নেপাল: বায়োগ্যাস বিপ্লব

 একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী মারুফিশের। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় তা ব্যবহার করা হয়েছে।

একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী মারুফিশের। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় তা ব্যবহার করা হয়েছে।

বায়োগ্যাস (জৈব জ্বালানি) নেপালে এক সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে। ডাব্লিউডাব্লিউএফ -এর এক হিসেবে দেশটির গৃহস্থালি জ্বালানির শতকরা ৮৭ ভাগই আসে জ্বালানি কাঠ থেকে এবং দেশটি জ্বালানির জন্য মূলতঃ কাঠের উপর নির্ভরশীল। তবে বায়োগ্যাস দেশটির জ্বালানির ক্ষেত্রে এক গ্রহণযোগ্য বিকল্প হতে যাচ্ছে। এএফপির এক সংবাদে জানা যাচ্ছে, নেপাল সারা দেশে কার্বন নি:সরণ করে না, এমন অসংখ্য বায়োগ্যাস প্লান্ট বসিয়ে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় (২০০৭ সালে প্রায় ৬০০,০০০ মার্কিন ডলার) করেছে।

নেপাল এমন এক দেশ যেখানে জাতি সস্তা ও গ্রহণযোগ্য জ্বালানির অভাব নিয়ে সমস্যায় রয়েছে। এই বাস্তবতায় সেখানে বায়োগ্যাস নেপালের জন্য একটা সুসংবাদ বয়ে এনেছে।

গ্লোবালওয়ার্মিং আর্কলাইন নামের একটি ব্লগ দেখাচ্ছে কি ভাবে কৃষিজাত জ্বালানি নেপালে কার্বন নি:সরণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারে। ব্লগটি বলছে যে স্বল্প ব্যয়ে তৈরি করা যায় এমন প্রযুক্তির এই বায়োগ্যাস নেপালের গ্রামবাসীরা সহজেই ব্যবহার করতে করে:

“বায়োগ্যাস তৈরি করা তেমন কোন জটিল কাজ নয়। স্বল্প ব্যয় ও প্রযুক্তিগত উপাদান দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়। এর জন্য একটা গর্ত খুঁড়তে হয় যা কোদাল দিয়ে বানানো সম্ভব এবং চারপাশের যে পাথর দিয়ে এর সুরক্ষা তৈরি করা হয়, সেটি আধুনিক দূষণ মুক্ত ভাবে বানানো হয়। এরপর এটাকে ঢেকে দেওয়া এবং এর ভেতরে তৈরি হওয় গ্যাসকে একটা ট্যাঙ্কের মাধ্যমে বয়ে নিয়ে আসা খুব সহজ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবহার করার পর এর মূল কাঠামো সামান্য ঠিকঠাক করে একে পুনরায় কাজে লাগানো যায়”।

এর জন্য যে সমস্ত উপাদান দরকার তা সহজলভ্য। এ কারণে সহজেই এটি বানানো সম্ভব এবং নিশ্চিতভাবে বলা যায় এটি কাজ করে। গ্যাস তৈরির পর যে উপাদান তৈরি হয় তা ঘাঁটাঘাঁটি করা আনন্দদায়ক নয়, কিন্তু একই ধরনের অন্য কাজেও একই রকম ঘটনা ঘটে। যদিও বাড়ি গরম করার জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে না, কিন্তু রান্না ও পানি গরম করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি সে উৎপন্ন করতে পারে এবং এই কাজটি করে অনেক পরিচ্ছন্ন ভাবে।

বায়োগ্যাস উৎপাদনে নেপালের সাফল্যে তার প্রতিবেশী দেশগুলোকেও উৎসাহিত করতে পারে। নেপালের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতও তার বাড়তে থাকা জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য বিকল্প জ্বালানির খোঁজ করছে। দ্রুত এক শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হবার জন্য ভারতের এখন ব্যাপক পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন। সাউথ এশিয়া ব্লগের রাজিব আহমদে যিনি দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা ও সামাজিক বিষয়ের উপর মনোযোগ প্রদান করছেন, তিনি বলছেন:

বায়োগ্যাসের উপর আমার প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে, কারণ আমি বিশ্বাস করি এটা কেবল নেপালের জন্য নয়, তার প্রতিবেশী দেশ সমূহ যেমন ভারত ও বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনাময় বিকল্প জ্বালানি হতে পারে। বায়োগ্যাস সেক্টর পার্টনারশীপ ইন নেপাল (বিএসপি-নেপাল) নেপালের এক এনজিও যা দেশটিতে বায়োগ্যাস ব্যবহারের উপর প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের সহায়তা দেশটিতে ২০০৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ১৭২,৮৫৮ বায়োগ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র বসানো হয়েছে।

এর ফলে, প্রায় ১০ লক্ষ লোক এর মাধ্যমে সুবিধা লাভ করছে। ১০ লক্ষ সংখ্যাটি হয়ত অনেক বেশি মনে হচ্ছে না, কিন্তু মনে রাখতে হবে মূলতঃ গ্রামে বাস করা গরীব লোকেরা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সুবিধা লাভ করেছে। কেবল তাই নয়, আমি এই বিষয়টির প্রতি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই যে, নেপাল তার জ্বালানির শতকরা ১০০ ভাগই আমদানী করে। কাজেই একটি বায়োগ্যাস কেন্দ্র তৈরি হওয়া মানেই নেপালের কিছু বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হওয়া।

নেপালে বায়োগ্যাস সম্বন্ধে আগ্রহ কমে আসেনি। কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রম এবং সতর্ক পরিকল্পনার মাধ্যমে বিষয়টি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। যদি ২০০৫ সালের দিকে ফিরে তাকাই রিনিউয়েবলএনার্জিএক্সেসের মল্লিকা আরোয়াল নেপালের বায়োগ্যাসের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য বা স্থায়ী আয় করা যায় এমন জ্বালানির জন্য অনুসন্ধানের কথা জানিয়েছিলেন।

বায়োগ্যাস ব্যবহার দেশটির ৭৫টি জেলার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ২০০৯ সালের মধ্যে ২০০,০০০ বায়োগ্যাস স্থাপনা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশটির যে কোন গ্রামে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করতে ৩০০ মার্কিন ডলার (২১,০০০ টাকা প্রায়) লাগে। সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার কারণে গ্রামের লোকজন সহজে বায়োগ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে ২০০ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হয় এবং এক বছরের মধ্যে তার বিনিয়োগের টাকা উঠে আসে। বলা যেতে পারে এটা বেশ ভালো বাণিজ্য!

এখন বায়োগ্যাস বিশ্বের পরিবেশের জন্য একটা ভালো বাণিজ্য। নেপাল, কিয়োটে প্রটোকল অনুসারে ২০০৫-এর ডিসেম্বরে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নি:সরণ না করা নেপালের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তখন থেকে দেশটি বায়োগ্যাস ব্যবহার করে কার্বন নি:সরণের পরিমাণ কমিয়ে আনে এবং বছরে প্রায় ৫ মিলিয়ান ডলার সঞ্চয় করে।

কি ভাবে বায়োগ্যাস নেপালকে সাহায্য করছে সে সম্বন্ধে জানতে চাইলে, টোকিও সিটি ইউনির্ভাসিটির নেপালী প্রকল্পের বায়োগ্যাস নিয়ে তৈরি করা এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .