থাইল্যান্ড: ব্যাংককের এক কারাগারের অভ্যন্তরে

গ্যারি গ্রায়াম জোনস থাইল্যান্ডের ব্যাং কাওয়ান নামক কারাগারে বন্দি রয়েছে। এই কারাগারকে ব্যাংকক হিলটন নামে ডাকা হয়। অনেক মানুষ এই কারাগারের নাম শুনেছে, কিন্তু তারা জানে না এই নামটি অনেকের কাছে রাতের এক দু:স্বপ্ন তৈরি করে।

গ্যারির সমর্থকরা একটা ব্লগ তৈরি করেছে, যেখানে গ্যারির কাছ থেকে পাওয়া চিঠি ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করা হবে। ব্যাং কাওয়াং কারাগার পুরুষদের জন্য নির্মিত এক কেন্দ্রীয় কারাগার, যেটি প্রচণ্ড ভাবে সুরক্ষিত। এই কারাগারের অনেক বাসিন্দা বিদেশী। তারা অবৈধ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গ্যারি কে?

গ্যারি একজন বৃটিশ নাগরিক। সে এক থাই রমণীকে বিয়ে করেছে এবং চারটি সন্তান দত্তক নিয়েছে। তার জন্ম ১৯৫০ সালে। ২.৪ কিলোগ্রাম হিরোইন পাচারের দায়ে তার আজীবন কারাবাস হয়েছে। ওয়েবসাইট তার সম্বন্ধে এইসব তথ্য জানাচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি জেলখানায় বন্দীদের সাথে আচরণে গ্যারি একজন ষ্পষ্টভাষী মানুষ, সে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এবং সরাসরি সবার সাথে কথা বলে। গ্যারি কেবল থাইল্যান্ডের জেলে এই রকম আচরণ করে না, পৃথিবীর সব জায়গায় সে এ রকম ষ্পষ্টভাষী। আমরা যখন এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাব, তখন আমরা গ্যারির দেওয়া বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করব, যা সে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে; সেখানে তার সাথে থাকা বন্দীদের সম্বন্ধে বর্ণনা ও সম্ভব হলে ছবি দেওয়ার চেষ্টা করব এবং ধীরে ধীরে আমরা গ্যারি ও তাঁর জীবনের যে চিত্র পাব সেগুলোর বর্ণনা করব।

গ্যারির প্রিজন ব্লগে নিয়মিত লেখা থাকে না। বিভিন্ন সময় সেখানে লেখা জমা রাখা হয়। তবে ধীরে ধীরে এটা ব্যাং কাওয়াং জেলখানার ভেতরে কি ঘটে সে সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করছে। মূলধারার প্রচার মাধ্যম, সমাজের বিভিন্ন অংশ এবং জনতার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ব্লগের এই সমস্ত লেখা সাহায্য করবে, যার ফলে সেখানে থাকা বন্দীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে।

কয়েক মাস আগে এএইচ১এন১ (সোয়াইন ফ্লুর আরেক নাম) সংক্রমণের ভয় ছড়িয়ে পরার সময় গ্যারি সাংবাদিকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে জানায় যে জেলে মৃদু এএইচ১এন১ ছড়িয়ে পড়েছে।

সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে জেলখানার ভেতরে এইচ১এন১ (সোয়াইন ফ্লু) ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা কিছু বন্দীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ১৩ জুলাই ২০০৯-এ, জেলখানার দুই বন্দি এই রোগে মারা যায়। একই সাথে এক কারারক্ষী এই রোগ মৃত্যু বরণ করে এবং আক্রান্ত দ্বিতীয় কারারক্ষীকে প্রচণ্ড অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় (আশা করি এত দিনে সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে)।

এক সংবাদ আমার কাছে এসে পৌঁছেছে, থাইল্যান্ডের কারেকশন বা সংশোধন বিভাগ এক নির্দেশ জারী করেছে যে জেলের সকল কর্মী ও বন্দীদের মুখে মাস্ক বা মুখোশ পড়তে হবে (বিদেশী বন্দীদের এই মুখোশের জন্য ১০০ বাথ [থাইল্যান্ডের মুদ্রা] দিতে হবে)।

এই প্রবন্ধটি অনেক ওয়েবসাইটে পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি মূল ধারার সাংবাদিকরা এই বিষয়টি নিয়ে লিখেছে। গ্যারি বলছেন, এই বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেছে জেলখানার বন্দিদের স্বাস্থ্যগত খাতে কিছু উন্নয়ন ঘটাতে, যা তাদের মধ্যে এএইচ১এন১ বিস্তার রোধে কাজ করেছে।

গ্যারি গত মাসে ব্যাং কাওয়াং-এ বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান নিয়ে যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে লেখেন। তিনি কারা কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির ঘটনাও উন্মোচন করেছেন।

এখন বন্দিদের জানানো হয়েছে যে, তারা যে কোন সময় ইহধাম ত্যাগ করতে পারে। “জীবন বীমার” টাকা ভবনের প্রধান বুনলম কনউইচেট কাছে প্রদান করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ২৪ জনের নামের তালিকা এখানে রয়েছে। এখানে ঘুষ দিতে কয়েদীরা বাধ্য, কারণ যদি তারা ঘুষ না দেয়, তা হলে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দেবার তালিকায় ব্যক্তির নাম চলে আসে।

মানবাধিকার কর্মী ও ব্লগাররা এই বিষয়ের উপর মনোযোগ প্রদান করেছে। তারা এখন গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনার উপর সরকারি তদন্ত দাবি করেছে।

গ্যারির ব্লগ কেবল ব্যাং কাওয়াং এর বন্দীদের জীবনের উপর আলোকপাত করেনি, সেটি প্রমাণ করেছে ব্লগ বন্দীদের নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কাজে আসে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .