শ্রীলন্কা: সেনানায়কের পদত্যাগ

জেনারেল শরথ ফনসেকা, ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে

জেনারেল শরথ ফনসেকা, ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে

বর্তমানে শ্রীলন্কায় যে ব্যক্তিটিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে তিনি হলেন দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান জেনারেল গার্দিহেওয়া শরথ চন্দ্রলাল ফনসেকা। তিনি কিছুদিন আগে পর্যন্ত সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। কিছুদিন আগে যে সামরিক অভিযানে শ্রীলন্কায় লিবারেশন টাইগার অফ তামিল ইলম (এলটিটিই) ওরফে তামিল টাইগাররা পরাজিত হয়েছে এবং তামিল বিদ্রোহের অবসান ঘটেছে, তার মূল পরিকল্পনাকারী তিনি। গৃহযুদ্ধের পর ফনসেকা আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, যখন নতুন ভাবে তৈরি হওয়া এক সরকার বিরোধী জোট শ্রীলন্কার আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্যে তাকে প্রার্থী ঘোষণা করে।

বাইলামান ব্লগ জানাচ্ছে, তামিল টাইগারদের পরাজিত করার পর রাষ্ট্রপতি মাহিন্দ্রা রাজাপাক্ষে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ফলে নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে ফনসেকাকে দাঁড় করানো হচ্ছে। “আগামী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শ্রীলন্কার প্রধান বিরোধী দল (ইউএনপি) একটি জোট গঠন করে, যাতে তারা উক্ত নির্বাচনে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। প্রধান বিরোধী দল ইউএনপির নেতৃত্বে তৈরি হওয়া জোট, নির্বাচনে ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে লড়বে”।

বাইলামানের মতে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থীতা নিয়ে বেশ প্যাঁচ রয়েছে:

মজার সংবাদ হচ্ছে প্রধান বিরোধী দলের নেতা রানিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, যদি নির্বাচনে তার দল জয়লাভ করে তাহলে তিনি শ্রীলন্কায় রাষ্ট্রপতির শাসন বিলুপ্ত করবেন। এখন এই শর্তে ফনসেকাকে বিরোধী জোটের নেতার সাথে একমত হতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রীলন্কার প্রস্তাবিত শাসন ব্যবস্থায় ফনসেকার ক্ষমতা ও ভূমিকা অনেক কমে আসবে।

সানডে লিডার পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে ডিজোন জানাচ্ছে যে:

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ফনসেকা বলেছেন যে তিনি কোন শর্তে রাষ্ট্রপতির শাসন পদ্ধতি বিলুপ্ত করবেন না। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বিলুপ্ত করার অঙ্গীকার ইউনাইটেড ন্যাশনাল এলায়েন্সের এবারের নির্বাচনী প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

যদিও শ্রীলন্কায় আগামী দুই বছরের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবার কথা নয়, তবে গুজব রয়েছে যে ক্ষমতা থাকা রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপাক্ষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে চাইছেন। তার প্রতি বর্তমান যে জনসমর্থন রয়েছে, তার সুবিধা তিনি নিতে চান। তাই তিনি ২০১০ সালের মধ্যে নির্বাচন দিতে চান। এই নিয়ে শ্রীলন্কার ব্লগ জগৎে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং ধেশাপালুয়া সাতটি কারণ বের করেছে, যে সব কারণে জেনারেল শরথ ফনসেকা শ্রীলন্কার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়াই করবেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ফনসেকাকে শ্রীলন্কার সামরিক বাহিনীর পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, কারণ সরকার এ বছরের ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।

সুরানিমালা জানাচ্ছে, ঘটনাটি আজই ঘটেছে:

খুব বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রাক্তন সর্বাধিনায়ক জেনারেল শরথ ফনসেকা তার পদত্যাগপত্র আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরো জানা গেছে যে জেনারেল ফনসেকা পদত্যাগ পত্রে পদত্যাগের ১৬ টি কারণ উল্লেখ করেছেন।

ফনসেকার পদত্যাগের আরো একটি কারণ থাকতে পারে। এশিয়া টাইমসের সুধা রামচন্দ্রন জানাচ্ছে কি ভাবে শ্রীলন্কার গৃহযুদ্ধে জয়লাভের কৃতিত্ব প্রদানের ব্যাপারে বিভক্ত হয়ে গেছে তার কথা। গৃহযুদ্ধে জয়লাভের পর রাজাপাক্ষে ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ফনসেকাকে যুদ্ধ জয়ের কৃতিত্ব দিতে অস্বীকার করে এবং এমনকি তারা এমন এক প্রচারণা শুরু করে যাতে প্রমাণিত হয় “রাজাপাক্ষে শ্রীলন্কার রক্ষাকর্তা”।

ফনসেকা এই অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন, তিনি বিশেষ এই সামরিক অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি চতুর্থ ইলাম যুদ্ধের (তামিলদের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক অভিযানের নাম) চূড়ান্ত অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই অভিযানের ফলে তামিল বিদ্রোহের অবসান ঘটে এবং এলটিটিই নামক গেরিলা সংগঠনের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।

রাজাপাক্ষে সরকার যুদ্ধে জয়ে ফনসেকার অবদানকে অস্বীকার করতে শুরু করে। রাজাপক্ষে এবং তার ভাই গোটাভায়া রাজাপাক্ষে যিনি শ্রীলন্কার প্রতিরক্ষা সচিব, দুজনে মিলে দাবী করেন যে এলটিটিইর বিরুদ্ধে জয় তাদের নির্দেশনায় ঘটেছে। শ্রমমন্ত্রী মরভিন সিলভা সম্প্রতি জনতার এক শোভাযাত্রা বলেন, ফনসেকা যেন এই যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব নিজের একার বলে দাবী না করে।

ফনেসকা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীন কার্ড ধারী ব্যক্তি এবং সম্প্রতি তিনি এক বিতর্কের মুখে পড়েন। লংকা পলিটি জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় “গতবছরের শেষ পর্যায়ের অভিযানে তার বিরুদ্ধে আনা যুদ্ধপরাধের অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে উদ্যত হয়”। শ্রীলন্কার সরকার এ বিষয়ে এই বলে আপত্তি জানায় যে, “জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কোন তথ্য তৃতীয় কোন পক্ষকে সরবরাহ করার অধিকার জেনারেল ফনসেকার নেই।

এছাড়াও এই ব্লগার ফনসেকার সম্ভাব্য প্রার্থীতার ওজন পরিমাপ করছে। লংকা লিবারেশন মনে করে যে এটা বিরোধী দলীয় নেতা রানিল বিক্রমাসিংহের (ইউএনপি) একটি কুট চাল:

যদি রানিল বিরোধী দলের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে চান তাহলে তিনি ফনসেকার জয়ের আশা করেন না।

তিনি কেবল ইউএনপির প্রধান হিসেবে তার নিন্মে ধাবমান রাজনৈতিক অবস্থান বাঁচানোর জন্য এই কাজটি করেছেন। তিনি সংসদ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের ইউএনপি কর্মীদের আবার চাঙ্গা করে তুলতে চান। এটি তিনি করতে চান নির্বাচনে দলের আরেকটি বিপর্যয়কর প্রদর্শনী ঠেকানোর জন্য এবং তিনি আশা করেন নির্বাচনে ফনসেকার পরাজয়ের পর তিনি দলের প্রধান হয়ে থাকতে পারবেন (অথবা আদৌ যদি কোন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন না হয়)।

ইনডি.কা-এর ইন্দ্রজিৎ সমরজিভা এই পরিস্থিতির দুর্ভাগ্যজনক দিকটি প্রদর্শন করছে:

ইউএনপি ঐতিহ্যগতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিজেদের সাথে যুক্ত করে (যদিও ইউএনপি সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এক দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হয়েছিল)। এখন তারা উত্তরের তামিলদের বেছে নিতে বলছে দুজনের একজন প্রার্থীকে, যাদের একজন তাদের উপর বোমা ফেলেছিল এবং আরেকজন এই বোমা ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটেছে।

গ্রাউন্ডভিউজ-এর লায়নাল বোপাজ শংকিত যে আরেকজন সামরিক বাহিনী প্রধান একজন গণতান্ত্রিক নেতায় রূপান্তরিত হচ্ছে এবং তার ফলে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে:

এই পরিস্থিতিতে এমন কোন নিশ্চয়তা কি রয়েছে যে মধ্যবিত্তের দ্বারা নির্ধারিত গণতান্ত্রিক শ্রীলন্কায় কবে দেশটি একজন সামরিক সেনাশাসককে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা বন্ধ করবে? কবে একবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার পর উক্ত রাষ্ট্রপতি আজীবনের জন্য ওই পদে থেকে যেতে চাওয়া বন্ধ করবে? এই ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কি ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .