাপা হয়েছে, বিশেষ করে আল খাবারে, তার কারণে মিশরীয় খেলোয়াড় ও সমর্থকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর দরকার হয়ে পড়ে।

এবং সুদান তার ১৫,০০০ সৈনিকের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তা দেবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু নিরাপত্তার জন্য এই পরিমাণ সৈন্য যথেষ্ট ছিল না। জেইনোবিয়া তার ব্লগে লেখেন সেদিন খার্তুমে কি ঘটেছিল:

আলজেরিয়ার কাছে পরাজিত হবার পর গতকাল অনেক মিশরীয় মন খারাপ করে ঘুমাতে যায়। এটা এমন এক খেলা যেখানে আমরা জানতাম যে আমরা হারতে পারি এবং এর মানে এই নয় সবকিছুর শেষ হয়ে যাওয়া, কিন্তু যখন অন্যরা ঘুমাচ্ছিল, তখন সকল মিশরীয় জেগে ছিল এবং আমি তা বলতে পারি, ভোর পর্যন্ত টিভিতে তারা দেখে যে খার্তুমের রাস্তায় কি ভাবে তাদের সমর্থকদের উন্মাদ আলজেরীয় গুন্ডারা তাড়া করে ফিরছিল।

সেদিন রাতে হাজার হাজার মিশরীয় খার্তুমের হোটেল বা রেস্তোরায় অথবা মিশরীয় কোম্পানীর প্রধান অফিসের ভেতরে লুকিয়ে রাত কাটায়। এমনকি তারা, আলজেরীয় সামরিক বাহিনীর বিমানে করে আসা আলজেরীয় গুন্ডাদের হাতে মারা পরার ভয়ে সাধারণ সুদানীদের গৃহে আশ্রয় নেয়।

আলজেরীয়দের স্বাক্ষ্য অনুসারে সুদানী স্টেডিয়ামে যে সমস্ত আলজেরীয় সমর্থকদের দেখা গিয়েছিল তারা সাধারণ আলজেরীয় ফুটবল সমর্থক নয়, যাদের তারা মাঠে দেখে থাকে। এমনকি তারা বিখ্যাত আলজেরীয় সঙ্গীত “১.২.৩ আলজেরীয়া” গাইছিল না। তারা আসলে পেশাদার গুন্ডা। তারা তিনদিন ধরে উম দারমান বাজার খালি করে চাকু, সুইস নাইফ (বিশেষ ধরনের চাকু), এবং তলোয়ার কিনেছে। আমাদের অবশ্য তাদের বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, তবে আমরা কল্পনা করতে পারি নি ব্যাপারটা এতদুর গড়াবে, বিশেষ করে যখন আমরা এই খেলায় হেরে গেছি (মিশর ০-১ গোলে আলজেরিয়ার কাছে পরাজিত হয়)। এছাড়াও অনেক মিশরীয় এই ভয়ে সেখানে খেলা দেখতে যায়নি যে সেখানে ভয়ংকর কিছু একটা ঘটবে।

আলজেরীয় গুন্ডারা আমাদের সমর্থকদের বাস এবং কার, পাথর ও বোতল নিয়ে ধাওয়া করে, বাস্তবে বেশ কয়েকজন মিশরীয় আহত হয়েছে। খার্তুম বিমান বন্দর সম্বন্ধে কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না। যদিও সত্যিই সে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে, কিন্তু তারপরেও সেখানে দারিদ্রের ছাপ রয়ে গেছে।

সারারাত ধরে মিশর শুনতে পায় যে, তাদের তারকা নাগরিক, সাংবাদিক, সংসদ সদস্য এবং সাধারণ সমর্থকরা আতঙ্কিত হয়ে ফিরে আসছে। তারা খার্তুমের রাস্তায় আটকা পড়েছিল এবং জানত না কোথায় যেতে হবে।

ভদ্রমহিলা এছাড়াও মারাওয়া আবদেল কারিম নামের এক মিশরীয় ভদ্রমহিলার কথা উল্লেখ করেন, যে এই ঘটনায় তার একটি চোখ হারিয়েছে। তিনি একই ঘটনার সাথে তুলনা করে দেখিয়েছেন যে, এখন থেকে ২০ বছর আগে আলজেরীয় ফুটবল সমর্থকদের হাতে আরেকজন মিশরীয় তার চোখ হারিয়েছিল:

আপনাদের জানা উচিত যে মারাওয়া আবদেল করিম নামের মিশরীয় এক নাগরিক তার চোখ হারিয়েছে। এটা দেখে মনে হচ্ছে যে চোখের ভেতরে কিছু একটা আছে এবং ২০ বছর আগে ১৯৮৯ সালে এক মিশরীয় সমর্থকের উপর বৌলমি একই ঘটনা ঘটায়।

এছাড়াও বানি আদম মা ওয়াকফা এল তানফিজ সুদানে কি ঘটেছে সে বিষয়টি এখানে লিখেছে। সে লিখেছে অনলাইনে যে সমস্ত ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল তা যেন মিশরীয় সমর্থকদের সতর্ক করার জন্য। সেখানে দেখা গেছে চাকু হাতে আলজেরীয় সমর্থকরা ঘোরাফেরা করছে:

أولا أعتذر عن سوء فهمي للموضوع و قيامي بمبادرة تعمل على نبذ التعصب و للأسف كتبت عنها الجرائد الجزائرية .. مما يجعلني أشعر بالعار الآن
لا أعرف كيف لم أصدق كلامهم .. فقد شاهدت بعيني فيديو أسمه ( تحذير لكل مصري ) يقول فيه كل ما سوف يحدث و أنهم سوف يرسلون بلطجيه و لصوص و مسجلين خطر للانتقام من المصريين
بعد فهمي للموضوع أري أن الحكومة الجزائرية و سفيرها في مصر مشارك في المجزرة التي حدثت
আমি দু:খিত যে পুরো ঘটনাকে আমি ভুল বুঝেছিলাম এবং আমাদের ও আলজেরীয় পত্রিকার মধ্যে যে আক্রমণাত্ব লেখা প্রকাশ পাচ্ছিল তা থামানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি এখন এই বিষয়ের জন্য সত্যিই বেদনা অনুভব করছি।

জানি না কেন, তারা যা বলছে আমি তা বিশ্বাস করি নি। আমি তাদের ভিডিও [ ইউটিউবে] দেখেছি, যেখানে তারা বলছে “সকল মিশরীয়দের জন্য এটি এক সতর্ক বার্তা”। সেখানে যা কিছু ঘটানো হবে তার বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে এবং তারা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে, যাতে মিশরীয়দের উপর প্রতিশোধ নেওয়া যায। এখন আমি দেখতে পাচ্ছি আলজেরীয় সরকার এবং তাদের রাষ্ট্রদূত এই গণহত্যার সাথে জড়িত ছিল।

তিনি বলেই চলেছেন:

أرسلت مصر خير أبنائها لمشاهدة المباراة لإضفاء نوعا من السلام و الحب ..
فمن في الوطن العربي كله ؟ لا يسمع محمد فؤاد ؟؟ من في الوطن العربي كله لا يحترم الفنانة فردوس عبد الحميد . من الوطن العربي كله لم يضحك على كوميديا الفنان احمد بدير ؟؟ و غيرهم و غيرهم
أنهم رموز مصر و رموز الوطن العربي كله
بينما أرسلت الجزائر أبنائها من قاطعين الطرق و مسجلين الخطر و غيرهم و نقلتهم على قواتها الحربية ؟؟ كما أكدت وسائل الإعلام أمس أن الجزائر كانت تستخدم الطائرات الحربية ؟؟؟
أذن الجزائر تكره مصر ؟؟
نعم
الجزائر تكره مصر …. الجزائر أعلنت الحرب و نحن كنا نقول وردة لكل جزائري
هل رأيتم شعب يتصرف بساذجة مثلا !! بالطبع لا
মিশরীয়রা সমাজের মধ্যে যারা সেরা ব্যক্তিত্ব, তাদের এই খেলা দেখতে পাঠিয়েছিল, যা ছিল ভালোবাসা ও শান্তির জন্য এক আহ্বানমাত্র। আরব বিশ্বের কে না মুহাম্মদ ফুয়াদ [একজন মিশরীয় গায়ক] এর গান শুনেছে, অথবা আরব বিশ্বে এমন কেউ নেই যে, ফারদৌস আবদেল হামেদকে [মিশরীয় অভিনেত্রী] সম্মান করে না। অথবা আহমেদ বেদিয়ার-এর কৌতুক নকশায় হাসেনি এমন কোন আরব কি আছে, এবং এ রকম আরো অনেকে সেখানে গিয়েছিল।
তারা সারা আরব জাহানের আদর্শ।

অন্যদিকে যখন আলজেরীয়া তাদের যুদ্ধবাজ ব্যক্তি এবং অপরাধীদের সুদানে পাঠাল এবং আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, সে সময় আমরা, মিশরীয়রা প্রতিটি আলজেরীয় নাগরিকের জন্য গোলাপ বর্ষণের কথা বলেছি।

আমাদের মত কোন নির্বোধ কি কেউ রয়েছে? নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, না।

এখন সরকারের কথায় আসি, আর সুদানে যা ঘটেছিল তার জন্য মিশরীয় সরকার উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। কারণ মিশরীয়রা সুদানের রাস্তায় বিপদে পড়ে গিয়েছিল।

জেইনোবিয়া মিশরীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে এখানে লিখেছে:

এখন পর্যন্ত সরকারের নেওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপটি হল আলজেরিয়ায় অবস্থিত মিশরীয় রাষ্ট্রদুতকে ডেকে পাঠানো। আলজেরীয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে গড়াচ্ছে। মিশরের কোথাও আলজেরীয় রাষ্ট্রদূতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি মনে করি সে তার কর্মচারীদের নিয়ে অফিস গুটাচ্ছে।

জামালেকের ব্রাজিল স্ট্রীটে অবস্থিত আলজেরীয় দূতাবাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল এবং ডেনমার্ক দূতাবাসের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে তুলনীয়।

ভোরবেলা ফেসবুকের মাধ্যমে আলজেরীয় দূতাবাস আক্রমণের আহ্বান জানানো হয়।

মিশরীয় ফুটবল সংস্থা সরকারি ভাবে একটি বিবৃতি জারী করেছে, তাতে তারা মিশরীয়দের আক্রমণের ঘটনা অস্বীকার করেছে এবং আমাদের সমর্থকের উপর আক্রমণের ঘটনা স্বীকার করেছে। আশা করা হচ্ছে যে আমরা (মিশরীয়রা) ফিফার কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ করব। উত্তর আফ্রিকার ফুটবল সংঘ থেকে ইএফএ (মিশরীয় ফুটবল সংস্থা) তার নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মিশরীয় এক চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান “দি এরাবিক কোম্পানী ফর সিনেমাটিক প্রোডাকশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন” ঘোষণা দিয়েছে তারা আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত সকল চলচ্চিত্র উৎসব বয়কট করবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .