গত অক্টোবরে বেশ কয়েকটি হাঙ্গেরীয় আর সার্বীয় সংবাদ মাধ্যম প্রিস্টিনার দৈনিক কোহা দিতোরের [1] কথা উল্লেখ করেছে যে তাদের কাছে মাসের প্রথম দিকে হওয়া বেআইনী সীমান্ত পারের ঘটনা সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য আছে [2]। সার্বিয়ায় অবস্থিত হাঙ্গেরীর একটা ওয়েবসাইট মাগিয়ার সো [3] লিখেছে কোহা দিতোরোর উদ্ধৃতি দিয়ে যে, সন্দেহভাজন কয়েকজন কসোভো-আলবেনীয়কে পাচারের জন্য, ইসমেত আর কে গ্রেপ্তার করা হয় কসোভস্কা মিত্রোভিচাতে [4]। বেশীর ভাগ সংবাদের রিপোর্টে বলা হয় যে ১৫ জন অনুপ্রবেশকারী তিশজা [5] নদীতে ডুবে মারা গেছেন যখন তারা সীমান্ত পার হতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বেঁচে যাওয়া একমাত্র পূর্ণবয়স্ক, আগ্রোন রামা, স্বীকার করেছেন যে দলে প্রায় ১৯ জন মানুষ ছিল (সূত্র [6])।
দক্ষিণ হাঙ্গেরীর সংবাদ সাইট দেল্মাগিয়ার.হু [7] তে প্রকাশিত প্রথম দিককার একটা রিপোর্টে [8] ১৫জন বেআইনী অভিবাসী হাঙ্গেরী- সার্বিয়ার সীমান্তে তিশজা নদীতে গায়েব হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল। গত ১৫ই অক্টোবর নদী পার হওয়া দলের একজন সদস্য, ২ বছরের ছেলে আর ৩ বছরের মেয়ের বাবা, সীমান্তের গ্রাম রোশকের [9] এক পে ফোন থেকে ফোন করে পুলিশকে জানান এ কথা।
সার্বিয়া ইনসাইড [11] এর ব্লগার সাবা বালিন্ত এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন [12] দেল্মাগিয়ার.হু এর রিপোর্টের উপর আলোকপাত করে আর প্রস্তাব করেছেন হাঙ্গেরী আর কসোভোর মধ্যকার সম্পর্ক তিনি ব্যক্তিগত ভাবে তদন্ত করবেন:
বাচ্চা, বাচ্চা, বাঁচান!
এই কথাটিই তিশজা নদীতে বার বার বলছিলেন কসোভোর আলবেনীয় লোকটি, যার বাচ্চারা ঠান্ডায় জমে প্রায় মারা যেতে বসেছিল। তিনি সে রাত্রে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে পালাতে চেয়েছিলেন। যদি কেউ এই গল্প না জেনে থাকেন, আমি ছোট করে আবার বলছি…
এই অদ্ভুত লোক ভালো অর্থ দেবে বলে এসেছে আদম পাচারকারীকে, এখানে এটা বেশ চলমান পেশা। আর যা হওয়ার হবে, তিনি জেগেদের নতুন পৃথিবীতে পাড়ি দেবেন। তিনি এটা ভাবেন নি যে রাত্রে তার বাচ্চাদের উপরে ঠান্ডা বৃষ্টি পড়বে, তারা যে ক্লান্ত হয়ে পড়বে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই ধরনের যাতায়াতের ফলে। আমাদের এই লোক যখন দেখলেন যে বাচ্চাদের অক্টোবরের বৃষ্টির মধ্যে রেখে দিয়ে কত বড় বিপদের মধ্যে তিনি পড়েছেন, তখন সাহায্য চাইতে গেলেন।
বাচ্চাগুলোকে যখন পাওয়া গেছে তারা তখন প্রায় নিশ্বাস নিচ্ছিলই না – ২ বছর আর ৩ বছরের দুই জন, আমি কেবলমাত্র জানাচ্ছি! তারা একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। সীমান্ত অতিক্রমকারীর এক বাচ্চা কোমাতে ছিল, কিন্তু তার পরে ভালো হয়েছে। তারা অক্ষত বেরিয়ে এসেছে কিন্তু ঘটনাটি দু:খজনক। দু:খজনক আর আপনাকে ভাবায়। অন্তত কিছু প্রশ্ন এখানে উত্থাপিত হয়।
কি কারনে স্বাধীন আর মুক্ত কসোভো প্রজাতন্ত্র থেকে, শত শত স্বাধীন আর মুক্ত নাগরিক পালাচ্ছে? হয়তো অপকর্মের উপরে নির্মিত ‘গণতন্ত্রে’ বাস করা সহজ না? আর একটা স্বাধীন ইউরোপের দেশ দেখান যেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে ডজন ডজন লোক বেআইনিভাবে বের হচ্ছে! সম্ভবত: যেসব দেশ বল্কানের কলম্বিয়াকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল, তারপরে এই দেশকে দেশ হিসেবে দাঁড় করাবার খুব বেশী চেষ্টা করছে না? যদি ২৯ বছরের একজন লোক দুটো ছোট বাচ্চা নিয়ে মধ্য অক্টোবরে রাতের অন্ধকারে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে, তাহলে আমাকে বলতে হয়, না।
পরের পর্বে আমরা দেখবো যে কসোভোর বড় ইউরোপীয় বন্ধু, হাঙ্গেরী কি করেছে যাতে সেখানের মানুষকে পশ্চিমে পালিয়ে যেতে না হয়।
বল্কান ইনসাইট [13] ব্লগ জানিয়েছে যে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের আইনের একটা মিশন ইউলেক্স [14], কসোভো পুলিশ আর হাঙ্গেরীর কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রতি অভিবাসী পরিবারকে হাঙ্গেরীতে ঢোকার জন্য ৬০০০ থেকে ৮০০০ ইউরো দিতে হয়। মিডিয়া কোহা ডিতোরকে উদ্ধৃতি দিয়ে যা বলেছেন তার পরিপন্থী হিসেবে বল্কান ইনসাইট জোর দিয়ে বলেছে, এখনো কোন গ্রেপ্তার করা হয় নি।
সোমবারের মধ্যে, মাগিয়ার সো [3] রিপোর্ট করেছেন যে তিশজা নদীর হাঙ্গেরীর দিকের সীমান্তে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, আর সার্বিয়ার সীমান্তে দুইজন নারীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। একজন ছিল আগ্রোন রামার স্ত্রী আর তার বাচ্চাদের মা।
হাঙ্গেরীর ইমিগ্রেশন অফিসার গাবোর নাগি [15], তার ব্লগে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, একই বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন যে কসোভো থেকে আলবেনীয়রা কেন মরিয়া হয়ে পালাচ্ছে:
অবশ্যই এমন ঘটনায় প্রশ্ন করা যায়, যে বাবা মা এত অসাবধান হয়ে তাদের বাচ্চাদের ‘ বড় দুনিয়াতে’ কেন নিয়ে আসবে, নাকি কসোভোর পরিস্থিতি এতই খারাপ? যদিও বলা দরকার, কসোভো থেকে তাদেরকে কেউ তাড়াচ্ছে না, যেহেতু তারা তাদের ‘স্বাধীনতা অর্জন করেছে’। অন্তত কাগজে। আর এটাও ভোলা যাবে না যে এদেরকে সব সময় আদম পাচারকারীরা মোটা পরিমানের ইউরোর বদলে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা যখন বিবেচনা করি যে তারা হাঙ্গেরীতেও পালিয়ে যেতে চায়না, তাহলে এই ব্যাপারে আমারও ঋণাত্মক বক্তব্য আছে।