তিব্বতী ছাত্রদের সংগঠন স্টুডেন্টস ফর এ ফ্রি তিবেত [1] এর বাংলাদেশে শাখা “স্টুডেন্ট ফর এ ফ্রি তিবেত, বাংলাদেশ (এসএফটিবিডি)’ দৃক বাংলাদেশের [2] সাথে যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তিব্বতের উপর এক ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করে “ নির্বাসনে| তিব্বত ১৯৪৯-২০০৯ [3]” শিরোনামে। এই প্রদর্শনী ঢাকার দৃক গ্যালারীতে এক সপ্তাহ ধরে চলার কথা ছিল, যা আজ (পহেলা নভেম্বর) থেকে শুরু হবার কথা। দৃক বাংলাদেশ [4] আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত বাংলাদেশী এক ফটো এজেন্সি, যার পরিচালক বিখ্যাত ফটো সাংবাদিক ও ব্লগার শহিদুল আলম।
এসএফটিবিডির এক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ফায়ুল.কম জানাচ্ছে [5]:
“২৯শে অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দুতাবাসের সংস্কৃতি কাউন্সিলর কিউয়ান কাইফু ও সাংস্কৃতিক এটাশে কাও ইয়ানহু দুজনে ড: শহিদুল আলমের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে এই প্রদর্শনী বাতিল করতে অনুরোধ করেন”।
“এই অনুরোধের পাশাপাশি তারা চীন থেকে আনা কিছু উপহার সামগ্রীও নিয়ে এসেছিলেন”[…]
আনহার্ড ভয়েস ব্লগ ৩১শে অক্টোবরের ঘটনা সম্বন্ধে জানাচ্ছে [6]:
মনে হচ্ছে চীন এই বিষয়ের উপর গভীর মনোযোগ দিয়েছে। তিব্বতের উপর আয়োজন করা আগামীকালের ছবি প্রদর্শনীর ব্যাপারে সংগঠকদের উপর ভয়ানক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যাতে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গতকাল চীনা দুতাবাসের একদল প্রতিনিধি দৃক গ্যালারীতে এসেছিল। তারা এর পরিচালক শহিদুল আলমের সাথে দেখা করেন এবং তাকে “অনুরোধ” করেন, যেন এই প্রদর্শনীটি বাতিল করা হয়।
একজন কর্মীর ইমেইল আমাদের এখানে এসে পৌঁছেছে: “প্রতিনিধি দল দৃকের চারপাশে ঘুরে দেখেন এবং সেখানকার কর্মচারীদের বেশ কিছু প্রশ্ন করে…..
আলম ভাই তাদের বলেন, তিনি তার নিজের এলাকায় কি করবেন তা নিয়ে তাকে কোন উপদেশ দেবার দরকার নেই। কাজেই প্রদর্শনীর আয়োজন চলতে থাকে। আমরা বিপুল পরিমাণে ডিজিএফআই (সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের লোক)-এর উপস্থিতি আশা করছিলাম তবে রোববারে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনই তাদের আশা করি নি।”
কেবল প্রদর্শনীটি নয়, এর সাথে এর উদ্যোক্তা বা কর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়: যেমনটা এই পোস্ট বিস্তারিত ভাবে জানাচ্ছে:
আজ সন্ধ্যয় ৬টায় গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা দৃকে এসে উপস্থিত হন। এসআই (সাব ইন্সপেক্টর) মিজান এই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিল। তিনি এই প্রদর্শনীর আয়োজক ব্যক্তিবর্গের নাম জানতে চান। আয়োজকদের একজন এর আগে জানিয়েছেন যে একই এসআই-এর নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক গত তিন সপ্তাহ ধরে তার বাসার সামনে ঘোরাফেরা করছিল।
শহিদুল আলম টুইটারে এই বার্তাটি [7] পোস্ট করেছেন:
৩১শে অক্টোবরের সন্ধ্যা ৭.০৪ মিনিট: গোয়েন্দা বিভাগের খায়রুল কবীর ও পলাশ দৃকে এসে উপস্থিত হন। তারা তিব্বত বিষয়ক এই প্রদর্শনীর সংগঠকের নাম জানাতে চান। আমি তাদের নাম জানাতে অস্বীকার করি।
আজকে সেই প্রত্যাশিত ঘটনাটি ঘটল। শহিদুল আলম আজ (রোববার) বিকেলে টু্ইটার করেন [8]:
উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। ওসি (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) শাহ আলম এই মাত্র আমাকে ফোন করে এই প্রদর্শনী বন্ধ করতে বলেন, যদি আমি তা না করি সেক্ষেত্রে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধ করার ভয় দেখালেন।
পরবর্তী সংবাদ হচ্ছে (বিডিনিউজ২৪.কম এর সৌজন্যে) [9] এই যে অবশেষে পুলিশ [10] এই প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছে (মিডিয়া হেল্পিং মিডিয়া):
দৃক কর্তৃপক্ষ জানায়, দুপুরের খাবার যা বিকেল ৫টায় করার কথা ছিল, তার ঠিক এক ঘণ্টা আগে পুলিশ দৃকের গেটে তালা মেরে দেয়, যাতে জনতা এই গ্যালারীতে প্রবেশ করতে না পারে।
দৃকের পরিচালক শহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা বিভাগ তার সাথে কথা বলে এবং এই সরকার এই প্রদর্শনী বন্ধ করার আদেশ দিয়েছে বলে তাকে এই প্রদর্শনী বন্ধ করার আদেশ দেয়।
জনাব আলম বলেন, যদিও পুলিশ কর্মকর্তারা সরকারি সেই আদেশ তাকে দেখাতে পারে নি, তারপরেও তারা হুমকি দেয় যদি আয়োজকরা স্বেচ্ছায় এই প্রদর্শনী বন্ধ না করে, তা হলে তারা জোর করে এই প্রদর্শনী বন্ধ করতে বাধ্য হবে।
এখন চলুন শহিদুল আলমের ব্লগ পোস্ট [11] থেকে এই ঘটনার কথা জানি:
যখন মি:কাইফু-দৃকের একমাত্র চীনা সদস্যা গ্রন্থাগারে থাকা জেসিকা লিমের সাথে দেখা করার বদলে কোন এক নির্জন স্থানে কথা বলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন, আমি উপলব্ধি করি এটা সাধারণ সৌজন্য সাক্ষাৎের বাইরের কোন বিষয়।
তিনি সরাসরি বিষয়টি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই আপনি তিব্বতের উপর আয়োজন করা এই ছবি প্রদর্শনীটি বন্ধ করুন”। তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন তিব্বত চীনের একটি অংশ। তিনি জানান, যদি এই প্রদর্শনী চলতে থাকে তা হলে তা চীন- বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে। তিনি একই সাথে অনেকগুলো বিষয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, আমরা এই সব কাজ এক সাথে করতে পারি; আমরা এক সাথে কিছু প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে পারি, কি ভাবে দৃকের মত বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান চীনে অনেক অংশীদার পেতে পারে সে বিষয়ে তিনি ধারণা দেন। খুব রূঢ় শোনালেও আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিই সম্প্রতি চীনে যাবার জন্য চীনা দুতাবাসে আমি যে দরখাস্ত করেছি তার কথা। টপস নামক ফটো সাংবাদিক প্রতিযোগিতায় বিচারক হয়ে আমার সেখান যাবার কথা ছিল, সেই দরখাস্ত বাতিল করা হয়েছে।
খুব বিনীত ভাবে আমি মি: কাইফুকে স্মরণ করিয়ে দিই যে আমাদের গ্যালারী স্বাধীন এক গ্যালারী। তাকে জানাই তিনি যা অনুভব করেন তা বলার অধিকার তার রয়েছে এবং তা আমরা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করব। আমি তাকে এই প্রদর্শনীতে উপস্থিত হবার আহ্বান জানাই এবং তাকে নিশ্চিত করি যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি নির্বিঘ্নে তার মতামত প্রদান করতে পারবেন। আমরা আনন্দের সাথে দৃকে একটা চীনা ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করতে চাই, যদি সে প্রদর্শনী যথেষ্ট মান সম্পন্ন হয়ে থাকে। তিনি আমাদের গ্যালারী ঘুরে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং আমার এক সহকর্মী তাকে গ্যালারীটি ঘুরিয়ে দেখায়, আর আমি মিটিং-এ ফিরে যাই।
সন্ধ্যার সময় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে একটা ফোন আসে, যে ফোনে বলা হয় “চীন আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, গ্যালারীতে দালাই লামার ছবি দেখানো যাবে না”। উচ্চ পদস্থ এই কর্মকর্তা এখানে যোগ করেন, “না, না আমরা সেন্সরশীপের কথা বলছি না, কিন্তু…”। এর পর একজন নামকরা তারকা ফোনে একই কথা বলেন, যেন তিনি চীনের বন্ধু। আমি ফোন করা ব্যক্তিদের পরিচয় বের করতে পারি নি, যদিও মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করা ব্যক্তির পদের মাধ্যমে তার পরিচয় জানতে পারি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা একটা বহুমাত্রিক আক্রমণ।