বিশ্ব সংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলোকে নিরাপত্তা প্রদান করা

বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণে নিয়োজিত- বাস্তবসম্মতভাবে এবং এমন উপায়ে তার কাজ করে যাচ্ছে যা অনেক সময় কল্পনা করা যায় না। তারা তাদের কাজের সমর্থনের জন্য অনলাইন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করছে।

অক্টোবরের ৬ তারিখে, ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড (ডাব্লিডএমএফ) বা বিশ্ব স্থাপনা সংরক্ষণ তহবিল ডজন খানেক গ্রাম, ভবন, সেতু এবং স্থাপনার তালিকা প্রকাশ করেছে। এই সমস্ত স্থান ও ভবন গুগলের ২০১০ সালের সক্রিয় মানচিত্রে তৈরি করা হয়েছে যেগুলো ঝুঁকি পূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ডের মত আরো অনেক প্রতিষ্ঠান, যেমন গ্লোবাল হেরিটেজ ফান্ড, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার (যা ইউনেস্কোর একটি অংশ) বিশ্বের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপনাগুলোর সংরক্ষণে অর্থ প্রদান করে থাকে।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হওয়া:

কোন স্থান বা স্থাপনা যদি কোন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মনোনীত হয় তাহলে উক্ত স্থান বা স্থাপনার জন্য অর্থ সাহায্য পাওয়া সহজ হয়ে দাঁড়ায়। বাড়তি সুবিধা হচ্ছে এর ফলে স্থানটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হতে পারে। তা ছাড়াও এই ধরনের মনোনয়ন জাতীয় বা আঞ্চলিক গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক তন উই চেঙ্গ ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। সেখানে তিনি সিঙ্গাপুরের কিছু এলাকাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানান:

২০০৮ সালের শেষে ইউনেস্কো বিশ্বের ১৪৫টি দেশের ৮৭৮টি এলাকা ও স্থাপনাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যার একটিও সিঙ্গাপুরে অবস্থিত নয়। সিঙ্গাপুরে কি এমন কোন এলাকা নেই যা এই সম্মানের যোগ্য? আমি সংস্কৃতির ঐতিহ্যের অংশ হিসেব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এমন কয়েক শ এলাকা ঘুরে দেখেছি, এবং আমি নিশ্চিত যে সিঙ্গাপুরের কিছু স্থাপনা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার যোগ্য। এখানকার স্থাপনা গুলো সেই যোগ্যতা অর্জন করার ক্ষমতা রাখে, ইউনেস্কোর ভাষায় যাদের এক “অসাধারণ বৈশ্বিক মূল্যবোধ” রয়েছে।

মানুষে মানুষে সংঘর্ষ এই ধরনের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। চীনের কাশাগড় এলাকায় আদিবাসী উইঘুর ও চীনা হান জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার পর প্রাচীন এই সিল্ক রোড সিটি বা রেশম পরিবহনের জন্য একদা বিখ্যাত প্রাচীন এই শহরটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনলাইনে এক দরখাস্ত প্রদান করা হয়। বর্তমানে শহরটি ধ্বংস হবার উপক্রম।

অনলাইনের এক ভিডিও কাশাগড় নামক শহরটিকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা প্রদানের দাবী করছে।

মানুষ এক হুমকি:

ড: অঞ্জনা খাটওয়া তার এই প্রবন্ধে লিখেছেন মানুষ সবসময় এই সমস্ত স্থাপনার ক্ষেত্রে এক বড় বিপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি জুরাসিক কোস্ট ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের শিক্ষা বিষয়ক তত্ত্বাবধায়ক। তিনি দেখান যে:

যে সমস্ত স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সেগুলোর উপর নানা ভাবে বিপদ আসে: সামরিক সংঘর্ষ এবং যুদ্ধ, স্বেচ্ছায় এর ক্ষতি করা বা ধ্বংস সাধন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দূষণ, এসব স্থাপনার জিনিষ চুরি করা, এলাকার কাছে অপরিকল্পিত ভাবে কোন কাঠামো নির্মাণ করা এবং নিয়ন্ত্রণ হীন পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার কারণে এই সব এলাকা ধ্বংস হতে থাকে।

