- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সিঙ্গাপুর জানিয়েছে ব্লগারদের তাদের স্পন্সরদের ব্যাপারে জানাতে হবে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, সিঙ্গাপুর, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, সরকার

সিঙ্গাপুরের প্রচার মাধ্যম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এমডিএ) [1] নতুন একটি নীতিমালা তৈরির চিন্তা করছেন যেখানে ব্লগারদেরকে জানাতে হবে তারা তাদের লেখার জন্য উপহার বা অর্থ পাচ্ছেন কি না। এই প্রস্তাবিত ‘কঠোর নিয়ম’ ‘গ্রাহকদের প্রভাবিত হওয়া থেকে বাঁচাবে এবং তারা কি পড়ছেন সে সম্পর্কে পূর্বেই জানবেন।’

থাম ইউয়েন সি বিশ্বাস করেন [2] এমন আইন:

কিন্তু, প্রয়োগ করা অসম্ভব হবে।

এত ব্লগার এত জিনিষের ব্যাপারে মতামত জানাচ্ছেন রেস্টুরেন্ট থেকে দৌঁড়াবার জুতা থেকে হাতব্যাগ নিয়ে, যে যেসব এজেন্সির কাজ দেয়া হয়েছে ব্লগ গুলো চোখে রাখার ও নিয়ন্ত্রণের তাদের কাজে কুলোবে না।

আরো অনেক জিনিষ নির্দিষ্ট করতে হবে, যেমন ব্লগার কাকে বলে, ব্লগ হিসেবে বলার যোগ্যতা কোনটির, আর কোন আইনের মধ্যে পড়বেন ব্লগাররা ধরুন যে সিঙ্গাপুরের ব্লগার লন্ডন থেকে ব্লগ করেন তার ক্ষেত্রে কি হবে।

মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে, যেখানে নিয়ম আছে আর তা ভাঙ্গলে বাতিল হওয়ার ভয় আছে, বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা সহজ কাজ না। ইন্টারনেটের অস্পষ্ট জগৎে আর কি সম্ভব?

তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছেন ‘(ভ্রান্ত বিজ্ঞাপনের) ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এর প্রচারের মাধ্যমকে না (ব্লগ আর নতুন মিডিয়া)।’

উদাহরণ স্বরুপ, যদিও এটা কঠিন হবে সব ব্লগ পোস্ট আর ব্লগারদের অনুসরণ করতে, তার চেয়ে পুলিশ কোম্পানীগুলোর জন্য সহজ হবে সেইসব কোম্পানীকে অনুসরণ করা যারা নতুন মিডিয়া চ্যানেল ব্যবহার করেন স্ব-ঘোষিত দাবি করতে পক্ষপাতহীনতার আবরণে, আর বিজ্ঞাপন কোম্পানিকে যারা এইসব চুক্তি করে থাকেন।

দ্যা তেমাসেক রিভিউ একমত হয়েছেন [3] যে সিঙ্গাপুর নতুন এই নিয়ম আরোপ করতে পারবে না:

সাইবারস্পেসের সীমান্ত বিহীন আর নাম বিহীন প্রকৃতির কারনে, এমডিএর পক্ষে প্রায় অসম্ভব হবে নতুন আইন প্রয়োগ করা যদি না ব্লগাররা নিজ থেকে তথ্য দিতে চান।

লেখক ধারণা করছেন যে এমডিএর আসল লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক- রাজনৈতিক ব্লগের অর্থনৈতিক সহায়তাকে আঘাত করা:

এই পদক্ষেপের পিছনে আসল কারণ হল, মনে হচ্ছে, সম্ভাব্য দাতাদের ব্লগারদের অর্থ দেয়া আর সমর্থন করা থেকে বিরত করা, বিশেষ করে যে সব সামাজিক- রাজনৈতিক ব্লগে আমাদের মতো উচ্চ মানের ও সংখ্যার পাঠক আছে।

এই সময়ে, কেবলমাত্র আমাদের ব্লগ, দ্যা অনলাইন সিটিজেন আর সিঙ্গাপুর গণতান্ত্রিক দলের ওয়েবসাইট পাঠকদের কাছ থেকে দান গ্রহণ করে।

এমন একটা আইন যদি আসলেই করা হয়, সামাজিক-রাজনৈতিক ব্লগের জন্য দান আসলেই কমে যাবে কারণ খুব কম সিঙ্গাপুরবাসী এমডিএর কাছে তাদের পরিচয় দিতে চাইবেন যে তারা সরকারকে সমালোচনা করে এমন সাইট সমর্থন করছেন।

দীর্ঘ সময়ে, সিঙ্গাপুরের নতুন মিডিয়ার বৃদ্ধি আর উন্নয়নে এটার খারাপ প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে বড় পাঠক সংখ্যাসহ জনপ্রিয় সাইট সীমিত অর্থায়নের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

একজন অজ্ঞাতনামা মন্তব্য করেছেন নেটিজেনদের নিজেদের পুলিশিং নিজেই করা উচিত:

যদি পিপিএল অর্থ পান ভালো কথা লেখার জন্য যেমন খাদ্য, স্পা, ইত্যাদি নিয়ে, ভোক্তারা তা আগে পরে জানতেই পারবেন। একটা ভালো উন্নত মিডিয়া এইসব ভুয়া লেখা যাতে সামনে আসে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। নেটিজেনদের নিজেদের পুলিশিং করতে দেন।

সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন বেশী প্রতিক্রিয়া জানাতে মানা করেছেন:

এই বিষয়ে আমরা বেশি প্রতিক্রিয়া না জানাই। আমার মনে হয় ব্লগারদের তাদের সাইটের কোথাও এমন মন্তব্য করতে হবে যে তাদেরকে ব্লগিং এর জন্য অর্থ দেয়া হয়।

আর একজন মন্তব্য কারী রি, একটা উদাহরণ দিয়েছেন যে ভোক্তারা কিভাবে এমডিএ আইন থেকে লাভবান হবেন:

আমি কি বোকার মতো ভাবছি যে এমডিএ ভোক্তাদের লাভের জন্য এটা প্রয়োগ করতে চাচ্ছে?

খুব সহজ ভাবে বললে, এটা কি দীর্ঘ হোম শপিং এ্যাডের মতো না যেখানে প্রথমে বলা হয় যে এটা অর্থ দেয়া একটা বিজ্ঞাপন যা আমরা দেখছি?

দ্যা অনলাইন সিটিজেনে [4] মন্তব্য করতে গিয়ে, এইচ এল প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন কিন্তু তিনি দ্বিধান্বিত যে সিঙ্গাপুর এই নীতিমালা কাজে পরিণত করতে পারবে কি না:

এই দাবি সাহায্য করবে জানাতে যে ব্লগার কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিখছেন। এমন কোন মানে নেই যে ব্লগার কি লিখছেন তা স্পন্সর দ্বারা প্রভাবিত হতে হবে। সিদ্ধান্ত তখন পাঠকের জন্য তথ্য সম্বলিত হয়ে যায়, আর তথ্যের উপর বিশ্বস্ততার মাত্রা বেড়ে যায়। এটাকে আমি স্বাগত জানাই।

এখন একটা বিষয় হল কিভাবে এটাকে কাজে লাগানো যায়। সরাসরি নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হবে, আর সাইবারস্পেসের ‘বিশালত্বের কারণেই না কেবল। কেউ একজন আয়করের কথা বলেছেন, আর এটা থেমে যাওয়ার একটা ভালো উদাহরণ- জগদ্দল নাড়াতে হবে এমডিএ আর আইরাস কোন ঐকমত্যে আসার আগে এই নীতিমালার বাধা গুলো কিভাবে পার হওয়া যায় সেটা নিয়ে- যেমন কে আয়কর সংগ্রহ করবে, কে নীতি প্রয়োগ করবে ইত্যাদি।

মিস ডট্টি জানিয়েছেন যে এমডিএ হয়তো আমেরিকার ফেডারেল ট্রেড কমিশনের পন্থা অনুসরণ করছে [5] যারা সম্প্রতি তাদের নীতিমালা সংশোধন করেছে। কিন্তু মিস ডট্টি এই প্রস্তাবিত আইনে ব্লগকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেছেন:

যেহেতু সরকার দাবি করতেই থাকেন যে ইন্টারনেটে কেবলমাত্র মিথ্যা আর ভুল তথ্য আছে, এটা আমাদের সকলকে প্রশ্ন করাতে পারে উদ্বুদ্ধ করাতে পারে, তাহলে ব্লগকে তাদের কোন ফার্মের সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়ে খোলাখুলি ভাবে লিখতে বলার কারণ কি যদি তারা সিদ্ধান্ত নেন কোন পণ বা সার্ভিস নিয়ে তার পক্ষে বা বিপক্ষে লেখার? এটার কোন মানে আমি বুঝি না।

আঙ্কেল শা বলেছেন যে এটা প্রতিটি ব্লগারের উপরে নির্ভর করছে [6] তাদের স্পন্সরের নাম জানানো হবে কি না হবে:

আমার মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে আইন সাইবারস্পেসেও প্রবেশ করছে।আমার নিজের ধারণা আর মতামত হল এমন নীতি আনা হয়েছে কারণ এমডিএ আরো নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, আর আইআরএ বছরে দুইবার ট্যাক্স ধরতে চায় একবারের বদলে।

আমি নিজে জানিয়ে দেই যদি আমার ব্লগ পোস্টের জন্য আমি অর্থ পাই, কিন্তু আমি জানি অনেক ব্লগার করেন না। তাই তাদের লেখা নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন আছে।
আমি কেবল বলতে পারি সাইবারস্পেসে আপনি ইচ্ছে মতো লুকোচুরি খেলতে পারেন ধরা না পড়ে, এটা আসলেই ব্যাক্তি ব্লগারের উপরে তারা জানাতে চান কিনা।

ফুড ব্লগ [7] আমাকে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে যে এই নীতিমালা কি সেই পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে যে ব্লগে চাকুরিরতদেরও ঘোষণা দিতে হবে?

আমার মতে আমেরিকা করেছে বলেই এমডিএর নীতিমালা প্রণয়ন উচিৎ নয়। যদি আমাদের নীতিমালার দরকার হয় আমরা অবশ্যই বানাব।

তাছাড়া জানানো বাধ্যতামূলক এই জন্যই করা উচিত না যে এটা ব্লগারের পক্ষপাতিত্ব দেখাবে। এটা থাকা উচিত যাতে আইআরএস আয়ের হিসাব করতে পারে, যদি আসলেই, মাঝে মাঝে কিছু ব্লগার যে দম্ভ করে বলেন যে তারা মাসে ৪ অঙ্কের আয় করেন ব্লগিং করে।

আর আরো বিতর্কিত, সেইসব ব্লগারদের ব্যাপারটি কি হবে যারা সিঙ্গাপুরের সব ব্যাপারে খারাপ দেখেন, সব সময়ে? তাদেরকে কি এটা নিশ্চিত করা জানানো দরকার না যে তাদের একটা খারাপ স্বভাব আছে, কেউ তাদের প্রলাপ স্পন্সর করছে বলা না?

দ্যা (নিউ) মিডিয়াস্লট একই আইন সনাতন মিডিয়াতেও আরোপিত হোক এই চান [8]:

সব কিছু বিবেচনা করলে, সাংবাদিকরা যে উপহার আর জিনিষ পান বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপারে লিখতে গেলে তা জানানোর বিষয়টি কি হবে?

যদি এমডিএ ব্লগার বা সরকার যাকে নতুন মিডিয়া বলেন তার উপরে এমন আইন চাপিয়ে দেন, তাহলে এটা সনাতন মিডিয়ার উপরেও চাপবে না কেন?