আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্মানিত নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন গত ৯ই অক্টোবর, ২০০৯। নোবেল কমিটির বক্তব্য অনুসারে [2] তিনি এটা পেয়েছেন ‘আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে আর মানুষের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপনে তার অসাধারণ প্রচেষ্টার জন্যে'।”
এই সংবাদ বিশ্বের অনেকের কাছে বিস্ময় হিসেবে এসেছে। সাধারণ ধারণা অনুযায়ী এই পুরস্কার সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাবে যারা দীর্ঘায়িত সশস্ত্র সংঘর্ষ থামানোর সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু এর আগেও এ ধারণায় বেশ কিছু ব্যত্যয় ঘটেছে আর ওবামার পুরস্কার সেই রকম আর একটা উদাহরণ। কারণ গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে যখন নোবেলের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয় তখন তিনি সবেমাত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর কাজ শুরু করেছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার কিছু সংকলিত করেছে [3]। এখন দেখা যাক দক্ষিণ এশিয়ার ব্লগার আর মাইক্রো ব্লগাররা এই সংবাদে তাদের প্রতিক্রিয়া কিভাবে জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ থেকে অ্যান অর্ডিনারি সিটিজেন এই পুরস্কারকে অপক্ব হিসেবে আখ্যায়িত করে [4] প্রাপ্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
আমরা শান্তির জন্য তার প্রচেষ্টার প্রশংসা করি যেটা তিনি কেবলমাত্র শুরু করেছেন আর ফলাফলের জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল না তাকে এই পুরস্কার দেয়া? আমরা ঠিক জানি না এটা তাঁর চিন্তাধারাকে কিভাবে প্রভাবিত করবে।
ভারতীয় ব্লগার চুরুমুরির কিছু সোজা প্রশ্ন আছে [5]:
ওবামার কি এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা আছে? এটা পাওয়ার মতো তিনি কি কিছু করেছেন? এত তরুণ একজনকে দেয়া যিনি তার প্রেসিডেন্টের মেয়াদের শুরুতে আছেন – যারা দীর্ঘ দিন কাজের পরে তা পেয়েছেন তাদের প্রাপ্তিকে ছোট করে দেয় না? নাকি এগুলোর কোন মানে নেই, কারণ নোবেল তো একটা রাজনৈতিক পুরস্কার (যারা আর্ভিং ওয়ালেসের [6] দ্যা প্রাইজ পরেছেন তারা জানবে) যা ইয়াসের আরাফাত আর মেনাচেম বেগিনের মত লোককে দেয়া হয়েছে?
ভারত থেকে ওবামার ভক্ত জুনি [7] ও এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত:
ঠিক আছে আপনারা ভুল বোঝার আগে বলছি আমি অবশ্যই ওবামাকে ঘৃণা করি না… আমি তাকে অনেক ভালবাসি, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতায় আমি একটা পোস্ট করেছিলাম তাঁকে অভিবাদন জানিয়ে। কিন্তু কিসের জন্য তিনি এটা জিতলেন? অফিসে তিনি মাত্র ২ সপ্তাহ এসেছিলেন যখন তাঁকে মনোনয়ন করা হয় (মনোনয়ন পহেলা ফেব্রুয়ারি তে শেষ হয়েছে)। আমার মনে হয় নির্বাচনে দারুন প্রচারনার জন্য ওবামা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন!
পাকিস্তান থেকে, বৈঠক ব্লগের টেম্পোরাল [8] প্রতিক্রিয়া একটু জোরালো ভাবে জানিয়েছেন:
এটা নোবেল পুরস্কারের মান পানিতে ধুয়ে কমে যাওয়ার বছর হতে পারে। কমিটির সদস্যরা কি খাচ্ছিলেন বা ধূমপানে মিশিয়েছিলেন?
প্রেসিডেন্ট ওবামা হয়তো আগামীতে এই পুরস্কারের যোগ্য হবেন। কিন্তু এখন না। তিনি তাঁর প্রচেষ্টা কেবল শুরু করেছেন আর বিশ্ব শান্তিতে ছাপ রাখার তার এখনো বাকি।
শ্রীলঙ্কার ব্লগ ইন্ডি.কা মনে করেন [9] এই পুরস্কার ঘরোয়া ভাবে ওবামার ক্ষতি করতে পারে:
আমি মনে করি পৃথিবীতে বিচরণ কারীদের মধ্যে ওবামা সব থেকে দারুন ব্যক্তি। কিন্তু আমার মনে হয় না যে তিনি যা করতে চান তা এখনো করতে পেরেছেন। নোবেল তাত্ত্বিক ভাবে হয়তো তাঁকে সাহায্য করবে, কিন্তু ঘরোয়া ভাবে এটা তাকে ক্ষতি করতে পারে।
এই সংবাদ শোনার পরে বিশ্বব্যাপী মাইক্রো ব্লগাররা ব্যস্ত ছিলেন তাদের বিস্ময় আর অনিশ্চয়তা প্রকাশ করতে। এখানে দক্ষিণ এশিয়ার টুইটার ব্যবহারকারীদের কিছু প্রতিক্রিয়া:
@বিজয়শঙ্করন: [10] নোবেল শান্তি পুরস্কার ভারত রত্নের মতো না…এটা আপনি কি করেছেন তার না বরং আপনি কে তার স্বীকৃতি।
@তান্তানু: [11] তাহলে বুশ যুদ্ধ ঘোষণা করেন, ওবামা শান্তির কথা বলেন আর নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। আমি বলবো ভালো অ্যালগরিদম।
@সান্থেমান্ত: [12] “ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন এত জায়গায় সক্রিয় যুদ্ধে লিপ্ত থাকার জন্য…পাকিস্তানকে সমর্থন আর ভারতের মতো গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করার জন্য।
@সানিয়া খান: [13] পাকিস্তানে চলা ক্লান্তিকর কথা যা চলছে তার পরে প্রেসিডেন্ট ওবামার নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতা জানি না আমি সমর্থন করতে পারবো কিনা।
@ইউসুফ খান: [14] গুয়ানতানামো বে এখনো খোলা আছে, পাকিস্তানে একঘেয়ে বোমা হামলা চলছে, ইরাক/আফগানিস্তানের যুদ্ধ চলছে, আর ওবামা নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতলেন। হ্যাঁ।
@টাইনিটুটস: [15] আমিও নোবেল শান্তি পুরস্কার চাই। প্রত্যেক দিন কত মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করা থেকে নিজেকে আমি বিরত থাকি। আমাকে কেউ মনোনয়ন করছে না কেন?
@ ওল্ডমঙ্কএমজিএম: [16] এই ক জনের মধ্যে কোন ব্যক্তি খাপ খায় না? দালাই লামা, মাদার তেরেসা, মারটিন লুথার কিং, বারাক ওবামা?