- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

চীনের তৈরি কৃত্রিম তুষারপাত

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, চীন, পরিবেশ, বিজ্ঞান

গত পহেলা নভেম্বর, রবিবারে বেইজিং-এ বরফ পড়ে। গত ২২ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম বছরে সবচেয়ে আগে বেইজিং-এ তুষারপাতের ঘটনা ঘটল। এই সময়ে আবহাওয়ার এই ভিন্ন আচরণে পুরো বেইজিং শহর বরফের চাদরে মুড়ে যায়। ঘটনাটি অনেককেই বিস্মিত করে। পরে নিউজ মিডিয়া [1] জানায় যে তুষারপাতের এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে শহরের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

china1

কৃত্রিম ভাবে তুষারপাত ঘটানোর কারণ হচ্ছে বেইজিং-এ এখন খরা চলছে। যে রাতে তুষারপাত হয়, তার কিছুদিন আগে সরকার আকাশে সিলভার আয়োডাইড উৎক্ষেপণ করে। এর ফলে বেইজিং-এর আশেপাশের এলাকায় ১৬ মিলিয়ন টন তুষারপাত ঘটে।

ঝাং কুইয়াং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান। তিনি রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমকে বলেন, “যখন বেইজিং লম্বা সময় ধরে খরায় ভুগছে, তখন এই সমস্যা দুর করার জন্য কৃত্রিম যে কোন পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ আমরা হারাতে চাই না”।

খরার সময় কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি ঝরানোর ইতিহাস চীনের রয়েছে। এর বাইরে, অন্য সময়ও [2] আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আকাশ পরিষ্কার রাখার জন্য আকাশে মেঘের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যাতে কম বৃষ্টিপাত ঘটে। এই সমস্ত ঘটনা কোন বিশেষ সময়, যেমন প্রতি বছর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় কুচকাওয়াজ প্রদর্শনী অথবা বেইজিং অলিম্পিক গেমসের সময় ঘটানো হয়। আকাশ পরিষ্কার রাখতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গত রবিবারে মনুষ্য সৃষ্টি এই তুষারপাতের ঘটনায় নেটিজেনরা ভিন্ন ভিন্ন মতামত প্রদান করেছে। অনেকে আনন্দের সাথে এই তুষারপাতের সৌন্দর্য্যের কথা তুলে ধরেছে, যেমন ব্লগার 鱼干儿 (ইউ গেয়ার [3]

北京的天气,总是这么让人匪夷所思。毫无预兆的就下了场雪,而且还一发不可收拾。听说是人工催下来的,管他呢,我们就爱这样的天气。

বেইজিং-এর আবহাওয়া অবিশ্বাস্য রকমের চমৎকার দেখাচ্ছে। কোন রকম সতর্কতা ছাড়াই তুষার ঘটতে শুরু করে। এটা এমন এক ধরনের তুষারপাত যা সহজে পরিষ্কার করা যায় না বা একে অপসারণ করা যায় না। আমি শুনেছি এই সমস্ত তুষার মানুষের সৃষ্টি, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমরা এই ধরনের আবহাওয়া পছন্দ করি।

তবে অনেকে বেশ উদ্বিগ্ন, ব্লগার 小米 (জিয়াও মি) [4] লিখেছে

回来才听说这是场人工降雪,是谁这么主观的断定这是下雪的好时机呢??到处都是措手不及的冷,电力、交通、供暖等都遇到很棘手的问题。

যখন আমি শুনলাম এটা মানুষের কাজ, তখন আমার মনে হল কে সেই বান্দা, যার মনে হয়েছে বরফ পরার এটাই উপযুক্ত সময়? সব জায়গায় লোকজন ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়েছে এবং বিদ্যুৎ, যানজট এবং শরীর গরম করা নিয়ে বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

ইন্টারনেট ফোরামে [5] একজন ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছে যে সরকারের উচিত ছিল এ ব্যাপারে আগে থেকেই লোকদের সতর্ক করে দেওয়া। তিনি এর সাথে যোগ করেন, এই বরফপাতের কারণে কিছু বিমান নির্ধারিত সময়ে যাত্রা করতে পারে নি।

要我说,这种人定胜天的精神是好的,虽然北 京人都“被冬天”了,如果真能解除北方旱情也算是功德一桩。就是没通知大家的气象局太不地道。

আমার দৃষ্টিতে মানুষ প্রকৃতিকে শাসন করতে পারছে, এমন শক্তি অর্জন করা ভালো, এমনকি যদিও এই কারণে বেইজিং-এর নাগরিকরা “শীতে” আক্রান্ত হয়েছে। তবে যদি তারা সত্যিকার অর্থে খরার কারণে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে পারে, তা হলে বরফ নামানোর উদ্দেশ্য সফল। কিন্তু আবহাওয়া অফিস মানুষদের না জানিয়ে যে কাজটি করেছে, সেটি ঠিক হয় নি।

ইন্টারনেটে পোস্ট করা কয়েকটি লেখায় এই চিন্তা ব্যক্ত করা হয়েছে যে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট তুষারপাত পরিবেশের উপর কি ধরনের প্রভাব ফেলবে? 天的云 (তিয়ান বিয়ান দে ইউন) [6] নামের ব্লগার বিস্মিত এ কারণে যে, কারো কি প্রাকৃতিক আবহাওয়াকে বদলে দেবার অধিকার রয়েছে।

但是,在我们还不能完全掌握天气变化的规律时,就盲目改变局部的天气,是否会对 整个环境造成更大的不利影响呢?比如,这次因为北京缺水,就让原本要下到山东(假设而已)的雪在北京下了,会不会造成山东更缺水呢?

যখন আমরা না জেনেই আবহাওয়াকে অন্ধ ভাবে পাল্টে দিই, সেটি কি পরিবেশের উপর এক বড় ধরনের ক্ষতি করে না? কৃত্রিম ভাবে এই বরফপাত ঘটানো হয়েছে, কারণ বেইজিং-এ খরা চলছিল। যদি বাস্তবে এই বরফ সানডং-নামক এলাকায় পড়ার কথা থাকে সেক্ষেত্রে সেখানে কি ঘটবে, (ধরা যাক এটা সানডং এ পড়ার কথা) সেক্ষেত্রে এই কৃত্রিম তুষারপাত কি বেইজিং-এর বদলে সানডং-এ আরো বড় খরার সৃষ্টি করবে না?

বেইজিং এর একজন ব্লগার ও সাংবাদিক অ্যালেক্স পাস্টেরনাক ট্রি হ্যাগার নামক ব্লগে একটি পোস্টে [7] বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন, মানুষের তৈরি এই বরফপাতের প্রভাব কি হতে পারে:

সরকারি হিসেবে এই খরা অক্টোবরের শেষে ৮০০,০০০ হেক্টর জমির উপর প্রভাব বিস্তার করেছে এবং এই তুষার ঝড় স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা অনুসারে করা হয়েছে।

কিন্তু এই অঞ্চলের সকল কৃষক এই ঘটনায় লাভবান হবে না। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে অন্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধরণ পাল্টে যাওয়া। এক বিশেষ এলাকায় শক্তিশালী ঝড় তৈরির কারণে অন্য অঞ্চলের আবহাওয়া পাল্টে যেতে পারে, যাদেরও বৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে।

অন্য নেটিজেনরা বরফ নিয়ে মজা করেছে। এলিজাবেথ কেইন তার ব্লগে [8]লিখেছে:

গতকালের তুষারপাত, গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে আগে বরফ পড়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আমি নিশ্চিত যে আমার মা বেইজিং বিমান বন্দরে ৭ ঘন্টা ধরে বসে রয়েছে, কারণ সকল বিমান যাত্রা স্থগিত বা বাতিল করা হয়েছে। তিনি অনিচ্ছাকৃত এই যাত্রাবিরতির কারণে সুখী হবেন।

তুষারপাত সম্বন্ধে অন্য এক মন্তব্যে [9] এক তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ রয়েছে:

মার্টিন এম. নভেম্বর ২, ২০০৯, বিকেল ৩.৩০: চীনে এখন সব কিছু তৈরি হয়, এমনকি বরফও।