ডাব্লিউএমএফ-এর সভাপতি বনি বুর্নাহাম ২০০৮ সালে, বিশ্বের সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত স্থাপনা গুলোর উপর নজর রাখার পরিকল্পনা চালু করেন। তিনি বিষয়টি তার ওয়েবের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দেন:

যার এই সব স্থাপনা ধ্বংস করে সেই তালিকার সবচেয়ে প্রধান শত্রুর নাম মানুষ। কিন্তু যেহেতু আমরাই এ সবের ক্ষতির প্রধান কারণ, সেহেতু আমাদেরই ক্ষমতা রয়েছে এসব স্থাপনাকে আবার মেরামত করার। যদি চাই, তাহলে আমরা বিশ্ব ঐতিহ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব গুরুত্বের সাথে পালন করতে পারি। কাজেই বিশ্বের ঐতিহ্যমূলক যে সমস্ত স্থাপনা রয়েছে তার উপর দৃষ্টি দেবার এক তালিকা তৈরি করে আমরা সতর্কতার ঘণ্টা বাজিয়ে যাচ্ছি। আমরা এই সমস্ত প্রিয় এলাকা গুলোর উপর বিভিন্ন উদাহরণ মূলক কাজ করতে পারি। এর জন্য দরকার এক সাথে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা, যাতে যৌথ ভাবে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহ্য গত স্থাপত্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ নিতে পারি।

এক সৃষ্টি শীল সমাধান

২০০৩ সাল থেকে ইউনেস্কো ভাষা, নাচ এবং হস্ত শিল্প নির্মাণ শৈলীর মত সুক্ষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত বিষয়গুলোকে রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বেশ কিছু সূক্ষ্ম সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐতিহ্যকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হতে পারে।

সাইআর্ক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যে কিনা “৫০০ চ্যালেঞ্জ” নামক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল বিশ্বে ঐতিহ্যমূলক যে সমস্ত স্থাপনা রয়েছে তার ডিজিটাল মডেল বা নমুনা তৈরি করার কাজ করা। এই কাজটি করা হচ্ছে লেজার স্ক্যানিং করে। একটি উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার জন্য এই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

রাপা নুয়ে সাইআর্ক পরিকল্পনা

ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউআইপিও) বা ‘বিশ্ব বুদ্ধিমত্তা সৃষ্ট সম্পদ রক্ষা’ নামক প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সমস্ত মৌখিক ও বস্তুগত নয় এমন ঐতিহ্যগুলোকে সংরক্ষণ করা ও নিরাপদে রাখার জন্য এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর জন্য তারা সংরক্ষণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে; তারা এর জন্য আইপি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল নীতিমালা, তথ্য সংরক্ষণ ও ডিজিটাল ভাবে সূক্ষ্ম সব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে

নতুন প্রযুক্তি এই বিষয়ে এক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে। এই সব ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপাদান দলিল ও ডিজিটাল অনুভূতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এখন নতুন এক দুয়ার খুলে দেবে। ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য মানুষের যে তীব্র অনুভূতি তাকে শক্তিশালী করবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই অনুভূতি সফল ভাবে বয়ে নিয়ে যাবে।

সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এটি একটি মতবাদ যা মালির ব্লগার বুকারি কোনাটে আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। তিনি তার নিজের ব্লগ ফাসোকানেতে আফ্রিকার একটি লোককাহিনীর [বামবারা ভাষায়] কথা বলছেন:

Bi bi in na, an bɛɛ bɛ k’a kɔlɔsi sisan k’o ko ninnu bɛ ka ban dɔɔni dɔɔni. N kɛlen kɔ ka n yɛrɛ ɲininkan, ye jaabi min sɔrɔ, o de ye ka u sɛbɛen an ka kanw na, k’u bayɛlɛma kan wɛrɛw la, k’u bila ɛntɛrinɛti kan. O b’a to u tɛ tunun wa u na lakodɔn mɔgɔ wɛrɛw fɛ.

আমরা সকলেই ঐতিহ্যগুলোর ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেখছি এবং অনেক চিন্তার পর আমি এর সমাধান আবিষ্কার করেছি: সেগুলোকে আমাদের ভাষায় লিখে ফেলা, এবং অন্য ভাষায় তার অনুবাদ করা, এবং তারপর এগুলোকে ইন্টারনেটে রাখা। এর মাধ্যমে এগুলোকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং অন্য লোকেরা এই বিষয় সম্বন্ধে জানতে পারবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .