মরোক্কো: শিশু শ্রম আবার বিতর্কের শীর্ষে

ন

হাসপাতালে জয়নব চিটিট

মার খাওয়া রক্তাক্ত একটি ছোট মেয়ে হাসপাতালের বেডে ধুঁকছে। ১০ বছর বয়সেই সে গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়েছিল। জয়নব চিটিট এর জীবন কেটেছে এক ধন্যাঢ্য গৃহকর্তার কাজ করে যে তাকে মারত এবং খাবার দিতে অস্বীকার করত। এ মরোক্কান এবাউট দ্যা ওয়ার্ল্ড এরাউন্ড হিম ব্লগ এই মেয়ের দু:খের কথা বর্ণনা করেছে এক সাম্প্রতিক লেখায়

জয়নবকে এখন মুক্ত দেখাচ্ছে। মারের চোটে তার সারা গা রক্তাক্ত ছিল এবং মারের দাগ বসে গিয়েছিল। তার ঠোটে ইস্ত্রির ছেঁকা দেয়া হয়েছিল। ফুটন্ত তেল দিয়ে তার বুক এবং জননাঙ্গ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। সে একটি অশিক্ষিত মেয়ে। তার কোন দিন সাথীদের সাথে খেলার সুযোগ হয় নি। তার ভবিষ্যৎ তার জন্যে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল: গৃহপরিচারিকার ঘানি টানা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এবং কিছুদিন আগে সে সত্যিই মারা যেতে বসেছিল।

দুর্ভাগ্যবশত: জয়নবের গল্প নতুন নয়। মরোক্কোতে ১৫ বছরের কমবয়সী প্রায় ১৭৭০০০ শিশু শ্রমিক আছে যার মধ্যে ৬৬০০০ লোক বাসাবাড়ীর কাজ করে। যদিও মরোক্কো শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে জাতিসঙ্ঘ কনভেনশনকে সমর্থন করে, এর সর্বনিন্ম শ্রমিকের বয়স ১২ এবং শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বাধা নিষেধ খুবই কম। এ পর্যন্ত গৃহশ্রমিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যেমন টিঙ্গিস এর সম্পাদক আনওয়ার মজিদের এই রিপোর্টটি। তবুও দারিদ্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে পরিবারগুলো তাদের কণ্যাসন্তানকে নিলামে চড়ায়, গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করার জন্যে, কখনও দিন রাত ২৪ ঘণ্টার জন্যে।

ব্লগার সারাহ আলাউই এইসব কম বয়সী গৃহপরিচারিকার কষ্ট বর্ণনা করছেন

এই সব দরিদ্র, অশিক্ষিত মেয়েরা মরোক্কোর গ্রাম থেকে শহরে আসে কাজের সন্ধানে এবং তাদের ধনীদের বাড়ীতে গৃহ পরিচারিকা হিসেবে কাজ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না। জন্মের সাথেই দারিদ্রের তকমা আটা এইসব মেয়েদের ভাগ্য আবার নির্দিষ্ট করা হয় – এসব গৃহপরিচারিকাদের দেখা যাবে কিন্তু তাদের কথা বলার অধিকার নেই। তারা নেপথ্যে কাজ করে, যেমন জে. কে. রৌলিংসের নামকরা জাদুকরী সিরিজ (হ্যারী পটারের) গৃহ বামন।

মরোক্কোতে বেশ কিছু পরিবার দেখা যায় যারা তাদের গৃহপরিচারিকাদের জন্যে কাজের স্থান ছাড়াও একটি আশ্রয় দেবার চেষ্টা করে। আমার দাদী সব সময়ই সচেষ্ট থাকতেন যাতে গৃহপরিচারিকারা বাড়ীর অন্যান্য শিশুর সাথে পড়াশোনার সুযোগ পায়। আমার দাদীর বাড়ীর গৃহপরিচারিকার মেয়ে নাজমা আমার চাচাত বোনদের সাথে একই স্কুলে যেত।

দুর্ভাগ্যবশত: বলতে বাধ্য হচ্ছি যে বর্তমানে গৃহপরিচারিকাদের এমন যত্ন কেউ নেয় না।

লা ভি একো তে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে যে জয়নবের মালিক – গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী উভয়কেই অভিযুক্ত করা হবে। তবে ব্লগার রেদা চ্রাইবি বলছেন যে অনেক পরিবর্তন আসা দরকার এবং দ্রুতই। তার একটি লেখায় এই ব্লগার পরিবারগুলো কর্তৃক তাদের কমবয়সী মেয়েদের কাজে পাঠানো প্রতিরোধ করার কথা বলছেন। তার প্রস্তাবের কিয়দংশ:

Accorder des aides sociales aux familles les plus pauvres afin qu’elles ne soient pas contraintes de faire travailler les enfants au lieu des le envoyer à l’école. La scolarité pour cette catégorie de la société devrait être totalement gratuite tant pour l’enseignement que pour l’équipement scolaire. A ce propos, l’opération de distribution de cartables équipés est une bonne initiative qui devrait être étendue dans tout le Royaume.

Donner à l’Association « Touche pas à mon enfant » (touche pas à mes enfants) ou à une institution publique le droit de recenser et de contrôler le travail des enfants servantes, le droit d’entrer dans les maisons pour discuter avec elles et vérifier si elles sont traitées dignement. Encourager leur éducation et leur alphabétisation. Ouvrir et faire connaitre un centre d’accueil pour les enfants servantes qui veulent fuir d’urgence le foyer dans lequel elles travaillent, afin que plus aucune Zineb Chtet n’èrre dans la rue dans le sang en demandant l’aide d’inconnus…

দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্যে দরকার সামাজিক সাহায্য যার ফলে তাদের শিশুদের কাজে আর পাঠাবে না। তাদের স্কুলে পাঠানো দরকার এবং বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করা দরকার। প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন শিক্ষার উপকরণ সহজলভ্য হওয়া দরকার। এ প্রসঙ্গে স্কুলব্যাগ বিতরণ প্রকল্প একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ যা সমগ্র রাজ্যে ছড়ানো দরকার। টুশে পা আ মন অঁফো (আমার সন্তান থেকে দুরে থাক) এর মত প্রতিষ্ঠানকে শিশু শ্রমিকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া উচিৎ। তাদের অধিকার থাকবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এইসব গৃহপরিচারিকার সাথে কথা বলে নিশ্চিত করা যে তারা কোন নির্যাতনের শিকার কি না। তাদের শিক্ষার হার এবং স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি করা দরকার। যারা নির্যাতিত তাদের জন্যে একটি আশ্রয় খুঁজে দেওয়া যাতে কোন জয়নব চিটিট রাস্তায় রক্তাক্ত ভাবে পড়ে থাকবে না এবং অন্যের কাছে সাহায্য চাইবে না।

এ মরোক্কান এবাউট দ্যা ওয়ার্ল্ড এরাউন্ড হিম ব্লগ তার লেখা শেষ করেছেন একটি উক্তি দিয়ে:

আমার স্মরণে আসছে ১৯৯৯ সালে হোয়াইট হাউজে জনাব এলিজার “এলি” উইজেলের একটি বক্তৃতা যেখানে তিনি বলছেন: “রাজনৈতিক কারাবন্দী, ক্ষুধার্ত শিশু, গৃহ হীণ শরণার্থী এদের কষ্টের প্রতিকার না করে কোন আশা না দেয়া হচ্ছে মানব স্মৃতি থেকে তাদের নির্বাসন দেয়া। এবং তাদের মনুষ্যত্বকে অস্বীকার করা মানে হচ্ছে নিজেকেই অস্বীকার করা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .