- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারত: কৃষাণীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়ছে

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, উন্নয়ন, পরিবেশ, লিঙ্গ ও নারী, কনভার্সেশন্স ফর এ বেটার ওয়ার্ল্ড (আরও ভালো এক পৃথিবীর জন্যে কথোপকথন)

ভারতীয় একদল নারী দেখিয়েছে যে লিঙ্গীয় বৈষম্য ও অর্থনৈতিক শ্রেণীতে নিচের দিকে অবস্থান করা সত্ত্বেও তারা জলবায়ু পরিবর্তনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে এবং যে সমস্ত উপাদান পরিবেশ দূষণ করে, তারা সেগুলো নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারে।

পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে ভারতে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে যে জনগোষ্ঠী রয়েছে- সেই বিশেষ সম্প্রদায়ের লোক ও ভারতীয় নারীরা এর ফলে সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। যেমন, কৃষকদের উপর খরার মারাত্মক প্রভাব [1] এবং শিশু ও নারীদের উপর তার যে সরাসরি প্রভাব পড়ছে অক্সফাম ইন্ডিয়া ব্লগ [2] সে সম্বন্ধে মন্তব্য করছে।

গত ১২ বছর ধরে, ভারতে বছরে গড়ে প্রায় ৫০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারীদের দশভাগের এক ভাগই কৃষাণী। (…) প্রতি বছর দেশটির বিপুল সংখ্যক কৃষক খাবারের সন্ধানে শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। এবং পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন শহরগুলোতে বিপুল পরিমাণে নারী ও শিশু পাচার শুরু হয়।

পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে লিঙ্গ একটি বিষয়:

সারা বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়, তার শতকরা ৫০ শতাংশ নারীরা উৎপাদন করে [3]ভারতে শতকরা ৮৪ শতাংশ নারী কৃষিকাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত [4] এবং পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, নারীরা তার সবচেয়ে বড় শিকার। এছাড়া লিঙ্গীয় বৈষম্য, পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে নারীদের খানিকটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ব্লগার প্রিসিল্লা স্টাকি একজন পিএইচডিধারী গবেষক। তিনি তার ব্লগ দিস লাইভলি আর্থে নির্দেশ করেন, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে [5]:

নারীর প্রতি বৈষম্য, পরিবেশ পরিবর্তনে মেয়েদের অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে এক বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ভারতের নারীরা বের করেছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের শস্য উৎপাদনের পরিমাণ কমে অর্ধেক হয়ে এসেছে এবং একই কারণে শস্যের গুণগত মান হারিয়ে যাচ্ছে। শস্যের মান খারাপ হয়ে আসা ও নারীদের প্রতি বৈষম্যের কারণে মেয়েদের স্বাস্থ্য ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

কৃষাণী সিতা দেবী এই এ রকম এক ঘটনার উদাহরণ। তার ভাষ্য মতে, “যখন চাষের সময় বৃষ্টি হয় না, তখন মেয়েদের জমিতে শস্য জন্মানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সে সময় আমাদের শরীরে পুষ্টির জোগান ঘটে না, কারণ পরিবারে মেয়েরা সবার শেষে খাবার খেতে বসে। এর ফলে মেয়েদের অনেকেই রক্তশূন্যতায় ভুগছে”। তিনি ব্লগ ফাইন্ড ইয়োর ফিটে পোস্ট করা এই ভিডিওতে [6] এ কথাগুলো বলেন।

মেয়েরা যখন লড়াই করা শুরু করে:

ভারতীয় নারীরা কেবল পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে নিজেদের ধ্বংস হয়ে যাবার জন্য অপেক্ষা করছে না, তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুরু করে দিয়েছে। যা ভিডিওর দ্বিতীয় অংশটি দেখা যাচ্ছে। নারীরা বেশ কিছু উদ্ভাবক কৌশল আবিষ্কার করেছে, যাতে তারা বিশ্বের উষ্ণতা বাড়া দুর করতে পারে এবং নিজেদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়।

ইন্টার প্রেস সার্ভিসের এই প্রবন্ধটি সে সমস্ত তথ্য জানাচ্ছে:

ভারতে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের [7] ক্ষেত্রে কৃষি শতকরা ২০ শতাংশ পরিমাণ দায়ী। ধান ক্ষেত ও গবাদি পশুর মল থেকে তৈরি হওয়া মিথেন গ্যাস এবং সার থেকে তৈরি হওয়া নাইট্রাস অক্সাইড মূলত: পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। জাতিসংঘের আন্ত:সরকার নিয়োজিত পরিবেশ পরিবর্তন বিষয়ক একদল বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির (আইপিসিসি) ২০০৭ সালে প্রণীত এক তথ্যে এ কথা জানা গেছে। বর্তমানে ভারতে বৃষ্টিপাতের মৌসুমে কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে, প্রবল বৃষ্টিপাত আগের চেয়ে কম ঘটে, যা চাষের ক্ষেত্রে এক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে।

পরিবেশ পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নারীরা যে সক্রিয় ভাবে লড়ছে, তার অন্য এক উদাহরণ হল বিদাকান্নে গ্রামের নারীরা [8]। সেখানে মেয়েরা শস্য যেমন তিসি, ছোলা এবং মটরশুঁটি, গম এবং অন্য শিম জাতীয় শস্য উৎপন্ন করছে। সূর্যমুখী চাষের মাঝামাঝি সময়ে তারা এসব চাষ করছে এবং কোন বাড়তি পানি ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা ছাড়াই তারা চাষের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যেমন তারা চাষের জন্য জমিতে কোন রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করছে না।

এই ধরনের চাষ পদ্ধতি দলিত রমণী অথবা স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের জন্য খুবই সহায়ক। দলিতরা ভারতীয় বর্ণপ্রথায় সবচেয়ে নীচু শ্রেণীতে অবস্থান করে। একই পদ্ধতিতে মেডাক জেলার প্রায় ৭৫টি গ্রামের নারীরা এক হয়ে শস্য বিক্রি করছে। একই সাথে তারা গরিব পরিবারগুলোর জন্য উদ্বৃত্ত খাবার জোগাড় করছে। এর বাইরে তারা পরিবেশ দূষিত করে এমন উপাদান এবং ক্ষতিকর উপাদানের ব্যবহার করার পরিমাণ কমিয়ে আনছে।

এইসব কাজে মেয়েদের নেতৃত্ব প্রদান ও তাদের এই প্রচেষ্টা অনলাইনের সম্প্রদায়ের নজর এড়ায়নি। শিব প্রসাদ ভট্টাচার্য ইনডিয়া টুগেদার [9]-এ মন্তব্য করেছে:

আপনার প্রবন্ধের জন্য ধন্যবাদ, সেখানে আপনি নারীদের কাজগুলো তুলে ধরেছেন। তারা যে পরিবেশ পরিবর্তন রোধে সারা পৃথিবীর জন্য এক আদর্শ (…) তা উপস্থাপন করেছেন। খাদ্যশস্য মানুষের মৌলিক এক অধিকার, তা কর্পোরেট বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিষয় নয়। খাদ্যশস্য মানুষের জাতীয় পণ্য, ধরিত্রীমাতা খাদ্যশস্যকে লাভের টাকা বের করার বিষয় মনে করে না। খাদ্যশস্যের উপর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের লাভের হিসেব, পৃথিবীকে আরো বেশি খাদ্য সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। আপনার মাধ্যমে আমি সেই সমস্ত নারীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি, যাদের কাজ পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং কৃষক পরিবারের উপর কোন খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করছে না। তারা প্রমাণ করেছে যে এ ভাবেও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন লাভজনক ও টেকসই করা যায় এবং এ ভাবে চাষের মধ্য দিয়ে সবাইকে খাওয়ানো সম্ভব।